ফ্যাসিবাদি হাসিনা গত ১৬ বছরে যা যা অপকর্ম করেছে তাঁর নির্মম পরিণতি তাঁর হয়েছে, ভবিষ্যতেও নির্মম পরিণতি ভোগ করতে হবে। বাংলার ইতিহাসে হাসির মত লজ্জাজনক পলায়ন আগে কখনও হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। বাংলার মানুষ একদিন ঠিকই তাঁকে ভারত থেকে ধরে এনে ফাঁসির মঞ্চে উঠাবেই বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে নীলফামারীর সৈয়দপুরের ফাইভ স্টার মাঠে অনুষ্ঠিত মহান বিজয় দিবস ও জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থন উপলক্ষ্যে সৈয়দপুরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কর্তৃক আয়োজিত চিত্রাঙ্গন, রচনা ও কবিতা আবৃতির পুরস্কার বিতরণ ও বিশাল মতবিনিময় সভায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ১২০৪ সালে আজ থেকে প্রায় সাড়ে আটশত বছর পূর্বে এই বাংলায় ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খিলজির আগমনে অত্যাচারি লক্ষণসেন পালিয়েছিল। এই লক্ষণসেনের সাথে হাসিনার মিল রয়েছে। লক্ষনসেন পালিয়েছিল নৌকায় করে বিক্রমপুরে আর ফ্যাসিবাদি হাসিনা পালিয়েছে হেলিকপ্টার করে আগরতলায়। আমি খুনি হাসিনার দোসরদের স্পষ্ট বলে দিতে চাই যেখানে যে প্রান্তেই লুকাননা কেন বিচারের সম্মুখিন হতেই হবে।
ফ্যাসিবাদিরা বিজয় দিবসকেও আওয়ামীলীগ দিবসে পরিণত করেছিল। রাষ্ট্রীয় যতই দিবস হত গান বাজতো আওয়ামীলীগের। বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, সংবিধান এটা কোন দল, ব্যক্তি কিংবা কোন পরিবারের হতে পারে না। আর যারাই গত ১৬ বছর এসবের বিপক্ষে বলেছে তাঁদের গুম করা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে। গুনে গুনে এসবের বিচার হবেই হবে। ফ্যাসিবাদি হাসিনার নিজ অপকর্মের যদি বিন্দুমাত্র লজ্জা থাকে তাহলে সে কখনো এ বাংলার মাটিতে পা রাখবে না। যে হাসিনা শুধুমাত্র নিজের পরিবারের জন্য অসংখ্য মানুষকে হত্যা করেছে, অসংখ্য আলেম উলেমাকে জেল জুলুম করে বন্দি করে রেখেছে, যে হাসিনা এই ছাত্র আন্দোলনে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে হত্যা করেছ তাঁর বিচার হবেই হবে। আমরা আমাদের যায়গা থেকে এই খুনি হাসিনাকে ধরে এনে অবশ্যই বিচার করবো।
গুম ও খুনের সম্প্রতি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ্য করে তিনি আরও বলেন, যারাই হাসিনার অপকর্মর বিরুদ্ধে কথা বলেছে তাঁদের রাতেই গুম করে পরের দিন তাদের ছিন্নবিন্ন দেহ বিভিন্ন যায়গায় পাওয়া গেছে। হাসিনার বিরুদ্ধে শুধু একজন প্রতিবাদ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে বলে জীবন্ত তার ঠোট সেলাই করে দেওয়া হয়েছে। এমন শত শত গুম খুন শুধুমাত্র ফ্যাসিবাদি হাসিনার কারনেই হয়েছে এমন রিপোর্ট এখন সবার সামনে।
ভারতের উদ্দেশ্য সারজিস আলম বলেন, আমরা ভারত তথা উগ্রবাদী মোদিকে স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ ভারত বিরোধী নয়, বাংলাদেশের মানুষ ওই উগ্র মোদি তাঁর মুসলিমবিদেষীর বিরোধী। বাংলাদেশের মানুষ গুজরাটের কসাই মোদির বিরোধী ভারতের নয়। কারন সেখানে তাঁরা মুসলমানদের উপর নির্মম অত্যাচার করছে।
সৈয়দপুরের কথা বলতে গিয়ে তিনি সৈয়দপুরকে উত্তরবঙ্গের রাজধানী উল্লেখ্য করে বলেন, সৈয়দপুর জেলা না হলেও জেলার চেয়ে উর্ধ্বে। এখানকার শিক্ষার মান দেশের মান বাড়িয়েছে। তাছাড়া এ শহরে উর্দুভাষীরা আবাসন সমস্যা নিয়ে যে কষ্টে আছেন তা একজন মানুষ, একজন পরিবার হিসাবে থাকা যায় না। অবশ্যই তাদের আবাসন সমস্যা সমাধান ও একজন নাগরিক হিসাবে থাকার পূর্ণ মর্যাদা দেওয়া হবে।
সবশেষে তিনি বলেন, যুদ্ধ এখনো শেষ হয়ে যায়নি। ষড়যন্ত্র হচ্ছে কিন্তু আমরা যদি এক থাকি কোন ষড়যন্ত্রই কাজে আসবে না। সামনে আমাদের সংগ্রাম আরও কঠিন হবে। সবাই একতা সৃষ্টি করে এক থাকুন।
বিশাল ওই মতবিনিময় সভা এ সময় ফাইভ স্টার মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও পৌর প্রশাসক নুর-আলম-সিদ্দিকী, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিনুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল গফুর সরকার, শহর জামায়াতের আমীর শরফুদ্দিন খান, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রেদওয়ান, সৈয়দপুরের শহীদ সাজ্জাদের বাবা আলমগীর হোসেন প্রমুখ। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সৈয়দপুরের বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সাকিব।
সৈয়দপুরের বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের পক্ষে জাভেদ, রিমন, সানি, রাকিব, শাকিল, সোয়েব, বিজয়সহ অন্যান্য সমন্বয়করা উপস্থিত ছিলেন। পরে চিত্রাঙ্গান, কবিতা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে তিনি পুরস্কার তুলে দেন।