রাজশাহীর তানোরে গভীর নলকূপের অপারেটর নিয়োগ দেয়া হয় আ”লীগ নেতাকর্মী দের। এঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে সাধারণ কৃষক ও বিএনপির নেতা কর্মীরা গত বুধবার বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেন। এর প্রতিবাদে ও বিএমডিএর দূর্নীতিবাজ সহকারী প্রকৌশলী এবং তার ভাই শিক্ষক রেজাকে সমর্থন জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার দুপুরের পরে বিক্ষোভ মিছিল প্রতিবাদ সভা করে জামাত। জামাত নেতারা সভায় বক্তব্য দিলেও কৃষক সমাজ তানোর উপজেলার ব্যানারে মিছিল প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে করে জামাতের নেতারা স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসন করছেন বলে অভিমত রাজনৈতিক বিশ্লেষক দের। স্বৈরাচারের দোসর সহকারী প্রকৌশলী ও রেজা মাস্টার জামাতের উপজেলা আমীর মাওলানা আলমগীর হোসেনের জামাই ও স্বজন। রেজা মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক । তার বিরুদ্ধে অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। কিন্তু কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি কর্তৃপক্ষ। কারন সে জামাত নেতার আত্মীয়। আর রেজাউলের ভাই বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী জামিনুর রহমান তিনিও সাবেক এমপি সাবেক চেয়ারম্যান অন্যতম সহচর। ফলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছেন জনসাধারণ।
জানা গেছে, গত ৩০ ডিসেম্বর বিএমডিএর অপারেটর নিয়োগের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ফলাফলে সিংহ ভাগ আ”লীগ নেতারাই পুনরায় নিয়োগ পান। আ”লীগ ও প্রকৌশলীর স্বজনদের নিয়োগ দিয়ে তদবির করেন রেজা মাস্টার ও জামায়াতের কিছু নেতা। এর প্রতিবাদে ১ লা জানুয়ারী বুধবার সাধারণ কৃষক ও বিএনপির নেতাকর্মীরা বিএমডিএর অফিস ঘেরাও, তালা মেরে দিয়ে বিক্ষোভ এবং রাস্তায় আগুন দিয়ে প্রকৌশলী, তার ভায়ের শাস্তির দাবিসহ বিতর্কিত দের নিয়োগ বাতিলের দাবি জানান। কিন্তু প্রকৌশলী ও তার ভাই জামাত নেতার জামাই রেজা মাস্টারের পক্ষে এবং বিএনপির বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেন জামাত।
জানা গেছে, গত ৩০ ডিসেম্বর বিএমডিএর অপারেটর নিয়োগের তালিকা প্রকাশ করা হয়। তালিকায় আ”লীগের নেতাকর্মী ও প্রকৌশলীর ভাইসহ স্বজনদের প্রায় ১৮/২০ টির মত নিয়োগ পাইয়ে দেন সহকারী প্রকৌশলী । এমনকি উপজেলা আ”লীগের সভাপতি মাইনুল ইসলাম স্বপনের ছেলে রাসেল, সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানী ভাই শফিকুল, চান্দুড়িয়া ইউপির পলাতক চেয়ারম্যান মজিবরের ভাই হাবিবুর রহমান হবি, কালনা গ্রামের মামুন, শাহিন, উপজেলা আ”লীগের সিনিয়র নেতা মুকুল কুমার ঘোষ সহ প্রায় ৭০% বেশি নিয়োগ পেয়েছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকে পাওয়া যায়।
মুন্ডুমালা পৌরসভার কৃষক দলের আহবায়ক বাসার জানান আমার প্রকাশ নগর গ্রামের চারটি ডিপ পেয়েছে আ”লীগ। সরনজাই ইউপির জামাত নেতা রফিকুল ও তার স্ত্রীর নামে দুটি হয়েছে । এরকম উপজেলায় শতশত ডিপের নিয়োগ পেয়েছেন তারা।
উপজেলা ছাত্র দলের আহবায়ক মাসুদ করিম জানান, জামাতের পেটে এখন আ”লীগ। তৃনমুলের আ”লীগের কর্মীরা খোলস পাল্টিয়ে এখন জামাতের কর্মী দাবি করে দাপট দেখাচ্ছে। কৃষক দলের নেতা রব জানান, বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী ও তার ভাই রেজা এবং জামাত মিলে আ”লীগকে অপারেটর নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদ করায় জামাত আমাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল করছে। অবস্থাটা এমন আ”লীগকে পুনর্বাসনের মহা দায়িত্ব এখন জামাতের।
সাবেক ছাত্র দলের সভাপতি আব্দুল মালেক মন্ডল জানান, আ”লীগের উপর ভর করে জামাত ক্ষমতার মসনদে যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু তারা জানেনা আ”লীগ কখনো জামাত হতে পারে না। তাদের সভা সমাবেশে অনেক আ”লীগ কর্মী কে দেখা যাচ্ছে। যারা বিগত সময়ে একেক এলাকার একেকজন ত্রাস ছিল। তারা খোলস পাল্টিয়ে জামাতের ছড় গায়ে লাগিয়ে নিজেদের জামাত দাবি করছে। যা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সাথে মহা প্রতারণা। তাছাড়া আ”লীগ কিভাবে অপারেটরের নিয়োগ পায়। এটা স্পষ্ট জামাত এর সাথে প্রত্যক্ষ পরোক্ষ ভাবে জড়িত। আমরা গত বুধবার মিছিল অফিসে তালা মেরে দাবি তুলেছি যে সব আ”লীগ কে অপারেটর নিয়োগ দেয়া হয়েছে তা বাতিল করতে হবে। কর্তৃপক্ষ আশ্বাসও দিয়েছেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার জামাত কৃষক সমাজের ব্যানারে প্রতিবাদ মিছিল করে বিএনপিকে হুমকি দিচ্ছে। তাহলে বোঝা যায় জামাত জড়িত। তাছাড়া তারা কেন দূর্নীতিবাজ স্বৈরাচারের দোসর সহকারী প্রকৌশলী জামিনুর ও শিক্ষক নামের আরেক দোসর রেজাউল ইসলাম রেজার পক্ষে এত সাফাই কেন। উপজেলা বাসী সবই বুঝে।
তবে উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা আলমগীর হোসেন পুনর্বাসনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা ও বিএনপির নেতারা নির্বাহীর দপ্তরে মিটিং করে বিতর্কিত যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের ব্যাপারে তদন্ত করে বাদ দেয়ার প্রয়োজন হলে দিতে হবে। আপনারা তো বিএনপির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা করে সহকারী প্রকৌশলী ও তার ভায়ের পক্ষ নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, তাদের পক্ষ নেয়া হয়নি।
উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আখেরুজ্জামান হান্নান বলেন, স্বৈরাচার দোসরদের যারাই পক্ষ নিবেন আমরা সাংগঠনিক ভাবে প্রতিরোধ করব। আমাদের দাবি ছিল অপারেটর নিয়োগ কেন আ”লীগকে দেয়া হয়েছে সেটা বাতিল করতে হবে। কিন্তু জামাত তাদের পক্ষ নিয়ে আমাদের বিপক্ষে প্রতিবাদ মিছিল করেছে এটা অত্যান্ত দু:খজনক। জামাতকে এধরণের কর্মসূচি পালন থেকে বিরত থাকার আহবান জানান তিনি। নচেৎ আমরাও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব। কোন সমস্যা হলে সবাই মিলে দলীয় ফোরামে সমাধান করা হবে।