Dhaka ০৮:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেহেরপুরে বালাইনাশক ব্যবহারে উদাসিন কৃষকরা

মেহেরপুরে কৃষকেরা বছরে তিনটি মৌসুমে সবজি উৎপাদন করেন। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সবজির একটি বড় অংশ পাঠানো হয় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে। কৃষি বিভাগ থেকে বিষমুক্ত সবজি চাষের কথা ও পরামর্শ দেয়া হলেও সেটি মানা হচ্ছে না। উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তার খাবার টেবিলে পৌঁছানো পর্যন্ত সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি সার ও বালাইনাশকসহ ব্যবহার করা হয়। তবে কৃষি অফিস বলছে চাষিদেরকে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বালাই নাশক ব্যবহারে সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসার।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় চলতি মৌসুমে ১২৩৬ হেক্টর বাঁধাকপি, ১১৪৫ হেক্টর ফুলকপি, ১১৫ হেক্টর পালং শাক, ১১০ হেক্টর সীম, ৩৪৭ হেক্টর বেগুনসহ ৪ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি রয়েছে। সাধারণত রোগবালাইয়ের ধরন বুঝে শাকসবজিতে বিভিন্ন ধরনের বালাইনাশক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মোড়কের গায়ে জমি ও ফসল অনুযায়ী পরিমাপ লেখা থাকে। সে অনুযায়ি তা ব্যবহার করতে হবে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে বালাইনাশক প্রয়োগের পর খাওয়ার জন্য  অন্ততঃ এক সপ্তাহ থেকে ১৫ দিন পর ক্ষেত থেকে সবজি তুলতে হয়।

কৃষি বিভাগের এই পরামর্শ মানছেন না কৃষকরা। তারা বিকেলে ক্ষেতে বালাইনাশক ছিটিয়ে পরদিন সকালেই সবজি বাজারে নিয়ে আসেন। অপেক্ষমাণকাল না মানায় শাকসবজির সঙ্গে সরাসরি বিষ শরীরে প্রবেশ করছে, যা আমাদের জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। শুধু ভোক্তা বা ক্রেতা নয়, উৎপাদন কাজে নিয়জিত কৃষকরাও আক্রান্ত হচ্ছেন নানা ধরনের রোগে। তবুও দেখা দেখি ছাড়াও বিভিন্ন বিষ কোম্পানী ও কীটনাশক বিক্রেতাদের পরামর্শে কৃষকরা বালাইনাশক ব্যবহার করছেন মাত্রাতিরিক্ত।

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক মাহাবুবুর রহমান জানান, এমন কতগুলো বালাইনাশক বা রাসায়নিক পদার্থ আছে যা শাক সবজিতে স্প্রে করার পর ভালো করে ধুলেও সবজি শতভাগ পরিষ্কার ও নিরাপদ হয় না। ওই সবজি খেলে কিডনি, লিভার, স্তন, ফুসফুস, পাকস্থলী, প্রস্টেট, অগ্নাশয় ও ব্লাড ক্যানসারের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের রাসায়নিক ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক নিয়ে সচেতন করতে হবে। অর্গানিক উপায়ে খাবার উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে হবে। ভোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে।

সহড়াবাড়িয়া মাঠে শনিবার সন্ধ্যায় কথা হয় বেগুন চাষি আব্দুর রশিদের সাথে। তিনি দেড় বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। বেগুন ক্ষেতে বালাই নাশক স্প্রে করছিলেন তিনি। পরদিন সকালে বেগুন তুলে বাজারে আনবেন বলে জানান। দুই ধরনের বালাই নাশক ছিটিয়েছেন বেগুন ক্ষেতে। এগুলো ব্যবহারে তেমন ক্ষতি নেই এবং সকলেই বালাইনাশক ব্যবহার করছেন বলেও জানান তিনি।

কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি ২৫ কাঠা জমিতে শিম চাষ করেছেন। পাঁচ দিন আগে চার ধরনের বালাইনাশক মিশিয়ে ক্ষেতে দিয়েছেনতার দাবী, বালাইনাশক ক্ষেতে দিলে কোন ক্ষতি হয় না। রাতে শিশির পড়ে তা ধুয়ে যায়। একই কথা জানালেন যুগিরগোফা গ্রামের সবজি চাষি আবু বকর ও আলম। দুজনই কফি চাষ করছেন।

গাংনী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা এমরান হোসেন জানান, বীজ থেকে শুরু করে বীজতলা এবং পরবর্তী অন্য সব পরিচর্যায় বালাইনাশক ব্যবহারের যে ক্ষতিকর দিকগুলো আছে সে বিষয়ে সচেতন করতে কর্মকা- পরিচালনা করা হচ্ছে। বালাইনাশকের প্যাকেটে একটি ওয়েটিং পিরিয়ড (ব্যবহারের সময়সীমা) লেখা থাকে। অনেক ক্ষেত্রে কৃষক তা যথাযথভাবে মানেন না। তাই উৎপাদন থেকে ভোক্তাপর্যায়ে সবাই যদি সচেতন না হলে নিরাপদ সবজি পাওয়া যাবে না। তাই কৃষক ভাইদের পরামর্শ অনুসরণ করে ফসল ফলানোর অনুরোধ জানান তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

মেহেরপুরে বালাইনাশক ব্যবহারে উদাসিন কৃষকরা

Update Time : ০১:৩৩:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

মেহেরপুরে কৃষকেরা বছরে তিনটি মৌসুমে সবজি উৎপাদন করেন। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সবজির একটি বড় অংশ পাঠানো হয় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে। কৃষি বিভাগ থেকে বিষমুক্ত সবজি চাষের কথা ও পরামর্শ দেয়া হলেও সেটি মানা হচ্ছে না। উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তার খাবার টেবিলে পৌঁছানো পর্যন্ত সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি সার ও বালাইনাশকসহ ব্যবহার করা হয়। তবে কৃষি অফিস বলছে চাষিদেরকে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বালাই নাশক ব্যবহারে সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসার।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় চলতি মৌসুমে ১২৩৬ হেক্টর বাঁধাকপি, ১১৪৫ হেক্টর ফুলকপি, ১১৫ হেক্টর পালং শাক, ১১০ হেক্টর সীম, ৩৪৭ হেক্টর বেগুনসহ ৪ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি রয়েছে। সাধারণত রোগবালাইয়ের ধরন বুঝে শাকসবজিতে বিভিন্ন ধরনের বালাইনাশক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মোড়কের গায়ে জমি ও ফসল অনুযায়ী পরিমাপ লেখা থাকে। সে অনুযায়ি তা ব্যবহার করতে হবে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে বালাইনাশক প্রয়োগের পর খাওয়ার জন্য  অন্ততঃ এক সপ্তাহ থেকে ১৫ দিন পর ক্ষেত থেকে সবজি তুলতে হয়।

কৃষি বিভাগের এই পরামর্শ মানছেন না কৃষকরা। তারা বিকেলে ক্ষেতে বালাইনাশক ছিটিয়ে পরদিন সকালেই সবজি বাজারে নিয়ে আসেন। অপেক্ষমাণকাল না মানায় শাকসবজির সঙ্গে সরাসরি বিষ শরীরে প্রবেশ করছে, যা আমাদের জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। শুধু ভোক্তা বা ক্রেতা নয়, উৎপাদন কাজে নিয়জিত কৃষকরাও আক্রান্ত হচ্ছেন নানা ধরনের রোগে। তবুও দেখা দেখি ছাড়াও বিভিন্ন বিষ কোম্পানী ও কীটনাশক বিক্রেতাদের পরামর্শে কৃষকরা বালাইনাশক ব্যবহার করছেন মাত্রাতিরিক্ত।

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক মাহাবুবুর রহমান জানান, এমন কতগুলো বালাইনাশক বা রাসায়নিক পদার্থ আছে যা শাক সবজিতে স্প্রে করার পর ভালো করে ধুলেও সবজি শতভাগ পরিষ্কার ও নিরাপদ হয় না। ওই সবজি খেলে কিডনি, লিভার, স্তন, ফুসফুস, পাকস্থলী, প্রস্টেট, অগ্নাশয় ও ব্লাড ক্যানসারের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের রাসায়নিক ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক নিয়ে সচেতন করতে হবে। অর্গানিক উপায়ে খাবার উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে হবে। ভোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে।

সহড়াবাড়িয়া মাঠে শনিবার সন্ধ্যায় কথা হয় বেগুন চাষি আব্দুর রশিদের সাথে। তিনি দেড় বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। বেগুন ক্ষেতে বালাই নাশক স্প্রে করছিলেন তিনি। পরদিন সকালে বেগুন তুলে বাজারে আনবেন বলে জানান। দুই ধরনের বালাই নাশক ছিটিয়েছেন বেগুন ক্ষেতে। এগুলো ব্যবহারে তেমন ক্ষতি নেই এবং সকলেই বালাইনাশক ব্যবহার করছেন বলেও জানান তিনি।

কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি ২৫ কাঠা জমিতে শিম চাষ করেছেন। পাঁচ দিন আগে চার ধরনের বালাইনাশক মিশিয়ে ক্ষেতে দিয়েছেনতার দাবী, বালাইনাশক ক্ষেতে দিলে কোন ক্ষতি হয় না। রাতে শিশির পড়ে তা ধুয়ে যায়। একই কথা জানালেন যুগিরগোফা গ্রামের সবজি চাষি আবু বকর ও আলম। দুজনই কফি চাষ করছেন।

গাংনী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা এমরান হোসেন জানান, বীজ থেকে শুরু করে বীজতলা এবং পরবর্তী অন্য সব পরিচর্যায় বালাইনাশক ব্যবহারের যে ক্ষতিকর দিকগুলো আছে সে বিষয়ে সচেতন করতে কর্মকা- পরিচালনা করা হচ্ছে। বালাইনাশকের প্যাকেটে একটি ওয়েটিং পিরিয়ড (ব্যবহারের সময়সীমা) লেখা থাকে। অনেক ক্ষেত্রে কৃষক তা যথাযথভাবে মানেন না। তাই উৎপাদন থেকে ভোক্তাপর্যায়ে সবাই যদি সচেতন না হলে নিরাপদ সবজি পাওয়া যাবে না। তাই কৃষক ভাইদের পরামর্শ অনুসরণ করে ফসল ফলানোর অনুরোধ জানান তিনি।