সুনামগঞ্জে পৃথক অভিযান চালিয়ে চোরাকারবারী, মাদক ব্যবসায়ী ও ডাকাতসহ ৯জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু সীমান্ত কিংখ্যাত চোরাকারবারীদের মদতদাতা সোর্স পরিচয়ধারীরা একাধিক মামলার আসামী হওয়ার পরও রয়েগেছে অধরা। তারা সীমান্ত এলাকার চোরাকারবারীদের সংগঠিত করে প্রতিদিন রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে পাচাঁর করেছে মাদকদ্রব্য সহ বিভিন্ন প্রকার পন্য সামগ্রী। তাদেরকে গ্রেফতারের জন্য বিজিবির পাশাপাশি পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সহযোগীতা জরুরী প্রয়োজন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- প্রতিদিনের মতো আজ শনিবার (৩০শে নভেম্বর) ভোর ৫টায় জেলার তাহিরপুর উপজেলার লাউড়গড় সীমান্তের ১২০৩এর ৩এস পিলার সংলগ্ন ও সাহিদাবাদ বিজিবি পোষ্টের সামনে দিয়ে প্রায় ৩শতাধিক লোক দিয়ে ভারত থেকে পাথর পাচাঁর শুরু হয়। পাচাঁরকৃত পাথর ঠেলাগাড়ি দিয়ে বিজিবি ক্যাম্পের সামনে অবস্থিত রাস্তার দুই পাশেসহ লাউড়গড় বাজার ও তার আশেপাশে অবস্থিত পাথর মিলে মজুত করা হয়। এরআগে গতকাল শুক্রবার (২৯শে নভেম্বর) রাত ১১টা থেকে এই সীমান্তের জাদুকাটা নদী দিয়ে সীমান্ত কিংখ্যাত সোর্স পরিচয়ধারীরা বিজিবির নাম ভাংগিয়ে প্রতি বারকি নৌকা থেকে ২শ টাকা করে চাঁদা নিয়ে প্রায় ৪শ নৌকা দিয়ে ভারতের ভিতর থেকে অবৈধ ভাবে কয়লা ও পাথরসহ মদ, চিনি, নাসিরউদ্দিন বিড়ি পাঁচার করে। অন্যদিকে রাত ২টা থেকে মনাই পাড় নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালি ও পাথর লড়ি ও ট্রলি বোঝাই করে লাউড়গড় বাজারের পাশে মজুত করাসহ ভারত থেকে পাঁচারকৃত পাথর ট্রাক বোঝাই করে পাশের মাছিমপুর ক্যাম্পের সামনে দিয়ে সুনামগঞ্জ নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়াও সাহিদাবাদ বর্ডার বাজারের পাশ দিয়ে ও ১২০৫নং পিলার সংলগ্ন কবিরের বাড়ির সামনে দিয়ে ভারত থেকে ফুছকা, চিনি, কাজু বাদাম, জিরা, কমলা, মাছ, রসুন ও মদ পাচাঁরের জন্য তৎপরতা চালিয়েছে সীমান্ত কিংখ্যাত সংঘবদ্ধ সোর্স পরিচয়ধারীরা। এছাড়া গত বৃহস্পতিবার (২৮শে নভেম্বর) রাত ২টা থেকে চাঁনপুর সীমান্তের বারেকটিলার আনন্দপুর এলাকা দিয়ে ও লাউড়গড় সীমান্তের জাদুকাটা নদী দিয়ে এক যোগে ভারত থেকে ফুছকা, চিনি, নাসিরউদ্দিন বিড়ি, কম্বল, কয়লা ও পাথর পাচাঁর শুরু করে সোর্স পরিচয়ধারীরা।
এদিকে গত শুক্রবার (২৯শে নভেম্বর) রাত ৮টায় ছাতক পৌরশহরের চরেরবন্দ গ্রামে সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে ৮১ বোতল মদ,নগদ টাকা ও ২টি মোবাইলসহ মাদক ব্যবসায়ী ইসলাম উদ্দিন (৪০),তার সহযোগী নাসির উদ্দিন (৪৭) ও দিলোয়ার হোসেন (৩৫) কে গ্রেফতার করেছে। এরআগে গত বৃহস্পতিবার (২৮শে নভেম্বর) রাত ৮টায় দোয়ারাবাজার উপজেলার বাগানবাড়ি সীমান্ত দিয়ে বিভিন্ন মালামাল পাচাঁরের জন্য ভারতে প্রবেশের সময় বিজিবি অভিযান চালিয়ে সাইফুল ইসলাম সোহাগ (২০) ও তার সহযোগী শহিদ মিয়া (২২)কে গ্রেফতার করেছে। অন্যদিকে পাশের ছাতক পৌরশহরে পেপার মিলের রাস্তায় সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে ডাকাত জাহাঙ্গীর আলম, রবিউল আলম, মুরাদ আহমদ, আজির আলী ও তাদের গাড়ি চালাক খোয়াজ আলীকে আটক করা হয়। পরে তাদের কাছ থেকে ৪টি মোবাইল, ১০টি ছোরা, ৩টি রামদা, ৫টি বল্লম, ৩টি সুলফি ও ৭টি নিগাড উদ্ধার করাসহ ১টি নোহা মাইক্রো গাড়ি জব্দ করা হয়। অন্যদিকে একই ভাবে তাহিরপুর উপজেলার টেকেরঘাট সীমান্তের বুরুঙ্গছড়া, বড়ছড়া, নীলাদ্রী লেক পাড়, খনি প্রকল্প, হাইস্কুল সংলগ্ন এলাকাসহ পাশের বালিয়াঘাট সীমান্তের লাকমা, লালঘাট, চারাগাঁও সীমান্তের লালঘাট, বাঁশতলা, এলসি পয়েন্ট, কলাগাঁও মাইজহাটি, জঙ্গলবাড়ি, লামাকাটা এলাকাসহ পাশের বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার মাছিমপুর, চিনাকান্দি, ডলুরা ও মধ্যনগর সীমান্তের বাঙ্গলভিটা ও মাটিরান এলাকা দিয়ে ভারত থেকে গরু, চিনি, কসমেটিকস, রসুন, সুপারী ও মাছসহ মাদকদ্রব্য কয়লা ও চুনাপাথর পাচাঁরের খবর পাওয়া যায়। কিন্তু চোরাকারবারীদের মদতদাতা সোর্স পরিচয়ধারী একাধিক মামলার আসামীদের গ্রেফতারের জন্য কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়না। একারণে তারা দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
এব্যাপারে সুনামগঞ্জ ২৮ব্যালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক লে.কর্ণেল একে এম জাকারিয়া কাদির ও ছাতক আর্মি ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন শোয়েব আহমেদ সাংবাদিকদের জানান- ছাতক পৌরশহর ও দোয়ারাবাজার সীমান্তে পৃথক অভিযানে ২ চোরাকারবারীসহ আটককৃত ৯ জনকে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।