রাজশাহীর তানোর উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়ন ইউপির বিসিআইসির সার ডিলার বিকাশের বিরুদ্ধে সার পাচার ও বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় উত্তেজিত কৃষকরা বিকাশের ম্যানেজার বিধানকে গণধোলাই দিয়েছেন বলেও একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেন। উত্তেজিত কৃষকদের জনরোষ থেকে বাঁচতে ডিলার বিকাশ বিকেলে সার বিতরণ করবেন বলে সটকে পড়েন। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘটে ঘটনা। এছাড়াও কৃষি অফিসের বিএস সুমনকে অকাথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। কারন সে বসে থেকে সার বিতরণের ঘোষণা দিয়েছিলেন গত বৃহস্পতিবারে। কিন্তু তার কোন পাত্তাই নেই। ফলে কৃষি অফিস ও ডিলারের সিন্ডিকেটের কাছে চরম জিম্মি হয়ে পড়েছেন আলু চাষিরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, কামারগাঁ বাজারে মৌসুমি ট্রেডার্স নামের বিসিআইসির সার বিকাশ কুমার দাশ। সে বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময় থেকে দাপটের সাথে সার পাচার করে থাকেন। ওই সময় সার পাচারে স্থানীয় প্রভাবশালীরা সহায়তা করে থাকত। গত বৃহস্পতিবারে বিকাশের দোকানে সার আসে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সার নেয়ার জন্য কৃষকরা জড়ো হয় তার দোকানে। কিন্তু বিকাশ দোকান না খুলে কৃষি অফিসে খাতা স্বাক্ষরের নাম করে দোকান বন্ধ রাখেন। সন্ধ্যার আগে দোকান খুললেও সার বিতরণ করেননি। উত্তেজিত কৃষক দের শান্ত করতে অতিরিক্ত কৃষি অফিসার সুবাস ও বিএস সুমনের কথামত মেমো কাটেন। শুক্রবার সকাল থেকে রাতের মেমোতে সার দেয়া শুরু করেন বিকাশ। এরই এক পর্যায়ে প্রায় ১২/১৪ বস্তা টিএসপি ও পটাশ সার মোহনপুর উপজেলার কৃষককে বাড়তি দামে দিয়ে দেন। তারা সার নিয়ে যাওয়ার সময় কামারগাঁ ব্রীজের কাছে উত্তেজিত কৃষকরা আটকে দেন। এদিকে সার আটকানোর খবরে ডিলার বিকাশের দোকানের কর্মচারী বিধান বের হলে তাকে গণধোলাই দিয়ে দোকানের গেটে লাথি মারা শুরু করেন। তবে স্থানীয় বেশকিছু ব্যবসায়ীদের হস্তক্ষেপে কিছুটা শান্ত হয়।
উত্তেজিত কৃষকদের ভাষ্য, আমরা ভোর থেকে উপেক্ষা করছি। কিন্তু এক বস্তাও সার পাচ্ছি না। অথচ যারা পরে আসছে তারা সার নিয়ে চলে যাচ্ছেন। আবার মোহনপুরে পাচার করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার থেকে সার নিতে এসে পাচ্ছিনা। অথচ যারা প্রজেক্ট করছে তারা ঠিকই সার পাচ্ছে। আবার যাদের দলীয় পরিচয় বা নেতা তারাও সার পাচ্ছে। শুধু আমাদের মত প্রান্তিক কৃষকরা কোনভাবেই সার পাচ্ছে না। বিএস সুমন অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তার পছন্দের কৃষক কে সার দিতে মরিয়া হয়ে পড়েন। গত রাতে খুব বেশি হলে ৪০/৫০ টি মেমো হয়েছে। কিন্তু এখন বলছে ১৫০/২০০ টির নত মেমো হয়েছে। নেতাদের তদবির ও, কৃষি অফিসের গাফিলতির কারনে সার পাচ্ছিনা।
ডিলার বিকাশ জানান, বৃহস্পতিবার রাতে মেমো না কাটার জন্য এডিশোনাল কৃষি অফিসার সুবাশকে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু সে আমার কথায় কর্নপাত করেননি। রাতে মেমো না কাটলে মারপিট হট্টগোল হত না। আবার বরাদ্দও কম দিয়েছে। সকাল থেকে বিতরণ করার কারনে টিএসপি ও এমওপি সার শেষ হয়ে গেছে। এখন শুধু ডিএপি ও ইউরিয়া সার রয়েছে। তাও সামান্য পরিমানে রয়েছে। এটা বিতরণ করতে লাগলে পুনরায় মারপিট শুরু হবে। কারন চাহিদার তুলনায় একেবারে কম। উপজেলায় সাত জন বিসিআইসির ডিলার রয়েছে। আমি মাত্র ১৫ মে:টন টিএসপি ও ২৫ মে:টন এমওপি সার পেয়েছি। অথচ তালন্দ ইউপির ডিলার সুমনেকে ৩০ মে:টন ডিএসপি ও ৪২ মে:টন এমওপি, কলমা ইউপির সুলতানকে ৪৫ মে:টন টিএসপি ও ৭০ মে:টন এমওপি, বাধাইড় ইউপির নাবিলা ট্রেডার্স কে ৫৫ মে:টন টিএসপি ৯৫ মে:টন এমওপি, তানোর পৌরসভার মোল্লা ট্রেডার্স কে ১৭ মে:টন টিএসপি, ২৮ মে:টন এমওপি, চান্দুড়িয়া ইউপির ডিলারকে ১৩ মে:টন টিএসপি, ২৫ মে:টন এমওপি, পাঁচন্দর ইউপির প্রাইম ট্রেডার্স কে২৯ মে:টন টিএসপি, ৪৬ মে:টন এমওপি এবং মুন্ডুমালা পৌরসভার নাইস ট্রেডার্স কে১৮ মে:টন টিএসপি ও ৩৫ মে:টন এমওপি সার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মোহনপুর উপজেলার কৃষকের কাছে সার পাচার করছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, সে এইউপিতে চাষাবাদ করে। আজকের মারপিট হট্রগোল ও সিসি ক্যামেরা ভাংচুরের জন্য অতিরিক্ত কৃষি অফিসার সুবাস ও বিএস সুমনের জন্য এসব ঘটানা ঘটেছে। তারা রাতে মেমো না কাটলে কিছুই হতনা। গত বৃহস্পতিবারে অফিসে খাতা স্বাক্ষর করতে না গেলে বিতরণ করলেও পরিবেশ ভালো থাকত। যত মরন আমাদের মত ব্যবসায়ীদের। তারা ঠিকই বাড়িতে ঘুমিয়ে আছে।
বিএস সুমন জানান, ওই সময় অনেক কৃষক জমা হয়েছিল এজন্য মেমো কাটা হয়েছিল। সার পাচারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান ঘটনাস্থলেই আছি বলে দায় সারেন তিনি।
এডিশোনাল কৃষি অফিসার সুবাসের সাথে মোবাইলে কথা বলে জানতে চাইলে তিনি জানান, সরকারি নিয়মে সার জমিতে দিলে কোন সংকট হবে না। কিন্তু এউপজেলার কৃষকরা অতিরিক্ত সার ব্যবহার করে থাকে। এজন্য সংকট হয়। আপনি রাতে কেন মেমো কেটেছেন প্রশ্ন করা হলে উত্তরে বলেন কৃষকের সুবিধার জন্য মেমো কাটা হয়েছিল। মেমো কাটা নিয়েই তো মারপিট হয়েছে এদায় কে নিবে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি দেখছি বলে দায় সারেন।
গত বৃহস্পতিবারে কৃষি অফিসার কে ফোন দেয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।
নয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার খায়রুল ইসলাম কে অবহিত করা হলে তিনি জানান কৃষি অফিসারের সাথে কথা বলে গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।