Dhaka ০৪:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কালিয়াকৈরে কারখানার নোংরা পানিতে জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগ, ডেঙ্গুর আশঙ্কা

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে কারখানার ময়লা আবর্জনা, পয়ঃনিষ্কাশনের নোংরা পানিতে অসময়ে জলাবদ্ধতায় চরম জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। নোংরা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি, রাস্তা-ঘাট ও মরে যাচ্ছে সরকারী বনের গজারী গাছও। অপরদিকে নোংরা পানিতে জলবদ্ধতায় মশা-মাছিসহ জীবানু উৎপন্ন হয়ে প্রাণঘাতী ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন রোগবলাই ছড়ানোর আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

এলাকাবাসী, কারখানা ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডে একটি মহল্লা আদর্শপাড়া। কিন্তু পাশের শাহ সিমেন্ট রেডিমিক্স ও সিপি বাংলাদেশ লিমিটেড নামে দুটি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিল্প-কারখানা ড্রেনেজ ব্যবস্থা না করে উন্মুক্ত অবস্থায় তাদের ময়লা আবর্জনা ও পয়ঃনিষ্কাশনের নোংরা পানি ছেড়ে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আগে অন্যের জমি দিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠানের নোংরা পানি বের হতে পারলেও বর্তমানে সে ব্যবস্থাও নেই। দীর্ঘদিন ধরে তাদের নোংরা পানিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অন্যের উর্বর জমি ও মরে যাচ্ছে সরকারী বনের গজারী গাছও। তারপরও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি স্থানীয় বনবিভাগও।

গত দুই সপ্তাহ ধরে এসব প্রতিষ্ঠানের নোংরা পানিতে জলাবদ্ধতা হয়ে তলিয়ে যাচ্ছে ওই আদর্শপাড়া মহল্লার কয়েকটি পরিবারের ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট। ফলে সেখানে বসবাস ও চলাচলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ কয়েকটি পরিবারের লোকজন। অপরদিকে ওই নোংরা পানির জলাবদ্ধতায় যেন মশা-মাছিসহ বিভিন্ন জীবানু উৎপন্নের কারখানায় পরিনত হয়েছে। পচা দুর্গন্ধে বায়ু দূষণসহ চরমভাবে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। এতে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষের প্রাণঘাতী ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন রোগ-বলাই ছড়ানোর আশঙ্কা করছেন

এলাকাবাসী। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব কারখানার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও বিষয়টি আমলে নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অতিদ্রুত জলাবদ্ধতার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে চরম সমস্যার মুখে পড়বেন বলেও জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। এ বিষয়ে গত ১৭ ডিসেম্বর এলাকাবাসী পক্ষ থেকে মুহাঃ মোস্তফা কামাল বাদী হয়ে কালিয়াকৈর পৌরসভা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অতিদ্রুত প্রদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আদর্শপাড়া মহল্লার সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন।

ভুক্তভোগী মাইনুদ্দিন মাহিম ও আতাউর রহমান বলেন, আগে অন্যের জমি দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের নোংরা পানি বের হতো। কিন্তু সেখানে ভরাট হয়ে যাওয়ায় দুই সপ্তাহ ধরে অসময়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। ইতিমধ্যে নোংরা পানির দূর্গন্ধ বের হচ্ছে। জলাবদ্ধতা থেকে মশা-মাছিসহ বিভিন্ন জীবানু সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে প্রাণঘাতী ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন রোগবলাই ছড়িয়ে পড়বে। নাজমুল দেওয়ান ও বৃদ্ধ আবুল কাশেম বলেন, এ আদর্শপাড়া চলাচলের জন্য নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে একটি রাস্তা বানিয়েছি। সে রাস্তাও নোংরা পানিতে ডুবে গেছে। এখন অনেক কষ্টে আমাদের চলাচল করতে হচ্ছে। অনার্স ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী অলি উল্লাহ বলেন, নোংরা পানিতে রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় লোকজনের চলাচলে চরম সমস্যা হচ্ছে। শিশুদের কোলে তুলে তলিয়ে যাওয়া রাস্তা পারাপার করা হলেও আমরা কাপড় উচু ও জুতো খুলে নোংরা পানি দিয়ে হেটে স্কুল-কলেজে যাচ্ছি। এতে শুধু আমরা শিক্ষার্থীরাই নয়, বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষও তুলকানিসহ বিভিন্ন রোগবলাই হচ্ছে। বিষয়টি একাধিকাবার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে জানালেও তারা কোনো প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তবে পৌর প্রশাসকের মাধ্যমে অতিদ্রুত প্রদক্ষেপ গ্রহণ করে এ আদর্শপাড়া মহল্লার সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন।

অভিযুক্ত সিপি বাংলাদেশ লিমিটেডের এইচ আর এডমিন কর্মকর্তা ছুটন পাল জানান, বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে সমাধান করা হবে। অপর অভিযুক্ত শাহ সিমেন্ট রেডিমিক্সের সুপার ভাইজার আব্দুল আজিজ জানান, এ বিষয়ে আমাদের ম্যানেজম্যান্টের সঙ্গে কথা বলেছি। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে একটা ড্রেনের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়াও কারখানার ভেতরে একটা হাউজের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এটা শেষ হলে আমাদের পানি আর বাইরে যাবে না।

এব্যাপারে কালিয়াকৈর পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা কাউছার আহাম্মেদ জানান, জলাবদ্ধতার বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। সমস্যা সমাধানের জন্য ইঞ্জিনিয়ারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে খুব তাড়াতাড়ি ওই জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান করা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

কালিয়াকৈরে কারখানার নোংরা পানিতে জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগ, ডেঙ্গুর আশঙ্কা

Update Time : ১০:১৫:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৫

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে কারখানার ময়লা আবর্জনা, পয়ঃনিষ্কাশনের নোংরা পানিতে অসময়ে জলাবদ্ধতায় চরম জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। নোংরা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি, রাস্তা-ঘাট ও মরে যাচ্ছে সরকারী বনের গজারী গাছও। অপরদিকে নোংরা পানিতে জলবদ্ধতায় মশা-মাছিসহ জীবানু উৎপন্ন হয়ে প্রাণঘাতী ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন রোগবলাই ছড়ানোর আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

এলাকাবাসী, কারখানা ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডে একটি মহল্লা আদর্শপাড়া। কিন্তু পাশের শাহ সিমেন্ট রেডিমিক্স ও সিপি বাংলাদেশ লিমিটেড নামে দুটি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিল্প-কারখানা ড্রেনেজ ব্যবস্থা না করে উন্মুক্ত অবস্থায় তাদের ময়লা আবর্জনা ও পয়ঃনিষ্কাশনের নোংরা পানি ছেড়ে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আগে অন্যের জমি দিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠানের নোংরা পানি বের হতে পারলেও বর্তমানে সে ব্যবস্থাও নেই। দীর্ঘদিন ধরে তাদের নোংরা পানিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অন্যের উর্বর জমি ও মরে যাচ্ছে সরকারী বনের গজারী গাছও। তারপরও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি স্থানীয় বনবিভাগও।

গত দুই সপ্তাহ ধরে এসব প্রতিষ্ঠানের নোংরা পানিতে জলাবদ্ধতা হয়ে তলিয়ে যাচ্ছে ওই আদর্শপাড়া মহল্লার কয়েকটি পরিবারের ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট। ফলে সেখানে বসবাস ও চলাচলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ কয়েকটি পরিবারের লোকজন। অপরদিকে ওই নোংরা পানির জলাবদ্ধতায় যেন মশা-মাছিসহ বিভিন্ন জীবানু উৎপন্নের কারখানায় পরিনত হয়েছে। পচা দুর্গন্ধে বায়ু দূষণসহ চরমভাবে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। এতে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষের প্রাণঘাতী ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন রোগ-বলাই ছড়ানোর আশঙ্কা করছেন

এলাকাবাসী। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব কারখানার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও বিষয়টি আমলে নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অতিদ্রুত জলাবদ্ধতার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে চরম সমস্যার মুখে পড়বেন বলেও জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। এ বিষয়ে গত ১৭ ডিসেম্বর এলাকাবাসী পক্ষ থেকে মুহাঃ মোস্তফা কামাল বাদী হয়ে কালিয়াকৈর পৌরসভা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অতিদ্রুত প্রদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আদর্শপাড়া মহল্লার সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন।

ভুক্তভোগী মাইনুদ্দিন মাহিম ও আতাউর রহমান বলেন, আগে অন্যের জমি দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের নোংরা পানি বের হতো। কিন্তু সেখানে ভরাট হয়ে যাওয়ায় দুই সপ্তাহ ধরে অসময়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। ইতিমধ্যে নোংরা পানির দূর্গন্ধ বের হচ্ছে। জলাবদ্ধতা থেকে মশা-মাছিসহ বিভিন্ন জীবানু সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে প্রাণঘাতী ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন রোগবলাই ছড়িয়ে পড়বে। নাজমুল দেওয়ান ও বৃদ্ধ আবুল কাশেম বলেন, এ আদর্শপাড়া চলাচলের জন্য নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে একটি রাস্তা বানিয়েছি। সে রাস্তাও নোংরা পানিতে ডুবে গেছে। এখন অনেক কষ্টে আমাদের চলাচল করতে হচ্ছে। অনার্স ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী অলি উল্লাহ বলেন, নোংরা পানিতে রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় লোকজনের চলাচলে চরম সমস্যা হচ্ছে। শিশুদের কোলে তুলে তলিয়ে যাওয়া রাস্তা পারাপার করা হলেও আমরা কাপড় উচু ও জুতো খুলে নোংরা পানি দিয়ে হেটে স্কুল-কলেজে যাচ্ছি। এতে শুধু আমরা শিক্ষার্থীরাই নয়, বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষও তুলকানিসহ বিভিন্ন রোগবলাই হচ্ছে। বিষয়টি একাধিকাবার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে জানালেও তারা কোনো প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তবে পৌর প্রশাসকের মাধ্যমে অতিদ্রুত প্রদক্ষেপ গ্রহণ করে এ আদর্শপাড়া মহল্লার সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন।

অভিযুক্ত সিপি বাংলাদেশ লিমিটেডের এইচ আর এডমিন কর্মকর্তা ছুটন পাল জানান, বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে সমাধান করা হবে। অপর অভিযুক্ত শাহ সিমেন্ট রেডিমিক্সের সুপার ভাইজার আব্দুল আজিজ জানান, এ বিষয়ে আমাদের ম্যানেজম্যান্টের সঙ্গে কথা বলেছি। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে একটা ড্রেনের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়াও কারখানার ভেতরে একটা হাউজের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এটা শেষ হলে আমাদের পানি আর বাইরে যাবে না।

এব্যাপারে কালিয়াকৈর পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা কাউছার আহাম্মেদ জানান, জলাবদ্ধতার বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। সমস্যা সমাধানের জন্য ইঞ্জিনিয়ারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে খুব তাড়াতাড়ি ওই জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান করা হবে।