Dhaka ০৫:২২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বান্দরবানের লামায় ১৭টি ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বসত ঘরে আগুন

বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে বেতছড়া ত্রিপুরা পল্লীর ১৭টি বসত ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে  পুলিশ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

গত মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাত আনুমানিক সাড়ে বারোটা থেকে পৌনে একটার মধ্যে উপজেলার সরই ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড পূর্ববেতছড়া টঙ্গঝিরি নামক স্থানে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

অগ্নিকান্ডের পর বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে গঙ্গাং মনি ত্রিপুরা নামে একজন  লামা থানায় ৭ জনের নামসহ আরো কয়েকজন অজ্ঞাত  আসামী করে একটি মামলা দায়ের করে। পরে রাতেই পুলিশ লামার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে উক্ত মামলার ৪জনকে গ্রেপ্তার করে।গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের পূর্ব বেতছড়া পাড়ার বাসিন্দা স্টিফেন ত্রিপুরা (৫০) মইশৈ ম্যা ত্রিপুরা (৪৮) টংগঝিরি পাড়ায় বাসিন্দা জোয়াতিং ত্রিপুরা (৫২) এবং টংগঝিরি পাড়ায় বাসিন্দা মো.ইব্রাহিম (৬৫)।

এদিকে লামার সরই ইউনিয়নের পূর্ব বেতছড়া পাড়ায় ত্রিপুরা পল্লীতে ১৭টি ঘর পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

পরিদর্শন শেষে লামা থানায় এক প্রেস বিফ্রিংয়ে পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের জানান, ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের দুইটি গ্রুপের আধিপত্য ও দ্বন্দ্বের জের ধরে এই ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় গতরাত অভিযান চালিয়ে ৪ জন আসামী গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের আদালতে প্রেরণ করে আসামীদের রিমান্ড চাইবে পুলিশ।

এদিকে চন্দ্রম‌নি ত্রিপুরা, বিদ‌্যাম‌নি ত্রিপুরাসহ গ্রামের বাসিন্দারা জানান, গত২৪ ডিসেম্বর রা‌তে পার্শ্ববর্তী গির্জায় বড়‌দিন পালন কর‌তে গে‌লে পুরো পাড়া খা‌লি হ‌য়ে যায়। এ সময় কে বা কারা পু‌রো পাড়ায় আগুন জ্বা‌লি‌য়ে দি‌য়ে‌ছে। এখন আমরা চরম ক‌ষ্টে রাত কাটা‌চ্ছি। আমাদের খাবার পর্যন্ত নাই। তদন্ত সা‌পে‌ক্ষে দোষী‌দের বিচার দা‌বি কর‌ছি।

বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি পূর্ব বেতছড়াপাড়াতে আসেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ কাউছার।ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এই ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানান।এ সময় জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন ব‌লেন, আমরা এ বিষ‌য়ে ক‌ঠোর। এখা‌নে আমরা অনাকাঙ্ক্ষিত কোনও ঘটনা দেখ‌তে চাই না। আমরা আজ প‌রিদর্শন ক‌রে দেখ‌তে পে‌য়ে‌ছি ১৯‌টি ঘ‌রের ম‌ধ্যে ১৭‌টি ঘর পু‌ড়ে গে‌ছে। আশা কর‌ছি, এর মূল কারণ আমরা বের কর‌তে পার‌বো। আমরা এটি নি‌য়ে কাজ কর‌ছি।

পু‌লিশ সুপার মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ কাউছার ব‌লেন, বিষয়‌টি‌কে আমরা স‌বোর্চ্চ গুরুত্ব দি‌চ্ছি। ঘটনা‌টি ঘটার পর ৭ জন‌কে আসামি ক‌রে এক‌টি মামলা হ‌য়ে‌ছে। রাতভর আমরা এখা‌নে অভিযান পরিচালনা ক‌রে‌ছি। ৪ জন‌কে গ্রেফতার ক‌রে‌ছি।এ ছাড়া মঙ্গলবার ঘটনার পরপরই লামার ইউএনও ও ওসি ঘটনাস্থল প‌রিদর্শন ক‌রে‌ছেন। ঘটনা‌টি‌কে পু‌লিশ প্রশাসন ও Sign প্রশাসন সবোর্চ্চ গুরুত্ব দি‌য়ে দেখছে।

উল্লেখ্য, গত ছয় মাস আগে লামা উপজেলা ও পাশের আলীকদম উপজেলা থেকে ১৯টি ত্রিপুরা পরিবার উপজেলার সরই ইউনিয়নের পূর্ব বেতছড়াপাড়ায় বসতি শুরু করে। বড়দিন উপলক্ষে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার দিকে এসব পরিবারের লোকজন পাশের টংগঝিরি পাড়ার গির্জায় প্রার্থনা করতে যায়। এই ফাঁকে দুর্বৃত্তরা পাড়ার ঘরগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে ১৭টি ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এই ঘটনার পর ওই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

উলিপুরে ৪১৮ বস্তা নকল টিএসপি সার জব্দ

বান্দরবানের লামায় ১৭টি ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বসত ঘরে আগুন

Update Time : ০৬:৩৫:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে বেতছড়া ত্রিপুরা পল্লীর ১৭টি বসত ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে  পুলিশ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

গত মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাত আনুমানিক সাড়ে বারোটা থেকে পৌনে একটার মধ্যে উপজেলার সরই ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড পূর্ববেতছড়া টঙ্গঝিরি নামক স্থানে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

অগ্নিকান্ডের পর বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে গঙ্গাং মনি ত্রিপুরা নামে একজন  লামা থানায় ৭ জনের নামসহ আরো কয়েকজন অজ্ঞাত  আসামী করে একটি মামলা দায়ের করে। পরে রাতেই পুলিশ লামার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে উক্ত মামলার ৪জনকে গ্রেপ্তার করে।গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের পূর্ব বেতছড়া পাড়ার বাসিন্দা স্টিফেন ত্রিপুরা (৫০) মইশৈ ম্যা ত্রিপুরা (৪৮) টংগঝিরি পাড়ায় বাসিন্দা জোয়াতিং ত্রিপুরা (৫২) এবং টংগঝিরি পাড়ায় বাসিন্দা মো.ইব্রাহিম (৬৫)।

এদিকে লামার সরই ইউনিয়নের পূর্ব বেতছড়া পাড়ায় ত্রিপুরা পল্লীতে ১৭টি ঘর পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

পরিদর্শন শেষে লামা থানায় এক প্রেস বিফ্রিংয়ে পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের জানান, ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের দুইটি গ্রুপের আধিপত্য ও দ্বন্দ্বের জের ধরে এই ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় গতরাত অভিযান চালিয়ে ৪ জন আসামী গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের আদালতে প্রেরণ করে আসামীদের রিমান্ড চাইবে পুলিশ।

এদিকে চন্দ্রম‌নি ত্রিপুরা, বিদ‌্যাম‌নি ত্রিপুরাসহ গ্রামের বাসিন্দারা জানান, গত২৪ ডিসেম্বর রা‌তে পার্শ্ববর্তী গির্জায় বড়‌দিন পালন কর‌তে গে‌লে পুরো পাড়া খা‌লি হ‌য়ে যায়। এ সময় কে বা কারা পু‌রো পাড়ায় আগুন জ্বা‌লি‌য়ে দি‌য়ে‌ছে। এখন আমরা চরম ক‌ষ্টে রাত কাটা‌চ্ছি। আমাদের খাবার পর্যন্ত নাই। তদন্ত সা‌পে‌ক্ষে দোষী‌দের বিচার দা‌বি কর‌ছি।

বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি পূর্ব বেতছড়াপাড়াতে আসেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ কাউছার।ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এই ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানান।এ সময় জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন ব‌লেন, আমরা এ বিষ‌য়ে ক‌ঠোর। এখা‌নে আমরা অনাকাঙ্ক্ষিত কোনও ঘটনা দেখ‌তে চাই না। আমরা আজ প‌রিদর্শন ক‌রে দেখ‌তে পে‌য়ে‌ছি ১৯‌টি ঘ‌রের ম‌ধ্যে ১৭‌টি ঘর পু‌ড়ে গে‌ছে। আশা কর‌ছি, এর মূল কারণ আমরা বের কর‌তে পার‌বো। আমরা এটি নি‌য়ে কাজ কর‌ছি।

পু‌লিশ সুপার মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ কাউছার ব‌লেন, বিষয়‌টি‌কে আমরা স‌বোর্চ্চ গুরুত্ব দি‌চ্ছি। ঘটনা‌টি ঘটার পর ৭ জন‌কে আসামি ক‌রে এক‌টি মামলা হ‌য়ে‌ছে। রাতভর আমরা এখা‌নে অভিযান পরিচালনা ক‌রে‌ছি। ৪ জন‌কে গ্রেফতার ক‌রে‌ছি।এ ছাড়া মঙ্গলবার ঘটনার পরপরই লামার ইউএনও ও ওসি ঘটনাস্থল প‌রিদর্শন ক‌রে‌ছেন। ঘটনা‌টি‌কে পু‌লিশ প্রশাসন ও Sign প্রশাসন সবোর্চ্চ গুরুত্ব দি‌য়ে দেখছে।

উল্লেখ্য, গত ছয় মাস আগে লামা উপজেলা ও পাশের আলীকদম উপজেলা থেকে ১৯টি ত্রিপুরা পরিবার উপজেলার সরই ইউনিয়নের পূর্ব বেতছড়াপাড়ায় বসতি শুরু করে। বড়দিন উপলক্ষে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার দিকে এসব পরিবারের লোকজন পাশের টংগঝিরি পাড়ার গির্জায় প্রার্থনা করতে যায়। এই ফাঁকে দুর্বৃত্তরা পাড়ার ঘরগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে ১৭টি ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এই ঘটনার পর ওই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।