Dhaka ০৪:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শীতির সাতে পারা যাচ্ছে না

‘আর বাপু শীতির সাতে পারা যাচ্ছে না। হাত পা টাটি যাচ্ছে। শীতের মদ্দি বাইর হতি মন চাচ্ছে না কিন্তু না বেরালি তো হবে না ? খ্যাতে কাজ না করলি ফসল ভালো হবে না। ঠান্ডার কারনে কোন লোক পাওয়া যাচ্ছে না খ্যাতে কাজ করার। তাই নিজের কাজ নিজেই কত্তি আসলাম। চাষি মানুষ কষ্ট তো কত্তিই হবে।’ আজ শনিবার সকালে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন কৃষক রবিউল (৫২)।

কৃষক রবিউল মেহেরপুরের রাইপুরের বাসিন্দা। তিনি তার সবজি ক্ষেত থেকে কপি তুলছিলেন। তিনি জানান, কনকনে ঠান্ডা বাতাস ও ঘন কুয়াশার মধ্যেই সকাল ৭ টার দিকে মাঠে এসেছেন বাজারে নেয়ার জন্য কপি তুলতে। একই মাঠে তাঁর লালশাক ও ধানের বীজতলা আছে। ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীত উপেক্ষা করে একই মাঠে কাজ করছিলেন কৃষক আলামিন, সাগর, শামসুল হকসহ বেশ কয়েকজন। প্রচ- শীতে শ্রমজীবী লোকজন পেড়েছেন বিপাকে।

আজ শনিবার সকাল ৯টার দিকে চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানায়, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতা ৯৪ শতাংশ। শুক্রবার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতা ৯৪ শতাংশ। আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারটির জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান জানান, ঘন কুয়াশায় সূরে‌্যর তাপ ভূপৃষ্ঠে নামতে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এবং উত্তরের হিমেল বাতাসের কারণে শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে।

শীতের তীব্রতার কারণে ইতোমধ্যে পুরাতন কাপড়ের বাজার বেশ জমে উঠেছে। গরীবের মার্কেট হিসেবে পরিচিত গাংনী বাসস্ট্যান্ড এলাকার বেশ কিছু দোকানে পুরাতন কাপড় বিক্রি হচ্ছে। দোকানীরা জানান, স্বল্প মূল্যে নি¤œ ও মধ্যবিত্তরা আসছেন এখানে গরম কাপড় কিনতে। বিত্তশালীদের আনাগোনা কমতি নেই। তবে গেল বারের চেয়ে বেচা বিক্রি অনেক কম।

অপর দিকে, তীব্র কুয়াশার কারণে চলাচল আরো দুঃস্বাধ্য হয়ে পড়েছে। যানবাহনে হেডলাইট জ¦ালিয়ে চলাচল করছে। রাস্তা ঘাটে যানবাহন দেখা গেছে সীমীত পরিসরে। কয়েকজন গাড়ি চালক জানান, কুয়াশা ভেদ করে গাড়ি চালঅনো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তাছাড়া যাত্রি পাওয়া যাচ্ছে না। একই কথা জানালেন মালামাল বহনকারী নসিমন, আলমসাধু পরিবহনের চালকরা।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুপ্রভা রানী জানান, প্রচ- ঠান্ডার কারনে শীতজনীত রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাসপাতালে ভীড় বেড়েছে রোগিদের। বিশেষ করে শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা ঠা-াজনীত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এ মুহুর্তে সকলকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

মেহেরপুর জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ জানান, ঠা-ায় গরীব ও অসহায়দের মাঝে ইতোমধ্যে কম্বল বিতরণ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব জায়গায় কম্বল বিতরণ করা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

শীতির সাতে পারা যাচ্ছে না

Update Time : ০৬:১২:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৫

‘আর বাপু শীতির সাতে পারা যাচ্ছে না। হাত পা টাটি যাচ্ছে। শীতের মদ্দি বাইর হতি মন চাচ্ছে না কিন্তু না বেরালি তো হবে না ? খ্যাতে কাজ না করলি ফসল ভালো হবে না। ঠান্ডার কারনে কোন লোক পাওয়া যাচ্ছে না খ্যাতে কাজ করার। তাই নিজের কাজ নিজেই কত্তি আসলাম। চাষি মানুষ কষ্ট তো কত্তিই হবে।’ আজ শনিবার সকালে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন কৃষক রবিউল (৫২)।

কৃষক রবিউল মেহেরপুরের রাইপুরের বাসিন্দা। তিনি তার সবজি ক্ষেত থেকে কপি তুলছিলেন। তিনি জানান, কনকনে ঠান্ডা বাতাস ও ঘন কুয়াশার মধ্যেই সকাল ৭ টার দিকে মাঠে এসেছেন বাজারে নেয়ার জন্য কপি তুলতে। একই মাঠে তাঁর লালশাক ও ধানের বীজতলা আছে। ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীত উপেক্ষা করে একই মাঠে কাজ করছিলেন কৃষক আলামিন, সাগর, শামসুল হকসহ বেশ কয়েকজন। প্রচ- শীতে শ্রমজীবী লোকজন পেড়েছেন বিপাকে।

আজ শনিবার সকাল ৯টার দিকে চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানায়, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতা ৯৪ শতাংশ। শুক্রবার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতা ৯৪ শতাংশ। আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারটির জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান জানান, ঘন কুয়াশায় সূরে‌্যর তাপ ভূপৃষ্ঠে নামতে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এবং উত্তরের হিমেল বাতাসের কারণে শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে।

শীতের তীব্রতার কারণে ইতোমধ্যে পুরাতন কাপড়ের বাজার বেশ জমে উঠেছে। গরীবের মার্কেট হিসেবে পরিচিত গাংনী বাসস্ট্যান্ড এলাকার বেশ কিছু দোকানে পুরাতন কাপড় বিক্রি হচ্ছে। দোকানীরা জানান, স্বল্প মূল্যে নি¤œ ও মধ্যবিত্তরা আসছেন এখানে গরম কাপড় কিনতে। বিত্তশালীদের আনাগোনা কমতি নেই। তবে গেল বারের চেয়ে বেচা বিক্রি অনেক কম।

অপর দিকে, তীব্র কুয়াশার কারণে চলাচল আরো দুঃস্বাধ্য হয়ে পড়েছে। যানবাহনে হেডলাইট জ¦ালিয়ে চলাচল করছে। রাস্তা ঘাটে যানবাহন দেখা গেছে সীমীত পরিসরে। কয়েকজন গাড়ি চালক জানান, কুয়াশা ভেদ করে গাড়ি চালঅনো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তাছাড়া যাত্রি পাওয়া যাচ্ছে না। একই কথা জানালেন মালামাল বহনকারী নসিমন, আলমসাধু পরিবহনের চালকরা।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুপ্রভা রানী জানান, প্রচ- ঠান্ডার কারনে শীতজনীত রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাসপাতালে ভীড় বেড়েছে রোগিদের। বিশেষ করে শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা ঠা-াজনীত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এ মুহুর্তে সকলকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

মেহেরপুর জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ জানান, ঠা-ায় গরীব ও অসহায়দের মাঝে ইতোমধ্যে কম্বল বিতরণ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব জায়গায় কম্বল বিতরণ করা হবে।