Dhaka ০৪:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১৩৫ জাতের চালের ভাত, ১১৫ জাতের চালের গুঁড়া দিয়ে পিঠা উৎসব তানোরে

????????????

রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউপির  দুবইল গ্রামে দশমবারের মতো বিলুপ্তপ্রায় ধানের বীজ বিনিময় ও নবান্ন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। উৎসবে ১০ জন কৃষক নিজেদের মধ্যে ধানের বীজ বিনিময় করেন। এদিকে চাষের মাধ্যমে দেশি বীজ সংরক্ষণে অবদান রাখার জন্য একই অনুষ্ঠানে ছয়জন কৃষককে সম্মাননা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি কৃষিবিদ, বিজ্ঞানী, কবি-সাহিত্যিক ও কিষান–কিষানিরা অংশ নেন। গত রবিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত  দুবইল বরেন্দ্র কৃষক বীজ সংলগ্ন মাঠে হয় অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানের অতিথিদের ১৩৫ জাতের দেশি ধানের চালের ভাত রান্না করে পরিবেশন করা হয় এবং ১১৫ জাতের দেশি ধানের গুঁড়া দিয়ে পিঠা তৈরি করে খাওয়ানো হয়।লুপ্ত ধানের সংগ্রাহক ইউসুফ মোল্লার প্রতিষ্ঠিত ‘বরেন্দ্র কৃষক বীজ ব্যাংক’–এর দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। এতে সহযোগিতা করছে বারসিক নামের একটি বেসরকারি সংস্থা। নিয়ম অনুযায়ী, এক কেজি বীজ নিয়ে চাষ করলে মৌসুম শেষে দুই কেজি বীজ ব্যাংকে ফেরত দিতে হয়। এতে বীজ ব্যাংক বীজে সমৃদ্ধ হয়। কৃষকেরা চাহিদা অনুসারে বীজ নিতে পারেন। বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় ধানকে প্রকৃতিতে বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রয়াত কৃষক ইউসুফ মোল্লা এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর ভাই জাইদুর রহমান এখনো এই উৎসব ধরে রেখেছেন। তিনি এখন বরেন্দ্র বীজ ব্যাংকের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।উৎসবে আসা দুবইল গ্রামের সওদাগর মণ্ডল গতবার এক বিঘা জমিতে দাদখানি ধানের চাষ করেছিলেন। এবার ১০ কেজি ধান বীজ হিসেবে ফেরত দেন। এই বীজ নিলেন পবা উপজেলার বিল নেপালপাড়া গ্রামের কিষানি সুলতানা খাতুন। গত আউস মৌসুমে বীজ বিনিময় উৎসব থেকে দুই কেজি কালোশনি ধানের বীজ নেন তানোর উপজেলার চিমনা গ্রামের কিষানি মুসলিমা খাতুন। চাষ করে এবার ৮ কেজি বীজ ধান অনুষ্ঠানে ফেরত দেন।নওগাঁর হাসান জামান সিদ্দিকীর চাষ করা লক্ষ্মীদিঘা ধানের বীজ কৃষক আফাজ উদ্দিন কবিরাজকে দেন। বহড়া গ্রামের আবদুল হামিদের চাষ করা লালকুমড়ি ধানের তিন কেজি বীজ নিলেন হরিদেবপুর গ্রামের কিষানি কবুল জান বেগম। গোলাম মোস্তফার চাষ করা ঝিঙ্গাশাইল ধানের বীজ নিলেন পাশের যশপুর গ্রামের মোজাম্মেল হক। বরেন্দ্র বীজ ব্যাংক থেকে চাষ করা রূপকথা ধানের বীজ নেন মাহালিপাড়া গ্রামের রীনা টুডু।এ বছর সম্মাননা পাওয়া ছয় কৃষক হলেন তানোরের দুবইল গ্রামের মো. আবুল বাসার, মো. সওদাগর মণ্ডল ও মো. সিরাজ উদ্দিন, বহেড়া গ্রামের মো. আ. হামিদ, তানোরের হরিদেবপুর গ্রামের মোসা. কবুলজান বেগম ও নওগাঁর হাসান জানান সিদ্দিকী।

অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন জাপানের ‘শেয়ার দ্য প্ল্যানেট অ্যাসোসিয়েশন’–এর চেয়ারপারসন তেৎসুও সুৎসুই, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোস্তাক রহমান, ঔপন্যাসিক ও শিক্ষাবিদ মঈন শেখ, কৃষিবিদ পরিমল কুমার রায়, বরিন সাহিত্য সংসদের সম্পাদনা পরিষদের সদস্য এমদাদুল হক, কলেজশিক্ষক আশরাফুল হক, সাংবাদিক আবদুর রহমান, বেসরকারি সংস্থা বারসিক পরিচালক শহীদ আলী বিশ্বাস, আঞ্চলিক সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম, নওগাঁর পানি সহনশীল ধানচাষি হাসান জামান সিদ্দিকী, স্বশিক্ষিত কৃষিবিজ্ঞানী নূর মোহাম্মদ, কবি আফাজ কবিরাজ প্রমুখ। বক্তারা বলেন, দেশি ধানকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে এর আবাদ কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। এই বীজ বিনিময় উৎসবের মাধ্যমে এ আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ুক।উৎসবের আগের দিন রাত থেকে চলতে থাকে বৈচিত্র্যময় পিঠাপুলি বানানোর কাজ। এ কাজে সহযোগিতা করেন গ্রামের নারীরা। তাঁরা গীত গেয়ে পিঠা তৈরি করেন।

ইউসুফ মোল্লা তাঁর কাজের জন্য জাতীয় পরিবেশ পদক-২০১৩ পেয়েছিলেন। তিনি দেশি জাতের ধানের বীজসহ বিভিন্ন সবজি বীজ রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তাঁর ব্যাংকের সংগ্রহে আছে ৩৫০টি জাতের ধানের বীজ, ২৫ জাতের বিভিন্ন দেশি সবজির বীজ ও ১৫ জাতের রবিশস্যের বীজ। ২০২২ সালের ১৪ জানুয়ারি ইউসুফ মোল্লা মারা যান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে পরিত্যক্ত লোহা বিক্রি

১৩৫ জাতের চালের ভাত, ১১৫ জাতের চালের গুঁড়া দিয়ে পিঠা উৎসব তানোরে

Update Time : ০৯:০৩:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪

রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউপির  দুবইল গ্রামে দশমবারের মতো বিলুপ্তপ্রায় ধানের বীজ বিনিময় ও নবান্ন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। উৎসবে ১০ জন কৃষক নিজেদের মধ্যে ধানের বীজ বিনিময় করেন। এদিকে চাষের মাধ্যমে দেশি বীজ সংরক্ষণে অবদান রাখার জন্য একই অনুষ্ঠানে ছয়জন কৃষককে সম্মাননা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি কৃষিবিদ, বিজ্ঞানী, কবি-সাহিত্যিক ও কিষান–কিষানিরা অংশ নেন। গত রবিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত  দুবইল বরেন্দ্র কৃষক বীজ সংলগ্ন মাঠে হয় অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানের অতিথিদের ১৩৫ জাতের দেশি ধানের চালের ভাত রান্না করে পরিবেশন করা হয় এবং ১১৫ জাতের দেশি ধানের গুঁড়া দিয়ে পিঠা তৈরি করে খাওয়ানো হয়।লুপ্ত ধানের সংগ্রাহক ইউসুফ মোল্লার প্রতিষ্ঠিত ‘বরেন্দ্র কৃষক বীজ ব্যাংক’–এর দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। এতে সহযোগিতা করছে বারসিক নামের একটি বেসরকারি সংস্থা। নিয়ম অনুযায়ী, এক কেজি বীজ নিয়ে চাষ করলে মৌসুম শেষে দুই কেজি বীজ ব্যাংকে ফেরত দিতে হয়। এতে বীজ ব্যাংক বীজে সমৃদ্ধ হয়। কৃষকেরা চাহিদা অনুসারে বীজ নিতে পারেন। বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় ধানকে প্রকৃতিতে বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রয়াত কৃষক ইউসুফ মোল্লা এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর ভাই জাইদুর রহমান এখনো এই উৎসব ধরে রেখেছেন। তিনি এখন বরেন্দ্র বীজ ব্যাংকের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।উৎসবে আসা দুবইল গ্রামের সওদাগর মণ্ডল গতবার এক বিঘা জমিতে দাদখানি ধানের চাষ করেছিলেন। এবার ১০ কেজি ধান বীজ হিসেবে ফেরত দেন। এই বীজ নিলেন পবা উপজেলার বিল নেপালপাড়া গ্রামের কিষানি সুলতানা খাতুন। গত আউস মৌসুমে বীজ বিনিময় উৎসব থেকে দুই কেজি কালোশনি ধানের বীজ নেন তানোর উপজেলার চিমনা গ্রামের কিষানি মুসলিমা খাতুন। চাষ করে এবার ৮ কেজি বীজ ধান অনুষ্ঠানে ফেরত দেন।নওগাঁর হাসান জামান সিদ্দিকীর চাষ করা লক্ষ্মীদিঘা ধানের বীজ কৃষক আফাজ উদ্দিন কবিরাজকে দেন। বহড়া গ্রামের আবদুল হামিদের চাষ করা লালকুমড়ি ধানের তিন কেজি বীজ নিলেন হরিদেবপুর গ্রামের কিষানি কবুল জান বেগম। গোলাম মোস্তফার চাষ করা ঝিঙ্গাশাইল ধানের বীজ নিলেন পাশের যশপুর গ্রামের মোজাম্মেল হক। বরেন্দ্র বীজ ব্যাংক থেকে চাষ করা রূপকথা ধানের বীজ নেন মাহালিপাড়া গ্রামের রীনা টুডু।এ বছর সম্মাননা পাওয়া ছয় কৃষক হলেন তানোরের দুবইল গ্রামের মো. আবুল বাসার, মো. সওদাগর মণ্ডল ও মো. সিরাজ উদ্দিন, বহেড়া গ্রামের মো. আ. হামিদ, তানোরের হরিদেবপুর গ্রামের মোসা. কবুলজান বেগম ও নওগাঁর হাসান জানান সিদ্দিকী।

অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন জাপানের ‘শেয়ার দ্য প্ল্যানেট অ্যাসোসিয়েশন’–এর চেয়ারপারসন তেৎসুও সুৎসুই, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোস্তাক রহমান, ঔপন্যাসিক ও শিক্ষাবিদ মঈন শেখ, কৃষিবিদ পরিমল কুমার রায়, বরিন সাহিত্য সংসদের সম্পাদনা পরিষদের সদস্য এমদাদুল হক, কলেজশিক্ষক আশরাফুল হক, সাংবাদিক আবদুর রহমান, বেসরকারি সংস্থা বারসিক পরিচালক শহীদ আলী বিশ্বাস, আঞ্চলিক সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম, নওগাঁর পানি সহনশীল ধানচাষি হাসান জামান সিদ্দিকী, স্বশিক্ষিত কৃষিবিজ্ঞানী নূর মোহাম্মদ, কবি আফাজ কবিরাজ প্রমুখ। বক্তারা বলেন, দেশি ধানকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে এর আবাদ কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। এই বীজ বিনিময় উৎসবের মাধ্যমে এ আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ুক।উৎসবের আগের দিন রাত থেকে চলতে থাকে বৈচিত্র্যময় পিঠাপুলি বানানোর কাজ। এ কাজে সহযোগিতা করেন গ্রামের নারীরা। তাঁরা গীত গেয়ে পিঠা তৈরি করেন।

ইউসুফ মোল্লা তাঁর কাজের জন্য জাতীয় পরিবেশ পদক-২০১৩ পেয়েছিলেন। তিনি দেশি জাতের ধানের বীজসহ বিভিন্ন সবজি বীজ রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তাঁর ব্যাংকের সংগ্রহে আছে ৩৫০টি জাতের ধানের বীজ, ২৫ জাতের বিভিন্ন দেশি সবজির বীজ ও ১৫ জাতের রবিশস্যের বীজ। ২০২২ সালের ১৪ জানুয়ারি ইউসুফ মোল্লা মারা যান।