Dhaka ০১:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেহেরপুরে ছাত্রলীগ নেতা থেকে সার ডিলারের সভাপতি

শেখ হাসিনা সরকারের আমলে মেহেরপুরের সংসদ সদস্য ও সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রীর আস্থাভাজন ছাত্রলীগ নেতা খুচরা সার ডিলার সমিতির সভাপতি শাহিনুল ইসলাম শাহীন রয়েছে। স্বৈরাচারের পতন হলেও এখনো বহল তবিয়তে রয়েছে ছাত্রলীগ নেতা শাহিনুজ্জামান শাহিন। নিয়মিত ডাকপান জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে। সেখানে বর্তমান অন্তর্বতী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে সার নিয়ে নানামুখি কাজরসাজির মুল হোতা এই শাহিনুল ইসলামের এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের অনেক সরকারি কর্মকর্তা আবারো সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। গোপনে তারা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ নেতা কর্মীদের পুনর্বাশন করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার ২০২৩ সালে রাসায়নিক সার বিতরণে সুবিধার জন্য একটি ইউনিয়নে ৯ জন করে সাব ডিলার হিসাবে লাইসেন্স প্রদান করে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এসব সাব ডিলার বেশিরভাগ রাজনৈকি বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা মুলত ব্যবসায়ী ছিলেন না। তাদের মাল মজুদ রাখারও কোন কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। এসব কারণে খুচরা বাজারে সরকারি নির্ধারিত ‍মুল্যে কৃষকেরা সার পাচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিআইসি সার ডিলার বলেন, পতিত সরকারের আমলে বেশিরভাগ সাব ডিলার রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পেয়েছে। তারা সাব ডিলার কমিটি তৈরি করে ছাত্রলীগ নেতা শাহিনুল ইসলামকে সভাপতি করেছে। শাহিনুল ইসলাম মুলত ডেকোরেটর ব্যবসায়ী। সার কিটনাশক ব্যবসা করে না। ডিলারের কাছ থেকে সার বরাদ্দ অনুযায়ী উত্তোলন করে বেশি দামে অনিবন্ধিত ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। সাব ডিলার সিন্ডিকেট মুলত সারের দাম বৃদ্ধিতে কাজ করছে। এদের দ্রুত দমানো না গেলে সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হবে।

পৌর শহরের বাসিন্দা তাবারক হোসেন বলেন, ছাত্রলীগ নেতা শাহিনুল ইসলামের সারের দোকানটি পৌরশহরের কাথুলী সড়ক সংলগ্ন বাজারে অবস্থিত। বিগত সরকারের আমলে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ত কায়েম করেছিলো তিনি। তার ভয়ে এলাকায় কেও কথা বলতো পারতো না। যারা এরকম দুর্ধর্ষ রকমের নেতা ছিলো তারা স্বৈরাচার সরকার পতন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। শুধুমাত্র শাহিনুল ইসলাম এখনো বহাল তবিয়তে স্বপদে রয়েছে। তাকে জেলা প্রশাসন সহযোগিতা করছে।

ওই এলাকার কৃষক মোহাম্মদ জানে আলম বলেন, শাহিনুল ইসলামের দোকান থেকে এক বস্তা ডিএপি সার কিনতে হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। সরকারি দামে কোনদিন সার পাওয়া যায়না তার কাছে। এলাকার ছাত্রলীগ ক্যাডার হওয়ায় কেও ভয়ে কথা বলতে পারে না।

জানতে চাইলে শাহিনুল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগ করতাম এক সময়। এখন ব্যবসা করি। ডেকোরেটরের পাশাপাশি সার বিক্রি করা হয়। বেশিরভাগ সময় দোকান বন্ধ থাকে এমন অভিযোগে ব্যপারে জানতে  চাইলে তিনি বলেন, দোকানে সার না থাকলে তখন দোকান বন্ধ করে রাখি।

কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিজয় কৃঞ্চ হালদার বলেন, শাহিনুল ইসলাম নিয়মিত ব্যবসা করেন না। সার ও বীজ মনিটর কমিটিতে কেন তাকে ডাকা হয়। কোন নিয়মে তাকে ডাকা হচ্ছে তা আমার জানা নেই। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। সরকারি নির্ধারিত দামের অধিক মুৃল্যে তিনি সরকারি সার বিক্রি করেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

মেহেরপুরে ছাত্রলীগ নেতা থেকে সার ডিলারের সভাপতি

Update Time : ০৯:৫২:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

শেখ হাসিনা সরকারের আমলে মেহেরপুরের সংসদ সদস্য ও সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রীর আস্থাভাজন ছাত্রলীগ নেতা খুচরা সার ডিলার সমিতির সভাপতি শাহিনুল ইসলাম শাহীন রয়েছে। স্বৈরাচারের পতন হলেও এখনো বহল তবিয়তে রয়েছে ছাত্রলীগ নেতা শাহিনুজ্জামান শাহিন। নিয়মিত ডাকপান জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে। সেখানে বর্তমান অন্তর্বতী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে সার নিয়ে নানামুখি কাজরসাজির মুল হোতা এই শাহিনুল ইসলামের এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের অনেক সরকারি কর্মকর্তা আবারো সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। গোপনে তারা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ নেতা কর্মীদের পুনর্বাশন করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার ২০২৩ সালে রাসায়নিক সার বিতরণে সুবিধার জন্য একটি ইউনিয়নে ৯ জন করে সাব ডিলার হিসাবে লাইসেন্স প্রদান করে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এসব সাব ডিলার বেশিরভাগ রাজনৈকি বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা মুলত ব্যবসায়ী ছিলেন না। তাদের মাল মজুদ রাখারও কোন কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। এসব কারণে খুচরা বাজারে সরকারি নির্ধারিত ‍মুল্যে কৃষকেরা সার পাচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিআইসি সার ডিলার বলেন, পতিত সরকারের আমলে বেশিরভাগ সাব ডিলার রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পেয়েছে। তারা সাব ডিলার কমিটি তৈরি করে ছাত্রলীগ নেতা শাহিনুল ইসলামকে সভাপতি করেছে। শাহিনুল ইসলাম মুলত ডেকোরেটর ব্যবসায়ী। সার কিটনাশক ব্যবসা করে না। ডিলারের কাছ থেকে সার বরাদ্দ অনুযায়ী উত্তোলন করে বেশি দামে অনিবন্ধিত ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। সাব ডিলার সিন্ডিকেট মুলত সারের দাম বৃদ্ধিতে কাজ করছে। এদের দ্রুত দমানো না গেলে সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হবে।

পৌর শহরের বাসিন্দা তাবারক হোসেন বলেন, ছাত্রলীগ নেতা শাহিনুল ইসলামের সারের দোকানটি পৌরশহরের কাথুলী সড়ক সংলগ্ন বাজারে অবস্থিত। বিগত সরকারের আমলে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ত কায়েম করেছিলো তিনি। তার ভয়ে এলাকায় কেও কথা বলতো পারতো না। যারা এরকম দুর্ধর্ষ রকমের নেতা ছিলো তারা স্বৈরাচার সরকার পতন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। শুধুমাত্র শাহিনুল ইসলাম এখনো বহাল তবিয়তে স্বপদে রয়েছে। তাকে জেলা প্রশাসন সহযোগিতা করছে।

ওই এলাকার কৃষক মোহাম্মদ জানে আলম বলেন, শাহিনুল ইসলামের দোকান থেকে এক বস্তা ডিএপি সার কিনতে হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। সরকারি দামে কোনদিন সার পাওয়া যায়না তার কাছে। এলাকার ছাত্রলীগ ক্যাডার হওয়ায় কেও ভয়ে কথা বলতে পারে না।

জানতে চাইলে শাহিনুল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগ করতাম এক সময়। এখন ব্যবসা করি। ডেকোরেটরের পাশাপাশি সার বিক্রি করা হয়। বেশিরভাগ সময় দোকান বন্ধ থাকে এমন অভিযোগে ব্যপারে জানতে  চাইলে তিনি বলেন, দোকানে সার না থাকলে তখন দোকান বন্ধ করে রাখি।

কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিজয় কৃঞ্চ হালদার বলেন, শাহিনুল ইসলাম নিয়মিত ব্যবসা করেন না। সার ও বীজ মনিটর কমিটিতে কেন তাকে ডাকা হয়। কোন নিয়মে তাকে ডাকা হচ্ছে তা আমার জানা নেই। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। সরকারি নির্ধারিত দামের অধিক মুৃল্যে তিনি সরকারি সার বিক্রি করেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।