Dhaka ০৪:৫৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিওর আসল ঘটনা যানা গেল

গত ১০ তারিখ নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ডাকা কর্মসূচীর বিষয়ে একটি ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক ইব্রাহীম খলিলউল্লাহ।

সোস্যাল মিডিয়ায় হুঙ্কার দেয়া সেই উপ-পরিদর্শক ইব্রাহীম খলিলউল্লাহকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বাস্তবে তিনি তেমন না। নারায়ানগঞ্জের জালকুড়ির স্থানীয় বাসিন্দা তিনি। বাবা মা দুজনেই অবসর প্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক ব্যক্তি জীবনে অনেক হাস্যউজ্জল রসিক এই অফিসার, ২০১২তে সরাসরি উপ-পরিদর্শক পদে আবেদন করে নিজ যোগ্যতায় চাকুরীতে যোগদান করেন।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ২০১২ সালে সারা বাংলাদেশে যতগুলো সরাসরি উপ-পরিদর্শক পদে চাকুরী পেয়েছেন তাদের মধ্যে ৯০ ভাগ অফিসার সৎ চৌকস এবং দ্বায়ীত্বশীল। ইতো মধ্যে তাদের ব্যাচের অনেকই পরিদর্শক হয়েছেন যা অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তাদের চেয়ে অনেক গুন এগিয়ে।

জি-নিউজবিডি২৪ এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক জনাব আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি ব্যক্তিগত ভাবেই ২০১২ ব্যাচের সারা বাংলাদেশের অধিকাংশ উপ-পরিদর্শকদের সাথে উঠা বসা আছে।

তিনি বলেন, সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল যে অফিসার তার নাম ইব্রাহীম খলিলউল্লাহ খুব মজার এবং অনেক আন্তরীক এক জন মানুষ তার ভিডিও সোস্যাল মিডিয়া দেখে একটু অবাক হয়েছি কারন তার এই ক্রোধ কখনও চোখে পরেনি। তাতক্ষনিক ভিডিও পোষ্টে মন্তব্য করি নিশ্চই এমন কিছু হয়েছে তা না হলে এভাবে চিৎকার করার কথা না এবং ভাইরাল হওয়ার ইচ্ছেও তার নেই।

নিজ থেকে অফিসারকে ফোন দিয়ে বিস্তারীত সহ মূল ঘটনা যানতে পাড়ি । এ বিষয়ে উপ-পরিদর্শক ইব্রাহীম খলিলউল্লাহ বলেন, নিজের জীবন বাজি রেখে প্রায় ৪২ জনকে গনধোলাইয়ের হাত থেকে উদ্ধারপুর্বক হাসপাতালে ভর্তি করাই, এই আসামি গ্রেফতার ও উদ্ধারকাজে আমি সহ আমার ফোর্স ইটপাটকেল খেয়ে নিজেরাও আহত হয়েছি।

গণধোলাইয়ে আহত গ্রেফতারকৃতদের পুলিশের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়ার সময় ভিডিওতে যার দলীয় পরিচয় জানতে চেয়েছি এই ব্যাক্তিসহ ৪/৫ জন লাঠিসোটা হাতে আমার গাড়ির পিছনে উঠে যায়, আসামিদের প্রটেকশন দেওয়ার মতো ছিলো না পর্যাপ্ত ফোর্স।

গাড়িতে আমি আমার ড্রাইভার সামনে আর এ সময় পিছনে অস্ত্রসহ একজন নারী কনষ্টেবল, একজন পুরুষ কনষ্টেবল। এরা গাড়িতে উঠে গ্রেফতারকৃত গণধোলাইয়ের হাত থেকে সদ্য উদ্ধার হওয়া আধমরা যাদের দ্রুত হাসপাতালে নিতে যাওয়া খুবই জরুরী নয়তো তারা গাড়িতে মারা যাবে এমতবস্থায় আমি মহিলা পুলিশের চিৎকার শুনতে পাই “স্যার আসামীদের মেরে ফেললো” গাড়ি তখন স্টেডিয়ামের ০৩নং গেইট পাড় হচ্ছিলো, আমি গাড়ি থামিয়ে দ্রুত পিছনে গিয়ে দেখি নারী পুলিশসহ কনষ্টেবল সহ আসামীরা মার খাচ্ছে।

তারা কি করবে আসামীদের জান বাচাবে না অস্ত্র সেফ করবে না নিজের জান রক্ষা করবে? ভিডিওতে যে ব্যাক্তিকে দেখেছেন সে একজনকে গলায় পাড়া দাঁড়িয়ে আছে আটককৃতদের দম যায় যায় অবস্থা, তার সংগীয় আরো ৪/৫ জন গ্রেফতারকৃত নারী আসামীসহ তাদের হাতে থাকা লাঠিসোটা দিয়ে পিটিয়ে গাড়ির ভেতরেই মেরে ফেলছে এবং বলছে এদের হত্যা করতে হবে একটারে থানায় নিয়ে যেতে দিবো না।

এই কথা শুনে আমি তাদের চার্জ করি এবং গাড়ি থেকে নামাতে সক্ষম হই। আমি নিজেই ইট পাটকেলের ঢিল খেয়েছি কিন্তু নিজের জীবনের পরোয়া না করে এমন হিংস্রতম কান্ড থেকে আসামীদের জান রক্ষা করে হাসপাতালে নিয়ে যাই তারা প্রানে বেচে যায়। আমি এমন জোর গলায় কথা না বললে ওখানে অনাকাঙ্খিত ঘটনা সহ আসামি এবং সবাই বড় ধরনের দূর্ঘটনার স্বীকার হতাম।

আসামীদের পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার পর যদি পুলিশের গাড়িতেই তাদের মেরে ফেলা হত তখন আপনারই ধিক্কার দিতেন এই পুলিশদের। আসামিরা মারা গেলে এর সকল দায় দায়িত্ব আমার উপরেই পড়বে, আমার চাকুরির ক্ষতি হবে।

আমার রিজিকের উপর আমার বৃদ্ধ মা বাবার ভরনপোষণ, আমার পরিবার আছে। চাকুরী হারালে পরিবার সহ আমাকে রাস্তায় নেমে যেতে হবে। ভিডিওর এই ব্যক্তি সহ তার দল যেভাবে হিংস্রতা দেখিয়েছে তার ধারে কাছেও কি আমি ছিলাম ? জোর গলায় কথা বলেছি, আমার সামনে সেনাবাহিনীর অফিসার ফোর্সরা ছিলো আমি অপরাধী হলে তারা কি আমায় ছেড়ে দিতো বলুন ??

আর ভিডিওটি সম্পুর্ন দিলে আপনারা আমাকেই বাহবা দিতেন। এর পদ জানতে চেয়েছি আসলে উনি কোন দলের?? বিশ্বাস করবেন উনি কোন উত্তর দিতে পারে নাই, আশেপাশের কেউ তাকে চিনে না কিন্তু মানুষ হত্যাচেষ্টায় লিডিং দিচ্ছিলেন এই ব্যাক্তি কে? উনার ১০ তারিখে যে হিংস্রতা দেখিয়েছে এতে বদনাম হতো কার? কারন ১০ তারিখ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে নিষিদ্ধ সংঘঠন ছাত্রলীগ।

এই আন্দোলন প্রতিহত করতে মাঠে ছিলো পুলিশ সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মিরা। কিন্তু এই ব্যাক্তি কোন দলের ছিলো না। কেনো উনি গণধোলাইয়ের হাত থেকে উদ্ধার ও গ্রেফতার করে পুলিশ গাড়িতে করে দ্রুত আইন প্রক্রিয়া সম্পন্ন ও চিকিৎসার জন্যে নিয়ে যাওয়ার সময় দলবলে পুলিশের গাড়িতে উঠে আহত লোকদের এক্কেবারে মেরে ফেলার নেতৃত্ব দিচ্ছেন জোরালোভাবে তার পরিচয়ই জানতে চেয়েছি মাত্র।

তিনি সর্বশেষ বলেন, মানুষের জীবন রক্ষায় আমি যতটুকু করেছি তা যদি কোন অপরাধ হয় আমায় মাফ করে দিবেন। আর এই ভিডিও ১০ তারিখের পরে কেনো দিলো আমার উপর সাংবাদিক ভাইদের এতই রাগ ?

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিওর আসল ঘটনা যানা গেল

Update Time : ১২:১৬:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪

গত ১০ তারিখ নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ডাকা কর্মসূচীর বিষয়ে একটি ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক ইব্রাহীম খলিলউল্লাহ।

সোস্যাল মিডিয়ায় হুঙ্কার দেয়া সেই উপ-পরিদর্শক ইব্রাহীম খলিলউল্লাহকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বাস্তবে তিনি তেমন না। নারায়ানগঞ্জের জালকুড়ির স্থানীয় বাসিন্দা তিনি। বাবা মা দুজনেই অবসর প্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক ব্যক্তি জীবনে অনেক হাস্যউজ্জল রসিক এই অফিসার, ২০১২তে সরাসরি উপ-পরিদর্শক পদে আবেদন করে নিজ যোগ্যতায় চাকুরীতে যোগদান করেন।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ২০১২ সালে সারা বাংলাদেশে যতগুলো সরাসরি উপ-পরিদর্শক পদে চাকুরী পেয়েছেন তাদের মধ্যে ৯০ ভাগ অফিসার সৎ চৌকস এবং দ্বায়ীত্বশীল। ইতো মধ্যে তাদের ব্যাচের অনেকই পরিদর্শক হয়েছেন যা অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তাদের চেয়ে অনেক গুন এগিয়ে।

জি-নিউজবিডি২৪ এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক জনাব আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি ব্যক্তিগত ভাবেই ২০১২ ব্যাচের সারা বাংলাদেশের অধিকাংশ উপ-পরিদর্শকদের সাথে উঠা বসা আছে।

তিনি বলেন, সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল যে অফিসার তার নাম ইব্রাহীম খলিলউল্লাহ খুব মজার এবং অনেক আন্তরীক এক জন মানুষ তার ভিডিও সোস্যাল মিডিয়া দেখে একটু অবাক হয়েছি কারন তার এই ক্রোধ কখনও চোখে পরেনি। তাতক্ষনিক ভিডিও পোষ্টে মন্তব্য করি নিশ্চই এমন কিছু হয়েছে তা না হলে এভাবে চিৎকার করার কথা না এবং ভাইরাল হওয়ার ইচ্ছেও তার নেই।

নিজ থেকে অফিসারকে ফোন দিয়ে বিস্তারীত সহ মূল ঘটনা যানতে পাড়ি । এ বিষয়ে উপ-পরিদর্শক ইব্রাহীম খলিলউল্লাহ বলেন, নিজের জীবন বাজি রেখে প্রায় ৪২ জনকে গনধোলাইয়ের হাত থেকে উদ্ধারপুর্বক হাসপাতালে ভর্তি করাই, এই আসামি গ্রেফতার ও উদ্ধারকাজে আমি সহ আমার ফোর্স ইটপাটকেল খেয়ে নিজেরাও আহত হয়েছি।

গণধোলাইয়ে আহত গ্রেফতারকৃতদের পুলিশের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়ার সময় ভিডিওতে যার দলীয় পরিচয় জানতে চেয়েছি এই ব্যাক্তিসহ ৪/৫ জন লাঠিসোটা হাতে আমার গাড়ির পিছনে উঠে যায়, আসামিদের প্রটেকশন দেওয়ার মতো ছিলো না পর্যাপ্ত ফোর্স।

গাড়িতে আমি আমার ড্রাইভার সামনে আর এ সময় পিছনে অস্ত্রসহ একজন নারী কনষ্টেবল, একজন পুরুষ কনষ্টেবল। এরা গাড়িতে উঠে গ্রেফতারকৃত গণধোলাইয়ের হাত থেকে সদ্য উদ্ধার হওয়া আধমরা যাদের দ্রুত হাসপাতালে নিতে যাওয়া খুবই জরুরী নয়তো তারা গাড়িতে মারা যাবে এমতবস্থায় আমি মহিলা পুলিশের চিৎকার শুনতে পাই “স্যার আসামীদের মেরে ফেললো” গাড়ি তখন স্টেডিয়ামের ০৩নং গেইট পাড় হচ্ছিলো, আমি গাড়ি থামিয়ে দ্রুত পিছনে গিয়ে দেখি নারী পুলিশসহ কনষ্টেবল সহ আসামীরা মার খাচ্ছে।

তারা কি করবে আসামীদের জান বাচাবে না অস্ত্র সেফ করবে না নিজের জান রক্ষা করবে? ভিডিওতে যে ব্যাক্তিকে দেখেছেন সে একজনকে গলায় পাড়া দাঁড়িয়ে আছে আটককৃতদের দম যায় যায় অবস্থা, তার সংগীয় আরো ৪/৫ জন গ্রেফতারকৃত নারী আসামীসহ তাদের হাতে থাকা লাঠিসোটা দিয়ে পিটিয়ে গাড়ির ভেতরেই মেরে ফেলছে এবং বলছে এদের হত্যা করতে হবে একটারে থানায় নিয়ে যেতে দিবো না।

এই কথা শুনে আমি তাদের চার্জ করি এবং গাড়ি থেকে নামাতে সক্ষম হই। আমি নিজেই ইট পাটকেলের ঢিল খেয়েছি কিন্তু নিজের জীবনের পরোয়া না করে এমন হিংস্রতম কান্ড থেকে আসামীদের জান রক্ষা করে হাসপাতালে নিয়ে যাই তারা প্রানে বেচে যায়। আমি এমন জোর গলায় কথা না বললে ওখানে অনাকাঙ্খিত ঘটনা সহ আসামি এবং সবাই বড় ধরনের দূর্ঘটনার স্বীকার হতাম।

আসামীদের পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার পর যদি পুলিশের গাড়িতেই তাদের মেরে ফেলা হত তখন আপনারই ধিক্কার দিতেন এই পুলিশদের। আসামিরা মারা গেলে এর সকল দায় দায়িত্ব আমার উপরেই পড়বে, আমার চাকুরির ক্ষতি হবে।

আমার রিজিকের উপর আমার বৃদ্ধ মা বাবার ভরনপোষণ, আমার পরিবার আছে। চাকুরী হারালে পরিবার সহ আমাকে রাস্তায় নেমে যেতে হবে। ভিডিওর এই ব্যক্তি সহ তার দল যেভাবে হিংস্রতা দেখিয়েছে তার ধারে কাছেও কি আমি ছিলাম ? জোর গলায় কথা বলেছি, আমার সামনে সেনাবাহিনীর অফিসার ফোর্সরা ছিলো আমি অপরাধী হলে তারা কি আমায় ছেড়ে দিতো বলুন ??

আর ভিডিওটি সম্পুর্ন দিলে আপনারা আমাকেই বাহবা দিতেন। এর পদ জানতে চেয়েছি আসলে উনি কোন দলের?? বিশ্বাস করবেন উনি কোন উত্তর দিতে পারে নাই, আশেপাশের কেউ তাকে চিনে না কিন্তু মানুষ হত্যাচেষ্টায় লিডিং দিচ্ছিলেন এই ব্যাক্তি কে? উনার ১০ তারিখে যে হিংস্রতা দেখিয়েছে এতে বদনাম হতো কার? কারন ১০ তারিখ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে নিষিদ্ধ সংঘঠন ছাত্রলীগ।

এই আন্দোলন প্রতিহত করতে মাঠে ছিলো পুলিশ সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মিরা। কিন্তু এই ব্যাক্তি কোন দলের ছিলো না। কেনো উনি গণধোলাইয়ের হাত থেকে উদ্ধার ও গ্রেফতার করে পুলিশ গাড়িতে করে দ্রুত আইন প্রক্রিয়া সম্পন্ন ও চিকিৎসার জন্যে নিয়ে যাওয়ার সময় দলবলে পুলিশের গাড়িতে উঠে আহত লোকদের এক্কেবারে মেরে ফেলার নেতৃত্ব দিচ্ছেন জোরালোভাবে তার পরিচয়ই জানতে চেয়েছি মাত্র।

তিনি সর্বশেষ বলেন, মানুষের জীবন রক্ষায় আমি যতটুকু করেছি তা যদি কোন অপরাধ হয় আমায় মাফ করে দিবেন। আর এই ভিডিও ১০ তারিখের পরে কেনো দিলো আমার উপর সাংবাদিক ভাইদের এতই রাগ ?