Dhaka ১২:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ জরিপে গিয়ে অবরুদ্ধ ১০সার্ভেয়ার, মুচলেকায় মিলে ছাড়

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নে বিআরএস রেকর্ডের জন্য জমি জরিপ করতে গেলে অবরুদ্ধ রাখা হয় ১০ জন সার্ভেয়ারকে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) মোড়ে এলাকার লোকজন তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নির্দেশে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করেন। তবে মুক্তির আগে সার্ভেয়ারদের নিকট থেকে লিখিত মুচলেকা নেন এলাকাবাসী। তাতে এই চরে ওই সার্ভেয়াররা আর কখনো জরিপে যাবেন না মুচলেকা দেন।

জানা গেছে, পদ্মা নদীর ওপারে ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া এই ইউনিয়নের দুটি মৌজায় এর আগে ২০০৯ সালে বিআরএস রেকর্ডের জরিপ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তখন অনেকের জমি প্রভাবশালীদের নামে রেকর্ড হয়ে যায়। ইউনিয়নবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী ভূমিদস্যু চক্র অসাধু সার্ভেয়ারদের ঘুষ দিয়ে অন্যের অনেক জমি নিজেদের নামে করে নিয়েছেন। খতিয়ানে তারা খাস জমিরও মালিক হয়ে গেছেন। কিছুদিন ধরে ওই একই চক্র ইউনিয়নের বাকি এলাকায় বিআরএস রেকর্ড করার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছিলেন।

দিয়ারা সেটেলমেন্ট অপারেশন, রাজশাহীর চার্জ অফিসারের ওই জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১০ ডিসেম্বর থেকে বিআরএস রেকর্ডের জন্য দিয়ারা জরিপ শুরু হবে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন চরবাসী। এই জরিপ না করার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেন। তাতে সাড়া না পাওয়া গেলে ১০ ডিসেম্বর সকাল থেকে তারা ইউপি মোড়ে অবস্থান নেন। ফলে সেদিন কেউ জরিপ করতে যাননি। তবে হঠাৎ মঙ্গলবার জরিপের জন্য দিয়ারা অপারেশনের সার্ভেয়ার-কর্মচারী মিলিয়ে ১০ জন যান চরে।

এর পর সার্ভেয়ারদের ইউপি মোড়ে আটকে রাখেন কয়েকশো মানুষ। খবর পেয়ে ছুটে যান ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম ভোলাও। তখন স্থানীয়রা চেয়ারম্যানের ওপরেও চড়াও হন। তারা বলেন, ‘ঘুষ-দুর্নীতির ফাঁদ’ এই জরিপ বন্ধ করতে না পারলে চেয়ারম্যানকেই পদত্যাগ করতে হবে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ইউপি চেয়ারম্যান ইউএনওকে ফোন করেন।

জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম ভোলা বলেন, ‘কয়েকদিন আগে ইউএনও আবুল হায়াত আমাকে ফোন করে বলেন যে, দিয়ারা সেটেলমেন্ট অপারেশনের সার্ভেয়াররা জমি জরিপ করতে যাবেন। আমি তখন বলি, চরের মানুষ এটা চায় না। ইউএনও আমাকে বলেন, ওরা যেতে চায় যাক। তারপর দেখা যাবে। আজ সার্ভেয়াররা এলে তারা তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। বাধ্য হয়ে আমি ইউএনওকে ফোন করলে তিনি পুলিশ-বিজিবিকে পাঠিয়ে সার্ভেয়ারদের উদ্ধারের ব্যবস্থা করেন। তারা একটা মুচলেকা দিয়েছেন যে চরে আর কখনও জরিপ করতে আসবেন না। এই মুচলেকা জনগণের কাছেই আছে।

গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) আবুল হায়াত বলেন, ‘চরের মানুষ যে জরিপের ব্যাপারে এত ক্ষুব্ধ তা আমি জানতাম না। আমাকে দিয়ারা সেটেলমেন্ট থেকে জানায় যে তারা জরিপ করতে যাবেন। আমি সেটা চেয়ারম্যানকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু তারা গেলে জনগণ অবরুদ্ধ করে রাখেন। আমি বলে দিয়েছি, জনগণ যেহেতু চায় না, এই জরিপ হবে না। ঢাকায় এটা জানিয়ে দিয়েছি।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

আজ শুভ বড়দিন

গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ জরিপে গিয়ে অবরুদ্ধ ১০সার্ভেয়ার, মুচলেকায় মিলে ছাড়

Update Time : ১১:৪২:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নে বিআরএস রেকর্ডের জন্য জমি জরিপ করতে গেলে অবরুদ্ধ রাখা হয় ১০ জন সার্ভেয়ারকে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) মোড়ে এলাকার লোকজন তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নির্দেশে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করেন। তবে মুক্তির আগে সার্ভেয়ারদের নিকট থেকে লিখিত মুচলেকা নেন এলাকাবাসী। তাতে এই চরে ওই সার্ভেয়াররা আর কখনো জরিপে যাবেন না মুচলেকা দেন।

জানা গেছে, পদ্মা নদীর ওপারে ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া এই ইউনিয়নের দুটি মৌজায় এর আগে ২০০৯ সালে বিআরএস রেকর্ডের জরিপ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তখন অনেকের জমি প্রভাবশালীদের নামে রেকর্ড হয়ে যায়। ইউনিয়নবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী ভূমিদস্যু চক্র অসাধু সার্ভেয়ারদের ঘুষ দিয়ে অন্যের অনেক জমি নিজেদের নামে করে নিয়েছেন। খতিয়ানে তারা খাস জমিরও মালিক হয়ে গেছেন। কিছুদিন ধরে ওই একই চক্র ইউনিয়নের বাকি এলাকায় বিআরএস রেকর্ড করার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছিলেন।

দিয়ারা সেটেলমেন্ট অপারেশন, রাজশাহীর চার্জ অফিসারের ওই জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১০ ডিসেম্বর থেকে বিআরএস রেকর্ডের জন্য দিয়ারা জরিপ শুরু হবে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন চরবাসী। এই জরিপ না করার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেন। তাতে সাড়া না পাওয়া গেলে ১০ ডিসেম্বর সকাল থেকে তারা ইউপি মোড়ে অবস্থান নেন। ফলে সেদিন কেউ জরিপ করতে যাননি। তবে হঠাৎ মঙ্গলবার জরিপের জন্য দিয়ারা অপারেশনের সার্ভেয়ার-কর্মচারী মিলিয়ে ১০ জন যান চরে।

এর পর সার্ভেয়ারদের ইউপি মোড়ে আটকে রাখেন কয়েকশো মানুষ। খবর পেয়ে ছুটে যান ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম ভোলাও। তখন স্থানীয়রা চেয়ারম্যানের ওপরেও চড়াও হন। তারা বলেন, ‘ঘুষ-দুর্নীতির ফাঁদ’ এই জরিপ বন্ধ করতে না পারলে চেয়ারম্যানকেই পদত্যাগ করতে হবে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ইউপি চেয়ারম্যান ইউএনওকে ফোন করেন।

জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম ভোলা বলেন, ‘কয়েকদিন আগে ইউএনও আবুল হায়াত আমাকে ফোন করে বলেন যে, দিয়ারা সেটেলমেন্ট অপারেশনের সার্ভেয়াররা জমি জরিপ করতে যাবেন। আমি তখন বলি, চরের মানুষ এটা চায় না। ইউএনও আমাকে বলেন, ওরা যেতে চায় যাক। তারপর দেখা যাবে। আজ সার্ভেয়াররা এলে তারা তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। বাধ্য হয়ে আমি ইউএনওকে ফোন করলে তিনি পুলিশ-বিজিবিকে পাঠিয়ে সার্ভেয়ারদের উদ্ধারের ব্যবস্থা করেন। তারা একটা মুচলেকা দিয়েছেন যে চরে আর কখনও জরিপ করতে আসবেন না। এই মুচলেকা জনগণের কাছেই আছে।

গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) আবুল হায়াত বলেন, ‘চরের মানুষ যে জরিপের ব্যাপারে এত ক্ষুব্ধ তা আমি জানতাম না। আমাকে দিয়ারা সেটেলমেন্ট থেকে জানায় যে তারা জরিপ করতে যাবেন। আমি সেটা চেয়ারম্যানকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু তারা গেলে জনগণ অবরুদ্ধ করে রাখেন। আমি বলে দিয়েছি, জনগণ যেহেতু চায় না, এই জরিপ হবে না। ঢাকায় এটা জানিয়ে দিয়েছি।’