যমুনা নদীর পানি এখন শুকিয়ে যাওয়ার ফলে অসংখ্য চর পরছে, ফলে মাইলের পর মাইল, পায়ে হেঁটে চলাচল করতে হয়, চরাঞ্চলের মানুষের। একসময়ে বর্ষাকাল ছাড়াও এ নদীতে সারা বছর পানি থাকতো, দীর্ঘকাল ধরে নদী শাসন না হওয়ায় গতিপথ পরিবর্তন হয়ে, শুষ্ক মৌসুমে ধূ-ধূ বালু চরে রূপ নিয়েছে। একসময় নৌকা যোগে অল্প সময়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াতের সুবিধা মানুষ ভোগ করলেও, সেখান আজ পাহাতে হয় সীমাহীন দুর্ভোগ। এক কালে অথৈ পানিতে থৈ থৈ করা নদী আজ পৌষ মাস থকেই পানি শুকিয়ে মাইলের পর মাইল ধূ-ধূ বালু চর রুপ নেয়।
বাংলাদশর বড় নদীগুলার মধ্যে যমুনা অন্যতম। দেশের উত্তরের জেলা জামালপুর থেকে শুরু হয়ে টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জর বুক চির গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুরের গোয়ালন্দ পদ্মার গিয়ে মিলিত হয়েছে এ নদী। এক সময় যমুনা নদীতে চলত বড় বড় স্টিমার, জাহাজ, লঞ্চ সহ অন্যান্য নৌ পরিবহন। সেতু তৈরির পূর্ব টাঙ্গাইল দিয়ে সিরাজগঞ্জ হয় উত্তরবঙ্গ যোগাযাগের প্রধান মাধ্যম ছিল এই নদী। ফেরি, যন্ত্র চালিত নৌকার মাধ্যম নদী পাড় হয়ে উত্তর বঙ্গ থেকে যাতায়াতের এটাই ছিল একমাত্র অবলম্বন।
কালের বির্বতনে প্রমত্তা যমুনা তার যৌবনে হারিয়ে এখন মত প্রায়।নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে একদিকে যেমন সর্বহারা করেছে চরাঞ্চলের মানুষকে, অন্যদিক শুষ্ক মৌসুমে যমুনা মরা খালে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় প্রবীনরা জানিয়েছে, ১৯৯৬ সালের আগে যমুনার পূর্ন যৌবন ছিল। কিন্তু দেশের সর্ব বৃহৎ যমুনা সেতু নির্মাণর পর নদী তার অস্তিত্ব হারাচ্ছে। যার কারণে সেতুর তলদেশে এখন চাষাবাদ হচ্ছে নানা বসলের। শত শত একর জমিতে শোভা পাচ্ছে বোরো ধানের চাষ। এছাড়া আরও চাষাবাদ হচ্ছে তিল, তিসি, কাউন,ডাল, চিনাবাদাম ভূাট্টা সহ নানা মৌসুমী ফসল।
যমুনার মাছ সারা দেশে সমাদ্ধত। এখান পাওয়া যত লোভনীয় ইলিশ, বায়াল, চিংড়ি, পাবদা, গালসাসহ নানা প্রজাতির মাছ। নদীর নাব্যতা কমায়, অতি দ্রুত নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় দেখা দেয় মাছর আকাল। নদীতে মাছ ধরা যারা জীবিকা নির্বাহ করত, তারা আজ অন্য পেশায় নিজেদেরকে নিয়াজিত করছে। জাল দিয়ে মাছ ধরা জল হাসান আলী জানান, নদীতে আর আগের মতো মাছ নাই, এখন আর খালোই এর তোলাই ভরে না”। । নদীতে পানি থাকে না এবং সঠিক সময়ে পানি আসে না ,তাই মাছও আসে না । বর্তমান এ নদীতে মাছ কমে গেছে অনেক।
নৌকার মাঝি হাসান আলীর বলেন “প্রমত্তা যমুনা আজ হাহাকার বালু চর। অতিরিক্ত স্রোতের কারণে এই নদীতে নৌকা বাইতে সাহস পাইতাম না, সেখানে আজ নৌকার হালও ধরত হয় না, এমন অবস্থা যমুনার; কি নদী ছিল আজ কি হয় গেছে। য ঘাট বড় বড় ফেরি বাঁধা থাকত সেখানে আজ গরু বাঁধা থাকে।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজলার হাট বয়রা, বড়াবাড়ি, কাওয়াখালা, কাটাংঞ্জা, কাগমারি, দাগাছি, সয়সকা, সুকারিয়া চরাঞ্চলর মানুষর শুষ্ক মৌসুমে মাইলের পর মাইল হেঁটে যাতায়াত করতে হয়। উৎপাদিত পন্য আনা নেওয়া করতে হয় পায়ে হেঁটে। এখন এসব সব জায়গায় ঘোড়ার গাড়ির পাশাপাশি মোটর সাইকেল যাতায়াত করছে লোকজন। উপজলার কয়কটি ইউনিয়ন চরাঞ্চল প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষের বসবাস। স্কুল, মাদরাসা, হাসপাতাল, ব্যাংক-বীমা, কমিউনিটি সেন্টার, এনজিও প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন প্রতিষ্ঠানর কর্মকর্তা লোকজন প্রতিদিন চরাঞ্চলে যাতায়াত করে। এসব মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা মোটর সাইকেল।
যমুনার নাব্যতা কম যাওয়ায় এখন প্রায় পানি শুন্য, জেগে উঠা চরগুলাতে চাষাবাদ করছে চরাঞ্চলের চাষীরা। ফলে এখান মানুষের বসতির সঙ্গে সঙ্গে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু গরু-মহিষের খামার। আজ থেকে ২০ বছর আগেও যমুনার তীব্রতা ছিল ভয়াবহ। তখন কেউ চিন্তাও করতে পারেনি যমুনার বুক এক সময় চাষাবাদ হবে। কিন্তু যমুনা নদীতে “ সেতু” স্থাপিত হওয়ার পর থেকে এর নাব্যতা কমতে থাকে। জেগে উঠা ধূ-ধূ বালুচর সেখানে বোরো ধানের শোভা পাচ্ছে।
চরাঞ্চলবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষর কাছে দাবি করছে, যমুনার হারানো গৌরব ফেরাতে এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে, না হল এক সময়ের খার স্রোত যমুনা, ধূ ধূ মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে।
এ বিষয় সিরাজগঞ্জ পানি উনয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মোখলেছুর রহমান জানান, যমুনা নদী দেশের প্রশস্ততম নদী, প্রতি বছর এক এক এলাকা ভঙ্গ নতুন নতুন এলাকায় চরের সৃষ্টি হয়, যমুনায় ভাঙ্গণ রোধে পানি উনয়ন বোর্ড নানাবিধ কার্যক্রম চলমান আছে।