কুড়িগ্রামের উলিপুরে থানা চত্বরের গোল ঘরে সালিশ চলাকালীন প্রতি পক্ষের হামলায়
আশরাফুল আলম (৩৮) নামের এক যুবদল নেতাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগে বলা হয়, বিএনপি’র রংপুর বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক এর সমর্থকরা বিএনপি’র সাবেক কুড়িগ্রাম জেলা সভাপতি ও সদ্য ঘোষিত কুড়িগ্রাম জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তাসভিরউল ইসলামের পক্ষের যুবদল নেতা আশরাফুলকে পিটিয়ে হত্যা করে। এ খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত কর্মীরা হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে প্রতিপক্ষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগ করে।
ঘটনাটি ঘটেছে, ২৮ ডিসেম্বর দিবাগত সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে। নিহতের পিতা আয়নাল হক বাদি হয়ে শনিবার ২৮ ডিসেম্বর রাতেই ২০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত দিয়ে মোট ৪৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। আজ শনিবার বাদ আসর কাজিরচক পাগলা কুড়া ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে আশরাফুলকে দাফন করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে পুলিশ। উলিপুর উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান বুলবুল জানিয়েছেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপি’র রংপুর বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক এর সমর্থকরা উলিপুর পৌর যুবদলের আহ্বায়ক আশরাফুল আলমকে পিটিয়ে হত্যা করে । তিনি সালিশে উপস্থিত নেতাকর্মীদের বরাত দিয়ে আরো জানান, উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের দোলন এলাকার এক ছেলেকে গুনাইগাছ ইউনিয়নের নন্দুনেফড়া এলাকার এক মেয়ের সাথে ২৫ ডিসেম্বর রাতে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় ওই ছেলের পিতা ছাত্রদলের এক নেতা সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও করে। ঘটনা মিমাংসার জন্যই শুক্রবার ২৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর থানার অভ্যন্তরে গোল ঘরে উভয় পক্ষ মিমাংসার জন্য বসে। এ সময় রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেকের পক্ষের লোকজন ছেলের পক্ষে অবস্থান নেন এবং জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সদ্য ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তাসভিরুল ইসলামের পক্ষের লোকজন
ছাত্রদল নেতার পক্ষে অবস্থান নিয়ে শালিশে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পরে। এরই এক পর্যায়ে এক গ্রুপ অপর গ্রুপের উপর হামলা চালায়। এসময় পৌর যুবদলের যুগ্ন আহ্বায়ক আশরাফুল আলম ও উপজেলা যুবদলের যুগ্ন আহ্বায়ক আবুল হাসনাত রাজিবসহ কয়েকজন আহত হয়। হামলার সময় ঘটনাস্থলে আশরাফুল আলম মাটিতে লুটিয়ে পরে। সহকর্মীরা তাকে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্য ঘোষনা করেন। নিহত আশরাফুল ও রাজিব তাসভিরুল ইসলামের সমর্থক বলে জানা গেছে। নিহত আশরাফুল পৌরসভার কাজিরচক এলাকার আয়নাল হকের একমাত্র ছেলে।
এদিকে, মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পরলে আশরাফুল আলমের সমর্থকেরা ক্ষুদ্ধ হয়ে খালেকের সমর্থক আমিনুল ইসলামের শুভেচ্ছা হোটেল ভাংচুর করে ও জেলা কৃষকদলের যুগ্ন আহ্বায়ক আবু জাফর সোহেল রানা এবং সাবেক ছাত্রদল নেতা ফিরোজ কবির কাজলের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ঘটনার পর থেকেই ঘটনার সাথে জড়িতরা পলাতক রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মেহেরুল ইসলাম জানান, আশরাফুল ইসলাম নামের এক যুবক হাসপাতালে নেয়ার আগেই মারা যায়।
অন্যদিকে, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সদস্যরা পলাতক থাকায় তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ নেয়া সম্ভব হয়নি।
উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ জিল্লুর রহমান জানান, ঘটনার দিন আমি ছুটিতে ছিলাম। আমি দ্রুত কর্মস্থলে যোগদান করেছি। তবে তিনি দাবি করেন থানা চত্বরের বাহিরে ঘটনাটি ঘটেছে। অতি গুরুত্বের সাথে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে । ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এর ঘটনায় কেউ মামলা দিতে আসেনি বলেও তিনি জানান।
উপজেলা বিএনপি সভাপতি হায়দার আলী মিয়া ও বর্তমান জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তাসভিরউল ইসলামের কোনো মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
রংপুর বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক ফোন রিসিভ করলেও কোনো মন্তব্য করেননি।