চলতি রবি মৌসুমে শিমের মাচায় দুলছে চাষীর আশার স্বপ্ন। রঙ্গিন ফুল আর সবুজ ফলের সাথে চাষীর মুখে ফুটে উঠেছে মিষ্টি হাসি। বেগুনি রঙ্গের মনোমুগ্ধকর ফুলে প্রকৃতি সেজেছে দারুণ মুগ্ধতায়। মৌসুম শুরুর আগেই এমন মনোরম দৃশ্যে মাচায় ভরে আছে এলাকার শিম বাগান।
আগাম শিম চাষ করে ভাল ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন মেহেরপুরের চাষিরা।
জেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, শীতকালীন সবজি’র মধ্যে অন্যতম শিম। বছর পাঁচেক বছর ধরে এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে আগাম জাতের শিম। অন্যান্য ফসলের তুলনায় কম খরচে বেশী লাভ হওয়ায় দিনদিন এই আবাদে ঝুঁকছেন চাষিরা। আগাম বাজারে নামাতে পারলে ভালো দাম পাওয়া যাবে এমন প্রত্যাশা কৃষকদের। চলতি মৌসুমে জেলায় ৩০০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হচ্ছে। তাছাড়া প্রায় প্রতিটি বাড়িতে মাচা কিংবা গাছে শোভা পাচ্ছে শিম গাছ। গৃহিনীরা সাংসারিক প্রয়োজন মেটানোর পর শিম বিক্রি করে বাড়তি টাকা আয় করছেন।
সাহারবাটি গ্রামের শিম চাষী হাফিজুল জানান, তিনি এক বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে সাড়ে ১২ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত উৎপাদিত শিম বিক্রি হয়েছে সাড়ে ১৮ হাজার টাকা। আরো ১০ হাজার টাকার শিম বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া শিম চাষের উপযোগী হওয়ায় ভাল ফলন হয়েছে। অন্যদিকে চাহিদা থাকায় দামও আশানুরুপ। আগামীতে আরো এক বিঘা জমিতে আগাম জাতের শিম চাষ করবেন বলে জানান তিনি।
করমদি গ্রামের শিম চাষি হাবিবুর রহমান জানান, প্রতি বছর বিভিন্ন জাতের আগাম সবজি চাষ করেন তিনি। গেল বছর ভাল দাম পাওয়ায় চলতি মৌসুমে দেড় বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। জ্বালানী তেলসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষে খরচও আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। তবে দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন তিনি। তিনি আরো জানান, চারা গজানোর ২৫ থেকে ৩০ দিনের মাথায় ফুল আসে। এরপর দেড় মাস পর থেকেই শিম তোলা শুরু হয়। প্রতি তিন থেকে ৪ দিন পরপর শিম তুলে বাজারে বিক্রি করা হয়। একটানা ৬ মাস পর্যন্ত ক্ষেত থেকে শিম উঠানো যায়।
বামন্দী বাজারের সবজি ব্যবসায়ি আরিফ জানান, চলতি মৌসুমে শিমের চাহিদা রয়েছে। ক্রেতারা টাটকা এ সবজি কিনে নিচ্ছেন। ব্যবসায়িরা সরাসরি কৃষকদের ক্ষেত থেকে তুলে বিক্রি করায় খরচ কম হচ্ছে এবং বেচা বিক্রিতে ভাল লাভও হচ্ছে। একই কথা জানালেন সবজি ব্যবসায়ি হেমায়েতপুরের মনিরুল ও আকরাম আলী। তিনি আরো জানান, শুধু কাচা শিমই নয়, পাকা শিম কিনে তা থেকে বীজ বের করে বীজ হিসেবে ও মানুষের মুখরোচক খাবার হিসেবেও বিক্রি করা হয়।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, এখানকার মাটি সবজি চাষের উপযোগী হওয়ায় কৃষকরা সহজেই এর চাষ করতে পারে। কৃষি বিভাগও সার্বিক পরামর্শ দিচ্ছে। বিশেষ করে বালাইনাশক ব্যবহার ও শিম বাজারজাত করণে সব সময় চাষিদের পাশে আছে কৃষি বিভাগ।