মেহেরপুরে কয়েকদিন যাবৎ হাড় কাঁপানো শীতের সঙ্গে চলছে শৈত্যপ্রবাহ। হাড় কাঁপানো শীতে শুধু জনজীবন নয়, জবুথবু হয়ে পড়েছে প্রাণীকুলও। কনকনে ঠান্ডায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। হিমেল হাওয়া আর হাড় কাঁপানো শীতে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না।
ছিন্নমূল মানুষের মাঝে নেমে এসেছে হাহাকার। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছেন তারা। এখন পর্যন্ত সরকারীভাবে কোন শীতবস্ত্র বিতরন করা হয়নি। আজ বৃহষ্পতিবার সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০.২ ডিগ্রী। গতকাল বুধবার সকাল ৯টায় ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াজ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। মঙ্গলবার ও সোমবার তাপমাত্রা ছিল ১২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শৈত্য প্রবাহ আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিস।
জেলায় জেঁকে বসা শীতের পাশাপাশি কুয়াশার কারণে সূর্যের দেখা মেলেনি গত তিন দিন। ঘন কুয়াশার কারণে ব্যহত হচ্ছে যান চলাচল। দূরপাল্লার বাস ট্রাকসহ ছোট ছোট যানবাহনগুলো হেডলাইট জালিয়ে চলতে দেখা যাচ্ছে। দিনের তাপমাত্রা কিছুটা সহনীয় হলেও রাতে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। হাড় কাঁপানো শীতে বিপাকে পড়েছেন বিভিন্ন শ্রেণির খেটে খাওয়া মানুষ। কনকনে শীতের কারণে কাজে যেতে পারছেন না অনেকেই। তবুও পেটের তাগিদে কাউকে রিকশা, ভ্যান বা ক্ষেত খামারে দিনমজুরের কাজ করতে যেতে দেখা গেছে।
শহরের অটোচালক মাসুদ আলী জানান, প্রচন্ড- শীতে লোকজন বাইরে বের হচ্ছেন না। যে কারণে ভাড়াও হচ্ছে না। সারাদিন গাড়ি চালিয়ে ২- ৩শ টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। এদিকে অটো চালাতে গিয়ে হাত-পা ঠান্ডায় শক্ত হয়ে যাচ্ছে। একই কথা জানালেন বামন্দী বাজারের রিকশা চালক তমেজ ও বাবুল আকতার। ভাড়া না পেয়ে তাদের প্রতিদিনের রিক্সা বাববদ গ্যারেজে জমা (টাকা) দিতে পারছেন না। ফলে পরিবার নিয়ে সংকটে রয়েছেন।
কালিগাংনী গ্রামের দিন মজুর নাজিরা খাতুন জানান, তারা রাস্তার মাটি কাটার কাজ করেন। তাদের দলে ১৫ জন নারী শ্রমিক আছেন। কাক ডাকা ভোরে কাজের সন্ধানে বাড়ি থেকে বের হয়ে শহরে আসেন তারা। বিভিন্ন এলাকার গেরস্থরা গাংনী উপজেলা শহর থেকে দৈনিক চুক্তিতে নিয়ে যান। প্রচন্ড- শীতের কারণে গেরস্থরা আসছেন না। ফলে মাঝে মাঝে কাজ না পেয়ে শুন্য হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে।
কাপড়ের দোকানি রবিউল ইসলাম ও আয়ূব আলী জানান, শীতের কারণে সকালে দোকান খোলা সম্ভব হচ্ছে না। আবার দুপুর পর্যন্ত কোন ক্রেতার দেখা মিলছে না। তাই বেচাকেনাও ভাল হচ্ছে না। তাছাড়িা যারা আসছেন তারা পুরাতন কাপড়ের দিকে ঝুকছেন।
এদিকে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে রোগিদের ভীড় লক্ষণীয়। ঠান্ডাজনীত রোগে আক্রান্ত হয়ে গত তিন দিনে ৬৯ জন রোগী গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। এদের সিংহভাগই বৃদ্ধ ও শিশু। ক্রমশঃ রোগীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঠান্ডা ও বাসি খাবার পরিহার ও গরম কাপড় ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুপ্রভা রাণী।
এখনও সরকারীভঅবে কোন শীতবস্ত্র পাওয়া যায়নি এবং পাওয়া গেলেই তা বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন।