গাজীপুরের কালিয়াকৈরে মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির পাশে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার ভোরে উপজেলার মৌচাক এলাকায় এ হত্যাকান্ড ঘটে। এ হত্যাকান্ডের পর ওই পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দেওয়া হলেও নিহতের লাশ উদ্ধারে পুলিশের গড়িমসির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী।
নিহত হলেন, কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক দক্ষিণ মৌচাক এলাকার তানভীর হোসেন নান্নুর ছেলে তাজভীর হোসেন সিহান (২৮)। তিনি ঢাকার উত্তরার একটি বায়িং হাউজে চাকরি করতেন।
এলাকাবাসী, নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তানভীর হোসেন সিহান প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার ভোর ৪টার দিকে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে তাদের নিজ বাড়ি থেকে বের হন। কিন্তু তিনি ওইদিন ভোর ৫টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মৌচাক এলাকার হানিফ স্পিনিং মিলের গেইটের সামনে পৌছলে ৫/৬জন দুর্বৃত্ত তার গতিরোধ করে।
মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির ১০০ থেকে দেড়শত গজ দূরেই তাকে ছুরি দিয়ে এলোপাথারি কুপিয়ে জখম করে। রক্তাক্ত জখম অবস্থায় সিহানের লাশ ফেলে দুর্বৃত্তরা ওই ফাঁড়ির পাশ দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। এরপর ওই হত্যাকান্ডের পর তার লাশ মহাসড়কে পড়ে থাকার খবর দিলেও মৌচাক ফাঁড়ির পুলিশ তখন ঘটনাস্থলে যায়নি। নিহতের পরিবারের লোকজন ওই পুলিশ ফাঁড়িতে জানালেও তারা লাশ উদ্ধারে গড়িমসি করে। খবর পেয়ে নাওজোর হাইওয়ে থানা পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধারে
ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু এটা হত্যাকান্ড বলে নিহতের লাশ উদ্ধার না করে ফিরে যায় হাইওয়ে পুলিশ। ততক্ষনেও মৌচাক ফাঁড়ি পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করতে যায়নি। ওই লাশ উদ্ধারে শুধু গড়িমসিই নয়, মৌচাক ফাঁড়ি পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ দায়িত্ব পালনে একে অপরকে দোষারোপ করে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী। অবশেষে সকাল ৯টার দিকে মৌচাক ফাঁড়ি পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য নিহতের লাশ গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। তবে প্রাথমিকভাবে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশের ধারণা হলেও এ হত্যাকান্ডটি রহস্যজনক বলে জানিয়েছেন নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী। এছাড়াও তাদের অভিযোগ, এ হত্যাকান্ডের পর ওই পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দেওয়া হলেও নিহতের লাশ উদ্ধারে পুলিশের গড়িমসি করে।
নিহতের বাবা তানভীর হোসেন নান্নু বলেন, আমার ছেলে সিহানকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার পর খুনিরা মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির সামনে দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু এ হত্যাকান্ডের বিষয়টি ওই ফাঁড়ি পুলিশকে জানালেও তারা কোনো কর্ণপাত করেনি। আমার ছেলের লাশ উদ্ধারেও ছিল পুলিশের গড়িমসি।
নাওজোড় হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রইজ উদ্দিন জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে লাশ পড়ে থাকার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখা গেলো এটা একটা হত্যাকান্ড। এটা থানা পুলিশের দায়িত্ব বলে আমরা চলে আসি।
কালিয়াকৈর থানাধীন মৌচাক ফাঁড়ি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সাইদুর রহমান জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য
মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ছুরিকাঘাতে তাকে হত্যার পর ঢাকার দিকে পালিয়ে গেছে ছিনতাইকারীরা। লাশ উদ্ধারে গড়িমসির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, যেহেতু মহাসড়কের উপর লাশ, সেহেতু হাইওয়ে পুলিশেরও দায়বদ্ধতা আছে। তবে এ ঘটনায় আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।