Dhaka ০৬:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেনাপোলে শহীদ আবুল্লাহ’র কবর জিয়ারত করেছেন অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হাসান আরিফ

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবুল্লাহ’র কবর জিয়ারত করেছেন অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হাসান আরিফ। সোমবার (১৮ নভেম্বর) বেলা ১২ টার সময় তিনি যশোর জেলার বেনাপোল পোর্ট থানার অর্ন্তগত বড়আঁচড়া গ্রামে শহীদ আব্দুল্লাহর বাড়িতে যায়। পরিবারের সদস্যদের সাথে কূশল বিনিময় করেন এবং শহীদ আব্দুল্লাহ এর জীবনাবসান সম্পর্কে মর্মান্তিক ইতিহাস শোনেন।

পরে, তিনি বড়আঁচড়া মাঠপাড়া মসজিদের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত শহীদ আব্দুল্লাহর কবর জিয়ারত করেন ও রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া করেন। এসময় এলাকাবাসীর দাবির মুখে তিনি যশোর-কোলকাতা সড়কে অবস্থিত বেনাপোল পৌরসভার দৃষ্টিনন্দন গেইটকে শহীদ আব্দুল্লাহ গেইট নামকরণে আশ্বস্ত করেন।

এছাড়া, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হতাহত শহীদ ও আহতদের সরকারের প্রচলিত ধারায় অনুদান ও সুযোগ-সুবিধা প্রদাণের কথা জানান। বলেন, তাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা আজকের এই অবস্থানে আসতে পেরেছি। সেই পুরানো দিনকে মুছতে যারা এই রক্ত দিয়েছে তাদের ঋণ আজীবন বাংলাদেশকে শোধ করতে হবে। সেটা  যেনো কেউ মনে না করি, ক্ষমতায় বসেছি, রাজত্ব আমার।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, যশোর জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ আজহারুল ইসলাম, জামায়াত ইসলামের কেন্দ্রীয় সূরা সদস্য মাওলানা আজিজুর রহমান, শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী নাজিব হাসান, সহকারি কমিশনার (ভূমি) নুসরাত ফারিয়া, বেনাপোল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাসেল মিয়া, বেনাপোল পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের ভারত, শার্শা উপজেলা যুবদলের আহবায়ক মোস্তাফিজ্জোহা সেলিম সহ স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক রাজনৈতিক, মানবাধিকার, সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবক, ব্যবসায়ী, পেশাজীবি সংগঠনের নেতা-কর্মী ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা।

জুলাই-আগষ্টের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামীলীগ সরকার পতনে সাহসী ভূমিকা রেখে চলার পথে গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যা ৭ টার দিকে পুরানো ঢাকার বংশাল থানার  সামনে গুলিবিদ্ধ হয় আব্দুল্লাহ। তার কপালে গুলি লাগে। দুই থেকে তিন ঘন্টা যাবত পাকা রাস্তার উপর পড়েছিলো সে। সেখান থেকে রক্তাক্ত আব্দুল্লাহকে উদ্ধার করে  প্রথমে মিডফোর্ড হাসপাতালে, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা  দেয়।

সেখানে অপারেশনের পর শারিরিক অবস্থার উন্নতি হলে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে  আসে পরিবারের সদস্যরা। কিছুদিন পরে তার শরীরের অবস্থার অবনতি হলে আবারও  ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য ২২ আগস্ট তাকে ঢাকার সম্মিলিত  সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) এ নেওয়া হয় এবং অস্ত্র-পচার করা হয়। অবশেষে  সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর-২৪) সকাল ৯ টার সময় সে  শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে

(ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। পরে, তার শিক্ষালয়  ঢাকার “সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী” কলেজে ১ম জানাজা, সন্ধ্যার সময় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ২য় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) তার লাশ  বেনাপোলে পৌঁছালে বেলা সাড়ে ১০টার সময় বেনাপোল হাইস্কুল ময়দানে বিশাল  জনসমুদ্রে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড-অব-অনার প্রদাণ করেন উপজেলা প্রশাসন। উক্ত  ময়দানে ৩য় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়ে শহীদ আবুল্লাহ তার গ্রামের বাড়ি বড়আঁচড়া গ্রামের  মাঠপাড়া মসজিদের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়।

শহীদ আব্দুল্লাহ (২৩) বেনাপোল পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড বড়আঁচড়া গ্রামের টার্মিনাল পাড়ার জব্বার আলীর ছেলে। ৪ ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট। ঢাকার “সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী” কলেজে রাষ্ট্র বিজ্ঞানের মেধাবী ছাত্র ছিলো। তার এই অকাল মৃত্যুতে বেনাপোলে শোকের ছায়া বিরাজমান।

এদিকে, আব্দুল্লাহর মৃত্যুর খবরে গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার সময় তার গ্রামের বাড়িতে আসেন   অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের আরেক উপদেষ্টা, নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ে নিয়োজিত  ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি শহীদ আব্দুল্লাহর পরিবারের সাথে সমবেদনা ও শোক জ্ঞাপণ করেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে ঢাকার দেওয়া চিঠি গ্রহণ করেছে দিল্লি

বেনাপোলে শহীদ আবুল্লাহ’র কবর জিয়ারত করেছেন অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হাসান আরিফ

Update Time : ০৮:২২:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবুল্লাহ’র কবর জিয়ারত করেছেন অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হাসান আরিফ। সোমবার (১৮ নভেম্বর) বেলা ১২ টার সময় তিনি যশোর জেলার বেনাপোল পোর্ট থানার অর্ন্তগত বড়আঁচড়া গ্রামে শহীদ আব্দুল্লাহর বাড়িতে যায়। পরিবারের সদস্যদের সাথে কূশল বিনিময় করেন এবং শহীদ আব্দুল্লাহ এর জীবনাবসান সম্পর্কে মর্মান্তিক ইতিহাস শোনেন।

পরে, তিনি বড়আঁচড়া মাঠপাড়া মসজিদের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত শহীদ আব্দুল্লাহর কবর জিয়ারত করেন ও রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া করেন। এসময় এলাকাবাসীর দাবির মুখে তিনি যশোর-কোলকাতা সড়কে অবস্থিত বেনাপোল পৌরসভার দৃষ্টিনন্দন গেইটকে শহীদ আব্দুল্লাহ গেইট নামকরণে আশ্বস্ত করেন।

এছাড়া, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হতাহত শহীদ ও আহতদের সরকারের প্রচলিত ধারায় অনুদান ও সুযোগ-সুবিধা প্রদাণের কথা জানান। বলেন, তাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা আজকের এই অবস্থানে আসতে পেরেছি। সেই পুরানো দিনকে মুছতে যারা এই রক্ত দিয়েছে তাদের ঋণ আজীবন বাংলাদেশকে শোধ করতে হবে। সেটা  যেনো কেউ মনে না করি, ক্ষমতায় বসেছি, রাজত্ব আমার।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, যশোর জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ আজহারুল ইসলাম, জামায়াত ইসলামের কেন্দ্রীয় সূরা সদস্য মাওলানা আজিজুর রহমান, শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী নাজিব হাসান, সহকারি কমিশনার (ভূমি) নুসরাত ফারিয়া, বেনাপোল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাসেল মিয়া, বেনাপোল পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের ভারত, শার্শা উপজেলা যুবদলের আহবায়ক মোস্তাফিজ্জোহা সেলিম সহ স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক রাজনৈতিক, মানবাধিকার, সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবক, ব্যবসায়ী, পেশাজীবি সংগঠনের নেতা-কর্মী ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা।

জুলাই-আগষ্টের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামীলীগ সরকার পতনে সাহসী ভূমিকা রেখে চলার পথে গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যা ৭ টার দিকে পুরানো ঢাকার বংশাল থানার  সামনে গুলিবিদ্ধ হয় আব্দুল্লাহ। তার কপালে গুলি লাগে। দুই থেকে তিন ঘন্টা যাবত পাকা রাস্তার উপর পড়েছিলো সে। সেখান থেকে রক্তাক্ত আব্দুল্লাহকে উদ্ধার করে  প্রথমে মিডফোর্ড হাসপাতালে, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা  দেয়।

সেখানে অপারেশনের পর শারিরিক অবস্থার উন্নতি হলে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে  আসে পরিবারের সদস্যরা। কিছুদিন পরে তার শরীরের অবস্থার অবনতি হলে আবারও  ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য ২২ আগস্ট তাকে ঢাকার সম্মিলিত  সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) এ নেওয়া হয় এবং অস্ত্র-পচার করা হয়। অবশেষে  সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর-২৪) সকাল ৯ টার সময় সে  শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে

(ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। পরে, তার শিক্ষালয়  ঢাকার “সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী” কলেজে ১ম জানাজা, সন্ধ্যার সময় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ২য় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) তার লাশ  বেনাপোলে পৌঁছালে বেলা সাড়ে ১০টার সময় বেনাপোল হাইস্কুল ময়দানে বিশাল  জনসমুদ্রে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড-অব-অনার প্রদাণ করেন উপজেলা প্রশাসন। উক্ত  ময়দানে ৩য় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়ে শহীদ আবুল্লাহ তার গ্রামের বাড়ি বড়আঁচড়া গ্রামের  মাঠপাড়া মসজিদের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়।

শহীদ আব্দুল্লাহ (২৩) বেনাপোল পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড বড়আঁচড়া গ্রামের টার্মিনাল পাড়ার জব্বার আলীর ছেলে। ৪ ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট। ঢাকার “সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী” কলেজে রাষ্ট্র বিজ্ঞানের মেধাবী ছাত্র ছিলো। তার এই অকাল মৃত্যুতে বেনাপোলে শোকের ছায়া বিরাজমান।

এদিকে, আব্দুল্লাহর মৃত্যুর খবরে গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার সময় তার গ্রামের বাড়িতে আসেন   অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের আরেক উপদেষ্টা, নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ে নিয়োজিত  ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি শহীদ আব্দুল্লাহর পরিবারের সাথে সমবেদনা ও শোক জ্ঞাপণ করেন।