পুলিশের সঠিক তদন্তে রহস্য উম্মোচিত হয়েছে মেহেরপুর মুজিবনগরের তারানগর গ্রামের চাঞ্চল্যকর আলমগীর ওরফে আলম খুনের রহস্য। মামলার বাদী আলমগীর ওরফে আলমের স্ত্রী বেদেনা খাতুনই এ হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশ স্ত্রী বেদেনা খাতুনসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেন- স্ত্রী বেদেনা(৩৭), শাশুড়ি শাহিনুর বেগম(৫৫), তারানগর গ্রামের হামিদুল হামদু (৪৫) ও ধলো মিন্টু পেটু(৪৫)। পারিবারিক কোন্দল, স্বামীর পরোনারীতে আসক্ত মাদক সেবনসহ নানা কারনে স্ত্রী বেদেনা খাতুন ভাড়াটে খুনী দিয়ে পরিকল্পিত খুন করে আলমগীরকে। গ্রেপ্তারকৃতরা বৃহষ্পতিবার বিজ্ঞ আদালতে এমনই স্বীকারোক্তি প্রদান করে।
পুলিশ জানায়, গত ০৯ আগস্ট ২০২৪ দিবাগত রাতে তারানগর গ্রামের আগবত আলীর ছেলে আলমগীর @ আলম(৪৪), নির্মম নৃশংস খুনের শিকার হয়। খুনিরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কানের উপরে, নিচে ও ঘাড়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে হত্যা করে। পরদিন স্ত্রী বেদেনা খাতুন বাদী হয়ে মুজিবনগর থানায় অজ্ঞাত আসামীদের নামে একটি মামলা করেন। যার নং ০২/১১৬, তারিখ: ১০/০৮/২০২৪, ধারা: ৩০২/৩৪ পেনাল কোড।
হত্যাকান্ডের পর থেকেই মামলার বাদীনি তার স্বামী হত্যার বিচারের দাবীকে প্রাধান্য কম দিয়ে সর্বদা তার স্বামীর বিরুদ্ধে নানা রকম অপবাদ- অভিযোগ দিতে থাকে। এ ছাড়া মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে তথ্য দিয়ে সহায়তা না করে অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা বলার চেষ্টা করতো। সেই থেকে বাদিনীর উপর সন্দেহ বাড়তে থাকে তদন্তকারীর। এক পর্যায়ে গভীরভাবে তদন্ত করতে থাকে পুলিশ।
হত্যাকা-ের ঘটনার কিছুদিন পূর্বে মামলার বাদিনী বেদেনা খাতুন তার পালিত একটি গরু ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা বিক্রি করে। তদন্তকারী কর্মকর্তা এই টাকার কথা জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে তাৎক্ষণিকভাবে আমতা আমতা করে এলোমেলো উত্তর দিতে থাকে। এতে আরো সন্দেহ ঘনীভূত হয়। গত বৃহষ্পতিবার ভোরে বাদিনী বেদেনা খাতুনকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে খুনের রহস্য।
স্ত্রী বেদেনা খাতুনের ভরণ-পোষণ না দেয়া, পরনারীর সাথে সম্পর্ক, মাদকাসক্তি ইত্যাদি কারণে স্ত্রীর সাথে স্বামী আলমগীর ওরফে আলমের দাম্পত্য কলহ প্রকট হয়। একপর্যায়ে স্ত্রী ও শাশুড়ি শাহিনুর বেগম আলমগীর আলমকে হত্যার পরিকল্পনা করে। সে মতে বাড়ির একটি গরু এক লাখ ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করে গ্রামের হামিদুল হামদু এবং ধলো মিন্টু পেটুকে ভাড়া করে।
গত ৯ আগস্ট ২০২৪ তারিখ আলমগীর আলম রাতের খাওয়া-দাওয়া শেষে তার বসতবাড়ির একটি আলাদা কক্ষে ঘুমিয়ে পড়ে। খাবারের সাথে স্ত্রী বেদেনা খাতুন ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দেয়ায় সে গভীরভাবে ঘুমিয়ে পড়ে। আলাদা কক্ষে সন্তানদের নিয়ে ঘুমাতে যায় বেদেনা। ওই রাতেই ভাড়াটে খুনি হামিদুল হামদু এবং ধুলো মিন্টু পেটু ধারালো দা দিয়ে মাথা ও ঘাড়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে আলমগীর আলমকে হত্যা নিশ্চিত করে বাইরে থেকে ঘরের সিটকিনি লাগিয়ে চলে যায়।
মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর রাত ১২ ঘটিকার সময় বাদিনী তার মেয়ের প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে উঠার নাটক সাজিয়ে তার আত্মীয় ও আশেপাশের লোকজনকে জড়ো করে। পরদিন বেদেনা খাতুন নিজেই বাদী হয়ে মুজিবনগর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা রুজু করে।
মেহেরপুর পুলিশ সুপার মাকসুদা খানম জানান, হত্যাকান্ড ঘটার পরপরই পুলিশ খুনিদের সনাক্ত ও গ্রেপ্তারে কাজ শুরু করে। আলমের স্ত্রী বেদেনা খাতুনের কথাবার্তা ও গতিবিধি সন্দেহ হওয়ায় তার প্রতি নজর দেয়া হয়। একপর্যায়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে খুনের রহস্য। বেদেনা খাতুনের দেয়া তথ্যানুযায়ি তার মা ও অপর দুই ভাড়াটে খুনিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়। সেখানে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে।