সাত মন ধান বিক্রি করে ব্র্যাকের ৪০ কেজির এক বস্তা আলু বীজ মিলছে। তাও কয়েকদিন উপেক্ষার পর জুটছে। অথচ দিনের দিন ধানের দাম কমতেই আছে। তারপরও বীজ মিলছে না কৃষকের ভাগ্যে। নির্ধারির মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি দাম নিলেও কর্তৃপক্ষ একেবারেই নিরব অবস্থায়। অথচ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মৌখিক হুশিয়ারি দিলেও বাস্তবে কোন প্রতিকার নেই। যার কারনে অপেন সিন্ডিকেটে নেমেছেন ব্র্যাক বীজ ডিলার শাহিন মাস্টারসহ বীজ ব্যবসায়ী ও বীজ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ফলে ডিলার শাহিন মাস্টারসহ কালোবাজারি ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, ব্র্যাক আলুর বীজ ডিলার শাহিন মাস্টার। তার ডিলার পয়েন্ট তালন্দ বাজারে। কিন্তু প্রায় ১২/১৪ দিন ধরে শাহিন মাস্টার আত্মগোপনে আছে। প্রতিদিন বীজ নিতে কৃষকরা দোকানে ভীড় করছেন। কিন্তু ডিলারকে না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। উপজেলায় রোপা আমন ধান কাটা শেষ হয়েছে। চলছে আলু রোপনের জন্য জমি চাষ। প্রথম দিকে ধানের বাজার ১৩০০ টাকা মন ছিল। হঠাৎ ধানের বাজার কমে ১২৫০ থেকে ১২৭০ টাকা মনে বিক্রি করতে হচ্ছে। সিন্ডিকেটের কারনে দিনের দিন ধানের দাম কমতেই আছে । একমন ধান ১২৫০ টাকায় বিক্রি হলে সাত মন ধানের দাম লাগে ৮ হাজার ৭৫০ টাকা। ছয় মন ধানের দাম লাগে ৭ হাজার ৫০০ টাকা। ৪০ কেজির এক বস্তা ব্র্যাকের আলুর বীজ নিতে গুনতে হচ্ছে ৮ হাজার থেকে ৮০৫০০ টাকা করে।
সুত্র জানায়, উপজেলায় একমাত্র ব্র্যাক বীজ ডিলার শাহিন মাস্টার। সে আত্মগোপনে থাকলেও তার ভায়ের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় বীজ মজুদ করে রেখেছে। তার ভায়ের কর্মচারীসহ নিকট আত্মীয় দের বাড়িতে মজুদ করা হয়েছে বলে অহরহ অভিযোগ। সম্প্রতি তার দোকানে পুলিশ সেনাবাহিনীর পাহারায় ন্যায্য মূল্য সামান্য পরিমান বীজ বিক্রি করেছেন। এটাকে এক প্রকার আইওয়াশ করা হয়েছে বলেও মনে করছেন কৃষকরা। তারপর থেকে ডিলারের কোন খোঁজ নেই।
প্রান্তিক আলু চাষী সোহেল, আশরাফুল, আব্দুল্লাহসহ অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রকাশ্যে দিবালোকে শাহিন মাস্টারসহ ব্যবসায়ীরা বীজ নিয়ে কারসাজি করছেন। আশপাশের বিভিন্ন খুচরা দোকানে বাড়তি দামে বিক্রি করেছেন। এছাড়াও তার ভায়ের মাধ্যমেও বিভিন্ন গ্রামে বীজ রেখে দ্বিগুণের বেশি টাকায় বিক্রি করছেন। আমরা ক্ষুদ্র প্রান্তিক চাষী। রোপা আমন ধান বিক্রি করে বীজ সার কিনতে হবে। বর্তমানে একমন ধান বিক্রি হচ্ছে ১২৫০ থেকে ১২৭০ টাকায়। সে হিসেবে সাত মন ধান বিক্রি করলে ৪০ কেজির এক বস্তা বীজ কিনা যাবে। বিশেষ করে বিগত বছরের তুলনায় এবারে বেপরোয়া কারসাজি চলছে। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি দপ্তর একেবারেই নিরব ভূমিকা পালন করছেন। এক বিঘা জমিতে ঊর্ধ্বে ২০ মন ধান হচ্ছে। সবকিছু বাদ দিয়ে ১৫/১৬ ধান ঘরে তুলতে পারছেন কৃষক রা। একবস্তা আলু বীজ কিনতে যদি সাত মন ধান বিক্রি করতে হয় তাহলে এক বিঘা জমির ধান বিক্রি করে তিন বস্তা বীজ আলু কিনা যাচ্ছে না। যারা প্রজেক্ট করে তাদের কোন কিছুর সমস্যা নেই। আমাদের মত প্রান্তিক কৃষকদের হয়রানির শেষ নেই।
তারা আরো জানান, বীজ ডিলার শাহিন মাস্টার প্রায় ৩৫০ মে:টন বীজ বরাদ্দ পেয়েছেন। তার রেজিস্ট্রার খাতা যাচাই বাছাই করলেও থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়বে। কিন্তু সেটা কেউ করছেন না। বিগত সময়ে সিন্ডিকেট হয়েছে, কিন্তু এত পরিমান হয়নি। অবস্থাটা দেখে মনে হচ্ছে প্রশাসন বলে কেউ নেই।
চান্দুড়িয়া ইউপির ক্ষুদ্র মাঝারি আলু চাষী সোহেল, রহিদুল জানান, কালীগঞ্জ হাটে সার ব্যবসায়ী লালু প্রকাশ্যে দ্বিগুণ দামে ব্র্যাক আলুর বীজ বিক্রি করছেন। লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার হয়নি।
ব্র্যাকের বীজ ডিলার শাহিন মাস্টারের মোবাইলে ফোন দেয়া হলেও রিসিভ করেননি। তার খোঁজে ডিলার পয়েন্টে ও প্রতিষ্ঠান এবং বাড়িতে খোঁজ করেও তার সন্ধান পাওয়া যায় নি।
উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ কে বাড়তি দামে বীজ বিক্রির বিষয়ে অবহিত করা হলে তিনি জানান, কোন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার খায়রুল ইসলাম অবহিত করা হলে তিনিও একই ধরনের কথা বলেন।