রাজশাহীর তানোরে গভীর নলকূপ অপারেটর নিয়োগ দোসরদের পুনর্বাসন করা হয়েছে বলে দাবি বিএনপির তৃনমূল নেতাকর্মী ও সাধারণ কৃষকদের। যাকে বলে স্বৈরাচারী ভূত বিএমডিএতে বহাল তবিয়তে থাকার কারনেই আ”লীগের নেতাদের অধিক টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছেন সহকারী প্রকৌশলী জামিনুর রহমান। আর এসব নিয়োগের তদারকি করেছেন তার বড় ভাই মডেল পাইলট স্কুলের সহকারী শিক্ষক রেজাউল ইসলাম রেজা বলেও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। আবার প্রকৌশলীর আরেক ভাইকে দেয়া হয়েছে নিয়োগ। সহকারী প্রকৌশলী ও তার বড় ভাই শিক্ষক রেজা বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময় যাবতীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছেন। তানোরে বিএমডিএর অপারেটর নিয়োগে আওয়ামী মতাদর্শীদের জয়জয়কার। ফলে নিয়োগের ফলাফল স্থগিত চায় সর্বসাধারণ। সেই সাথে নিয়োগ প্রক্রিয়ার তদন্তের দাবি তুলেছেন জনসাধারণ।
জানা গেছে, কয়েক কোটি টাকার আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে নীতিমালা লঙ্ঘন করে বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্যদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এসবের নেপথ্যে রয়েছে সাবেক এমপি ফারুক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহচর ও সহকারী প্রকৌশলী জামিনুর রহমান। যে কারণে সারাদেশে যখন আওয়ামী ফ্যাসিবাদী মতাদর্শী দোসরদের প্রতিরোধ করা হচ্ছে, তখন তানোরে আওয়ামী মতাদর্শীদের পুর্নবাসন করতে অপারেটর নিয়োগ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের খোলসে যারা দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর গভীর নলকূপ নিয়ন্ত্রণে রেখে সাধারণ কৃষকদের শোষণ করে মোটাতাজা হয়েছে,তারাই আবার অপারেটর নিয়োগ পেয়েছে। এসব নিয়োগ পেতে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা গুনতে হয়েছে। গত ৩০ ডিসেম্বর সোমবার অপারেটর নিয়োগের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকা প্রকাশের পর পরই সাধারণ কৃষকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। বিএমডিএ চত্ত্বরে মৃদু বিক্ষোভও হয়।
এদিকে অপারেটর নিয়োগ নীতিমালায় বলা হয়েছে,যিনি অপারেটর নিয়োগ পাবেন তিনি কোনো অবস্থাতেই অন্যকোন ব্যক্তিকে দিয়ে নলকুপ পরিচালনা করতে পারবেন না এবং তাকে রাতে নলকুপের ঘরে অবস্থান করতে হবে।এছাড়াও স্থানীয় বাসিন্দা ও ওই নলকুপ স্কীমে তার নিজস্ব ফসলি জমি থাকতে হবে ইত্যাদি শর্ত দেয়া হয়েছে।অথচ আওয়ামী মতাদর্শী পরিবারের এমন নারী-পুরুষ অপারেটর নিয়োগ করা হয়েছে,যারা রাতে নলকুপের ঘরে অবস্থান তো পরের কথা নলকুপে যাবেই না।বড় অঙ্কের টাকা আর্থিক সুবিধা দিয়ে অপারেটর নিয়োগ নিয়ে এখন তারা অন্যকে দিয়ে নলকুপ পরিচালনা করা উদ্যোগ নিয়েছে।
বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী বলেন,আওয়ামী মতাদর্শী সহকারী প্রকৌশলী জামিনুর রহমান আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে। বিএমডিএ’র পরিচালনা কমিটির কতিপয় সদস্য ও কৃষি কর্মকর্তার যোগসাজশে সহকারী প্রকৌশলী জামিনুর রহমান বিএনপির ভোটের মাঠ নষ্ট,কোন্দল সৃষ্টি ও মেজর জেনারেল অবঃ শরিফ উদ্দিনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে কৌশলে আওয়ামী মতাদর্শীদের অপারেটর নিয়োগ করেছে।তাদের উদ্দেশ্যে এভাবে অপারেটর নিয়োগ করা হলে বিএনপির নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে শরিফ উদ্দিনের ওপর অভিমান করে নিস্ক্রীয় হয়ে পড়বে।আর এমন হলে আগামি সাধারণ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীকে প্রচন্ড সমস্যায় পড়তে হবে। তারা আরো জানান , নিয়োগ পুনর্বিবেচনা করা না হলে প্রয়োজনে সাধারণ কৃষকেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করবে। উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতা এবং তাদের দোসরেরা অপারেটর নিয়োগ পেয়েছেন কি বিবেচনায়। এটা অবশ্যই অধিকতর তদন্তের দাবি রাখে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে,উপজেলায় বিএমডিএর ৫৩৬টি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ১৬টি গভীর নলকুপ রয়েছে। গত অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে অপারেটর নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ এবং গত ৩ নভেম্বর অপারেটর
নিয়োগের আবেদন ফরম বিতরণ শুরু করা হয়। প্রতিটি ফরমের জন্য অফেরতযোগ্য এক হাজার টাকা করে আদায় করা হয়।উপজেলায় গভীর নলকূপের অপারেটর পদে এক হাজার ৬৯৬টি আবেদন বিক্রি হলেও জমা পড়ে এক হাজার ৫৩০টি। চলতি মাসের ১৯ ডিসেম্বর, ২২ ডিসেম্বর ও ২৩ ডিসেম্বর গভীর নলকূপের অপারেটর নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপির সিনিয়র নেতা সাবেক চান্দুড়িয়া ইউপির চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এইউপিতে ৩৭ টির মত গভীর নলকূপ আছে। এর মধ্যে ইউপি আ”লীগের সভাপতি ও পলাতক ইউপি চেয়ারম্যান মজিবর রহমানের ভাই হাবিবুর রহমান হবি, উপজেলা আ”লীগের সিনিয়র নেতা মুকুল কুমার ঘোষ, হাসু মেম্বার, আলতাবের মেয়ে, আনসার,সহ ১২ টি অপারেটর নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী জামিনুর এসব নিয়োগ প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা করেছেন। তিনি আরো জানান উপজেলা জুড়ে প্রায় ৫০% অপারেটর নিয়োগ পেয়েছে আ”লীগের নেতাকর্মীরা। এমন কি উপজেলা আ”লীগের সভাপতি মাইনুল ইসলাম স্বপনের ছেলে রাসেলকেও নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
তানোর প্রতিদিন নামের ফেসবুক আইডিতে লিখা হয়েছে অপারেটর নিয়োগে বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী জামিনুর ও তার বড় ভাই আ”লীগের দোসর রেজাউল ইসলাম রেজা মাস্টার কোটি টাকার বিনিময়ে নিয়োগ বানিজ্যে আ”লীগকে পুনর্বাসনের দু:সাহস দেখিয়েছেন। ৭৫% মত আ”লীগের অপারেটর নিয়োগ হয়েছে, যা জুলাই বিপ্লবকে বাধাগ্রস্ত করবে। সহকারী প্রকৌশলী কে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার সহ আ”লীগের সহযোগী হিসেবে কাজ করায় আইনের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ সময়ের দাবি। নিয়োগ স্থগিত করে পুনরায় নিয়োগের দাবি।
সাবেক কৃষক দলের সদস্য সচিব আব্দুল মালেক মন্ডল জানান, সহকারী প্রকৌশলী ও তার ভাই স্বৈরাচার দের পুনর্বাসনে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিএমডিএ অফিসে এসব নিয়োগের জবাব চাওয়া হবে। আ”লীগের নেতাকর্মীদের নিয়োগ বাতিল করে পুনরায় নিয়োগের ব্যবস্থা না হলে লাগাতার কর্মসূচি দেয়া হবে। অবশ্য ফেসবুকে এসব ছড়িয়ে পড়লে অফিসে আসেন নি জামিনুর।
সহকারী প্রকৌশলী জামিনুর রহমানের কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিএনপির নেতারাই তদবির করেছে বলেই তো নিয়োগ হয়েছে। আপনার ভাই কিভাবে নিয়োগ পেল প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, নিয়োগ কমিটি দিয়েছে, আমার কোন হাত নেই বলে নিয়োগ বিষয়ে কোনকিছুই বলা যাবে না বলেও দাম্ভিকতা দেখান তিনি।