রাজশাহীর তানোরে মসজিদের নামে বরাদ্দ এসি অফিসার্স ক্লাবে লাগানো হয়েছে। অপরদিকে, মসজিদ ফান্ডের প্রাপ্ত অর্থ ইমাম আত্নসাৎ করেছেন বলে প্রমান পেয়েছে তদন্ত কমিটি। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রশাসন ও ইমামের এমন দূর্নীতিতে উপজেলাজুড়ে বইছে সমলোচনার ঝড়।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, গেলো ২০২৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তানোর উপজেলা ক্যাম্পাসে অবস্থিত পুড়াতন মসজিদের নামে দুই টন আর মডেল মসজিদের নামে দুই টন টিআর এর চাল পৃথক ভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়। এসব বরাদ্দের চাল তৎকালিন সময়ে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয় বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়। ওই অর্থ দিয়ে অফিসার্স ক্লাবে দুটি এসি, ইউএনও’র সিওর রুমে একটি এসি এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের রুমে দুটি এসি লাগানো হয়। কিন্তু পুড়াতন মসজিদে কোন এসি লাগানো হয়নি। বাঁকি অর্থ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস ও মডেল মসজিদের ইমাম ভাগবাটোয়া করে নেন। কিন্তু এরআগে মসজিদের নামে তৎকালিন ইউএনও বিল্লাল হোসেন বিভিন্ন প্রাপ্ত ফান্ড হতে ৩ লাখ টাকা মসজিদে অনুদান দেন। ওই অনুদানের টাকাও ছলচাতুরির আশ্রয়ে এসি ক্রয়ের নামে তসরুফ করা হয় বলে মসজিদ কমিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক সদস্য এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। তবে, তাদের বিভিন্ন কলরেকর্ড এ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষণ রয়েছে।এছাড়াও বিগত ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর হতে ২০২৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুসল্লিদের কাছে চাঁদা আদায় ও মসজিদের ফান্ডে বিভিন্ন প্রাপ্ত অর্থের ৬২ হাজার ৮৬৭ টাকা ইমাম মো. এখলাসুর রহমান আত্নসাৎ করেন বলে ইসলামি ফাউন্ডেশনের রাজশাহীর পরিচালক আনিসুজ্জামান সিকদার ইউএনও বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তবে, এমন প্রতিবেদনের বছর পেরিয়ে গেলেও ইমামের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভ অসন্তোষ বিরাজ করছে।
এবিষয়ে ইমাম মো. এখলাসুর রহমান বলেন, ইসলামি ফাউন্ডেশনের রাজশাহীর পরিচালক আনিসুজ্জামান সিকদার তার বিভিন্ন অনিয়ম ব্যাপারে ইউএনও বরাবর প্রতিবেদন দিয়েছেন। বিষয়টি আমিও শুনেছি। কিন্তু ইউএনও তাকে কোন নোটিশ দেননি বা জানতে চাননি। তবে, এসংক্রান্ত ব্যাপারে কোন নোটিশ পেলে জবাব দেবেন নইলে যেকোন শাস্তি মাথা পেতে নেবেন বলে এড়িয়ে গেছেন তিনি।রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪৩ শতক জমির ওপরে উপজেলা ক্যাম্পাসে মডেল মসজিদ নির্মিত হয়। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আর গণপূর্ত বিভাগের বাস্তবায়নে মসজিদ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানটি নকশা অনুযায়ী কাজ সমাপ্ত করে প্রশাসনের নিকট হস্তান্তর করে। পরে সিডিউল অনুযায়ী ঠিকাদার ৮টি এসি সরবরাহ করেন। এসব এসি মসজিদে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিয়মমতে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ মডেল মসজিদের উদ্বোধন করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এব্যাপারে উপজেলা মডেল মসজিদের সভাপতি ইউএনও খাইরুল ইসলাম বলেন, কেবল মাত্র ১৭ নভেম্বর তিনি যোগদান করেছেন। তবে, মসজিদ ফান্ডের প্রাপ্ত অর্থ ইমাম কেন, যে কেউ আত্নসাৎ করে থাকলে ফাইল দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু মসজিদের নামে বরাদ্দ এসি অফিসার্স ক্লাবে লাগানো উচিত হয়নি। এমনটি হয়ে থাকলে খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান।