Dhaka ১০:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পৌষ মাসে তাপদাহ, গরম কাপড় ব্যবসায়ীর মাথায় হাত

oppo_2

পৌষ মাসে প্রচন্ড তাপদাহ। শীত মৌসুমের পৌষ মাসে মানুষ শীতে কাতর হয়ে যেতো। শীত থেকে রক্ষা পেতে সারা শরীরে জড়িয়ে থাকতো গরম কাপড়। কিন্তু এবারই প্রথম পৌষ মাসের দিনে প্রচন্ড

তাপদাহ ফলে মৌসুমী গরম কাপড় ব্যবসায়ীরা তাদের আমদানিকৃত কাপড় বিক্রি করতে না পেরে মাথায় হাত পড়েছে।

সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিস কর্মকর্তা লোকমান হোসেন জানান, বিগত বছরগুলোতে পৌষ মাসে মাঝারি শৈত প্রবাহের ফলে তাপমাত্রা থাকে ৭ ডিগ্রি থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস কিন্তু এবারে সর্বনি¤œ ১২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বোচ্চ ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠেছে।

দেখা গেছে নীলফামারীর সৈয়দপুরে প্রায় রাতে হালকা কুয়াশা ও শীতের আমেজ থাকলেও সকাল ৮টার পর থেকে বিকাল পর্যন্ত গরম কাপড়ের প্রয়োজনই হচ্ছে না। অনেকেই লেপ বা কম্বল ট্রাংকে অথবা বাক্সে ভরে রেখেছেন। এর ফলে গরম কাপড়ের ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসায় লোকসান গুণতে বসেছেন।

পুরাতন গরম কাপড় ব্যবসায়ী অশেষ বলেন, সৈয়দপুর তথা সারা বাংলাদেশে নভেম্বর থেকে জানুয়ারির শেষ দিন পর্যন্ত শীতের মৌসুম বলা হয়। এর ফলে শুরু থেকেই জমে উঠে গরম কাপড় কেনা-বেচা। শীতের কাপড় বিক্রি করে লাভের মুখ দেখতে অনেক ব্যবসায়ী লাখ লাখ টাকা পুঁজি লাগিয়েছেন। কিনেছেন সোয়েটার, জ্যাকেট ও দামী দামী কম্বল। খুচরা ব্যবসায়ীরা গরম কাপড় নিয়ে বসেছেন ফুটপাতে কিন্তু পৌষ মাসে গরম অনুভব হওয়ায় ক্রেতা সাধারণ নেই বললেই চলে।

সোমবার ০৬ জানুয়ারি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় পৌষ মাসে ক্রেতা সাধারণ কম্বলে শীতের কাপড় বিক্রি হচ্ছে অর্ধেক দামে। অনেক ব্যবসায়ী তাদের পুঁজি উঠানোর জন্য ৪০ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশ ডিসকাউন্ট দিয়ে গরম কাপড় বিক্রি করছেন। শহরের লন্ডি বাজারসহ বড় বড় বিপনি বিতানগুলোতেও নেই কোনো ক্রেতা সাধারণের ভীড়। প্রতিটি শীত মৌসুমে পুরাতন গরম কাপড়ের কেনা-বেচা হয় রেল লাইন সংলগ্ন কাপড় দোকানে কিন্তু সেখানেও একেবারেই ক্রেতাদের ভীড় লক্ষ করা যাচ্ছে না। অনেক ব্যবসায়ী ক্রেতাদের কম দামে গরম কাপড় বিক্রি করতে ডাকাডাকি করছেন। কিন্তু এর পরেও ক্রেতারা কাপড় দেখছেন ঠিকই কিন্তু ক্রয় না করে ফিরে যাচ্ছেন।

শাহজাদা নামে এক ব্যবসায়ী জানান, পৌষ মাসে প্রচন্ড শীত পড়বে বলে একেকটি কম্বল কিনেছি ৩০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত । যে কম্বল ৩০০ টাকায় কিনেছি সেটি ২০০ টাকা আর ২০০০ টাকার কম্বল ১৪০০-১৫০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। কারণ এগুলো বিক্রি না হলে আগামী বছর আর বিক্রি হবে না। তবে শুধু পুঁজি হারিয়ে যাতে পথে বসতে না হয় এজন্যই কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে।

শীতের কম্বল কিনতে আসা সাব্বির নামের এক বাংলাদেশ বেতারের সাংবাদিক বলেন, এবারের পৌষ মাসে দিনের বেলায় প্রচন্ড গরম অনুভব হওয়ায় কম্বলের দাম তুলনামূলক অনেক কম। আজ যে কম্বল কিনলাম সেই কম্বল গত মৌসুমে দাম ছিল ৩০০০-৪৫০০ টাকা, সেটি কিনলাম মাত্র ১২০০ টাকা করে ।

রফিকুল নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ব্যাংকের লোন নিয়ে প্রায় ২ কোটি টাকার কম্বল, জ্যাকেট ও সোয়েটার কিনেছি শীতে বিক্রি করবো বলে কিন্তু পৌষ মাসে গরম অনুভব হওয়ায় এ যাবত ৫ লক্ষ টাকার গরম কাপড় বিক্রি করতে পারেনি। এ মৌসুমে এগুলি বিক্রি না হলে পথে বসতে হবে।

ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলতাফ হোসেন জানান, এবারে বিপণি বিতানসহ ফুটপাতের ব্যবসায়ী মিলে প্রায় ২০০ কোটি টাকার গরম কাপড় বিক্রির সম্ভাবনা ছিল কিন্তু পৌষ মাসে গরমের কারণে সারা শীত মৌসুমে ৫০ লক্ষ টাকারও গরম কাপড় বিক্রি করতে পারবেনা বলে জানান তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

পৌষ মাসে তাপদাহ, গরম কাপড় ব্যবসায়ীর মাথায় হাত

Update Time : ০১:৫৯:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৫

পৌষ মাসে প্রচন্ড তাপদাহ। শীত মৌসুমের পৌষ মাসে মানুষ শীতে কাতর হয়ে যেতো। শীত থেকে রক্ষা পেতে সারা শরীরে জড়িয়ে থাকতো গরম কাপড়। কিন্তু এবারই প্রথম পৌষ মাসের দিনে প্রচন্ড

তাপদাহ ফলে মৌসুমী গরম কাপড় ব্যবসায়ীরা তাদের আমদানিকৃত কাপড় বিক্রি করতে না পেরে মাথায় হাত পড়েছে।

সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিস কর্মকর্তা লোকমান হোসেন জানান, বিগত বছরগুলোতে পৌষ মাসে মাঝারি শৈত প্রবাহের ফলে তাপমাত্রা থাকে ৭ ডিগ্রি থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস কিন্তু এবারে সর্বনি¤œ ১২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বোচ্চ ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠেছে।

দেখা গেছে নীলফামারীর সৈয়দপুরে প্রায় রাতে হালকা কুয়াশা ও শীতের আমেজ থাকলেও সকাল ৮টার পর থেকে বিকাল পর্যন্ত গরম কাপড়ের প্রয়োজনই হচ্ছে না। অনেকেই লেপ বা কম্বল ট্রাংকে অথবা বাক্সে ভরে রেখেছেন। এর ফলে গরম কাপড়ের ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসায় লোকসান গুণতে বসেছেন।

পুরাতন গরম কাপড় ব্যবসায়ী অশেষ বলেন, সৈয়দপুর তথা সারা বাংলাদেশে নভেম্বর থেকে জানুয়ারির শেষ দিন পর্যন্ত শীতের মৌসুম বলা হয়। এর ফলে শুরু থেকেই জমে উঠে গরম কাপড় কেনা-বেচা। শীতের কাপড় বিক্রি করে লাভের মুখ দেখতে অনেক ব্যবসায়ী লাখ লাখ টাকা পুঁজি লাগিয়েছেন। কিনেছেন সোয়েটার, জ্যাকেট ও দামী দামী কম্বল। খুচরা ব্যবসায়ীরা গরম কাপড় নিয়ে বসেছেন ফুটপাতে কিন্তু পৌষ মাসে গরম অনুভব হওয়ায় ক্রেতা সাধারণ নেই বললেই চলে।

সোমবার ০৬ জানুয়ারি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় পৌষ মাসে ক্রেতা সাধারণ কম্বলে শীতের কাপড় বিক্রি হচ্ছে অর্ধেক দামে। অনেক ব্যবসায়ী তাদের পুঁজি উঠানোর জন্য ৪০ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশ ডিসকাউন্ট দিয়ে গরম কাপড় বিক্রি করছেন। শহরের লন্ডি বাজারসহ বড় বড় বিপনি বিতানগুলোতেও নেই কোনো ক্রেতা সাধারণের ভীড়। প্রতিটি শীত মৌসুমে পুরাতন গরম কাপড়ের কেনা-বেচা হয় রেল লাইন সংলগ্ন কাপড় দোকানে কিন্তু সেখানেও একেবারেই ক্রেতাদের ভীড় লক্ষ করা যাচ্ছে না। অনেক ব্যবসায়ী ক্রেতাদের কম দামে গরম কাপড় বিক্রি করতে ডাকাডাকি করছেন। কিন্তু এর পরেও ক্রেতারা কাপড় দেখছেন ঠিকই কিন্তু ক্রয় না করে ফিরে যাচ্ছেন।

শাহজাদা নামে এক ব্যবসায়ী জানান, পৌষ মাসে প্রচন্ড শীত পড়বে বলে একেকটি কম্বল কিনেছি ৩০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত । যে কম্বল ৩০০ টাকায় কিনেছি সেটি ২০০ টাকা আর ২০০০ টাকার কম্বল ১৪০০-১৫০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। কারণ এগুলো বিক্রি না হলে আগামী বছর আর বিক্রি হবে না। তবে শুধু পুঁজি হারিয়ে যাতে পথে বসতে না হয় এজন্যই কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে।

শীতের কম্বল কিনতে আসা সাব্বির নামের এক বাংলাদেশ বেতারের সাংবাদিক বলেন, এবারের পৌষ মাসে দিনের বেলায় প্রচন্ড গরম অনুভব হওয়ায় কম্বলের দাম তুলনামূলক অনেক কম। আজ যে কম্বল কিনলাম সেই কম্বল গত মৌসুমে দাম ছিল ৩০০০-৪৫০০ টাকা, সেটি কিনলাম মাত্র ১২০০ টাকা করে ।

রফিকুল নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ব্যাংকের লোন নিয়ে প্রায় ২ কোটি টাকার কম্বল, জ্যাকেট ও সোয়েটার কিনেছি শীতে বিক্রি করবো বলে কিন্তু পৌষ মাসে গরম অনুভব হওয়ায় এ যাবত ৫ লক্ষ টাকার গরম কাপড় বিক্রি করতে পারেনি। এ মৌসুমে এগুলি বিক্রি না হলে পথে বসতে হবে।

ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলতাফ হোসেন জানান, এবারে বিপণি বিতানসহ ফুটপাতের ব্যবসায়ী মিলে প্রায় ২০০ কোটি টাকার গরম কাপড় বিক্রির সম্ভাবনা ছিল কিন্তু পৌষ মাসে গরমের কারণে সারা শীত মৌসুমে ৫০ লক্ষ টাকারও গরম কাপড় বিক্রি করতে পারবেনা বলে জানান তিনি।