Dhaka ০৭:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাথরঘাটায় ঘুষের বিনিময় কর্মকর্তার সহায়তায় পাউবোর জমি দখলের অভিযোগ

বরগুনার পাথরঘাটায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জমি অবৈধভাবে দখল করে স্থায়ী স্থাপনাসহ বিভিন্ন রকমের ঘর নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাথরঘাটা পৌর শহর এবং মাছেরখাল বাজারেরর স্লুইজঘাটের দুই পাশের প্রায় কোটি টাকার সম্পত্তি অবৈধ স্থাপনার গড়ে উঠেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় এমনটি হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। পানি উন্নয়ন বোর্ডেকে (পাউবো) জানানো হলেও তারা কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না বলেও জানান গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) লোকজনকে টাকা দিয়েই প্রভাবশালীরা ঘর তুলছেন এবং এ জমির জন্য ১৫ লাখ টাকা দিলে পাথরঘাটায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কার্যসহকারী মামুন মিয়া দাড়িয়ে থেকে দখল করে দিবেন বলেও জানা গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, মাছেরখাল বাজারে মেধ্য দিয়ে বয়ে গেছে খাল। এ খালেরর মধেই রয়েছে স্লুইজঘেট, এর দুই পাশে প্রায় কোটি টাকা সম্পত্তি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো)। এখানের দুপাশেই একাধিক স্থায়ী ও অস্থায়ী স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এদের কারোই দালিলিক কোনো কাগজপত্র না থাকলেও স্লুইসগেট  করার সময় দখলদারেদের ক্ষতি পুরন দিয়ে সরিয়ে দিলেও আবারো তারা একই ভাবে পাউবোর জমি অবৈধভাবে দখল করেছেন। ক্ষেত্রবিশেষে দুএক স্থানে উচ্ছেদ অভিযানের কথা বলে আসলেও অবৈধ অর্থ লেনদেনের কারণে মাঝপথেই আবারো কাজ শুরু করে ঘর নির্মান করছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মচারীদের যোগসাজসে দিন দিন স্থানীয় প্রভাবশালীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি অবৈধভাবে দখল করে ভবন ও দোকানপাট গড়ে তুলছেন। এভাবে দখল করলে একপর্যায়ে সরকারের সব সম্পত্তি ভোগ দখলে চলে যাবে অসাধু ব্যক্তিদের হাতে।

স্লুইজগেট  ও সড়কের জমি দাতার ছেলে মাহবুবুর রহমান এবং তার ভাইয়ের ছেলে মাইনুদ্দিন কাওছার জানান, ১৯৬২ থেকে ৬৫ সালের দিকে তার বাপ-দাদার কাছ থেকে সরকার জমি নিয়ে যাতায়াতের জন্য সড়ক এবং পানি নিষ্কাশসের জন্য স্লুইজঘেট তৈরি করেছেন। সেই জমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ছত্রছায়ায় স্থানীয়রা দখল করে নিচ্ছেন। এ দখলের আগে পাথরঘাটায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কার্যসহকারী মো. মামুন মিয়া তাদেরকে জমি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য ১৫ লাখ টাকা দাবি করেছিলেন। এ টাকা দিলে তিনি দাড়িয়ে থেকে জমি দখল করে দিবেন, সেই টাকা না দেয়ায় অন্যদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তারা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিতে ঘর তুলতে দেখা যায় কিবরিয়া নামের এক ব্যাক্তিকে, তিনি বলেন, যে স্থানে সাইনবোর্ড দেয়া আছে আমি সেখানে তো কোন ঘর তুলছি না। যেখানে ঘর তুলছি সেখানেতো কোন সাইনবোর্ড নেই? আগে যে ঘর ছিলো সেই ঘরের জন্য ক্ষতিপুরন দেয়ার পরেও কেন আবারো জমি দখল করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন লোকতো বাধা দেয় না!

অভিযোগ প্রসঙ্গে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাথরঘাটা কার্যালয়ের কার্যসহকারী মো. মামুন মিয়া বলেন, ১৫ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। ওই বাজারের দুইটি পক্ষ থাকায় একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে।

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শওকত হোসেন মেহেরাজ বলেন, আমাদের জনবল না থাকায় ওইভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। তবে মাছেরখালের পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জমি দখলের বিষয়টিতে আমরা ব্যবস্থা নেব।

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান খনা জানান, কেউ এরকম বিষয়ে আমার কাছে এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ আসে নাই। সে একজন সরকারি চাকরিজীবী হয় কোনভাবেই সরকারী জমি বিক্রি করে উৎকোচ গ্রহণ করতে পারেন না। সেরকমের যদি কোন ব্যাক্তি তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন তাহলে বিভাগীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

পত্নীতলায় পৃথক পৃথক অভিযানে ভুয়া ডাক্তার আটক জেল ও এক লক্ষ টাকা জরিমানা আদায়

পাথরঘাটায় ঘুষের বিনিময় কর্মকর্তার সহায়তায় পাউবোর জমি দখলের অভিযোগ

Update Time : ০৭:৪৭:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

বরগুনার পাথরঘাটায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জমি অবৈধভাবে দখল করে স্থায়ী স্থাপনাসহ বিভিন্ন রকমের ঘর নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাথরঘাটা পৌর শহর এবং মাছেরখাল বাজারেরর স্লুইজঘাটের দুই পাশের প্রায় কোটি টাকার সম্পত্তি অবৈধ স্থাপনার গড়ে উঠেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় এমনটি হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। পানি উন্নয়ন বোর্ডেকে (পাউবো) জানানো হলেও তারা কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না বলেও জানান গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) লোকজনকে টাকা দিয়েই প্রভাবশালীরা ঘর তুলছেন এবং এ জমির জন্য ১৫ লাখ টাকা দিলে পাথরঘাটায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কার্যসহকারী মামুন মিয়া দাড়িয়ে থেকে দখল করে দিবেন বলেও জানা গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, মাছেরখাল বাজারে মেধ্য দিয়ে বয়ে গেছে খাল। এ খালেরর মধেই রয়েছে স্লুইজঘেট, এর দুই পাশে প্রায় কোটি টাকা সম্পত্তি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো)। এখানের দুপাশেই একাধিক স্থায়ী ও অস্থায়ী স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এদের কারোই দালিলিক কোনো কাগজপত্র না থাকলেও স্লুইসগেট  করার সময় দখলদারেদের ক্ষতি পুরন দিয়ে সরিয়ে দিলেও আবারো তারা একই ভাবে পাউবোর জমি অবৈধভাবে দখল করেছেন। ক্ষেত্রবিশেষে দুএক স্থানে উচ্ছেদ অভিযানের কথা বলে আসলেও অবৈধ অর্থ লেনদেনের কারণে মাঝপথেই আবারো কাজ শুরু করে ঘর নির্মান করছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মচারীদের যোগসাজসে দিন দিন স্থানীয় প্রভাবশালীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি অবৈধভাবে দখল করে ভবন ও দোকানপাট গড়ে তুলছেন। এভাবে দখল করলে একপর্যায়ে সরকারের সব সম্পত্তি ভোগ দখলে চলে যাবে অসাধু ব্যক্তিদের হাতে।

স্লুইজগেট  ও সড়কের জমি দাতার ছেলে মাহবুবুর রহমান এবং তার ভাইয়ের ছেলে মাইনুদ্দিন কাওছার জানান, ১৯৬২ থেকে ৬৫ সালের দিকে তার বাপ-দাদার কাছ থেকে সরকার জমি নিয়ে যাতায়াতের জন্য সড়ক এবং পানি নিষ্কাশসের জন্য স্লুইজঘেট তৈরি করেছেন। সেই জমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ছত্রছায়ায় স্থানীয়রা দখল করে নিচ্ছেন। এ দখলের আগে পাথরঘাটায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কার্যসহকারী মো. মামুন মিয়া তাদেরকে জমি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য ১৫ লাখ টাকা দাবি করেছিলেন। এ টাকা দিলে তিনি দাড়িয়ে থেকে জমি দখল করে দিবেন, সেই টাকা না দেয়ায় অন্যদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তারা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিতে ঘর তুলতে দেখা যায় কিবরিয়া নামের এক ব্যাক্তিকে, তিনি বলেন, যে স্থানে সাইনবোর্ড দেয়া আছে আমি সেখানে তো কোন ঘর তুলছি না। যেখানে ঘর তুলছি সেখানেতো কোন সাইনবোর্ড নেই? আগে যে ঘর ছিলো সেই ঘরের জন্য ক্ষতিপুরন দেয়ার পরেও কেন আবারো জমি দখল করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন লোকতো বাধা দেয় না!

অভিযোগ প্রসঙ্গে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাথরঘাটা কার্যালয়ের কার্যসহকারী মো. মামুন মিয়া বলেন, ১৫ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। ওই বাজারের দুইটি পক্ষ থাকায় একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে।

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শওকত হোসেন মেহেরাজ বলেন, আমাদের জনবল না থাকায় ওইভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। তবে মাছেরখালের পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জমি দখলের বিষয়টিতে আমরা ব্যবস্থা নেব।

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান খনা জানান, কেউ এরকম বিষয়ে আমার কাছে এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ আসে নাই। সে একজন সরকারি চাকরিজীবী হয় কোনভাবেই সরকারী জমি বিক্রি করে উৎকোচ গ্রহণ করতে পারেন না। সেরকমের যদি কোন ব্যাক্তি তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন তাহলে বিভাগীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।