পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম জানিয়েছেন জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করে এবং অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে পুলিশকে জনগণের বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে বলে।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) সকালে রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে অক্টোবর মাসের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন আইজিপি।
মাসিক এ অপরাধ পর্যালোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসান।
সভায় থানার ওসিদের উদ্দেশ্যে আইজিপি বলেন, থানা হলো পুলিশি সেবার কেন্দ্রবিন্দু। থানায় সেবা নিতে আসা মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে। কারণ, যিনি থানায় আসছেন, ধরে নিতে হবে তিনি কোনো না কোনোভাবে বাদী, ভিকটিম কিংবা সাক্ষী। তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে যথাযথ পুলিশি সেবা দিয়ে পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে হবে।
বক্তব্যের শুরুতে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আত্মাহুতি দানকারী সব শহীদের রুহের মাগফেরাত কামনা ও তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন আইজিপি। একইসঙ্গে স্মরণ করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রাণ উৎসর্গকারী ও আহত পুলিশ সদস্যদের।
আইজিপি বলেন, পুলিশ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি সংস্থা। জনগণকে সেবা দেওয়াই পুলিশের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। সেবা দেওয়ার মাধ্যমেই জনগণের কাঙ্ক্ষিত পুলিশ বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সব পুলিশ সদস্যকে একটি টিম হিসেবে কাজ করতে হবে। অপরাধের হটস্পটগুলো চিহ্নিত করতে হবে। সেখানকার নাগরিক কমিটিকে শক্তিশালী করে তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে অপরাধ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন, কোনো অপরাধের ঘটনা ঘটলে সেটা আড়াল করা যাবে না। প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। অপরাধী যেই হোক তাকে ছাড় দেওয়া যাবে না। তবে কোনো মামলায় নিরীহ ও নির্দোষ ব্যক্তি যাতে হয়রানির শিকার না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। চুরি, ছিনতাই, কিশোর গ্যাং-সহ অন্যান্য সংঘবদ্ধ অপরাধের ব্যাপারে আগে থেকেই ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহ করে তা প্রতিরোধ করতে হবে। অপরাধ সংঘটনের আগেই অপরাধ প্রতিরোধের উপর গুরুত্বারোপ করেন আইজিপি।
আইজিপি বলেন, ঢাকা শহরের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে যানজট। আগের তুলনায় ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতির জন্য ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগকে ধন্যবাদ জানান আইজিপি এবং আরো উন্নতি করতে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেন। পুলিশের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। সব পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের নিয়মিত বিভিন্ন পেশাগত বিষয়ে আধুনিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
সভায় যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) ফারুক হোসেন অক্টোবর ২০২৪ মাসের সার্বিক অপরাধ পরিস্থিতি যেমন- ডাকাতি, দস্যুতা, চুরি, সিঁধেল চুরি, খুন, অপমৃত্যু, সড়ক দুর্ঘটনা, নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র উদ্ধারসহ বিভিন্ন মামলা সংক্রান্ত তথ্য উপস্থাপন করেন।
পরে অপরাধ পর্যালোচনা সভায় অক্টোবর মাসে ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত করেন আইজিপি।
মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) ফারুক আহমেদ; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. ইসরাইল হাওলাদার; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) রেজাউল করিম মল্লিক; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. মাসুদ করিম; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) হাসান মো. শওকত আলী; যুগ্ম পুলিশ কমিশনারগণ, উপ-পুলিশ কমিশনার, ডিএমপির সব থানার ওসি ও বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা।