কিছুতেই কাটছেনা ডিএপি সারের সংকট বলে নিশ্চিত করেন চাষীরা। একারনে সময়মত আলুতে টপড্রেসিং করতে পারছেনা রাজশাহীর তানোর উপজেলার আলু চাষীরা। বিভিন্ন দোকান ঘুরে ন্যায্য দাম তো দুরে থাক বাড়তি দামেও পাচ্ছে না ডিএপি সার। আলুর টপড্রেসিংয়ের আগে ডিএপি সারের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া কাংখিত ফলন পাওয়া যাবেনা বলে নিশ্চিত করেন আলু চাষীরা। সার না পেলেও কৃষি দপ্তরের কোন তদারকি নেই। সারের বিষয়ে সর্বময় ক্ষমতার মালিক বনে গেছেন কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ। তিনি ছাড়া কোন কর্মকর্তা সার বিষয়ে তথ্য দিতে নারাজ। ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে ডিএপি সারের ব্যবস্থা না করলে অধিক টাকার আলুর চাষাবাদ ভেস্তে যাবে এবং ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন চাষীরা।
চাষীরা জানান, উপজেলার প্রায় মাঠে আলু রোপন হয়েছে, শোভা পাচ্ছে আলুর সবুজ পাতা। আলু রোপনের ২৫/২৬ দিনের মধ্যে টপড্রেসিং করতে হয়। কিন্তু টপড্রেসিংয়ের জন্য প্রয়োজন হয় ডিএপি সারের। বিঘায় ২০ থেকে ২৫ কেজি, আবার অনেকে ৩০ কেজি করেও ব্যবহার করে থাকে। যারা আলুর প্রজেক্ট করেছেন তারা বাড়তি দামে প্রয়োজনীয় সব সার মজুদ করে রেখেছে। তাদের কোন সমস্যা নাই। কিন্তু যারা সরকারি মূল্যে সার পাওয়ার আসায় ছিলেন তারা কোনভাবেই পাচ্ছে না। শুধু ডিএপি না টিএসপি সারেরও সংকট তৈরি করেছেন ডিলারেরা। তানোর পৌর এলাকার কৃষক মুনসুর জানান, ধানতৈড় গ্রামের বাবু ৫০ বিঘা জমিতে আলু রোপন করে টপড্রেসিং করতে পারছে না। শরিফুল, হিরোন, জিল্লু ও হোসেন সার পায়নি। না পাওয়ার কারনে টপড্রেসিং করতে পারেনি। মোহনপুর গ্রামের আব্দুল খালেক ১০ বিঘা, সইবুর ৬০ বিঘা, গোলাম মুর্তজা ৫০ বিঘা, দুবইল গ্রামের জলিল ৪০ বিঘা, আক্কাস ৫ বিঘা, বানিয়াল গ্রামের সমশের ১০ বিঘা জমিতে টপড্রেসিং করতে পারছে না। তারা জানান, আলুর জমি পাইল খনন করার পর ডিএপি সার দিতে হয়। সার দেয়ার ৩/৪ দিন পর খননকৃত পাইল থেকে মাটি তুলে গাছের গোড়ায় দেয়া হয়। কিন্তু বিগত ১০/১২ দিন ধরে ডিএপি সার মিলছেনা। সারের দোকানে গেলেই ১৪০০ থেকে ১৪৫০ টাকা করে দাম চাচ্ছে। রোপন থেকে এখন পর্যন্ত সার নিয়ে মহা কারসাজি চলছে। অথচ কৃষি অফিস থেকে কোন তদারকি নাই। তদারকি বা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করলে এত বাড়তি দাম নিতে পারত না। ৫০ কেজির সরকারি মূল্যে এক বস্তা ডিএপি সারের দাম ১০৫০ টাকা। কিন্তু বস্তায় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা করে বাড়তি দাম নিচ্ছে অসাধু ডিলারেরা।
চাষীরা জানান, বাড়তি দামের কথা বললেই সার পাওয়া যাবে না। কারন ডিলারদের সাব কথা বাহির থেকে বাড়তি দামে কিনে এনেছি। সুতরাং বাড়তি দাম ছাড়া বিক্রি করা যাবেনা। আলুর চাষাবাদে সময় মত সার না দিলে ফলন ভালো হবে না।
এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করে জানান, সরকারের গুদামেই তো ডিএপি সার নাই। তাহলে কিভাবে দিবে। এজন্য চাষাবাদ রক্ষা করতে কৃষি দপ্তরের অনুমতিক্রমে বাহির থেকে বিভিন্ন ভাবে চোরাই পথে সার নিয়ে আসছেন। একারনে সার ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে কীটনাশক ব্যবসায়ীরাও পাইকারি ভাবে সার এনে ইচ্ছে মত দাম নিচ্ছে। আর বাহির থেকে আমদানি করা সারের মান কেমন বা আসল নাকি ভেজাল বোঝার উপায় নাই। সবাইকে বাহির থেকে আমদানি করতে না বলে বিসিআইসির ডিলারকে বলত এবং একটা নির্দিষ্ট দাম নির্ধারণ করে দিলে চাষীদের এত পরিমান টাকা লাগত না। কিন্তু একৃষি অফিসার নিজের খেয়াল খুশিমত এবং তার পছন্দের ডিলার দের সুযোগ করে দিয়েছেন।
গত শনিবার এক আলু চাষী নাম প্রকাশ না করে জানান, গোল্লাপাড়া বাজার থেকে ১২৫০ টাকা বস্তা করে ডিএপি নিয়েছি। কোন মেমো দেয় নি। দোকানের নাম জানতে চাইলে তিনি জানান, নাম বলতে নিষেধ করেছে, নাম বললে আমাকে আর সার দিবে না।
তালন্দ ইউপির বিসিআইসির ডিলার সুমন তো দোকান খুলেনা, তার নিজস্ব গুদাম নাই। বরাদ্দের প্রায় সার মোকামেই বিক্রি করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। সে কৃষক দের সার না দিয়ে পৌর এলকার তালন্দ বাজারের কিছু ব্যবসায়ীকে দিয়ে থাকেন।
বাধাইড় ইউপির বিসিআইসির ডিলার বাবু জানান, আমি সরকারি মূল্যে বিক্রি করেছি। অবশ্য ওই এলাকায় আলুর চাষ কম হয়। তিনি আরো জানান ডিএপি সারের সংকট হওয়ার কথা না। কারন প্রতি ডিলারকে ৫ টন করে বরাদ্দ দিয়েছে। পাঁচন্দর ইউপির ডিলার প্রনব জানান, অল্প কয়েক দিনের মধ্যে সংকট কেটে যাবে।
আরেক ডিলার জানান, বেশির ভাগ ডিলারেরা সার না তুলে মোকামেই বিক্রি করে দেন। পুরো বরাদ্দের সার তুললে কোনভাবেই সংকট হবে না।
গত বৃহস্পতিবার সারের তথ্য নিতে কৃষি অফিসে যাওয়া হলে অফিসার ছিলেন না। সারের দায়িত্বে থাকা আমিনুলের কাছে তথ্য চাইলে তিনি জানান স্যারের অনুমতি ছাড়া তথ্য দেওয়া যাবে না। অফিস থেকেই কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদকে ফোনে তথ্য চাইলে তিনি জানান আমি বলে দিচ্ছি। পুনরায় আমিনুলের কাছে গেলে তিনি জানান স্যার তথ্য দিতে নিষেধ করেছেন, আমার দেয়ার ক্ষমতা নাই।
নির্বাহী অফিসার খায়রুল ইসলাম কে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করা হলে তিনি জানান, আমি কৃষি অফিসারের সাথে কথা বলে দেখছি।
কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে আলুর লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৩ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে। কিন্তু লক্ষমাত্রার চেয়ে ২৭০ হেক্টর বেশি জমিতে চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ২৮ হাজার ৩২০ মে:টন।
কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ সার সংকটের বিষয় টি অস্বীকার করে জানান, কোন ডিলার সার না দিলে বা বাড়তি দাম নিলে কৃষক যদি অভিযোগ করে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে আছে। মাঠে সার্বক্ষণিক কাজ করা হচ্ছে। আসা করা যায় উৎপাদনের চেয়ে বেশি ফলন হবে বলে আশা করেন তিনি।