খেতে সুস্বাদু আর পুষ্টিগুনে ভরপুর জনপ্রিয় খাবার কুমড়োর বড়ি দেয়ার ধুম পড়েছে গ্রামীণ জনপদে। মেহেরপুরের গাংনীও এর ব্যতিক্রমি নয়। শীতের মৌসুমে কুমড়ার বড়ির কদরটা একটু বেশি। বাড়ির আঙিনা, আশেপাশে মাচা করে সেখানে শুকানো হচ্ছে সেগুলো বড়ি। স্বাদে ও মান ভালো হওয়ায় দিন দিন বেড়েই চলেছে বড়ির চাহিদা। বাড়তি আয়ের পথ তৈরি হওয়ায় অন্যান্য কাজের পাশাপাশি পাড়া মহল্লায় নারীরা পালাক্রমে এই বড়ি দেয়ার কাজটি করছেন। অন্যদিকে ভোজন রসিকরাও তা খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন।
বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, সারি সারি কুমড়ার বড়ি তৈরি করে রোদে শুকাতে দেওয়া হয়েছে। নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও এ কাজে হাত লাগিয়েছেন। সাধারণত শীতকালেই কুমড়া বড়ির চাহিদা বেশি থাকে। আগে সনাতন পদ্ধতিতে বড়ি তৈরি করা হত। তখন সন্ধ্যায় ডাল ভিজিয়ে রেখে পরের দিন শিলপাটায় বেটে বড়ি তৈরি করা হত। কিন্তু আধুনিকতার ছোয়ায় এখন মেশিনের মাধ্যমে কুমড়ার বড়ি তৈরির ডাল ফিনিশিং করা হয়। হাটবাজারে কুমড়ার বড়ি বর্তমানে খুচরা ৩৫০-৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
কয়েকজন গৃহবধুর সাথে আলাপকালে জানা গেছে, রাতে কুটা কলাই-কুমড়ার ম- পাত্র করে সারারাত শীতের শিশিরে রাখা হয়। পরের দিন ভোরে গৃহিণীরা একত্রিত হয়ে বসে যান বড়ি দেওয়ার কাজে। কাঠ, নেট বা বাঁশের মাচার ওপর পরিষ্কার কাপড় বিছিয়ে তার উপর ধীরে ধীরে ডান হাতের মুঠোয় বসানো হয় বড়ি। হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় তারা বিশেষ কৌশলে বড়ি তৈরী করেন। এরপর কাঁচাবড়ি শীতের রোদে শুকানো হয়। বড়িগুলো যেন দেখা যায় তারার মতো ফুটে আছে। পরিষ্কার আবহাওয়া এবং তীব্র শীতে বড়ি বানালে সেই বড়ি স্বাদযুক্ত হয় বেশি।
বড়ি তৈরী সম্পর্কে গাংনীর শিমুলতলার জোসনা খাতুন জানান, বাজারে প্রতি কেজি মাস কলাইয়ের ডাল ১০০ থেকে ১২০ টাকা ও গ্রামে চাল-কুমড়ার আকার হিসেবে ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। প্রথমে মাস কলাইয়ের ডাল রোদে ভালো করে শুকিয়ে তারপর পানিতে ৬ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে খোসা ছাড়িয়ে নিতে হয়। কুমড়ো থেকে আঁশ ছাড়িয়ে নেওয়ার পর এর মধ্যে কিছু মসলা দিয়ে মেশিনের সাহায্যে মিশ্রণ করে কুমড়ো বড়ির জন্য উপকরণ তৈরি করা হয়। আবহাওয়া ভালো হলে কুমড়ো বড়ি গুলো ভালো হয়। বৈরী আবহাওয়া বা শৈত্য প্রবাহের ফলে কুমড়ো বড়ি নষ্ট হয়ে যায়। কুমড়ো বড়ি একটি মুখরোচক খাবার। অনেকের কাছে এটি অনেক প্রিয়। এটির ফলে তরকারির স্বাদে নতুন মাত্রা যোগ হয়।
বাজারে চাল কুমড়া ব্যাপক চাহিদাও লক্ষ্য করা গেছে। গ্রামে দাম কম থাকলেও শহর বাজারে খুচরা বাজারে প্রতিটি কুমড়া ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা করে বিক্রি করছেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এই কুমড়া সংগ্রহ করে বাড়ির বৌ-ঝিরা বড়ি তৈরি করছেন। বড়ি তৈরি করতে পরিশ্রম বেশি হলেও লাভও হয় বেশি। আগে সব সময় কলাই পাওয়া গেলেও কুমড়া পাওয়া যেত না। কিন্তু এখন বড়ি দেওয়ার জন্য কুমড়াও পাওয়া যায় সব সময়। তাছাড়া আগের তুলনায় বড়ি তৈরীতে পরিশ্রম অনেক কম। আগে মেয়েরা বাড়ির ঢেঁকিতে কুমড়া ও কলাইয়ের ডাল মিহি করে কুটতো। এখন মেশিনের সাহায়্যে সব করা হয়।
পুষ্টিবীদ তরিকুল ইসলাম জানান, প্রতি ১০০ গ্রাম মাষকলাইতে আছে ৩৪১ মি.গ্রা. ক্যালরি, ৯৮৩ মি.গ্রা. পটাসিয়াম, প্রোটিন ২৫ গ্রাম, সোডিয়াম ৩৮ মি.গ্রা. ক্যালসিয়াম ১৩৮ মি.গ্রা. আয়রন ৭.৫৭ মি.গ্রা। অপরদিকে, চাল-কুমড়া পুষ্টিকর একটি সবজি। এতে বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবার রয়েছে তাই চাল কুমড়ার উপকারিতা অনেক। যক্ষ¥া, কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাস্ট্রিকসহ বহু রোগের উপশম করে চাল কুমড়া। চাল কুমড়া তরকারি হিসেবে খাওয়া ছাড়াও মোরব্বা, হালুয়া,পায়েস এবং পাকা কুমড়া এবং কালাই ডাল মিশিয়ে কুমড়ো বড়ি তৈরী করেও খাওয়া হয়। সব মিলিয়ে কুমড়ো বড়ি নিঃসন্দেহে একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর খাবার বলে মন্তব্য করেন তিনি।