Dhaka ০১:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তাহিরপুরে চোরাকারবারীদের রামরাজত্ব: ৫জনের বিরুদ্ধে বিজিবির মামলা দায়ের

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সীমান্ত চোরাকারবারীদের রামরাজত্বে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চোরাকারবারীরা ভারত থেকে অবৈধ ভাবে কোটি টাকার বিভিন্ন মালামাল পাচাঁরের পর সোর্স পরিচয়ধারীরা বিজিবি, পুলিশ ও সাংবাদিকদের নাম ভাংগিয়ে করছে লাখলাখ টাকা চাঁদাবাজি। জব্দকৃত অবৈধ মালামাল জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টাসহ সরকারী কাজে বাঁধা প্রদানের ঘটনায় এক ইউপি সদস্যসহ ৫জন চোরাকারবারীর নামে মামলা দায়ের করেছে বিজিবি।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- প্রতিদিনের মতো আজ শনিবার (২৮শে ডিসেম্বর) ভোর থেকে তাহিরপুর উপজেলার লাউড়গড় সীমান্তের সাহিদাবাদ বিজিবি পোষ্টের সামনে দিয়ে এলাকার বিশিষ্ট চোরাকারবারীরা ভারতের ৩-৪শ গজ ভিতর থেকে প্রায় ৫-৬লাখ টাকা মূল্যের পাথর ও কয়লা পাথর শুরু করে। পরে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাচাঁরকৃত সেই পাথর ৪০-৫০টা ঠেলাগাড়ি দিয়ে ও পাচাঁরকৃত কয়লা ১০-১৫টা মোটর সাইকেল যোগে ওপেন বিজিবি ক্যাম্পের সামনের রাস্তা দিয়ে লাউড়গড় বাজারে চারপাশে নিয়ে বিক্রি করা হয়। এরআগে গতকাল শুক্রবার (২৭শে ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর থেকে সোর্স পরিচয়ধারীরা পৃথক ভাবে কয়েক দফায় এই সীমান্তের জাদুকাটা নদী দিয়ে ভারত থেকে শতাধিক বারকি নৌকা বোঝাই করে ভারত থেকে পাচাঁর করা হয় ২-৩লাখ টাকার কয়লা ও পাথর। এরপরে সোর্সরা এদিন রাত ১টা থেকে শনিবার (২৮শে ডিসেম্বর) ভোর পর্যন্ত ২শতাধিক বারকি নৌকা বোঝাই করে প্রায় অর্ধকোটি টাকার ফুসকা, চিনি, কসমেটিকস, কমলা, বিড়ি, মদ ও বিভিন্ন মালামাল পাচাঁর করাসহ একই সময়ে পাশের চাঁনপুর সীমান্তের বারেকটিলার আনন্দপুর, ১২০৩পিলার, কড়ইগড় ও রাজাই এলাকা দিয়ে পৃথক ভাবে ২শতাধিক লোক দিয়ে ভারত থেকে গরু, ফুছকা, চিনি, কম্বল, কমলা, মদ, গাঁজা, নাসির উদ্দিন বিড়িসহ প্রায় কোটি টাকার মালামাল পাচাঁর করে ২০টা অটোরিক্সা ও পিকআপ বোঝাই করে বাদাঘাট বাজার, শিমুলতলা ও কামড়াবন্দ গ্রামে নিয়ে মজুত করে সোস পরিচয়ধারী ও চোরাকারবারীরা। অন্যদিকে একই সময়ে সোর্স ও চোরাকারবারীরা চারাগাঁও সীমান্তের জংগল বাড়ি ও কলাগাও মাইজহাটি এলাকা দিয়ে ১৫-২০টা ট্রলি বোঝাই করে ও ৩-৪শ লোক দিয়ে প্রায় ২শত মেঃটন টন পাচাঁরকৃত কয়লা বিজিবি ক্যাম্পের আশেপাশে অবস্থিত ১০-১৫টি ডিপুতে ও সোর্সদের বাড়িঘরের উঠানে মজুত করাসহ পাশের পাথরঘাটায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে চোরাকারবারীরা শুল্কস্টেশনের বৈধ কয়লার সাথে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসা চোরাই কয়লার মিনিপাস, সমিতির টোকেন, বিল অফ এন্ট্রির ফটোকপি দিয়ে আমদানিকৃত কয়লা হিসেবে নৌকা বোঝাই করে ওপেন দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়। আর এই চোরাচালান বাণিজ্য দীর্ঘদিন যাবত চলছে বলে জানা গেছে।

এদিকে প্রতিদিনের মতো গত বুধবার (২৫শে ডিসেম্বর) ভোরে থেকে টেকেরঘাট ও চাঁনপুর সীমান্তের নয়াছড়া, রজনী, বরুংগা, বড়ছড়া, নীলাদ্রী লেকপাড়সহ টেকেরঘাট পুলিশ ফাঁড়ি ও হাইস্কুলের পিছন দিয়ে অবাধে কয়লা পাচাঁর শুরু হলে বিজিবি সদস্যরা খবর পেয়ে রজনী লাইন এলাকার সড়কে মোটর সাইকেলসহ পাচাঁরকৃত কয়লা আটক করে। ওই সময় স্থানীয় চোরাকারবারীরা জোরপূর্বক বিজিবির কাছ থেকে আটককৃত মালামাল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টাসহ হুমকি প্রদান করে। এঘটনার প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার (২৬শে ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় টেকেরঘাট কোম্পানীর বিজিবির হাবিলদার যতীন্দ্র মোহন সিংহ বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে বিশিষ্ট চোরাকারবারী রজনী লাইন গ্রামের মতি মিয়া, তার দুই ছেলে মোরশেদ আলম, খোরশেদ আলম, মেয়ের জামাই শফিকুল ইসলাম ও ইউপি সদস্য জামাল মিয়াকে আসামী করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

এব্যাপারে তাহিরপুর থানার ওসি দিলোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের জানান- বিজিবি কতৃক দায়েরকৃত মামলার আসামীরা পলাতক রয়েছে,এব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, সীমান্ত চোরাচালানের মাধ্যমে মাদক, অস্ত্র, কয়লা ও পাথর পাচাঁর করতে গিয়ে পাহাড়ি গুহায় মাটি চাপা পড়ে, বিএসএফের তাড়া খেয়ে ও গুলি খেয়ে তাহিরপুর উপজেলার চারাগাঁও সীমান্তে এপর্যন্ত ১২জন, বালিয়াঘাট সীমান্তে ৩৫জন, টেকেরঘাট সীমান্তে ১৭জন, চাঁনপুর সীমান্তে ৯জন ও লাউড়গড় সীমান্তে অর্ধশতাধিক লোকের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সংকল্পবদ্ধ হওয়ার আহ্বান তারেক রহমানের

তাহিরপুরে চোরাকারবারীদের রামরাজত্ব: ৫জনের বিরুদ্ধে বিজিবির মামলা দায়ের

Update Time : ০৭:১৯:২৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সীমান্ত চোরাকারবারীদের রামরাজত্বে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চোরাকারবারীরা ভারত থেকে অবৈধ ভাবে কোটি টাকার বিভিন্ন মালামাল পাচাঁরের পর সোর্স পরিচয়ধারীরা বিজিবি, পুলিশ ও সাংবাদিকদের নাম ভাংগিয়ে করছে লাখলাখ টাকা চাঁদাবাজি। জব্দকৃত অবৈধ মালামাল জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টাসহ সরকারী কাজে বাঁধা প্রদানের ঘটনায় এক ইউপি সদস্যসহ ৫জন চোরাকারবারীর নামে মামলা দায়ের করেছে বিজিবি।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- প্রতিদিনের মতো আজ শনিবার (২৮শে ডিসেম্বর) ভোর থেকে তাহিরপুর উপজেলার লাউড়গড় সীমান্তের সাহিদাবাদ বিজিবি পোষ্টের সামনে দিয়ে এলাকার বিশিষ্ট চোরাকারবারীরা ভারতের ৩-৪শ গজ ভিতর থেকে প্রায় ৫-৬লাখ টাকা মূল্যের পাথর ও কয়লা পাথর শুরু করে। পরে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাচাঁরকৃত সেই পাথর ৪০-৫০টা ঠেলাগাড়ি দিয়ে ও পাচাঁরকৃত কয়লা ১০-১৫টা মোটর সাইকেল যোগে ওপেন বিজিবি ক্যাম্পের সামনের রাস্তা দিয়ে লাউড়গড় বাজারে চারপাশে নিয়ে বিক্রি করা হয়। এরআগে গতকাল শুক্রবার (২৭শে ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর থেকে সোর্স পরিচয়ধারীরা পৃথক ভাবে কয়েক দফায় এই সীমান্তের জাদুকাটা নদী দিয়ে ভারত থেকে শতাধিক বারকি নৌকা বোঝাই করে ভারত থেকে পাচাঁর করা হয় ২-৩লাখ টাকার কয়লা ও পাথর। এরপরে সোর্সরা এদিন রাত ১টা থেকে শনিবার (২৮শে ডিসেম্বর) ভোর পর্যন্ত ২শতাধিক বারকি নৌকা বোঝাই করে প্রায় অর্ধকোটি টাকার ফুসকা, চিনি, কসমেটিকস, কমলা, বিড়ি, মদ ও বিভিন্ন মালামাল পাচাঁর করাসহ একই সময়ে পাশের চাঁনপুর সীমান্তের বারেকটিলার আনন্দপুর, ১২০৩পিলার, কড়ইগড় ও রাজাই এলাকা দিয়ে পৃথক ভাবে ২শতাধিক লোক দিয়ে ভারত থেকে গরু, ফুছকা, চিনি, কম্বল, কমলা, মদ, গাঁজা, নাসির উদ্দিন বিড়িসহ প্রায় কোটি টাকার মালামাল পাচাঁর করে ২০টা অটোরিক্সা ও পিকআপ বোঝাই করে বাদাঘাট বাজার, শিমুলতলা ও কামড়াবন্দ গ্রামে নিয়ে মজুত করে সোস পরিচয়ধারী ও চোরাকারবারীরা। অন্যদিকে একই সময়ে সোর্স ও চোরাকারবারীরা চারাগাঁও সীমান্তের জংগল বাড়ি ও কলাগাও মাইজহাটি এলাকা দিয়ে ১৫-২০টা ট্রলি বোঝাই করে ও ৩-৪শ লোক দিয়ে প্রায় ২শত মেঃটন টন পাচাঁরকৃত কয়লা বিজিবি ক্যাম্পের আশেপাশে অবস্থিত ১০-১৫টি ডিপুতে ও সোর্সদের বাড়িঘরের উঠানে মজুত করাসহ পাশের পাথরঘাটায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে চোরাকারবারীরা শুল্কস্টেশনের বৈধ কয়লার সাথে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসা চোরাই কয়লার মিনিপাস, সমিতির টোকেন, বিল অফ এন্ট্রির ফটোকপি দিয়ে আমদানিকৃত কয়লা হিসেবে নৌকা বোঝাই করে ওপেন দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়। আর এই চোরাচালান বাণিজ্য দীর্ঘদিন যাবত চলছে বলে জানা গেছে।

এদিকে প্রতিদিনের মতো গত বুধবার (২৫শে ডিসেম্বর) ভোরে থেকে টেকেরঘাট ও চাঁনপুর সীমান্তের নয়াছড়া, রজনী, বরুংগা, বড়ছড়া, নীলাদ্রী লেকপাড়সহ টেকেরঘাট পুলিশ ফাঁড়ি ও হাইস্কুলের পিছন দিয়ে অবাধে কয়লা পাচাঁর শুরু হলে বিজিবি সদস্যরা খবর পেয়ে রজনী লাইন এলাকার সড়কে মোটর সাইকেলসহ পাচাঁরকৃত কয়লা আটক করে। ওই সময় স্থানীয় চোরাকারবারীরা জোরপূর্বক বিজিবির কাছ থেকে আটককৃত মালামাল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টাসহ হুমকি প্রদান করে। এঘটনার প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার (২৬শে ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় টেকেরঘাট কোম্পানীর বিজিবির হাবিলদার যতীন্দ্র মোহন সিংহ বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে বিশিষ্ট চোরাকারবারী রজনী লাইন গ্রামের মতি মিয়া, তার দুই ছেলে মোরশেদ আলম, খোরশেদ আলম, মেয়ের জামাই শফিকুল ইসলাম ও ইউপি সদস্য জামাল মিয়াকে আসামী করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

এব্যাপারে তাহিরপুর থানার ওসি দিলোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের জানান- বিজিবি কতৃক দায়েরকৃত মামলার আসামীরা পলাতক রয়েছে,এব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, সীমান্ত চোরাচালানের মাধ্যমে মাদক, অস্ত্র, কয়লা ও পাথর পাচাঁর করতে গিয়ে পাহাড়ি গুহায় মাটি চাপা পড়ে, বিএসএফের তাড়া খেয়ে ও গুলি খেয়ে তাহিরপুর উপজেলার চারাগাঁও সীমান্তে এপর্যন্ত ১২জন, বালিয়াঘাট সীমান্তে ৩৫জন, টেকেরঘাট সীমান্তে ১৭জন, চাঁনপুর সীমান্তে ৯জন ও লাউড়গড় সীমান্তে অর্ধশতাধিক লোকের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।