Dhaka ০৬:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জমানো টাকা হাতিয়ে নিতেই শাহজাদপুরে ব্যবসায়ী রইচকে দুই বন্ধু মিলে পরিকল্পিত হত্যা

তিল তিল করে জমানো ১৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নিতেই সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পৌর এলাকার নলুয়া বটতলা বাজারের মুদি ব্যবসায়ী রইচ উদ্দিন ফকিরকে (৬৫) দুই বন্ধু মিলে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে গলা কেটে হত্যার করে। এরপর লাশ গুম করতে বস্তায় ভরে পাশের ডোবায় ফেলে দেয়। ঘাতক দুই বন্ধু হলেন, নলুয়া গ্রামের আজিজ মন্ডলের ছেলে রাজমিস্ত্রী মোঃ মামুন (২৮) ও যুগ্নীদহ পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত রানু শেখের ছেলে ভবঘুরে মোঃ জয়নাল শেখ (৫০)

২১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শাহজাদপুর থানা পুলিশ এ বিষয়টি জানিয়েছে। এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শাহজাদপুর থানা সার্কেলের এএসপি মো. কামরুজ্জামান। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন, শাহজাদপুর থানার ওসি মো: আসলাম আলী, এসআই মো: শারফুল ইসলাম ও এসআই কাঞ্চন কুমার প্রমুখ। 

এ সংবাদ সম্মেলনে শাহজাদপুর থানা সার্কেলের এএসপি মো. কামরুজ্জামান তার লিখিত বক্তব্যে জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ২০ নভেম্বর বুধবার ঘাতক দুই বন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তারা হত্যার দায় স্বীকার করে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ হত্যায় ব্যবহৃত চাকু ও নিহতের লুন্ঠিত ২টি মোবাইল ফোন, পরনের ট্রাউজার ও লুঙ্গী উদ্ধার করে। তিনি আরও জানান, নিহত রইচ উদ্দিন নলুয়া বটতলা বাজারের মুদি ব্যবসায়ী ছিলেন। তার ১ম স্ত্রী মারা গেলে তিনি ২য় বিয়ে করেন। প্রায় ৮/০৯ বছর আগে তার ২য় স্ত্রী তাকে তালাক দিয়ে চলে যায়। এরপর আর তিনি বিয়ে করেননি। এরপর তিনি নিজ গ্রামের একটি ভাড়া বাড়িতে একাই বাস করতেন এবং নিজেই রান্না করে খেতেন। তিনি প্রতিদিন সকাল ৬ টার দিকে এসে দোকান খুলতেন ও রাত ১০ টার দিকে দোকান বন্ধ করে বাড়ি চলে যেতেন। সারাদিন যে টাকা বেচাকেনা হতো তা বাড়িতে বিছানার নিচে রেখে দিতেন। নলুয়া গ্রামের রাজমিস্ত্রী মোঃ মামুন ও যুগ্নীদহ পশ্চিমপাড়া গ্রামের ভবঘুরে মোঃ জয়নাল শেখ নিয়মিত তার দোকানে আসতেন ও সদাইপাতি কিনতেন। এছাড়া নিয়মিত তারা তার দোকানে বসে আড্ডা দিতেন। ফলে মামুন ও জয়নাল শেখের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। ফলে তারা ব্যবসায়ী রইচের পূর্ব পরিচিত। এরমধ্যে মামুন ও জয়নালের হাতে কোনো টাকা পয়সা না থাকায় তারা ব্যবসায়ী রইচ উদ্দিনের জমানো টাকা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন। পরিকলাপনা অনুযায়ী মামুন শাহজাদপুর বাজার থেকে একটি চাকু ক্রয় করে। এরপর তারা গত ৩ নভেম্বর রাত ১০ টা থেকে ব্যবসায়ী রইচকে অনুসরণ করতে শুরু করে। তিনি বাড়ি যাওয়ার পরে রাত সাড়ে ১১ টার দিকে আসামী মামুন এবং জয়নাল রইচের ভাড়া বাড়িতে গিয়ে রইচকে ঘর থেকে ডেকে বের করে। রইচ বাইরে বের হলে আসামী জয়নাল রইচকে পিছন থেকে চেপে ধরে। এ সময় রইচ মাটিতে পড়ে গেলে আসামী মামুন রইচকে জবাই করে হত্যা করে। এরপর রইচের ঘরের তোষকের নিচে থাকা ১৬ হাজার টাকা আসামী মামুন নেয়। এরপরে রইচের ব্যবহৃত দুইটি মোবাইল ফোন ও রক্ত গামলাতে করে টয়লেটে ফেলে দেয়। মামুনের রক্তমাখা লুঙ্গী এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকু বাড়ির পাশে ডোবাতে ফেলে দেয়। এরপর মামুন রইচের লাশ একটি বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে আসামী জয়নালের সহায়তায় পাশের শফিকুলের ডোবায় ফেলে দেয়। এরপর মামুন নিজে ১০ হাজার টাকা নেয় এবং জয়নালকে ৬ হাজার টাকা দেয়। এরপর তারা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে গিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে থাকে। এদিকে পরদিন সকাল থেকে রইচের খোজ না পাওয়ায় এবং তার মোবাইল বন্ধ থাকায় তার আত্মীয় স্বজনেরা তাকে বিভিন্ন জায়গায় খোজা শুরু করে। কোথাও না পেয়ে গত ৮ নভেম্বর তার ছেলে দুলাল হোসেন শাহজাদপুর থানায় একটি নিখোঁজের ডায়েরি করেন। এরপর পুলিশ গত ১৮ নভেম্বর বিকালে নলুয়া বটতলার শফিকুল ইসলামের ডোবা হতে একটি গলিত লাশ উদ্ধার করে। ব্যবসায়ী রইচ উদ্দিনের ভাই আব্দুল মজিদ লাশের পড়নের চেক লুঙ্গী ও বাম হাতের ছয় আঙ্গুল দেখে তার ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করেন।

এরপর নিহত রইচ উদ্দিনের ছেলে দুলাল হোসেন বাদী হয়ে অপ্সাতনামাদের আসামী করে শাহজাদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে শাহজাদপুর থানা পুলিশের একটি দল গত ২০ নভেম্বর এ হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে নলুয়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে মোঃ মামুন ও যুগ্নীদহ পশ্চিমপাড়া থেকে মোঃ জয়নাল শেখকে গ্রেপ্তার করে। এছাড়া তাদেও স্বীকারোক্তিতে টয়লেট থেকে নিহত রইচের দুইটি মোবাইল ফোন, আসামী মামুনের বাড়ি থেকে রইচের একটি ট্রাউজার এবং রইচের বাড়ির পাশের ডোবা থেকে রক্তমাখা লুঙ্গী ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার কওে পুলিশ। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা রইচকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

সুপেয় পানির অভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ভোলার চরাঞ্চলের নারী-শিশুরা

জমানো টাকা হাতিয়ে নিতেই শাহজাদপুরে ব্যবসায়ী রইচকে দুই বন্ধু মিলে পরিকল্পিত হত্যা

Update Time : ০৯:৫২:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

তিল তিল করে জমানো ১৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নিতেই সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পৌর এলাকার নলুয়া বটতলা বাজারের মুদি ব্যবসায়ী রইচ উদ্দিন ফকিরকে (৬৫) দুই বন্ধু মিলে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে গলা কেটে হত্যার করে। এরপর লাশ গুম করতে বস্তায় ভরে পাশের ডোবায় ফেলে দেয়। ঘাতক দুই বন্ধু হলেন, নলুয়া গ্রামের আজিজ মন্ডলের ছেলে রাজমিস্ত্রী মোঃ মামুন (২৮) ও যুগ্নীদহ পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত রানু শেখের ছেলে ভবঘুরে মোঃ জয়নাল শেখ (৫০)

২১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শাহজাদপুর থানা পুলিশ এ বিষয়টি জানিয়েছে। এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শাহজাদপুর থানা সার্কেলের এএসপি মো. কামরুজ্জামান। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন, শাহজাদপুর থানার ওসি মো: আসলাম আলী, এসআই মো: শারফুল ইসলাম ও এসআই কাঞ্চন কুমার প্রমুখ। 

এ সংবাদ সম্মেলনে শাহজাদপুর থানা সার্কেলের এএসপি মো. কামরুজ্জামান তার লিখিত বক্তব্যে জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ২০ নভেম্বর বুধবার ঘাতক দুই বন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তারা হত্যার দায় স্বীকার করে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ হত্যায় ব্যবহৃত চাকু ও নিহতের লুন্ঠিত ২টি মোবাইল ফোন, পরনের ট্রাউজার ও লুঙ্গী উদ্ধার করে। তিনি আরও জানান, নিহত রইচ উদ্দিন নলুয়া বটতলা বাজারের মুদি ব্যবসায়ী ছিলেন। তার ১ম স্ত্রী মারা গেলে তিনি ২য় বিয়ে করেন। প্রায় ৮/০৯ বছর আগে তার ২য় স্ত্রী তাকে তালাক দিয়ে চলে যায়। এরপর আর তিনি বিয়ে করেননি। এরপর তিনি নিজ গ্রামের একটি ভাড়া বাড়িতে একাই বাস করতেন এবং নিজেই রান্না করে খেতেন। তিনি প্রতিদিন সকাল ৬ টার দিকে এসে দোকান খুলতেন ও রাত ১০ টার দিকে দোকান বন্ধ করে বাড়ি চলে যেতেন। সারাদিন যে টাকা বেচাকেনা হতো তা বাড়িতে বিছানার নিচে রেখে দিতেন। নলুয়া গ্রামের রাজমিস্ত্রী মোঃ মামুন ও যুগ্নীদহ পশ্চিমপাড়া গ্রামের ভবঘুরে মোঃ জয়নাল শেখ নিয়মিত তার দোকানে আসতেন ও সদাইপাতি কিনতেন। এছাড়া নিয়মিত তারা তার দোকানে বসে আড্ডা দিতেন। ফলে মামুন ও জয়নাল শেখের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। ফলে তারা ব্যবসায়ী রইচের পূর্ব পরিচিত। এরমধ্যে মামুন ও জয়নালের হাতে কোনো টাকা পয়সা না থাকায় তারা ব্যবসায়ী রইচ উদ্দিনের জমানো টাকা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন। পরিকলাপনা অনুযায়ী মামুন শাহজাদপুর বাজার থেকে একটি চাকু ক্রয় করে। এরপর তারা গত ৩ নভেম্বর রাত ১০ টা থেকে ব্যবসায়ী রইচকে অনুসরণ করতে শুরু করে। তিনি বাড়ি যাওয়ার পরে রাত সাড়ে ১১ টার দিকে আসামী মামুন এবং জয়নাল রইচের ভাড়া বাড়িতে গিয়ে রইচকে ঘর থেকে ডেকে বের করে। রইচ বাইরে বের হলে আসামী জয়নাল রইচকে পিছন থেকে চেপে ধরে। এ সময় রইচ মাটিতে পড়ে গেলে আসামী মামুন রইচকে জবাই করে হত্যা করে। এরপর রইচের ঘরের তোষকের নিচে থাকা ১৬ হাজার টাকা আসামী মামুন নেয়। এরপরে রইচের ব্যবহৃত দুইটি মোবাইল ফোন ও রক্ত গামলাতে করে টয়লেটে ফেলে দেয়। মামুনের রক্তমাখা লুঙ্গী এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকু বাড়ির পাশে ডোবাতে ফেলে দেয়। এরপর মামুন রইচের লাশ একটি বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে আসামী জয়নালের সহায়তায় পাশের শফিকুলের ডোবায় ফেলে দেয়। এরপর মামুন নিজে ১০ হাজার টাকা নেয় এবং জয়নালকে ৬ হাজার টাকা দেয়। এরপর তারা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে গিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে থাকে। এদিকে পরদিন সকাল থেকে রইচের খোজ না পাওয়ায় এবং তার মোবাইল বন্ধ থাকায় তার আত্মীয় স্বজনেরা তাকে বিভিন্ন জায়গায় খোজা শুরু করে। কোথাও না পেয়ে গত ৮ নভেম্বর তার ছেলে দুলাল হোসেন শাহজাদপুর থানায় একটি নিখোঁজের ডায়েরি করেন। এরপর পুলিশ গত ১৮ নভেম্বর বিকালে নলুয়া বটতলার শফিকুল ইসলামের ডোবা হতে একটি গলিত লাশ উদ্ধার করে। ব্যবসায়ী রইচ উদ্দিনের ভাই আব্দুল মজিদ লাশের পড়নের চেক লুঙ্গী ও বাম হাতের ছয় আঙ্গুল দেখে তার ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করেন।

এরপর নিহত রইচ উদ্দিনের ছেলে দুলাল হোসেন বাদী হয়ে অপ্সাতনামাদের আসামী করে শাহজাদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে শাহজাদপুর থানা পুলিশের একটি দল গত ২০ নভেম্বর এ হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে নলুয়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে মোঃ মামুন ও যুগ্নীদহ পশ্চিমপাড়া থেকে মোঃ জয়নাল শেখকে গ্রেপ্তার করে। এছাড়া তাদেও স্বীকারোক্তিতে টয়লেট থেকে নিহত রইচের দুইটি মোবাইল ফোন, আসামী মামুনের বাড়ি থেকে রইচের একটি ট্রাউজার এবং রইচের বাড়ির পাশের ডোবা থেকে রক্তমাখা লুঙ্গী ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার কওে পুলিশ। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা রইচকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।