Dhaka ০১:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাস্তা সংস্কারে নিম্নমানের হওয়ায় কাজ বন্ধ করে দিয়েছে ছাত্র জনতা

নীলফামারীর সৈয়দপুরে দীর্ঘ দিন পর শহরের ওয়াপদা মোড় থেকে তামান্না মোড় পযন্ত রাস্তার সংস্কার কাজ শুরু হওয়ায় অত্যন্ত খুশি হয়েছিল পৌরবাসি, কিন্তু কার্পেটিংয়ে সিডিউল বহির্ভূতভাবে পাথর ও বিটুমিন ব্যবহার করা এবং অনিয়ম করায় অভিযোগে তা বন্ধ করে দিয়েছে ছাত্র জনতা। গতকাল শহরের প্লাজা মার্কেটের সামনে এমন নিম্নমানের কাজ হওয়ায় শহরজুড়ে তোলপার শুরু হয়েছে। এলাকাবাসী ও বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনকারির অভিযোগ, শহরের তামান্না মোড় হতে ওয়াপদা মোড় পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তা দীর্ঘদিন থেকে চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়ে। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হয় এপথে চলাচলকারী ও আশপাশের এলাকার লোকজন। রাস্তাটি মেরামতে বার বার দাবি জানানো সত্বেও নির্বিকার ছিল তৎকালীন মেয়র মহিলা পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি রাফিকা আক্তার জাহান বেবী। ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর ওই পৌর মেয়র কোন কর্ণপাতই করেনি। এক্ষেত্রে পৌরসভার কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন থেকে এখানে কর্মরত থাকায় তাদের একটা সিন্ডিকেট তৈরী হয়েছে। আওয়ামী ঘরানার লোকদের নিয়ে তাদের এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নামকাওয়াস্তা কাজ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা। একারণে শহরের প্রায় ৮০ ভাগ সড়কেরই অবস্থা বেহাল। সকল সড়ক সংস্কারে পৌরবাসী মিছিল মিটিং, মানববন্ধন, স্মারকলিপি পেশ করা সহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়ায় ২০২৩ সালের প্রথম দিকে ২৮ লাখ টাকা ব্যায়ে বড় বড় গর্তগুলো ভরাট করা হয়েছিল। কিন্ত তখন কাজের মান নিম্ন হওয়ায় মাত্র এক মাসের মধ্যেই কার্পেটিং উঠে গিয়ে আগের চেয়েও দুরাবস্থার সৃষ্টি হয়।

জুলাই বিপ্লবের পর পৌর মেয়র পালিয়ে যায় এবং সরকারীভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে পৌর প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর ই আলম সিদ্দিকী দায়িত্ব নেয়ার পর আবারো জোড়ালোভাবে দাবি উঠে রাস্তাটি সংস্কারের। সেই প্রেক্ষিতে চলতি মাসের প্রথম দিকে রাস্তাটি মেরামতের উদ্যোগ নেয় প্রশাসক। নিয়মানুযায়ী টেন্ডারের মাধ্যমে ৬৮ লাখ টাকায় কাজটি পায় নীলফামারীর এম এস সাইকি বিল্ডার্স। গত ১ ডিসেম্বর উদ্বোধন করা হয় শহরের তামান্না সিনেমা হল মোড় থেকে ওয়াপদা মোড় পর্যন্ত সংস্কার কাজের।। মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছিল কার্পেটিং। কিন্তু মাত্র একদিনের মাথায় তা উঠে যাওয়ার উপক্রম হওয়ায় গতকাল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য রিমোন, প্রিন্স, মারুফ, সানী, তৌহিদসহ অন্যন্যরা সৈয়দপুর প্লাজা মার্কেটের সামনে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। ছাত্রদের দাবী, সিডিউল অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছেনা। এক সেন্টিমিটার পুরুত্ব দেয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মাত্র ২০ থেকে ২৫ মিলিমিটার করছে। তাছাড়া নিম্ন মানের বিটুমিন ব্যবহার করায় মাত্র একদিনের মধ্যেই কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। কাজে অনিয়ম ও দূর্নীতি হওয়ার কারণে আমরা কাজ থামিয়ে দিয়েছি। কোন প্রকার ঘাপলা মেনে নেয়া হবেনা।

সৈয়দপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম জানান, শিক্ষার্থীরা কাজ বন্ধ করে দেয়ায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পাই ভাঙ্গা পাথরের জায়গায় গোটা পাথর ও বিদেশী বিটুমিন দেয়া হয়েছে। এতে কার্পেটিং কমপেক্ট হচ্ছেনা। তাই উঠে যাচ্ছে। একারণে আমরা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নিয়ম মেনে কাজ করার জন্য বলেছি। ওই সড়কের তদারকির দায়িত্বে থাকা পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম বলেন, পাথরের সাইজ ঠিক না থাকায় আমরা কাজ করার ক্ষেত্রে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু ঠিকাদার তা শোনেনি। তাছাড়া যে বিটুমিন ব্যবহার করা হয়েছে তা এখানে প্রযোজ্য নয়। কেননা এটা খুবই ব্যস্ততম সড়ক। ব্যবহৃত বিটুমিন কমপেক্ট হতে সময় লাগে তাই দেশি বিটুমিন দিতে বলেছিলাম। কারণ দেশি বিটুমিন দ্রুত জমাট বাধে। সে কথাও শোনেনি ঠিকাদারের লোকজন।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি জাকির হোসেন মেনন বলেন, সিডিউলের বাইরে কাজ করা হচ্ছে না  । শুধু ভাঙ্গা স্থানে মেরামতের কথা থাকলেও এখন পুরো রাস্তায়ই কার্পেটিং করতে বলা হচ্ছে । এমতাব্স্থায় মানসম্পন্ন কাজ এই বাজেটে করে দেয়া সম্ভব নয়। তবুও আমরা এক নম্বর বিটুমিন ব্যবহার করেছি। এই বিটুমিন কমপেক্ট হতে সময় লাগে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সময় দিতে চাচ্ছেনা। তাছাড়া পাথর ও বিটুমিন পরিবর্তন করে দিতে চেয়েছি। এমতাবস্থায় আজ ছাত্ররা অহেতুক কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এতে আমরা ক্ষতির শিকার হয়েছি।এদিকে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এম এস সাইকি বিল্ডার্স এর মূল ঠিকাদার রুবেলের সাথে যোগাযোগের জন্য তার মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ না করায় তার কোন মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

সৈয়দপুর পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর ই আলম সিদ্দিকী বলেন, কাজে অনিয়ম পাওয়ায় ছাত্ররা প্রতিবাদ জানিয়েছে। আমরা গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় আপাতত কাজ বন্ধ রাখতে বলেছি এবং সিডিউল অনুযায়ী ভাঙ্গা পাথর ও দেশি বিটুমিন ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি। এরপরও ঠিকভাবে কাজ না করলে নিয়ম মাফিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সংকল্পবদ্ধ হওয়ার আহ্বান তারেক রহমানের

রাস্তা সংস্কারে নিম্নমানের হওয়ায় কাজ বন্ধ করে দিয়েছে ছাত্র জনতা

Update Time : ০১:৩৬:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

নীলফামারীর সৈয়দপুরে দীর্ঘ দিন পর শহরের ওয়াপদা মোড় থেকে তামান্না মোড় পযন্ত রাস্তার সংস্কার কাজ শুরু হওয়ায় অত্যন্ত খুশি হয়েছিল পৌরবাসি, কিন্তু কার্পেটিংয়ে সিডিউল বহির্ভূতভাবে পাথর ও বিটুমিন ব্যবহার করা এবং অনিয়ম করায় অভিযোগে তা বন্ধ করে দিয়েছে ছাত্র জনতা। গতকাল শহরের প্লাজা মার্কেটের সামনে এমন নিম্নমানের কাজ হওয়ায় শহরজুড়ে তোলপার শুরু হয়েছে। এলাকাবাসী ও বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনকারির অভিযোগ, শহরের তামান্না মোড় হতে ওয়াপদা মোড় পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তা দীর্ঘদিন থেকে চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়ে। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হয় এপথে চলাচলকারী ও আশপাশের এলাকার লোকজন। রাস্তাটি মেরামতে বার বার দাবি জানানো সত্বেও নির্বিকার ছিল তৎকালীন মেয়র মহিলা পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি রাফিকা আক্তার জাহান বেবী। ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর ওই পৌর মেয়র কোন কর্ণপাতই করেনি। এক্ষেত্রে পৌরসভার কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন থেকে এখানে কর্মরত থাকায় তাদের একটা সিন্ডিকেট তৈরী হয়েছে। আওয়ামী ঘরানার লোকদের নিয়ে তাদের এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নামকাওয়াস্তা কাজ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা। একারণে শহরের প্রায় ৮০ ভাগ সড়কেরই অবস্থা বেহাল। সকল সড়ক সংস্কারে পৌরবাসী মিছিল মিটিং, মানববন্ধন, স্মারকলিপি পেশ করা সহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়ায় ২০২৩ সালের প্রথম দিকে ২৮ লাখ টাকা ব্যায়ে বড় বড় গর্তগুলো ভরাট করা হয়েছিল। কিন্ত তখন কাজের মান নিম্ন হওয়ায় মাত্র এক মাসের মধ্যেই কার্পেটিং উঠে গিয়ে আগের চেয়েও দুরাবস্থার সৃষ্টি হয়।

জুলাই বিপ্লবের পর পৌর মেয়র পালিয়ে যায় এবং সরকারীভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে পৌর প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর ই আলম সিদ্দিকী দায়িত্ব নেয়ার পর আবারো জোড়ালোভাবে দাবি উঠে রাস্তাটি সংস্কারের। সেই প্রেক্ষিতে চলতি মাসের প্রথম দিকে রাস্তাটি মেরামতের উদ্যোগ নেয় প্রশাসক। নিয়মানুযায়ী টেন্ডারের মাধ্যমে ৬৮ লাখ টাকায় কাজটি পায় নীলফামারীর এম এস সাইকি বিল্ডার্স। গত ১ ডিসেম্বর উদ্বোধন করা হয় শহরের তামান্না সিনেমা হল মোড় থেকে ওয়াপদা মোড় পর্যন্ত সংস্কার কাজের।। মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছিল কার্পেটিং। কিন্তু মাত্র একদিনের মাথায় তা উঠে যাওয়ার উপক্রম হওয়ায় গতকাল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য রিমোন, প্রিন্স, মারুফ, সানী, তৌহিদসহ অন্যন্যরা সৈয়দপুর প্লাজা মার্কেটের সামনে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। ছাত্রদের দাবী, সিডিউল অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছেনা। এক সেন্টিমিটার পুরুত্ব দেয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মাত্র ২০ থেকে ২৫ মিলিমিটার করছে। তাছাড়া নিম্ন মানের বিটুমিন ব্যবহার করায় মাত্র একদিনের মধ্যেই কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। কাজে অনিয়ম ও দূর্নীতি হওয়ার কারণে আমরা কাজ থামিয়ে দিয়েছি। কোন প্রকার ঘাপলা মেনে নেয়া হবেনা।

সৈয়দপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম জানান, শিক্ষার্থীরা কাজ বন্ধ করে দেয়ায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পাই ভাঙ্গা পাথরের জায়গায় গোটা পাথর ও বিদেশী বিটুমিন দেয়া হয়েছে। এতে কার্পেটিং কমপেক্ট হচ্ছেনা। তাই উঠে যাচ্ছে। একারণে আমরা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নিয়ম মেনে কাজ করার জন্য বলেছি। ওই সড়কের তদারকির দায়িত্বে থাকা পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম বলেন, পাথরের সাইজ ঠিক না থাকায় আমরা কাজ করার ক্ষেত্রে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু ঠিকাদার তা শোনেনি। তাছাড়া যে বিটুমিন ব্যবহার করা হয়েছে তা এখানে প্রযোজ্য নয়। কেননা এটা খুবই ব্যস্ততম সড়ক। ব্যবহৃত বিটুমিন কমপেক্ট হতে সময় লাগে তাই দেশি বিটুমিন দিতে বলেছিলাম। কারণ দেশি বিটুমিন দ্রুত জমাট বাধে। সে কথাও শোনেনি ঠিকাদারের লোকজন।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি জাকির হোসেন মেনন বলেন, সিডিউলের বাইরে কাজ করা হচ্ছে না  । শুধু ভাঙ্গা স্থানে মেরামতের কথা থাকলেও এখন পুরো রাস্তায়ই কার্পেটিং করতে বলা হচ্ছে । এমতাব্স্থায় মানসম্পন্ন কাজ এই বাজেটে করে দেয়া সম্ভব নয়। তবুও আমরা এক নম্বর বিটুমিন ব্যবহার করেছি। এই বিটুমিন কমপেক্ট হতে সময় লাগে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সময় দিতে চাচ্ছেনা। তাছাড়া পাথর ও বিটুমিন পরিবর্তন করে দিতে চেয়েছি। এমতাবস্থায় আজ ছাত্ররা অহেতুক কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এতে আমরা ক্ষতির শিকার হয়েছি।এদিকে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এম এস সাইকি বিল্ডার্স এর মূল ঠিকাদার রুবেলের সাথে যোগাযোগের জন্য তার মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ না করায় তার কোন মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

সৈয়দপুর পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর ই আলম সিদ্দিকী বলেন, কাজে অনিয়ম পাওয়ায় ছাত্ররা প্রতিবাদ জানিয়েছে। আমরা গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় আপাতত কাজ বন্ধ রাখতে বলেছি এবং সিডিউল অনুযায়ী ভাঙ্গা পাথর ও দেশি বিটুমিন ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি। এরপরও ঠিকভাবে কাজ না করলে নিয়ম মাফিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।