সৈয়দপুর উপজেলায় পঁচানালা খালে বিভিন্ন মিল-কলকারখানার বর্জ্য ফেলছে।এমনকি পৌরসভার নালা-নর্দমার এই নালায় ফেলায় ওই খালের পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়েছে। এতে করে আসন্ন বোরো মৌসুমে প্রায় ৫০০ হেক্টর কৃষি জমিতে সেচ দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। এছাড়া দুষিত পানিতে মশাসহ বিভিন্ন জীবানু বাসা বাধায় মানুষের রোগবালাই দেখা দিয়েছে । স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি তারা এসব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে পৌরসভাকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছেন কিন্তু প্রতিকার মিলছে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সৈয়দপুর বিভাগ জানায়, শহরের উত্তর অংশ সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের কয়া বিল থেকে পঁচানালার উৎপত্তি। এরপর সৈয়দপুর পৌর এলাকার ভেতর দিয়ে দক্ষিণে ২২ কিলোমিটার ঘুরে তা গিয়ে মিলেছে রংপুরের বদরগঞ্জের বারাতি নদীতে। খালটি, ৮ ফুট গভীর ১০ ফুট চওড়া। ১৮২২ সালে তৎকালীন জমিদার পঁচা সরকার এই এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে খালটি খনন করেন। সৈয়দপুর পৌর এলাকার কিছু কৃষিজমি, বোতলাগাড়ি, কামারপুকুর ও বাঙালিপুর ইউনিয়নের সন্নিবেশিত এলাকার ৫০০ হেক্টর জমি পঁচানালার মাধ্যমে সেচসুবিধা পেয়ে থাকে। পাউবো সূত্র আরও জানায়, পৌরসভার সব নালা–নর্দমার নোংরা পানি পঁচানালার খালে ফেলা হচ্ছে। ফলে দূষিত হয়ে পড়ছে খালের পানি। মরে যাচ্ছে মাছ ও জলজ প্রাণী।
৩০ নভেম্বর শনিবার সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজেরর পাশে জমিদার পচানালা সেতু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, খালের ময়লা অবর্জনা জমে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানকার পানির রং সাদা ও কালো রং এর হয়ে গেছে। পানি থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। এ দুর্গন্ধে আশপাশের এলাকার লোকজন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। এতে মশা-মাছির উপদ্রব বেড়েছে। শহরের বিভিন্ন এলাকার নালা-নর্দমার পানি ও পয়োবর্জ্য এ খালের বিভিন্ন স্থানে ফেলা হচ্ছে।
সৈয়দপুর শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় সেতুর নিচে দুই ধারে ‘মাস্টার ড্রেন’ (প্রধান নালা)। এর সংযোগ গিয়ে ঠেকেছে পঁচানালায়। মিল ইন্ডাস্ট্রির বর্জ্য সেখানে গিয়ে পরছে। উপজেলা সড়কের পঁচানালা সেতুর নিচে শহরের বড় নর্দমা থেকে অব্যাহত নোংরা পানি মিশছে খালের সবখানে ।
হেলান নামের এক কৃষক বলেন, তাঁদের পঁচানালার পানিই সেচকাজে ব্যবহারের একমাত্র ভরসা। কিন্ত পানি দূষিত হয়ে পড়ায় খেতে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
মো: রুবেল নামের এক শিক্ষার্থী জানায়, এই খালের পাশেই আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পানির দুর্গন্ধে স্কুল যাতায়াতে ভোগান্তি চড়মে উঠেছে ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ধীমান ভূূষণ বলেন, পঁচানালার পানি সেচকাজে ব্যবহারের জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার কথা কিন্তু দুর্গন্ধযুক্ত পানি করতে কেউই চাইছে না।
সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা: ওয়াসিম বারী জয় বলেন, প্রবাহহীন দুষিত পানিতে সাধারণত মশা ও রোগজীবানু বংশবিস্তার করে থাকে। আর এসব মশার কামড় ও রোগজীবানুর কারণে শিশু ও বয়স্করা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
সৈয়দপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান জানান, পঁচানালার পানি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তিস্তা সেচ ক্যানেলের পানি এনে পঁচানালার পানি শোধনের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না। কয়েকবার তাঁরা সৈয়দপুর পৌরসভাকে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, পঁচানালায় যেন নোংরা পানি ফেলা না হয়। কিন্তু তাতে পৌরসভা কর্ণপাত করছে না।
এ ব্যাপারে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সৈয়দপুর পৌরপ্রশাসক নুর-ই আলম সিদ্দিকী বলেন বিষয়টি আমার জানা নেই। খোজ-খবর নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।