কক্সবাজার জেলা প্রাণী সম্পদের গুরুত্বপূর্ণ পদে দীর্ঘদিন থেকে কর্মকর্তা নেই। একই অবস্থা উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়েও। ফলে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন খামারিরা। পর্যাপ্ত জনবল সংকটে মাঠ পর্যায়ের অফিসিয়াল কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে। পদ শূন্য থাকার প্রভাবে জেলা ও উপজেলায় পশুপাখির নিয়মিত টিকাদান, চিকিৎসা, সম্প্রসারণ, কৃত্রিম প্রজনন, গরু ও খামার পরিদর্শন মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন খামার মালিকেরা। তাঁদের অভিযোগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অফিসগুলোতে আধুনিক ভবন থাকলেও কার্যক্রম ধীরগতিতে চলছে।
জেলা প্রাণী সম্পদ সূত্রে জানা যায়, ১২ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মধ্যে রয়েছে মাত্র ৭ জন। তারমধ্যে কর্মকর্তা ১ জন, কর্মচারী রয়েছে ৬ জন। তারা হলেন, জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ড. এ এম খালেকুজ্জামান, এস এ এল ও আশরাফ আলী ভূঁইয়া, হিবাব রক্ষণ উত্তম কুমার চক্রবর্তী, অফিস সহকারী মো: জসিম উদ্দিন, গাড়ি চালক ফরিদুল আলম, নৈশ প্রহরী আলমগীর কুতুবী ও নিরাপত্তা প্রহরী মোজাম্মেল হক। অন্যদিকে অতিরিক্ত জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ( এডিএলও) গুরুত্বপূর্ণ পদটিও খালি। ডিস্ট্রিক্ট ট্রেনিং অফিসার ( ডিটিএ) পদটি শুরু থেকে খালি।
২০১২ সাল থেকে খালি আছে কম্পিউটার অপারেটর পদটি, ক্যাশিয়ার নেই ৩ বছর এবং শুরু থেকে নেই স্টোর কিপার।জানা যায়, গত একবছরেরও বেশি সময় ধরে নেই উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা। ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর বদলি হন ডা: আতিকুর রহমান মিয়া। তিনি সাত মাস দায়িত্বে ছিলেন। তিনি বদলী হওয়ার পর অসীম বরণ সেনকে পর অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়।
অসীম বরণ সেন বর্তমানে রামু উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে আছেন। তিনি কিছুদিন অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করার মাঝখানে চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল ডা: আরিফ উদ্দিনকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। আরিফ উদ্দিন বর্তমানে চকরিয়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।প্রাণী সম্পদ দপ্তরের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, লোকবল সংকটের কারনে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন খামারিরা। খুরুশকুল এস এইচ ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী মো: সেলিমুল হক জানান, কর্মকর্তা না থাকার কারনে সঠিক সময়ে ঔষধ পাওয়া যায়না।
কল করে উপ-সহকারীকে খামারে আনতে হয়। তাঁদের একটি খরচও বহন করতে হয়। তিনি বলেন, গরু আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। খাবারের দাম দ্বিগুণ। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে সামনে খামার বন্ধ করে দিতে হবে।অভিযোগ উঠেছে, খামার মালিকেরা বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে খামার পরিদর্শনের কথা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ে জানালেও কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী সঠিক সময়ে খামার পরিদর্শনে যায়না।
লোকবল সংকটের কথা বলে সময় পার করেন। এমনকি পশু মৃত্যুর পরেও কারণ উদঘাটন করতে যায়না কর্মকর্তারা। জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় গরু রয়েছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার, মহিষ ৩৫ হাজার, ছাগল ২ লাখ ১০ হাজার, ভেড়া ২৫ হাজার ৬৫৯ টি, মুরগী ১৩ লাখ ৫৫ হাজার, হাঁস ১ লাখ ৩৮ হাজার, কবুতর ২৩ হাজার ৬১৭। ডা: আরিফ উদ্দিন ( অতিরিক্ত দায়িত্ব) জানান, বিরাট এক সমস্যায় আছি। দুই অফিস নিয়ে দৌড়াদৌড়িতে থাকতে হয়৷ হাতে মোটেও সময় পায়না।
সেবার বিষয়ে তিনি বলেন, যাঁরা পশুর সমস্যা নিয়ে আসেন তাঁদের ট্রিটমেন্ট দিতে তেমন একটা সমস্যা হয়না।জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ড. এ এম খালেকুজ্জামান জানান , শুধু জেলা বা উপজেলা নয়, উপজেলাগুলোতেও অনেক অফিস সহকারী নেই। দিন দিন কাজের চাপ বেড়েই চলেছে। লোকবল সংকটের কারনে একটু তো সমস্যা হবে। তিনি বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর হলো উপজেলা। কিন্তু সেখানে গত একবছরেরও বেশি সময় ধরে কর্মকর্তা নেই। বিষয়টি নিয়ে অধিদপ্তরে কথা হয়েছে। চলতি মাসে (ডিসেম্বর) মাঝমাঝি সময়ে নতুন কর্মকর্তা আসতে পারে বলে জানান এই কর্মকর্তা।