Dhaka ০৪:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তামাক কোম্পানিগুলোর প্রচারণা ও প্রণোদনায় চাষিরা ঝুঁকছেন তামাক চাষে

oplus_0

সরকারি-বেসরকারিভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে নানা মুখী উদ্যোগ নেয়া হলেও মেহেরপুরের গাংনীতে কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না তামাকের উৎপাদন ও বিপণন। বিভিন্ন তামাক কোম্পানিগুলোর নানামুখী প্রচারণা ও প্রণোদনার কারণে চাষিরা ঝুঁকছেন তামাক চাষে। সবুজের আড়ালে প্রতিটি পাতায় পাতায় নিকোটিন নিয়ে বেড়ে উঠছে একেকটি তামাকের চারা। এদিকে চোখের সামনে তামাক চাষ হলেও তা রোধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না কৃষি বিভাগ এমনি অভিযোগ সাধারণ চষিদের।

বেশ কয়েকটি তামাক বিপনন প্রতিষ্ঠানের দেয়া হিসেব মতে গাংনীর ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় রেজিস্ট্রেশনভুক্ত চাষিদেরকে প্রণোদনা ও তামাক ক্রয়ের নিশ্চয়তা দেয়ায় ৪ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। গেল বছর তামাক আবাদ হয়েছিল ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর। অন্যান্য ফসলের চেয়ে তামাক চাষ লাভজনক হওয়ায় চাষিরা তামাক চাষে কোমর বেধে নেমেছে বলেও জানান তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন মাঠে ইতোমধ্যেই রোপণ করা হয়েছে তামাকের চারা। আবার কোথাও কোথাও তামাক পাতা স্যাঁকার জন্য তোলা হচ্ছে চুল্লী। এসব চুল্লীতে বিভিন্ন ধরনের পলিথিন ও ঝুটকাপড় পোড়ানো হয়। ফলে বিকট গন্ধে বাতাস দুষিত হয়। গেল বছরের তুলনায় এবার বেশি তামাক চাষ হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন চাষিরা। বিভিন্ন তামাক কোম্পানীর লোকজন বিভিন্ন ধরণের প্রনোদনা দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে রয়েছে কীটনাশক পলিথিন ও নগদ টাকা। চাষিরা তামাক বিক্রি করে ওই টাকা পরিশোধ করে থাকেন। মোটা অংকের টাকার লোভে চাষিরা তামাক কোম্পানীর কথায় তামাক চাষ করছেন।

কুঞ্জনগরের তামাক চাষি রফিকুল ইসলাম জানান, তামাক চাষে লাভ বেশি। মজুরীসহ এক বিঘা জমিতে তামাক চাষে খরচ হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং তামাক ভালো হলে বিঘা প্রতি পাওয়া যায় এক লাখ টাকা। সব বাদ দিয়ে প্রচুর টাকা লাভ হয়। তামাক চাষে যা লাগে সবই কোম্পানী বহন করে। ফলে তামাক চাষ অত্যন্ত সহজ। কৃষক দাউদ হোসেন জানান, এক কোম্পানির সাথে চুক্তি হয়েছে সব খরচ ওনাদের। উৎপাদিত তামাক বাজার মূল্য ধরে যা দাম হবে ওনাদের খরচ বাদ দিয়ে বাকি টাকা দিয়ে তারা তামাক নিয়ে যাবে। একই কথা জানালেন শিমুলতলার চাষি মনিরুল ইসলাম। চাষিদের অভিযোগ, কৃষি অফিস তামাক চাষের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করে না।

তামাক চাষ স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ এমন প্রশ্নের জবাবে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক এমকে রেজা জানান, তামাক নানাভাবে স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। যারা তামাকের পরিচর্যা করে তারাও নানা শারীরিক সমস্যায় ভোগেন। বিশেষ করে হাপানি ফুসফুসে প্রদাহ ও ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রন্ত হন তারা। তিনি আরো জানান, ইটভাটার নির্গত ধোয়ায় যে পরিমান ক্ষতি করে তার চেয়ে ১০গুন বেশি ক্ষতি করে।

গাংনী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন জানান, এবার এ অঞ্চলে বেশি তামাক চাষ হচ্ছে। বিভিন্নভাবে তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তামাকের বদলে অন্য ফসল চাষ করার জন্য চাষিদেরকে উদ্বুদ্ধ ও প্রণেঅদনা দেয়া হচ্ছে। তবুও কিছু কিছু তামাক কোম্পানি কৃষকদের প্রভাবিত করছে। তবে অনেকেই তামাকের পরিবর্তে ভুট্টা আবাদে আগ্রহী হয়েছেন। আগামীতে তামাকের আবাদ অনেকটা কমে যাবে বলেও আশাবাদী তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

তামাক কোম্পানিগুলোর প্রচারণা ও প্রণোদনায় চাষিরা ঝুঁকছেন তামাক চাষে

Update Time : ০৭:৪৫:০৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

সরকারি-বেসরকারিভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে নানা মুখী উদ্যোগ নেয়া হলেও মেহেরপুরের গাংনীতে কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না তামাকের উৎপাদন ও বিপণন। বিভিন্ন তামাক কোম্পানিগুলোর নানামুখী প্রচারণা ও প্রণোদনার কারণে চাষিরা ঝুঁকছেন তামাক চাষে। সবুজের আড়ালে প্রতিটি পাতায় পাতায় নিকোটিন নিয়ে বেড়ে উঠছে একেকটি তামাকের চারা। এদিকে চোখের সামনে তামাক চাষ হলেও তা রোধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না কৃষি বিভাগ এমনি অভিযোগ সাধারণ চষিদের।

বেশ কয়েকটি তামাক বিপনন প্রতিষ্ঠানের দেয়া হিসেব মতে গাংনীর ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় রেজিস্ট্রেশনভুক্ত চাষিদেরকে প্রণোদনা ও তামাক ক্রয়ের নিশ্চয়তা দেয়ায় ৪ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। গেল বছর তামাক আবাদ হয়েছিল ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর। অন্যান্য ফসলের চেয়ে তামাক চাষ লাভজনক হওয়ায় চাষিরা তামাক চাষে কোমর বেধে নেমেছে বলেও জানান তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন মাঠে ইতোমধ্যেই রোপণ করা হয়েছে তামাকের চারা। আবার কোথাও কোথাও তামাক পাতা স্যাঁকার জন্য তোলা হচ্ছে চুল্লী। এসব চুল্লীতে বিভিন্ন ধরনের পলিথিন ও ঝুটকাপড় পোড়ানো হয়। ফলে বিকট গন্ধে বাতাস দুষিত হয়। গেল বছরের তুলনায় এবার বেশি তামাক চাষ হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন চাষিরা। বিভিন্ন তামাক কোম্পানীর লোকজন বিভিন্ন ধরণের প্রনোদনা দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে রয়েছে কীটনাশক পলিথিন ও নগদ টাকা। চাষিরা তামাক বিক্রি করে ওই টাকা পরিশোধ করে থাকেন। মোটা অংকের টাকার লোভে চাষিরা তামাক কোম্পানীর কথায় তামাক চাষ করছেন।

কুঞ্জনগরের তামাক চাষি রফিকুল ইসলাম জানান, তামাক চাষে লাভ বেশি। মজুরীসহ এক বিঘা জমিতে তামাক চাষে খরচ হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং তামাক ভালো হলে বিঘা প্রতি পাওয়া যায় এক লাখ টাকা। সব বাদ দিয়ে প্রচুর টাকা লাভ হয়। তামাক চাষে যা লাগে সবই কোম্পানী বহন করে। ফলে তামাক চাষ অত্যন্ত সহজ। কৃষক দাউদ হোসেন জানান, এক কোম্পানির সাথে চুক্তি হয়েছে সব খরচ ওনাদের। উৎপাদিত তামাক বাজার মূল্য ধরে যা দাম হবে ওনাদের খরচ বাদ দিয়ে বাকি টাকা দিয়ে তারা তামাক নিয়ে যাবে। একই কথা জানালেন শিমুলতলার চাষি মনিরুল ইসলাম। চাষিদের অভিযোগ, কৃষি অফিস তামাক চাষের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করে না।

তামাক চাষ স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ এমন প্রশ্নের জবাবে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক এমকে রেজা জানান, তামাক নানাভাবে স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। যারা তামাকের পরিচর্যা করে তারাও নানা শারীরিক সমস্যায় ভোগেন। বিশেষ করে হাপানি ফুসফুসে প্রদাহ ও ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রন্ত হন তারা। তিনি আরো জানান, ইটভাটার নির্গত ধোয়ায় যে পরিমান ক্ষতি করে তার চেয়ে ১০গুন বেশি ক্ষতি করে।

গাংনী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন জানান, এবার এ অঞ্চলে বেশি তামাক চাষ হচ্ছে। বিভিন্নভাবে তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তামাকের বদলে অন্য ফসল চাষ করার জন্য চাষিদেরকে উদ্বুদ্ধ ও প্রণেঅদনা দেয়া হচ্ছে। তবুও কিছু কিছু তামাক কোম্পানি কৃষকদের প্রভাবিত করছে। তবে অনেকেই তামাকের পরিবর্তে ভুট্টা আবাদে আগ্রহী হয়েছেন। আগামীতে তামাকের আবাদ অনেকটা কমে যাবে বলেও আশাবাদী তিনি।