Dhaka ০৪:২৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিডরের ক্ষততে তালায় নিহতের পরিবারগুলোর মানবেতর জীবনযাপন

১৫ নভেম্বর  ২০০৭ সালের বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডর। লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় জনপদ। এর আঘাতে নিশ্চিহ্ন হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। গৃহহারা হয়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। সমুদ্রে মাছধরারত বহু জেলের আর স্বজনদের কাছে ফেরা হয়নি। ১৭ বছর আগে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ৭ জন লোক নিহত হয়, আহত হয় শতাধিক লোক।

দুবলারচর ও আলোরকোল নামক স্থানে মাছ ধরতে গিয়ে নিহত হয় তালা সদরের মালোপাড়ার গৌর হালদার (৪৮), অজিত হালদার (৪৩) এবং বাউখোলা গ্রামের বাসিন্দা গোবিন্দ বিশ্বাস (৫৮)। এছাড়া উপজেলার জাতপুর গ্রামের নূর বেগম (৬০), জালালপুরের ফেলি বিবি (৫৮), টিকারামপুর গ্রামের হাসান গাজী (৫০) এবং মাগুরা বাজারে অজ্ঞাত ব্যক্তি (২৫)। নিহত পরিবারগুলোর অনেকেই না খেয়ে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে কোন মতে দিন কাটাচ্ছে। তাদের খোঁজ এখন কেউ রাখে না। পরিবারগুলো মানবেতর জীবন-যাপন করছে।

সিডরে নিহত তালা সদরের মালোপাড়া অজিত হালদারের বাড়িতে গেলে তার স্ত্রী রিতা হালদার জানায়, “এই দিনে দানব সিডর তার সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি অজিত হালদারকে কেড়ে নেয়। ঐ সময় সরকারি ও বেসরকারিভাবে নগদ টাকা এবং সাহায্য পেলেও এখন তাদের খোঁজ-খবর কেউ নেয় না। দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তিন বেলা দু’মুঠো ভাতও জোটেনা। বর্তমানে আমি গ্রামে গ্রামে ফেরি করে মাছ বিক্রির পাশাপাশি অন্যের বাসায় ঝিয়ের কাজ করে কোন মতে সংসার চালাচ্ছি। একমাত্র মেয়ে সুপ্রিয়া হালদারকে কোন মতে পাত্রস্থ করেছি। বড় ছেলে কলেজে পড়ুয়া বিপ্লব হালদারের পড়াশুনার খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বর্তমানে সে মাছ ধরার পাশাপাশি শ্রমিকের কাজ করে। প্রায় ১৭ বছরের শিশুপুত্র কৃষ্ণ হালদারকে টাকার কারণে চিকিৎসা করাতে পারছি না। সে বর্তমানে ৯ম শ্রেণির ছাত্র। তারা মাছ শিকারের জন্য দুই দিন আগে সাগরে গেছে। এছাড়া আমার স্বামীর রেখে যাওয়া ২০ হাজার টাকা ঋণের বোঝার পাশাপাশি বর্তমানে ৪/৫ টা এনজিও থেকে নেয়া ঋণের কিস্তি শোধ করতে হিমশিম পোহাতে হচ্ছে। এখন আমাদের খোঁজ কেউ নেয় না !”

এদিকে সিডরে নিহত একই গ্রামের গৌর হালদারের স্ত্রী আরতি হালদার জানান, তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তাঁর স্বামীর প্রায় ২ লক্ষ টাকা ধার-দেনা শোধ করার জন্য আমার তিন ছেলে আবারও সাগরে মাছ ধরতে গেছে। বর্তমানে তাদের সংসার চালানো খুবই দুরহ হয়ে পড়েছে। ঐ সময় অনেক সহায়তা পেলেও বর্তমানে তাদের খোঁজ কেউ রাখে না বলে তিনি জানান।

সিডরে নিহত উপজেলার বাউখোলা গ্রামের গোবিন্দ বিশ্বাসের স্ত্রী আরতি বিশ্বাস জানান, তিন ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে সংসার চালাতে খুবই হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাছাড়া মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে নেওয়া লক্ষাধিক টাকা এখনও পরিশোধ করতে পারেনি। ঘূর্ণিঝড় সিডর স্বামীকে কেড়ে নেয়ার পাশাপাশি আমার সংসারও তছনছ করে দিয়েছে। আমরা এখন সবকিছু হারিয়ে পথে বসেছি। একই রকম আক্ষেপ করেন সিডরের আঘাতে নিহত অন্যান্য পরিবারগুলো। কিছু পরিবার সরকারের পক্ষ থেকে ভিজিএফ এবং বিধবা ভাতার কার্ড পেলেও অনেকের ভাগ্যে তাও জোটেনি। সব মিলিয়ে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে নিদারুন কষ্ট ও মানবেতর জীবন-যাপন করছে পরিবারগুলো।

তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. রাসেল , বিষয়টি খতিয়ে দেখে অসহায় পরিবারগুলোকে সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে পরিত্যক্ত লোহা বিক্রি

সিডরের ক্ষততে তালায় নিহতের পরিবারগুলোর মানবেতর জীবনযাপন

Update Time : ০৮:০৪:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

১৫ নভেম্বর  ২০০৭ সালের বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডর। লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় জনপদ। এর আঘাতে নিশ্চিহ্ন হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। গৃহহারা হয়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। সমুদ্রে মাছধরারত বহু জেলের আর স্বজনদের কাছে ফেরা হয়নি। ১৭ বছর আগে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ৭ জন লোক নিহত হয়, আহত হয় শতাধিক লোক।

দুবলারচর ও আলোরকোল নামক স্থানে মাছ ধরতে গিয়ে নিহত হয় তালা সদরের মালোপাড়ার গৌর হালদার (৪৮), অজিত হালদার (৪৩) এবং বাউখোলা গ্রামের বাসিন্দা গোবিন্দ বিশ্বাস (৫৮)। এছাড়া উপজেলার জাতপুর গ্রামের নূর বেগম (৬০), জালালপুরের ফেলি বিবি (৫৮), টিকারামপুর গ্রামের হাসান গাজী (৫০) এবং মাগুরা বাজারে অজ্ঞাত ব্যক্তি (২৫)। নিহত পরিবারগুলোর অনেকেই না খেয়ে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে কোন মতে দিন কাটাচ্ছে। তাদের খোঁজ এখন কেউ রাখে না। পরিবারগুলো মানবেতর জীবন-যাপন করছে।

সিডরে নিহত তালা সদরের মালোপাড়া অজিত হালদারের বাড়িতে গেলে তার স্ত্রী রিতা হালদার জানায়, “এই দিনে দানব সিডর তার সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি অজিত হালদারকে কেড়ে নেয়। ঐ সময় সরকারি ও বেসরকারিভাবে নগদ টাকা এবং সাহায্য পেলেও এখন তাদের খোঁজ-খবর কেউ নেয় না। দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তিন বেলা দু’মুঠো ভাতও জোটেনা। বর্তমানে আমি গ্রামে গ্রামে ফেরি করে মাছ বিক্রির পাশাপাশি অন্যের বাসায় ঝিয়ের কাজ করে কোন মতে সংসার চালাচ্ছি। একমাত্র মেয়ে সুপ্রিয়া হালদারকে কোন মতে পাত্রস্থ করেছি। বড় ছেলে কলেজে পড়ুয়া বিপ্লব হালদারের পড়াশুনার খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বর্তমানে সে মাছ ধরার পাশাপাশি শ্রমিকের কাজ করে। প্রায় ১৭ বছরের শিশুপুত্র কৃষ্ণ হালদারকে টাকার কারণে চিকিৎসা করাতে পারছি না। সে বর্তমানে ৯ম শ্রেণির ছাত্র। তারা মাছ শিকারের জন্য দুই দিন আগে সাগরে গেছে। এছাড়া আমার স্বামীর রেখে যাওয়া ২০ হাজার টাকা ঋণের বোঝার পাশাপাশি বর্তমানে ৪/৫ টা এনজিও থেকে নেয়া ঋণের কিস্তি শোধ করতে হিমশিম পোহাতে হচ্ছে। এখন আমাদের খোঁজ কেউ নেয় না !”

এদিকে সিডরে নিহত একই গ্রামের গৌর হালদারের স্ত্রী আরতি হালদার জানান, তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তাঁর স্বামীর প্রায় ২ লক্ষ টাকা ধার-দেনা শোধ করার জন্য আমার তিন ছেলে আবারও সাগরে মাছ ধরতে গেছে। বর্তমানে তাদের সংসার চালানো খুবই দুরহ হয়ে পড়েছে। ঐ সময় অনেক সহায়তা পেলেও বর্তমানে তাদের খোঁজ কেউ রাখে না বলে তিনি জানান।

সিডরে নিহত উপজেলার বাউখোলা গ্রামের গোবিন্দ বিশ্বাসের স্ত্রী আরতি বিশ্বাস জানান, তিন ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে সংসার চালাতে খুবই হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাছাড়া মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে নেওয়া লক্ষাধিক টাকা এখনও পরিশোধ করতে পারেনি। ঘূর্ণিঝড় সিডর স্বামীকে কেড়ে নেয়ার পাশাপাশি আমার সংসারও তছনছ করে দিয়েছে। আমরা এখন সবকিছু হারিয়ে পথে বসেছি। একই রকম আক্ষেপ করেন সিডরের আঘাতে নিহত অন্যান্য পরিবারগুলো। কিছু পরিবার সরকারের পক্ষ থেকে ভিজিএফ এবং বিধবা ভাতার কার্ড পেলেও অনেকের ভাগ্যে তাও জোটেনি। সব মিলিয়ে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে নিদারুন কষ্ট ও মানবেতর জীবন-যাপন করছে পরিবারগুলো।

তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. রাসেল , বিষয়টি খতিয়ে দেখে অসহায় পরিবারগুলোকে সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে।