রাজশাহীর তানোরে গভীর নলকূপের অপারেটর নিয়োগের জন্য আবেদন ফরম বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে বিএমডিএর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ফরম নিলেই দিতে হচ্ছে এক হাজার টাকা করে। এর আগেও ফরম জমা নিয়েছিলেন বিএমডিএতে। একশো থেকে দুইশো টাকা করে গুনতে হয়েছিল ওই সময়। আগের ফরম বাতিল করে নানা নিয়ম বেঁধে নতুন ভাবে আবেদন ফরম কেনার জন্য নোটিশ দেয় বিএমডিএ। ফলে এক হাজার টাকার বিপরীতে প্রায় ১৭ লাখ টাকার বানিজ্য হয়েছে। তবে বৈষম্যের তকমা লাগিয়ে এধরনের বানিজ্য কে ভালো ভাবে নিতে নারাজ এউপজেলার সাধারণ কৃষক রা। অথচ গভীর নলকূপের অপারেটর নিয়োগ হবে রাজনৈতিক বিবেচনায়।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন স্বৈরাচার হাসিনা। তারপর থেকে উপজেলার গভীর নলকূপে তালা দেয়ার হিড়িক পড়ে। এক প্রকার বাধ্য হয়ে অপারেটর নিয়োগের জন্য আবেদন নেয়া শুরু করেন বিএএমডিএ তানোর জোন অফিস। সেই ফরম জমা দেয়ার জন্য নির্ধারিত দিন ধার্য করা হয়েছিল। প্রায় ৫১৬ টি গভীর নলকূপের বিপরীতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার আবেদন পড়েছিল। ফরম প্রতি ২০০ টাকা করে খরচ হলে ৫ হাজার আবেদনের বিপরীতে প্রায় লক্ষাধিক টাকা খোয়া যায় আবেদন কারী কৃষক দের। কিন্তু অধিক বানিজ্যের কারনেই আগের আবেদন বাতিল করে মোটা বানিজ্য করতেই আবেদন ফরমের ১ হাজার টাকা করে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
সুত্রে জানা যায়, গত অক্টোবর মাসের শুরুর দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিএমডিএর চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেন গোদাগাড়ী উপজেলার কৃতি সন্তান প্রয়াত ব্যারিস্টার আমিনুল হকের বড় ভাই আসাদুজ্জামান কে। তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর নতুন নিয়ম জারি করে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ। চলতি মাসের ৩ তারিখে গভীর নলকূপের অপারেটর নিয়োগের জন্য আগের আবেদন বাতিল করে নতুন নিয়ম কানুন জড়িয়ে দেন। আবেদন ফরম নিতে হলে বিএমডিএ অফিসে ১ হাজার টাকা জমা দেয়ার পর ফরম নিতে হচ্ছে।
অবশ্য উপজেলার প্রতিটি গভীর নলকূপ দখল করে ফেলা হয়েছে। অথচ অফিসিয়াল ভাবে অপারেটর নিয়োগ হয়নি। দলীয় প্রভাবে সব দখল হয়ে গেছে। উপজেলায় বিএমডিএর গভীর নলকূপ রয়েছে ৫৩৬ টি এবং ব্যক্তি মালিকানা রয়েছে ১৬ টি মোট ৫৫২ টি। এর মধ্যে বিএমডিএর ২০ গভীর নলকূপ অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে এবং ৫১৬ টি সচল রয়েছে। গত ১৫ নভেম্বর আবেদন ফরম জমার শেষ দিন ছিল। আবেদন জমা পড়ে ১৬৯৪ টি। সেই হিসেবে এউপজেলায় ফরম বানিজ্য হয়েছে প্রায় ১৭ লাখ টাকা। আবেদনের পর নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর সময় অপারেটর নিয়োগ স্থগিত চেয়ে আদালতে রিট দায়ের করা হয়। রিটের প্রেক্ষিতে নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত হয়ে পড়ে।
কৃষকদের ভাষ্য, গভীর নলকূপে অপারেটর নিয়োগ হয় দলীয় বিবেচনায়। গত ৫ আগস্টের আগে আ”লীগ নেতাদের কব্জায় ছিল গভীর নলকূপ গুলো। সরকারের পতনের পর সব ডিপে একাধিক তালা মারা হয়। নিয়োগের আগেই দখল হয়ে গেছে, তাহলে নিয়োগের জন্য আবেদন কেন এমন প্রশ্ন কৃষকদের। কারন বিগত ১৬ বছর ধরে আ”লীগ কৃষকদের জিম্মি করে নানা ভাবে অনিয়ম দূর্নীতি করেছে, এখন বিএনপির নেতারা নিয়োগ পাওয়ার আগেই দখলে নিয়ে ডিপ পরিচালনা করছেন। তাদের নামেই নিয়োগ দিলেই তো হয়। এত নিয়ম কানুনের তো কোন প্রয়োজন নেই। প্রতি নিয়তই কোন না কোন ডিপে হট্টগোল হতেই আছে। বিএমডিএ ও উপজেলা সেচ কমিটি নির্বিকার হয়ে পড়েছেন।
আবেদন ফরম নিতে ১ হাজার টাকা নেয়ার বিষয়ে বিএমডিএ রাজশাহী রিজওয়ানের নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলামের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, টাকার নেয়ার কোন প্রশ্নই আসেনা, গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।
তানোর জোনের অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী জামিলুর রহমানের সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান, কয়েক দফা সভা করার পর ২৩ নিয়ম ও ১ হাজার টাকা আবেদন ফরমের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। স্যার হয় তো বুঝতে পারেনি। তবে ১ হাজার টাকার বিপরীতে কেউ বাড়তি টাকা নিলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।