Dhaka ১০:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেহেরপুরে নিম্ন আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস

CREATOR: gd-jpeg v1.0 (using IJG JPEG v62), quality = 82

মেহেরপুরের গাংনীর বামন্দীতে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন মিনাপাড়ার নয়ন। থাকেন নিজ বাড়িতে। আগে অফিসের কাছাকাছি থাকতেন স্বস্ত্রীক। স্ত্রী সন্তান সম্ভবা। আগে অফিসের কাছাকাছি থাকলেও সংসার খরচের লাগাম টানতে শেষ পর্যন্ত ভাড়া বাসায় না থেকে বাড়িতে থাকা শুরু করেন তিনি।  দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় যে ব্যয় বেড়েছে তা সমন্বয় করতে কষ্ট হলেও বাড়ি থেকেি তার যাতায়াত। তারপরও সংসার জীবনের অঙ্কে বড় গরমিল তার!

জীবন খাতার হিসাব মেলাতে না পারা নয়ন জানান, আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বছরে একবার বাড়ত। এখন সপ্তাহ কিংবা দিনের ব্যবধানে বাড়ছে। কোথাও কোনো জবাবদিহি নেই। মাঝে মধ্যে নড়ে চড়ে বসে সরকার। তারপরও কোন অগ্রগতি নেই বাজার নিয়ন্ত্রণে। নিজের যাতায়াত, মা বাবাও স্ত্রীর চিকিৎসা আর সংসারের খরচ- সব মিলিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন তিনি।

শাওনের বক্তব্যের সঙ্গে মিল পাওয়া যায় হেমায়েতপুরের মুদি ব্যবসায়ি রাজুর। তিনি জানান, ক্রেতাদের অনেকেই পণ্য কেনার ধরন পাল্টেছেন। আগে যারা সবচেয়ে ভালো পণ্য খুঁজতেন, তারা এখন সাধারণ মানের পণ্য কিনছেন। অনেকে আবার বোতলজাত ও প্যাকেট রেখে খোলা পণ্যে ঝুঁকছেন। আসলে সবার হাতেই টান পড়েছে। একরকম হতাশা বিরাজ করছে মধ্যবিত্ত ও নি¤œ মধ্যবিত্তদের মাঝে।

ছোট ব্যবসায়ী, দিনমজুর, রিকশাচালক, পরিবহন শ্রমিক থেকে শুরু করে মাঝারি ও নিম্ন আয়ের মানুষদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, তারা কেউ ভালো নেই। খরচের চাপে চিড়ে-চ্যাপ্টা হয়ে যাচ্ছেন অধিকাংশ মানুষ। কেউ কেউ খাবারে লাগাম টানার চেষ্টা করছেন, কেউ বাড়তি আয়ের চেষ্টা করছেন। অনেকে নিরুপায় হয়ে শহর ছাড়ছেন, অনেকে চাপ সামলাতে গিয়ে জড়াচ্ছেন ঋণের জালে।

গাংনীর রিক্সাচালক আব্দুল আলীম জানান, কয়েক মাস আগেও এ বাজার থেকে ওই বাজারে লোকজন রিক্সা করে যেত। বাজার করে নিয়ে যাবার সময় দেখা যেতো নানা ধরনের সবজির সাথে মাছ মাংস। এখন সবার হাতের ব্যাগই ছোট হয়ে এসেছে। সামান্য কিছু বাজার করছেন সবাই। সে বাড়তি দাম তাতে কেউ ব্যাগ ভর্তি বাজার কিনতে পারছেন না। আবার হাত টানের কারনে অনেকেই পায়ে হেটে বাড়ি যান ফলে আয় অনেকটা কমে গেছে। সন্তানদের নিয়ে বেশ টানা পোড়েনে আছেন তিনি।

বাজারে চাল, ডাল, তেল, আটা, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, শাকসবজি, ওষুধ ও শিশুখাদ্যসহ জীবনযাপনের সঙ্গে জড়িত প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়েছে। কোনোটা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ আবার কোনো কোনো পণ্যের দাম ৬০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। কিন্তু খেটে খাওয়া ও সীমিত আয়ের মানুষের আয়ের কোনো উন্নতি হয়নি। এমন পরিস্থিতি মেনে নেওয়া ছাড়া বিকল্প রাস্তাও নেই সাধারণ মানুষের কাছে। মানুষের দুঃখ-কষ্ট সীমার বাইরে চলে গেছে। কিন্তু কিছু করার ক্ষমতা নেই।

পেঁপে, বেগুন আর বরবটি ছাড়া বেশির ভাগ সবজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে। বেড়েছে পেঁয়াজ ও আলুর দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। ৯০ টাকার পেঁয়াজ এখন ১১০ টাকা আর ৫৫ টাকার আলু বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা  থেকে ১২০ টাকায়। ৭০০ টাকার নিচে মাছ নেই। মুরগির দামও বেড়েছে। ব্রয়লারের কেজি ২২০ টাকা, সোনালী ৩০০ টাকা, ডিমের ডজন ১৬৫ টাকা, গরুর মাংসের কেজি ৭৫০ টাকা।

দ্রব্যমূল্য আর জীবন যুদ্ধের এই সমীকরণ নিয়ে নিজের হতাশার কথা জানালেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারন সম্পাদক মাজেদুল হক মানিক। তিনি জানান, সাধারণ মানুষের মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। যাদের সামর্থ্য আছে, তারা ভোগ করবে। যাদের নেই, তারা দুর্ভোগে থাকবে। এছাড়া কোনো বিকল্প দেখছি না। বলে-কয়ে কোনো লাভ নেই। মানুষের জীবনমানের অবনমন হচ্ছে। ভোক্তা অধিকার বিভিন্ন সময় অভিযান চালাচ্ছে কিন্তু অভিযান শেষ হলে সেই আগের মতই দাম।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ভারপ্রাপ্ত) সাদ্দাম হোসেন জানান, ভোক্তা অধিকার ও কৃষি বিপনন বিভাগ অভিযান চালাচ্ছেন। অনেক সময় জরিমানা আদায় ছাড়াও ব্যবসায়িদেরকে সতর্ক করা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য নাগালে রাখতে প্রশাসন সব সময় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেলেও আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে ঢাকার দেওয়া চিঠি গ্রহণ করেছে দিল্লি

মেহেরপুরে নিম্ন আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস

Update Time : ০১:০০:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

মেহেরপুরের গাংনীর বামন্দীতে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন মিনাপাড়ার নয়ন। থাকেন নিজ বাড়িতে। আগে অফিসের কাছাকাছি থাকতেন স্বস্ত্রীক। স্ত্রী সন্তান সম্ভবা। আগে অফিসের কাছাকাছি থাকলেও সংসার খরচের লাগাম টানতে শেষ পর্যন্ত ভাড়া বাসায় না থেকে বাড়িতে থাকা শুরু করেন তিনি।  দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় যে ব্যয় বেড়েছে তা সমন্বয় করতে কষ্ট হলেও বাড়ি থেকেি তার যাতায়াত। তারপরও সংসার জীবনের অঙ্কে বড় গরমিল তার!

জীবন খাতার হিসাব মেলাতে না পারা নয়ন জানান, আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বছরে একবার বাড়ত। এখন সপ্তাহ কিংবা দিনের ব্যবধানে বাড়ছে। কোথাও কোনো জবাবদিহি নেই। মাঝে মধ্যে নড়ে চড়ে বসে সরকার। তারপরও কোন অগ্রগতি নেই বাজার নিয়ন্ত্রণে। নিজের যাতায়াত, মা বাবাও স্ত্রীর চিকিৎসা আর সংসারের খরচ- সব মিলিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন তিনি।

শাওনের বক্তব্যের সঙ্গে মিল পাওয়া যায় হেমায়েতপুরের মুদি ব্যবসায়ি রাজুর। তিনি জানান, ক্রেতাদের অনেকেই পণ্য কেনার ধরন পাল্টেছেন। আগে যারা সবচেয়ে ভালো পণ্য খুঁজতেন, তারা এখন সাধারণ মানের পণ্য কিনছেন। অনেকে আবার বোতলজাত ও প্যাকেট রেখে খোলা পণ্যে ঝুঁকছেন। আসলে সবার হাতেই টান পড়েছে। একরকম হতাশা বিরাজ করছে মধ্যবিত্ত ও নি¤œ মধ্যবিত্তদের মাঝে।

ছোট ব্যবসায়ী, দিনমজুর, রিকশাচালক, পরিবহন শ্রমিক থেকে শুরু করে মাঝারি ও নিম্ন আয়ের মানুষদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, তারা কেউ ভালো নেই। খরচের চাপে চিড়ে-চ্যাপ্টা হয়ে যাচ্ছেন অধিকাংশ মানুষ। কেউ কেউ খাবারে লাগাম টানার চেষ্টা করছেন, কেউ বাড়তি আয়ের চেষ্টা করছেন। অনেকে নিরুপায় হয়ে শহর ছাড়ছেন, অনেকে চাপ সামলাতে গিয়ে জড়াচ্ছেন ঋণের জালে।

গাংনীর রিক্সাচালক আব্দুল আলীম জানান, কয়েক মাস আগেও এ বাজার থেকে ওই বাজারে লোকজন রিক্সা করে যেত। বাজার করে নিয়ে যাবার সময় দেখা যেতো নানা ধরনের সবজির সাথে মাছ মাংস। এখন সবার হাতের ব্যাগই ছোট হয়ে এসেছে। সামান্য কিছু বাজার করছেন সবাই। সে বাড়তি দাম তাতে কেউ ব্যাগ ভর্তি বাজার কিনতে পারছেন না। আবার হাত টানের কারনে অনেকেই পায়ে হেটে বাড়ি যান ফলে আয় অনেকটা কমে গেছে। সন্তানদের নিয়ে বেশ টানা পোড়েনে আছেন তিনি।

বাজারে চাল, ডাল, তেল, আটা, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, শাকসবজি, ওষুধ ও শিশুখাদ্যসহ জীবনযাপনের সঙ্গে জড়িত প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়েছে। কোনোটা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ আবার কোনো কোনো পণ্যের দাম ৬০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। কিন্তু খেটে খাওয়া ও সীমিত আয়ের মানুষের আয়ের কোনো উন্নতি হয়নি। এমন পরিস্থিতি মেনে নেওয়া ছাড়া বিকল্প রাস্তাও নেই সাধারণ মানুষের কাছে। মানুষের দুঃখ-কষ্ট সীমার বাইরে চলে গেছে। কিন্তু কিছু করার ক্ষমতা নেই।

পেঁপে, বেগুন আর বরবটি ছাড়া বেশির ভাগ সবজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে। বেড়েছে পেঁয়াজ ও আলুর দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। ৯০ টাকার পেঁয়াজ এখন ১১০ টাকা আর ৫৫ টাকার আলু বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা  থেকে ১২০ টাকায়। ৭০০ টাকার নিচে মাছ নেই। মুরগির দামও বেড়েছে। ব্রয়লারের কেজি ২২০ টাকা, সোনালী ৩০০ টাকা, ডিমের ডজন ১৬৫ টাকা, গরুর মাংসের কেজি ৭৫০ টাকা।

দ্রব্যমূল্য আর জীবন যুদ্ধের এই সমীকরণ নিয়ে নিজের হতাশার কথা জানালেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারন সম্পাদক মাজেদুল হক মানিক। তিনি জানান, সাধারণ মানুষের মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। যাদের সামর্থ্য আছে, তারা ভোগ করবে। যাদের নেই, তারা দুর্ভোগে থাকবে। এছাড়া কোনো বিকল্প দেখছি না। বলে-কয়ে কোনো লাভ নেই। মানুষের জীবনমানের অবনমন হচ্ছে। ভোক্তা অধিকার বিভিন্ন সময় অভিযান চালাচ্ছে কিন্তু অভিযান শেষ হলে সেই আগের মতই দাম।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ভারপ্রাপ্ত) সাদ্দাম হোসেন জানান, ভোক্তা অধিকার ও কৃষি বিপনন বিভাগ অভিযান চালাচ্ছেন। অনেক সময় জরিমানা আদায় ছাড়াও ব্যবসায়িদেরকে সতর্ক করা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য নাগালে রাখতে প্রশাসন সব সময় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেলেও আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।