Dhaka ০৭:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুনামগঞ্জে ২কোটি টাকার মালামাল,নগদ অর্থ,মদ ও যানবাহনসহ গ্রেফতার ৪

সুনামগঞ্জে গত ২দিনে পৃথক অভিযান চালিয়ে পাঁচারকৃত প্রায় ২ কোটি টাকার অবৈধ মালামাল, নগদ অর্থ, মদ ও ২টি পিকআপসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু সীমান্ত চোরাচালান নিয়ন্ত্রণকারী সোর্স পরিচয়ধারীরা গ্রেফতার না হওয়ার কারণে বন্ধ হচ্ছে না পাচাঁর বাণিজ্য। তাই এব্যাপারে বিজিবির পাশাপাশি র‌্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহযোগীতা জরুরী প্রয়োজন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- প্রতিদিনের মতো আজ বৃহস্পতিবার (২৬ শে ডিসেম্বর) ভোর থেকে তাহিরপুর উপজেলার লাউড়গড় সীমান্তের সাহিদাবাদ বিজিবি পোষ্টের সামনে দিয়ে ভারতের ৩-৪শ গজ ভিতর থেকে অবাধে পাথর ও কয়লা পাথর শুরু হয়। চোরাকারবারীরা প্রথমে ২-৩শ লোক দিয়ে লাখলাখ টাকার অবৈধ পাথর ও কয়লা পাচাঁর করে সীমান্তের জিরো পয়েন্টে ওপেন মজুত করে। পরে সকাল ৮-৯টা থেকে পাচাঁরকৃত পাথর ৪০-৫০টা ঠেলাগাড়ি দিয়ে ও পাচাঁরকৃত কয়লা ১০-১৫টা মোটর সাইকেল দিয়ে ওপেন বিজিবি ক্যাম্পের সামনের রাস্তা দিয়ে লাউড়গড় বাজারে চারপাশে নিয়ে বিক্রি করা হয়। আর এই অবৈধ পাচাঁর বাণিজ্য প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চললেও বিজিবির পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়না। তবে পাচাঁরের খবর পেয়ে ভারতীয় বিএসএফ এসে মাঝে মধ্যে তাড়া করলে লোকজন দেশের সীমানায় চলে আসে। বিএসএফ চলে গেলে আবার পাচাঁর শুরু হয়। অন্যদিকে সন্ধ্যার পর থেকে জাদুকাটা নদী দিয়ে শতশত বারকি নৌকা বোঝাই করে ভারত থেকে পাচাঁর করা হয় কয়লা ও পাথরসহ কসমেটিকস, চিনি, ফুছকা, কমলা, বিড়ি ও মদসহ বিভিন্ন মালামাল। একই ভাবে পাশের চাঁনপুর সীমান্তের বারেকটিলার ১২০৩পিলার ও আনন্দপুরসহ কড়ইগড়, রাজাই এলাকা দিয়ে প্রতিরাতে কোটি টাকার মালামাল পাচাঁর করে বাদাঘাট, শিমুলতলা ও কামড়াবন্দ গ্রামে নিয়ে মজুত করে সোস পরিচয়ধারী ও চোরাকারবারীরা। আর এই চোরাচালানের প্রতিবাদ করার কারণে গত ২০শে অক্টোবর উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার কফিল উদ্দিনকে পিটিয়ে আহত করে চোরাকারবারীরা। অন্যদিকে এই চাঁনপুর সীমান্তের নয়াছড়া, রজনীলাইন, টেকেরঘাট সীমান্তের বরুঙ্গা, নীলাদ্রী লেকপাড়, পুলিশ ফাঁড়ি ও হাইস্কুলের পিছনসহ পাশের বালিয়াঘাট সীমান্তের লাকমা, লালঘাট, চারাগাঁও সীমান্তের জংগলবাড়ি, কলাগাঁও মাইজহাটি, এলসি পয়েন্ট, বাশতলা ও লালঘাট এলাকা দিয়ে প্রতিদিন ভোর থেকে কয়লা ও চুনাপাথর পাচাঁর শুরু হয়। বিরতি দিয়ে দিয়ে এই পাচাঁর চলে গভীর রাত পর্যন্ত। বিজিবি মাঝে মধ্যে কিছু অবৈধ কয়লা, মোটর সাইকেল ও ঠেলাগাড়িসহ কিছু চুনাপাথর আটক করলেও লাখলাখ টাকার মালামাল সীমান্তের জয় বাংলা, কয়লার ঘাট, নীলাদ্রী লেকপাড় ও দুধের আউটা, পাটলাই ও জাদুকাটার তীরে মজুত করে ওপেন বিক্রি করাসহ সমসারপাড় হাওরের পাড়ে নিয়ে নৌকা বোঝাই করা হচ্ছে প্রতিদিন। কিন্তু এই চোরাচালান বন্ধের জন্য জোড়ালো পদক্ষেপ নেওয়া হয়না।

এদিকে গতকাল বুধবার (২৫ শে ডিসেম্বর) ভোরে পাশের বিশম্ভরপুর উপজেলার চিনাকান্দি সীমান্তের ১২১০এর ৪এস পিলার সংলগ্ন জিগাতলা এলাকা দিয়ে বিভিন্ন মালামাল পাচাঁরের জন্য অবৈধ ভাবে ভারতে প্রবেশের সময় বিজিবি অভিযান চালিয়ে চোরাকারবারী রাসেল মিয়া (২৪) ও মোবারক হোসেন (২৫) কে আটক করে। পরে তাদের শরীর তল্লাশী করে নগদ ১ লাখ ১ হাজার ১৮৭টাকা জব্দ করা হয়। একই সময়ে এই সীমান্তে পৃথক অভিযান চালিয়ে চিনাকান্দি এলাকা থেকে ২টি পিকআপসহ পাচাঁরকৃত ভারতীয় জর্জেট থান কাপড়, জামা, কসমেটিকস, চিনি, ফুসকা, কম্বল ও মদের চালান আটক করা হয়। যার আনুমানিক সিজার মূল্য ৯০লাখ ৬৩হাজার ৮৪২টাকা।

এরআগে গত মঙ্গলবার (২৪ শে ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১০টায় ছাতক উপজেলার লঞ্চঘাটে অভিযান চালিয়ে কোটি টাকা মূল্যের ভারতীয় চোরাই পন্যসহ ছাত্রদল নেতা কাউসার আহমেদ সেবুল (২৮) ও শহিদুর রহমান রাহেল (২৭) কে হাতেনাতে গ্রেফতার করে ছাতক ক্যাম্পের সেনাবাহিনী। তাদেরকে রাতেই থানায় হস্তান্তর করা হয়।

এব্যাপারে সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল একে এম জাকারিয়া কাদির ও ছাতক থানার ওসি মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান- বিজিবি ও সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতারকৃত ৪জনকে থানায় হস্তান্তর করাসহ আটককৃত পন্য-সামগ্রী ও মদ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ শুল্ক কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। পরে গ্রেফতারকৃতদের পৃথক ভাবে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

পত্নীতলায় পৃথক পৃথক অভিযানে ভুয়া ডাক্তার আটক জেল ও এক লক্ষ টাকা জরিমানা আদায়

সুনামগঞ্জে ২কোটি টাকার মালামাল,নগদ অর্থ,মদ ও যানবাহনসহ গ্রেফতার ৪

Update Time : ০৬:৪২:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

সুনামগঞ্জে গত ২দিনে পৃথক অভিযান চালিয়ে পাঁচারকৃত প্রায় ২ কোটি টাকার অবৈধ মালামাল, নগদ অর্থ, মদ ও ২টি পিকআপসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু সীমান্ত চোরাচালান নিয়ন্ত্রণকারী সোর্স পরিচয়ধারীরা গ্রেফতার না হওয়ার কারণে বন্ধ হচ্ছে না পাচাঁর বাণিজ্য। তাই এব্যাপারে বিজিবির পাশাপাশি র‌্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহযোগীতা জরুরী প্রয়োজন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- প্রতিদিনের মতো আজ বৃহস্পতিবার (২৬ শে ডিসেম্বর) ভোর থেকে তাহিরপুর উপজেলার লাউড়গড় সীমান্তের সাহিদাবাদ বিজিবি পোষ্টের সামনে দিয়ে ভারতের ৩-৪শ গজ ভিতর থেকে অবাধে পাথর ও কয়লা পাথর শুরু হয়। চোরাকারবারীরা প্রথমে ২-৩শ লোক দিয়ে লাখলাখ টাকার অবৈধ পাথর ও কয়লা পাচাঁর করে সীমান্তের জিরো পয়েন্টে ওপেন মজুত করে। পরে সকাল ৮-৯টা থেকে পাচাঁরকৃত পাথর ৪০-৫০টা ঠেলাগাড়ি দিয়ে ও পাচাঁরকৃত কয়লা ১০-১৫টা মোটর সাইকেল দিয়ে ওপেন বিজিবি ক্যাম্পের সামনের রাস্তা দিয়ে লাউড়গড় বাজারে চারপাশে নিয়ে বিক্রি করা হয়। আর এই অবৈধ পাচাঁর বাণিজ্য প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চললেও বিজিবির পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়না। তবে পাচাঁরের খবর পেয়ে ভারতীয় বিএসএফ এসে মাঝে মধ্যে তাড়া করলে লোকজন দেশের সীমানায় চলে আসে। বিএসএফ চলে গেলে আবার পাচাঁর শুরু হয়। অন্যদিকে সন্ধ্যার পর থেকে জাদুকাটা নদী দিয়ে শতশত বারকি নৌকা বোঝাই করে ভারত থেকে পাচাঁর করা হয় কয়লা ও পাথরসহ কসমেটিকস, চিনি, ফুছকা, কমলা, বিড়ি ও মদসহ বিভিন্ন মালামাল। একই ভাবে পাশের চাঁনপুর সীমান্তের বারেকটিলার ১২০৩পিলার ও আনন্দপুরসহ কড়ইগড়, রাজাই এলাকা দিয়ে প্রতিরাতে কোটি টাকার মালামাল পাচাঁর করে বাদাঘাট, শিমুলতলা ও কামড়াবন্দ গ্রামে নিয়ে মজুত করে সোস পরিচয়ধারী ও চোরাকারবারীরা। আর এই চোরাচালানের প্রতিবাদ করার কারণে গত ২০শে অক্টোবর উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার কফিল উদ্দিনকে পিটিয়ে আহত করে চোরাকারবারীরা। অন্যদিকে এই চাঁনপুর সীমান্তের নয়াছড়া, রজনীলাইন, টেকেরঘাট সীমান্তের বরুঙ্গা, নীলাদ্রী লেকপাড়, পুলিশ ফাঁড়ি ও হাইস্কুলের পিছনসহ পাশের বালিয়াঘাট সীমান্তের লাকমা, লালঘাট, চারাগাঁও সীমান্তের জংগলবাড়ি, কলাগাঁও মাইজহাটি, এলসি পয়েন্ট, বাশতলা ও লালঘাট এলাকা দিয়ে প্রতিদিন ভোর থেকে কয়লা ও চুনাপাথর পাচাঁর শুরু হয়। বিরতি দিয়ে দিয়ে এই পাচাঁর চলে গভীর রাত পর্যন্ত। বিজিবি মাঝে মধ্যে কিছু অবৈধ কয়লা, মোটর সাইকেল ও ঠেলাগাড়িসহ কিছু চুনাপাথর আটক করলেও লাখলাখ টাকার মালামাল সীমান্তের জয় বাংলা, কয়লার ঘাট, নীলাদ্রী লেকপাড় ও দুধের আউটা, পাটলাই ও জাদুকাটার তীরে মজুত করে ওপেন বিক্রি করাসহ সমসারপাড় হাওরের পাড়ে নিয়ে নৌকা বোঝাই করা হচ্ছে প্রতিদিন। কিন্তু এই চোরাচালান বন্ধের জন্য জোড়ালো পদক্ষেপ নেওয়া হয়না।

এদিকে গতকাল বুধবার (২৫ শে ডিসেম্বর) ভোরে পাশের বিশম্ভরপুর উপজেলার চিনাকান্দি সীমান্তের ১২১০এর ৪এস পিলার সংলগ্ন জিগাতলা এলাকা দিয়ে বিভিন্ন মালামাল পাচাঁরের জন্য অবৈধ ভাবে ভারতে প্রবেশের সময় বিজিবি অভিযান চালিয়ে চোরাকারবারী রাসেল মিয়া (২৪) ও মোবারক হোসেন (২৫) কে আটক করে। পরে তাদের শরীর তল্লাশী করে নগদ ১ লাখ ১ হাজার ১৮৭টাকা জব্দ করা হয়। একই সময়ে এই সীমান্তে পৃথক অভিযান চালিয়ে চিনাকান্দি এলাকা থেকে ২টি পিকআপসহ পাচাঁরকৃত ভারতীয় জর্জেট থান কাপড়, জামা, কসমেটিকস, চিনি, ফুসকা, কম্বল ও মদের চালান আটক করা হয়। যার আনুমানিক সিজার মূল্য ৯০লাখ ৬৩হাজার ৮৪২টাকা।

এরআগে গত মঙ্গলবার (২৪ শে ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১০টায় ছাতক উপজেলার লঞ্চঘাটে অভিযান চালিয়ে কোটি টাকা মূল্যের ভারতীয় চোরাই পন্যসহ ছাত্রদল নেতা কাউসার আহমেদ সেবুল (২৮) ও শহিদুর রহমান রাহেল (২৭) কে হাতেনাতে গ্রেফতার করে ছাতক ক্যাম্পের সেনাবাহিনী। তাদেরকে রাতেই থানায় হস্তান্তর করা হয়।

এব্যাপারে সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল একে এম জাকারিয়া কাদির ও ছাতক থানার ওসি মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান- বিজিবি ও সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতারকৃত ৪জনকে থানায় হস্তান্তর করাসহ আটককৃত পন্য-সামগ্রী ও মদ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ শুল্ক কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। পরে গ্রেফতারকৃতদের পৃথক ভাবে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।