সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা সীমান্তে সরকারে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চোরাচালান বাণিজ্য জমজমাট হয়ে উঠেছে। সীমান্ত কিংখ্যাত সোর্স পরিচয়ধারী একাধিক মামলার আসামীরা চোরাকারবারীদের নিয়ে প্রতিদিন লাখলাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে পাচাঁর করছে কয়লা, পাথর, কসমেটিস, শাড়ি-কাপড়, চিনি, ফুচকা, রসুন ও মাদকদ্রব্যসহ বিভিন্ন প্রকার পন্য সামগ্রী। আর এই চোরাচালান বাণিজ্য করে সীমান্ত সোর্সরা রাতারাতি কোটিপতি হলেও তাদেরকে গ্রেফতারের কোন খবর পাওয়া যায় না। তবে অভিযান চালিয়ে পাচাঁরকৃত প্রায় দেড় কোটি টাকার বিভিন্ন পন্য জব্দ করেছে বিজিবি।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- প্রতিদিনের মতো আজ মঙ্গলবার (১৭ই ডিসেম্ভর) ভোর থেকে জেলার তাহিরপুর উপজেলার লাউড়গড় সীমান্তের ১২০৩এর ৩এস পিলার ও সাহিদাবাদ বিজিবি পোষ্টের সামনে দিয়ে ভারতের ভিতর থেকে ৩ থেকে ৪শ লোক দিয়ে অবৈধ ভাবে কয়লা ও পাথর পাচাঁর শুরু হয়। এরপর পাচাঁরকৃত পাথর ৪০টা ঠেলাগাড়ি দিয়ে ও পাচাঁরকৃত কয়লা ১৫-২০টা মোটর সাইকেল দিয়ে পরিবহণ করে বিজিবি ক্যাম্পের সামনের রাস্তা দিয়ে ওপেন লাউড়গড় বাজারে চারপাশে নিয়ে মজুত করে স্থানীয় চোরাকারবারীরা।
এছাড়া গতকাল সোমবার (১৬ই ডিসেম্ভর) রাত ১২টার পরে এই সীমান্তের বডার বাজার ও কবিরের বাড়ির মাঝে দিয়ে ভারত থেকে প্রায় ১০লাখ টাকার ফুছকা ও মদসহ বিভিন্ন মালামাল পাচাঁর করে সীমান্তের বিভিন্ন বাড়িঘরে মজুত করে। অন্যদিকে ২-৩শ বারকি নৌকা দিয়ে ভারত থেকে রাতভর জাদুকাটা নদী দিয়ে সোর্স পরিচয়ধারীরা কয়লা ও পাথরসহ মদ, কমলা, কম্বল, চিনি, নাসির উদ্দিন বিড়ি, কসমেটিক ও বিভিন্ন মালামাল পাচাঁর করে। একই সময়ে পাশের চাঁনপুর সীমান্তের বারেকটিলার আনন্দপুর, ১২০৩পিলার, কড়ইগড়া, রাজাই, নয়াছড়া ও রজনী লাইন এলাকা দিয়ে প্রায় অর্ধকোটি টাকার ফুছকা, চিনি, জিরা, কিচমিচ, কম্বল, কমলা, আলু, নাসির উদ্দিন বিড়ি ও মদসহ কয়লা পাচারের খবর পাওয়া গেছে।
এছাড়াও টেকেরঘাট সীমান্তের বুরুঙ্গা এলাকা দিয়ে চুনাপাথর ও নীলাদ্রী লেক পাড়, পুলিশ ফাঁড়ি ও হাইস্কুলের পিছন দিয়ে লাখলাখ টাকার কয়লা পাচাঁর করে নিলাদ্রী লেকপাড় ও জয়বাংলা বাজারের পাশে মজুত করাসহ বালিয়াঘাট সীমান্তের লাকমা ও লালঘাট এলাকা দিয়ে কয়লা পাচাঁর করে শতাধিক লোক দিয়ে বিজিবি ক্যাম্পের সামনে অবস্থিত দুধেরআউটা গ্রামে নিয়ে ওপেন মজুত করা হলেও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে একই ভাবে চারাগাঁও সীমান্তের লালঘাট, বাঁশতলা, এলসি পয়েন্ট, কলাগাঁও মাইজহাটি ও জঙ্গলবাড়ি এলাকা দিয়ে কয়লা পাচাঁর করে বিজিবি ক্যাম্পের আশেপাশে একাধিক ডিপুসহ সোর্সদের বাড়ির উঠানে মজুত করা হচ্ছে। এসব সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন ভোর থেকে পাচাঁর শুরু হয় চলে রাত ভর। অন্যদিকে একই ভাবে বীরেন্দ্রনগর সীমান্তের কচুয়াছড়া, বাঙ্গালভিটা সীমান্তের কীর্তনছড়া দিয়ে প্রতিরাতে পাচাঁর করা হয় গরু, কসমেটিকস, চিনি, মাছ, রসুন ও মদসহ বিভিন্ন মালামাল। একই ভাবে বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার মাছিমপুর, চিনাকান্দি, ডলুরাসহ দোয়ারাবাজার সীমান্তে চলছে সোর্স ও চোরাকারবারীদের জমজমাট চোরাচালান বাণিজ্য।
তবে গত সোমবার (১৬ই ডিসেম্ভর) সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা নদীতে অভিযান চালিয়ে পাচাঁরকৃত ভারতীয় শাড়ি, প্যান্ট পিস, থ্রী পিস, পায়জামা, মকমল ও থান কাপড়ের চালান জব্দ করেছে বিজিবি। জব্দকৃত মালামালের মূল্য ১ কোটি ৪০ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। এব্যাপারে সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক একে এম জাকারিয়া কাদির সাংবাদিকদের জানান- সুরমা নদীতে নৌ-যোগে জব্দকৃত পন্য পরিবহণের সময় সুনামগঞ্জ ২৮ বিজিবির সহকারী পরিচালক রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করা হয়। ওই সময় উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইসমাইল রহমান। জব্দকৃত পন্য শুল্ক কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।