Dhaka ০৩:৫৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কক্সবাজার জেলায় ৪০০ কোটি টাকা সুপারি উৎপাদন

কক্সবাজার জেলায় চলতি বছরে ১২ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন সুপারি উৎপাদন হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ৪০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। জেলার আট উপজেলায় ৩ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে সুপারির চাষ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে সুপারি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত টেকনাফে ১ হাজার ২৮০ হেক্টর। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. বিমল কুমার প্রামাণিক  জানান, কক্সবাজার জেলায় আবহাওয়া ও মাটি সুপারি চাষের জন্য বেশ উপযোগী। সুপারি চাষে তেমন একটা খরচ পড়ে না। গাছের গোড়া পরিস্কার ও শুষ্ক মৌসুমে পানি দিতে হয়। দিন দিন সুপারির চাহিদা বেড়েই চলেছে। এজন্য চাষিরা সুপারি চাষে লাভবান হচ্ছেন। সঠিক সময়ে সঠিক পরিচর্যার কারণে এবার সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার কাঁচা-পাকা সুপারির দাম কিছুটা বেশি। ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষিরা।স্থানীয় চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিন রকমভাবে সুপারি বিক্রি হয়ে থাকে। মৌসুমের শুরুতে গাছের লাল সুপারীতে একরকম দাম পাওয়া যায়। এরপর জাগ দিয়ে ভেজানো সুপারি মৌসুম শেষে আরেকটু চড়া দামে বিক্রী করা যায়। এছাড়া সুপারি শুকিয়ে মজুদ রেখে কয়েকমাস পরে ছোবড়া ছিলেও বিক্রী করা হয়। বলতে গেলে এক মৌসুমের সুপারি ধাপে ধাপে বিভিন্ন পদ্ধতিতে সারাবছরই সুযোগমতো বিক্রী করে বাগান মালিকরা বাড়তি উপার্জন করে থাকে।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য জানিয়েছেন , ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জেলায় ৩ হাজার ৫২০ হেক্টর এলাকায় সুপারির আবাদ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ১২ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য ৩৯৬ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সুপারির আবাদ হয়েছিল ২ হাজার ৭৭০ হেক্টর। উৎপাদন হয়েছিল ৩ হাজার ৯’শ মেট্রিক টন।স্থানীয়রা জানান , ৮০ টা সুপারিতে ১ পণ। যা মৌসুমের শুরুতে প্রকারভেদ ২৮০-৪৫০ টাকা বিক্রি হয়ে থাকে। সাইজ অনুযায়ী আরো বেশি বিক্রি হয়। দূর দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে নিয়ে পুরো বাগান কিনে নেয়।কয়েকজন বাগান মালিক জানান, সুপারি চাষে খরচ তেমন হয়না। গাছের তেমন পরিচর্যা করতে হয়না। মাঝেমধ্যে গাছের গোড়া পরিস্কার ও সার দিলে ভালো। অন্যান্য ফসলের চেয়ে অধিক লাভ। চাহিদা বেশি থাকায় প্রত্যাশিত দামও পাওয়া যায়। যে কারণে জেলার বিভিন্ন এলাকায় সুপারি চাষ বেড়েছে।

স্থানীয় চাষী, ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সঠিকভাবে চারা লাগালে ও যত্ন নিলে ছয় বছরে সুপারির ফলন আসতে শুরু করে। তবে বেশি ফলন ধরে ১০ থেকে ১২ বছরের পর থেকে। সুপারি গাছ ২০ থেকে ২৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। একটি গাছে বছরে ৩ থেকে পাঁচটি ছড়া আসে। গাছে ফুল আসার পর ৯ থেকে ১০ মাস লেগে যায় ফলন পাকতে। প্রতি ছড়াতে ৫০ থেকে ১৫০টি পর্যন্ত সুপারি থাকে। আগস্ট থেকে সুপারি পাকতে শুরু করে। মার্চ পর্যন্ত সুপারি সংগ্রহ চলে। এতে হেক্টর প্রতি ১ থেকে ৭ মেট্রিক টন পর্যন্ত শুকনো সুপারি পাওয়া যায়।বিমল কুমার প্রামাণিক জানান, জেলায় ৩ হাজার ৫২০ হেক্টর আবাদ হয়েছে। অন্যন্য বছরের তুলনায় আবাদ বেড়েছে। যেখান থেকে চাষীদের আয় হবে ৩৯৬ কোটি টাকারও বেশি। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুপারি উৎপাদন হয় টেকনাফে। এবারেও ১২৮০ হেক্টর আবাদ হয়েছে। টেকনাফ- উখিয়ার ঘরে ঘরে সুপারির বাগান।অর্থনীতিবিদদের ধারণা, টেকনাফের মাটি ও আবহাওয়া এ কৃষিপণ্যটি চাষের জন্য বেশ উপযোগী। সুপারির উন্নয়নে সুষ্ঠু পরিকল্পনা নেয়া গেলে আগামীতে আরো বেশি ফলন বাড়ানো সম্ভব।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছেন, সুপারী ভাল গুনাগুন সম্পন্ন কৃষিজাত কোন পণ্য না হওয়ায় এটি নিয়ে সরকারের বিশেষ কোন পরিকল্পনা নেই। তবুও প্রাকৃতিক কারণে  এদেশে সুপারির উৎপাদন হওয়ায় এবং সুপারি বিক্রী করে আশানুরূপ আয় হওয়ায় মানুষ সুপারি বাগান করতে বেশী আগ্রহী হয়। এখানে বাড়ির আশ-পাশে, প্রবেশ পথে, পুকুরপাড়ে, রাস্তার ধারে সারি-সারি সুপারি গাছ রয়েছে। সুপারি কক্সবাজারের অর্থকরি ফসলের মধ্যে একটি অন্যতম ফসল।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে পরিত্যক্ত লোহা বিক্রি

কক্সবাজার জেলায় ৪০০ কোটি টাকা সুপারি উৎপাদন

Update Time : ০২:০২:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজার জেলায় চলতি বছরে ১২ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন সুপারি উৎপাদন হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ৪০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। জেলার আট উপজেলায় ৩ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে সুপারির চাষ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে সুপারি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত টেকনাফে ১ হাজার ২৮০ হেক্টর। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. বিমল কুমার প্রামাণিক  জানান, কক্সবাজার জেলায় আবহাওয়া ও মাটি সুপারি চাষের জন্য বেশ উপযোগী। সুপারি চাষে তেমন একটা খরচ পড়ে না। গাছের গোড়া পরিস্কার ও শুষ্ক মৌসুমে পানি দিতে হয়। দিন দিন সুপারির চাহিদা বেড়েই চলেছে। এজন্য চাষিরা সুপারি চাষে লাভবান হচ্ছেন। সঠিক সময়ে সঠিক পরিচর্যার কারণে এবার সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার কাঁচা-পাকা সুপারির দাম কিছুটা বেশি। ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষিরা।স্থানীয় চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিন রকমভাবে সুপারি বিক্রি হয়ে থাকে। মৌসুমের শুরুতে গাছের লাল সুপারীতে একরকম দাম পাওয়া যায়। এরপর জাগ দিয়ে ভেজানো সুপারি মৌসুম শেষে আরেকটু চড়া দামে বিক্রী করা যায়। এছাড়া সুপারি শুকিয়ে মজুদ রেখে কয়েকমাস পরে ছোবড়া ছিলেও বিক্রী করা হয়। বলতে গেলে এক মৌসুমের সুপারি ধাপে ধাপে বিভিন্ন পদ্ধতিতে সারাবছরই সুযোগমতো বিক্রী করে বাগান মালিকরা বাড়তি উপার্জন করে থাকে।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য জানিয়েছেন , ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জেলায় ৩ হাজার ৫২০ হেক্টর এলাকায় সুপারির আবাদ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ১২ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য ৩৯৬ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সুপারির আবাদ হয়েছিল ২ হাজার ৭৭০ হেক্টর। উৎপাদন হয়েছিল ৩ হাজার ৯’শ মেট্রিক টন।স্থানীয়রা জানান , ৮০ টা সুপারিতে ১ পণ। যা মৌসুমের শুরুতে প্রকারভেদ ২৮০-৪৫০ টাকা বিক্রি হয়ে থাকে। সাইজ অনুযায়ী আরো বেশি বিক্রি হয়। দূর দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে নিয়ে পুরো বাগান কিনে নেয়।কয়েকজন বাগান মালিক জানান, সুপারি চাষে খরচ তেমন হয়না। গাছের তেমন পরিচর্যা করতে হয়না। মাঝেমধ্যে গাছের গোড়া পরিস্কার ও সার দিলে ভালো। অন্যান্য ফসলের চেয়ে অধিক লাভ। চাহিদা বেশি থাকায় প্রত্যাশিত দামও পাওয়া যায়। যে কারণে জেলার বিভিন্ন এলাকায় সুপারি চাষ বেড়েছে।

স্থানীয় চাষী, ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সঠিকভাবে চারা লাগালে ও যত্ন নিলে ছয় বছরে সুপারির ফলন আসতে শুরু করে। তবে বেশি ফলন ধরে ১০ থেকে ১২ বছরের পর থেকে। সুপারি গাছ ২০ থেকে ২৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। একটি গাছে বছরে ৩ থেকে পাঁচটি ছড়া আসে। গাছে ফুল আসার পর ৯ থেকে ১০ মাস লেগে যায় ফলন পাকতে। প্রতি ছড়াতে ৫০ থেকে ১৫০টি পর্যন্ত সুপারি থাকে। আগস্ট থেকে সুপারি পাকতে শুরু করে। মার্চ পর্যন্ত সুপারি সংগ্রহ চলে। এতে হেক্টর প্রতি ১ থেকে ৭ মেট্রিক টন পর্যন্ত শুকনো সুপারি পাওয়া যায়।বিমল কুমার প্রামাণিক জানান, জেলায় ৩ হাজার ৫২০ হেক্টর আবাদ হয়েছে। অন্যন্য বছরের তুলনায় আবাদ বেড়েছে। যেখান থেকে চাষীদের আয় হবে ৩৯৬ কোটি টাকারও বেশি। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুপারি উৎপাদন হয় টেকনাফে। এবারেও ১২৮০ হেক্টর আবাদ হয়েছে। টেকনাফ- উখিয়ার ঘরে ঘরে সুপারির বাগান।অর্থনীতিবিদদের ধারণা, টেকনাফের মাটি ও আবহাওয়া এ কৃষিপণ্যটি চাষের জন্য বেশ উপযোগী। সুপারির উন্নয়নে সুষ্ঠু পরিকল্পনা নেয়া গেলে আগামীতে আরো বেশি ফলন বাড়ানো সম্ভব।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছেন, সুপারী ভাল গুনাগুন সম্পন্ন কৃষিজাত কোন পণ্য না হওয়ায় এটি নিয়ে সরকারের বিশেষ কোন পরিকল্পনা নেই। তবুও প্রাকৃতিক কারণে  এদেশে সুপারির উৎপাদন হওয়ায় এবং সুপারি বিক্রী করে আশানুরূপ আয় হওয়ায় মানুষ সুপারি বাগান করতে বেশী আগ্রহী হয়। এখানে বাড়ির আশ-পাশে, প্রবেশ পথে, পুকুরপাড়ে, রাস্তার ধারে সারি-সারি সুপারি গাছ রয়েছে। সুপারি কক্সবাজারের অর্থকরি ফসলের মধ্যে একটি অন্যতম ফসল।