Dhaka ১০:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভোলায় আমনের ভাল ফলনে কৃষকের মুখে হাঁসি

?????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????

চলতি বছরের আগস্টে অতি বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে কয়েক দফায় আমনের চারা পানি নীচে থাকার পর চারা পচে যাওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছিল। সেই শঙ্কা থাকার পরেও কৃষকরা যে পরিমানে আমন ধান পাওয়ার আশা করেছিলেন তার চেয়েও ভাল ফলন হয়েছে। তাছাড়া রোগ-বালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ার পাশাপাশি ফলন ভালো হওয়াতে খুশি কৃষকরা। আবাদের খরচ মিটিয়ে বিগত দিনের ধারদেনাও শোধ করতে পারবেন বলে আশা করছেন তারা। ধান পাকাতে কৃষকরা এখন ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভোলায় আমন ধানের ফলন ভাল হওয়ায় হাঁসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে। কৃষকের সোনালি ধান দোল খাচ্ছে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে।

ভোলা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে ভোলা সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন ও মনপুরা মিলিয়ে মোট ৭ উপজেলায় কৃষকের সংখ্যা ৪ লাখ ২৮ হাজার। তার মধ্যে আমন আবাদ করেছেন ৪ লাখ ২৫ হাজার। চলতি বছর ভোলার ৭ উপজেলায় আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৯শ’ ৭৬ হেক্টর।

সরেজমিনে ভোলা সদর ও দৌলতখান উপজেলার আমন ধানের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, ব্রি-৫২, বিআর-২২ ও ২৩, স্বর্ণা, বিনা-১৭ ও ২০, ব্রি-৬৬, ৭০, ৭৮ ও ১০৩সহ বেশ কয়েকটি আমনের জাত রয়েছে কৃষকের জমিতে। এ বছর ধানের দাম বৃদ্ধি ও ফলন ভালো হওয়ায় খুশি কৃষকরা। ইতোমধ্যে অনেকে তাদের জমির পাকা ধান কেটে নিয়েছেন। আবার অনেকে ধান কাটতে ব্যস্ত। অন্যদিকে কেউ কেউ ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এতে বিগত দিনের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার আশা তাদের।

ভোলা সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের কৃষক মোজাম্মেল মাঝি জানান, তিনি ১৩ গন্ডা জমিতে আমন ধান রোপন করেছেন। ১৩ গন্ড জমিতে তার খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। গত বছরের তুলনায় এ বছর ফলন ভাল হয়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে তার লাভ হবে এমনটাই আশা করছেন তিনি।

চরসামাইয়া ইউনিয়নের কৃষক রিয়াজ মাল বলেন, এ বছর ৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছি। ইতোমধ্যে ১ হেক্টরের ধান, প্রায়ই ১২ মন ধান পেয়েছি। ক্ষেত থেকেই ১৩ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। আবাদের হিসেবে এ বছর লাভবান হব।

ইলিশা ইউনিয়নের মো. শাহাবুদ্দিন নামের বলেন, আমার ২ হেক্টর জমিতে ৬০০ টাকা কেজি দরে প্রথমবার ১০ কেজি আমন ধানের চারা রোপণের পর অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে সব চারা পচে গেছে। পরে আবার লাগিয়েছি। দ্বিতীয়বারও পচে যাওয়ার পর তৃতীয়বার আবার রোপণ করেছি। এতে চলতি সিজনে একই জমিতে আমন আবাদের জন্য ৩০ কেজি আমনের চারা রোপণ করতে হয়েছে। শ্রমিকের মজুরি কীটনাশকসহ প্রায় ২২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তারপরেও আশা করছি ন্যুনতম ২৭ হাজার টাকার ধান পাব।

একই গ্রামের অপর কৃষক মো. আবু বলেন, আগেভাগেই ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছি। একসঙ্গে সবার ধান কাটা শুরু হলে শ্রমিক সংকট হবে। অন্যান্য বছরের তুললায় এ বছর ধান কাটা শ্রমিকের মজুরি বেশি, দুইবেলা ভাতসহ চা-নাস্তা করিয়ে ৬শ’ ৫০ টাকা করে শ্রমিকদের দিতে হয়।

দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর ইউনিয়নের কৃষক মো. মোসলে উদ্দিন ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার আশার কথা বলে তিনি বলেন, সমিতি থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ক্ষেতে (জমি) আমন ধানের চারা লাগিয়েছি। জোয়ার ও বৃষ্টির পানি জমে আগস্ট মাসে ২ বার ক্ষেতের আমনের চারা পচে গেছে। এতে সমিতি থেকে নেয়া ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় ছিলাম। পরে আবার টাকা ধার করে ঝুঁকি নিয়ে ক্ষেতে আবারও ধানের চারা লাগিয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ ধান ভালো হয়েছে। আর কদিন পরেই কাটব। সবমিলিয়ে খরচাপাতি উঠে লাভ থাকবে।

ধানের ব্যাপারী মো. মিজান বলেন, সরাসরি কৃষকের জমি থেকে ১ হাজার ৭০ থেকে ১১শ’ টাকা মণে আমন ধান কিনছি। পরে আমি আবার মণ প্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা লাভে আড়তদারের কাছে বিক্রি করি।

ভোলা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) কৃষিবিদ এ এফ এম শাহাবুদ্দিন বলেন, চলমান ক্ষরিক-২ মৌসূমে ভোলা জেলায় ১ লাখ ৭৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। মৌসূমের শুরুতে অতিবৃষ্টি ও অতিজোয়ারের কারণের আমনের চারা পচে যাওয়ার পর অতিরিক্ত চারা সংগ্রহ ও কূশী ভেঙে রোপণের ফলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে জেলায় ৪০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় প্রতি হেক্টরে ৪ দশমিক ৯ টন করে ফলন হয়েছে। যে-সব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের বীজসহ বিভিন্ন প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে পরিত্যক্ত লোহা বিক্রি

ভোলায় আমনের ভাল ফলনে কৃষকের মুখে হাঁসি

Update Time : ১১:২৪:৩১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪

চলতি বছরের আগস্টে অতি বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে কয়েক দফায় আমনের চারা পানি নীচে থাকার পর চারা পচে যাওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছিল। সেই শঙ্কা থাকার পরেও কৃষকরা যে পরিমানে আমন ধান পাওয়ার আশা করেছিলেন তার চেয়েও ভাল ফলন হয়েছে। তাছাড়া রোগ-বালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ার পাশাপাশি ফলন ভালো হওয়াতে খুশি কৃষকরা। আবাদের খরচ মিটিয়ে বিগত দিনের ধারদেনাও শোধ করতে পারবেন বলে আশা করছেন তারা। ধান পাকাতে কৃষকরা এখন ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভোলায় আমন ধানের ফলন ভাল হওয়ায় হাঁসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে। কৃষকের সোনালি ধান দোল খাচ্ছে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে।

ভোলা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে ভোলা সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন ও মনপুরা মিলিয়ে মোট ৭ উপজেলায় কৃষকের সংখ্যা ৪ লাখ ২৮ হাজার। তার মধ্যে আমন আবাদ করেছেন ৪ লাখ ২৫ হাজার। চলতি বছর ভোলার ৭ উপজেলায় আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৯শ’ ৭৬ হেক্টর।

সরেজমিনে ভোলা সদর ও দৌলতখান উপজেলার আমন ধানের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, ব্রি-৫২, বিআর-২২ ও ২৩, স্বর্ণা, বিনা-১৭ ও ২০, ব্রি-৬৬, ৭০, ৭৮ ও ১০৩সহ বেশ কয়েকটি আমনের জাত রয়েছে কৃষকের জমিতে। এ বছর ধানের দাম বৃদ্ধি ও ফলন ভালো হওয়ায় খুশি কৃষকরা। ইতোমধ্যে অনেকে তাদের জমির পাকা ধান কেটে নিয়েছেন। আবার অনেকে ধান কাটতে ব্যস্ত। অন্যদিকে কেউ কেউ ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এতে বিগত দিনের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার আশা তাদের।

ভোলা সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের কৃষক মোজাম্মেল মাঝি জানান, তিনি ১৩ গন্ডা জমিতে আমন ধান রোপন করেছেন। ১৩ গন্ড জমিতে তার খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। গত বছরের তুলনায় এ বছর ফলন ভাল হয়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে তার লাভ হবে এমনটাই আশা করছেন তিনি।

চরসামাইয়া ইউনিয়নের কৃষক রিয়াজ মাল বলেন, এ বছর ৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছি। ইতোমধ্যে ১ হেক্টরের ধান, প্রায়ই ১২ মন ধান পেয়েছি। ক্ষেত থেকেই ১৩ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। আবাদের হিসেবে এ বছর লাভবান হব।

ইলিশা ইউনিয়নের মো. শাহাবুদ্দিন নামের বলেন, আমার ২ হেক্টর জমিতে ৬০০ টাকা কেজি দরে প্রথমবার ১০ কেজি আমন ধানের চারা রোপণের পর অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে সব চারা পচে গেছে। পরে আবার লাগিয়েছি। দ্বিতীয়বারও পচে যাওয়ার পর তৃতীয়বার আবার রোপণ করেছি। এতে চলতি সিজনে একই জমিতে আমন আবাদের জন্য ৩০ কেজি আমনের চারা রোপণ করতে হয়েছে। শ্রমিকের মজুরি কীটনাশকসহ প্রায় ২২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তারপরেও আশা করছি ন্যুনতম ২৭ হাজার টাকার ধান পাব।

একই গ্রামের অপর কৃষক মো. আবু বলেন, আগেভাগেই ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছি। একসঙ্গে সবার ধান কাটা শুরু হলে শ্রমিক সংকট হবে। অন্যান্য বছরের তুললায় এ বছর ধান কাটা শ্রমিকের মজুরি বেশি, দুইবেলা ভাতসহ চা-নাস্তা করিয়ে ৬শ’ ৫০ টাকা করে শ্রমিকদের দিতে হয়।

দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর ইউনিয়নের কৃষক মো. মোসলে উদ্দিন ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার আশার কথা বলে তিনি বলেন, সমিতি থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ক্ষেতে (জমি) আমন ধানের চারা লাগিয়েছি। জোয়ার ও বৃষ্টির পানি জমে আগস্ট মাসে ২ বার ক্ষেতের আমনের চারা পচে গেছে। এতে সমিতি থেকে নেয়া ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় ছিলাম। পরে আবার টাকা ধার করে ঝুঁকি নিয়ে ক্ষেতে আবারও ধানের চারা লাগিয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ ধান ভালো হয়েছে। আর কদিন পরেই কাটব। সবমিলিয়ে খরচাপাতি উঠে লাভ থাকবে।

ধানের ব্যাপারী মো. মিজান বলেন, সরাসরি কৃষকের জমি থেকে ১ হাজার ৭০ থেকে ১১শ’ টাকা মণে আমন ধান কিনছি। পরে আমি আবার মণ প্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা লাভে আড়তদারের কাছে বিক্রি করি।

ভোলা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) কৃষিবিদ এ এফ এম শাহাবুদ্দিন বলেন, চলমান ক্ষরিক-২ মৌসূমে ভোলা জেলায় ১ লাখ ৭৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। মৌসূমের শুরুতে অতিবৃষ্টি ও অতিজোয়ারের কারণের আমনের চারা পচে যাওয়ার পর অতিরিক্ত চারা সংগ্রহ ও কূশী ভেঙে রোপণের ফলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে জেলায় ৪০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় প্রতি হেক্টরে ৪ দশমিক ৯ টন করে ফলন হয়েছে। যে-সব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের বীজসহ বিভিন্ন প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।