জয়পুরহাটে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সমতলের ক্ষুদ্র- নৃগোষ্ঠীর ৩৩ জন সুফলভোগীদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করতে আনা ষাঁড় বাছুরগুলোর নির্ধারিত ওজনের চেয়ে কম ওজনের ও নিম্নমানের সরবরাহের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক আফরোজা আকতার চৌধুরী নির্ধারিত ওজনের চেয়ে একটু কম ওজনের দুটি ষাঁড় বাছুর দুই জন সুফলভোগীকে বিতরণ করেছেন। অন্য ষাঁড় বাছুরগুলো সুফলভোগীদের বিতরন না করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে ফেরত দেওয়া হয়েছে।
বুধবার সকাল ১১ টায় জয়পুরহাট সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ জিয়াউর রহমান বলেন, শর্ত অনুযায়ী ঠিকাদারকে ৮০ কেজি ওজনের ষাঁড় বাছুর সরবরাহের কথা ছিল। বিতরণের জন্য আনা ১৮ টি ষাঁড় বাছুরের ওজন ৪৫ থেকে ৭২ কেজির মধ্যে ছিল। সেখান থেকে দুটি ষাঁড় বাছুর বেছে নিয়ে জেলা প্রশাসক স্যারের মাধ্যমে দুই জন সুফলভোগীকে বিতরণ করা হয়েছে। বাকি ১৬ টি ষাঁড় বাছুর ঠিকাদারকে ফেরত দেওয়া হয়েছে। এটা অনিয়ম বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জানতে চাইলে জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক আফরোজা আকতার চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বিতরণের আগে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা তদারকি করে বিতরণের জন্য আনা ষাঁড় বাছুরগুলো শিডিউল অনুযায়ী পাননি। একারণে ষাঁড় বাছুরগুলো ফেরত দিতে বলা হয়েছে। ঠিকাদার শিডিউল অনুযায়ী দ্রুত ষাঁড় বাছুর সরবারাহ করবেন বলে জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও জয়পুরহাট সদর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সমতলে বসবাসরত অনগ্রসর ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক ও জীবন মানোন্নয়নে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ প্রকল্পের আওতায় জয়পুরহাট সদর উপজেলায় ১২৬ জন সুফলভোগী নির্বাচন করা হয়। ওই প্রকল্পের আওতায় ৩৩ জন সুফলভোগী ষাঁড় বাছুর ও ৯৩ জন সুফলভোগী বিনামূল্যে বকনা বছুর পাবেন। ৩৩ টি ষাঁড় ও ৯৩ টি বকনা বাছুর সরবরাহের কাজটি পেয়েছে তুষার এন্টারপ্রাইজ। প্রাণিসম্পদ দপ্তর কেন্দ্রীয়ভাবে এই দরপত্রের আহ্বান করেছিল। বুধবার ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিনে ৩৩ জন সুফলভোগীকে ৩৩ টি ষাঁড় বাছুর বিতরণের জন্য জয়পুরহাট সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর কার্যালয়ের চত্বরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ষাঁড় বাছুর বিতরণ অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক আফরোজা আকতার চৌধুরী প্রধান অতিথি ছিলেন। বিতরণের আগ মুর্হুতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন ১৮ টি ষাঁড় বাছুর আনেন। উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা বিতরণের জন্য আনা ষাঁড় বাছুরগুলোর ওজন কম ও নিম্নমানের বলে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসককে জানান। তিনি নিম্নমানের ষাঁড় বাছুরগুলো ফেরতের নির্দেশ দেন। সেখান থেকে দুটি ভালো মানে ষাঁড় বাছুর নির্বাচন করে দুইজন সুফলভোগীকে বিতরণ করা হয়। জয়পুরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাশেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিতরণ অনুষ্ঠানে অনান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মহির উদ্দিন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ জিয়াউর রহমান ধলাহার ইউপি চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হক।অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আফরোজা আকতার সুফলভোগীর তালিকায় পুরাপৈলের টুকুল চন্দ্র মালি ও ভাদসার বিনেদা রানী সিংকে দুটি ষাঁড় বাছুর তুলে দেন।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ জিয়াউর রহমান বলেন, ঠিকাদার জাকারিয়া সুলতান একজন ভালো ঠিকাদার। স্থানীয়ভাবে যাদের ষাঁড় বাছুর সংগ্রহের দায়িত্ব দিয়েছিল তাঁরাই কাজটি করেছেন। ঠিকাদার শিডিউল অনুযায়ী ষাঁড় বাছুর সরবাহ করবেন বলে জানিয়ে অন্য ষাঁড় বাছুরগুলো ফেরত নিয়েছেন।
ঠিকাদার জাকারিয়া সুলতান সাংবাদিকদের বলেন, আমি ষাঁড় ও বকনা বাছুর সরবরাহের কাজ পেয়েছি। এ কাজটি অনেক আগের। তখন ৮০ কেজি ওজনের একটি ষাঁড় বাছুরের দর ৩৯ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে ওই টাকায় ষাঁড় বাছুর পাওয়া যাবে না। তারপরও শিডিউল অনুযায়ী ষাঁড় বাছুর সরবরাহ করব।