Dhaka ০৩:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মধ্যরাতে শীতার্তদের গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিলেন জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার আবদুল ওয়াহাব

কনকনে শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করে পাতলা এক চাদর গায়ে জড়িয়ে রেলস্টেশনের প্লাটফর্মে ঘুমিয়ে ছিলেন ৬৫ বছর বয়সী  ভিক্ষুক সামাদ । এ সময় পুলিশ সুপার তার গায়ে কম্বল দেওয়ায় তার ঘুম ভেঙে যায়। তিনি খুঁশিতে আত্মহারা। তিনি বলেন, ‘শীতের রাতে বেশি শীতের কাপড় না থাকায় ঠিকমত ঘুম হচ্ছিল না, এসপি স্যার কম্বল দেওয়াতে আমি খুব খুশি। এখন ভালোভাবে ঘুমাতে পারবো।’

জয়পুরহাটে শীতের তীব্রতা বাড়ায় গভীর রাতে জয়পুরহাট রেল স্টেশনের প্লাটফর্মে ছিন্নমূল ও শীতার্ত মানুষ খুঁজে তাদের গায়ে কম্বল জড়িয়ে দেন পুলিশ সুপার মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব।

রবিবার মধ্যরাতে রাতে জয়পুরহাট রেলওয়ে স্টেশন এলাকা ও শহরের জিরো পয়েন্ট পাঁচুর মোড় এলাকায় শীতবস্ত্রহীন অসহায়, হতদরিদ্র, পথশিশু, হিজড়া ও প্রতিবন্ধী মানুষের মাঝে এ সময় তিনি সাড়ে তিনশ কম্বল বিতরণ করেন।

এসময় জয়পুরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহেদ আল মামুন, জেলা গোয়েন্দা শাখা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: আসাদুজ্জামান, সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মিজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

গভীরাতে কম্বল পেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী কাশেম বলেন, শীতের জন্য রাইতে ভালো ঘুম অয়না। মনে অইছিল এই শীতে আর বাচুম না। এসপি স্যারের কম্বল পাইয়া শীতের ডর কাইট্যা গেছে।

রেলস্টেশনের প্ল্যার্টফর্মে একটি বস্তা, সেটার ওপর কাঁথা বিছিয়ে শুয়ে আছেন জরিনা বিবি। শীত নিবারণের জন্য শরীরে লাল রঙের একটি কাপড় মুড়িয়ে ঘুমিয়ে গেছেন তিনি। এসময় শীতবস্ত্র নিয়ে হাজির পুলিশ সুপার। শরীরে একটু উষ্ণতা পেতে একটি শীতবস্ত্র পাওয়ার আশায় উঠে পড়েন তিনি। কম্বল হাতে পেয়ে খুব খুশি হন।

কম্বল পাওয়ার  শিশু জুয়েল বলেন ‘ঘরে ভালো কোনো কম্বল ছিল না, যা দিয়া শীত ঠেকান যায়। এসপি স্যারের দেওয়া এই কম্বল গায়ে দিয়া এইবার শান্তিতে ঘুমাইতে পারব।’

রহিমা নামের আর এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমি খাবার হোটেলে কাজ করা মানুষ। এই শীতের রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। খুব ঠান্ডা লাগে। চাদর জড়িয়ে শুয়ে পড়ি। এখন এই কম্বল গায়ে জড়িয়ে ঘুমাবো।’

মোমেনা খাতুন নামের আরেকজন বলেন, রাতে কুয়াশা বেশি হয়, আবার কম হয়। যখন হালকা বাতাস হয়, তখন ঠাণ্ডা লাগে। চাদর, শাড়ি বা অন্য কোনো কাপড় গায়ে দিয়েই ঘুমিয়ে পড়ি। এই কম্বল পাওয়ার পর এটি গায়ে দিয়ে একটু আরামে ঘুমিয়ে পরব।

মোমেনা খাতুনের মতো জয়পুরহাট রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যার্টফর্মে ঘুমিয়ে রাত কাটানো অনেক শীতার্ত ছিন্নমূলদের এভাবেই শীতবস্ত্র বিতরণ করেছেন জয়পুরহাট জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব।

শীতবস্ত্র পেয়ে আরো কয়েকজন শীতার্ত বলেন, আমরা ছিন্নমুল, অসহায় মানুষ। রাতে স্টেশন এলাকায় পাঁচুর মোড়ে ঘুমিয়ে থাকি। শীতের এই রাতে ঠাণ্ডার কারণে ঘুমাতে কষ্ট হয়। পুলিশ সুপারের এই কম্বল পেয়ে আমাদের অনেক উপকার হলো।

জয়পুরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহেদ আল মামুন বলেন, এই শীতের রাতে জয়পুরহাট স্টেশন এলাকা ও শহরের জিরো পয়েন্ট পাঁচুর মোড় এলাকায় অবস্থান করা অসহায় মানুষদের মাঝে প্রায় সাড়ে তিনশ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরো কম্বল বিতরণ করা হবে।

জয়পুরহাট পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব বলেন, আমরা মানবিক কারণে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। সেজন্য এই শীতের রাতে অসহায়দের কম্বল দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে। যাতে তারা শীতের সময় একটু উষ্ণতা পান।

তিনি বলেন, “পুলিশ সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছে।  আশা করি, দেশের বিত্তবানরা শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি মানবিক কাজে এগিয়ে আসবেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সংকল্পবদ্ধ হওয়ার আহ্বান তারেক রহমানের

মধ্যরাতে শীতার্তদের গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিলেন জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার আবদুল ওয়াহাব

Update Time : ০৬:৩১:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫

কনকনে শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করে পাতলা এক চাদর গায়ে জড়িয়ে রেলস্টেশনের প্লাটফর্মে ঘুমিয়ে ছিলেন ৬৫ বছর বয়সী  ভিক্ষুক সামাদ । এ সময় পুলিশ সুপার তার গায়ে কম্বল দেওয়ায় তার ঘুম ভেঙে যায়। তিনি খুঁশিতে আত্মহারা। তিনি বলেন, ‘শীতের রাতে বেশি শীতের কাপড় না থাকায় ঠিকমত ঘুম হচ্ছিল না, এসপি স্যার কম্বল দেওয়াতে আমি খুব খুশি। এখন ভালোভাবে ঘুমাতে পারবো।’

জয়পুরহাটে শীতের তীব্রতা বাড়ায় গভীর রাতে জয়পুরহাট রেল স্টেশনের প্লাটফর্মে ছিন্নমূল ও শীতার্ত মানুষ খুঁজে তাদের গায়ে কম্বল জড়িয়ে দেন পুলিশ সুপার মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব।

রবিবার মধ্যরাতে রাতে জয়পুরহাট রেলওয়ে স্টেশন এলাকা ও শহরের জিরো পয়েন্ট পাঁচুর মোড় এলাকায় শীতবস্ত্রহীন অসহায়, হতদরিদ্র, পথশিশু, হিজড়া ও প্রতিবন্ধী মানুষের মাঝে এ সময় তিনি সাড়ে তিনশ কম্বল বিতরণ করেন।

এসময় জয়পুরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহেদ আল মামুন, জেলা গোয়েন্দা শাখা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: আসাদুজ্জামান, সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মিজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

গভীরাতে কম্বল পেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী কাশেম বলেন, শীতের জন্য রাইতে ভালো ঘুম অয়না। মনে অইছিল এই শীতে আর বাচুম না। এসপি স্যারের কম্বল পাইয়া শীতের ডর কাইট্যা গেছে।

রেলস্টেশনের প্ল্যার্টফর্মে একটি বস্তা, সেটার ওপর কাঁথা বিছিয়ে শুয়ে আছেন জরিনা বিবি। শীত নিবারণের জন্য শরীরে লাল রঙের একটি কাপড় মুড়িয়ে ঘুমিয়ে গেছেন তিনি। এসময় শীতবস্ত্র নিয়ে হাজির পুলিশ সুপার। শরীরে একটু উষ্ণতা পেতে একটি শীতবস্ত্র পাওয়ার আশায় উঠে পড়েন তিনি। কম্বল হাতে পেয়ে খুব খুশি হন।

কম্বল পাওয়ার  শিশু জুয়েল বলেন ‘ঘরে ভালো কোনো কম্বল ছিল না, যা দিয়া শীত ঠেকান যায়। এসপি স্যারের দেওয়া এই কম্বল গায়ে দিয়া এইবার শান্তিতে ঘুমাইতে পারব।’

রহিমা নামের আর এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমি খাবার হোটেলে কাজ করা মানুষ। এই শীতের রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। খুব ঠান্ডা লাগে। চাদর জড়িয়ে শুয়ে পড়ি। এখন এই কম্বল গায়ে জড়িয়ে ঘুমাবো।’

মোমেনা খাতুন নামের আরেকজন বলেন, রাতে কুয়াশা বেশি হয়, আবার কম হয়। যখন হালকা বাতাস হয়, তখন ঠাণ্ডা লাগে। চাদর, শাড়ি বা অন্য কোনো কাপড় গায়ে দিয়েই ঘুমিয়ে পড়ি। এই কম্বল পাওয়ার পর এটি গায়ে দিয়ে একটু আরামে ঘুমিয়ে পরব।

মোমেনা খাতুনের মতো জয়পুরহাট রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যার্টফর্মে ঘুমিয়ে রাত কাটানো অনেক শীতার্ত ছিন্নমূলদের এভাবেই শীতবস্ত্র বিতরণ করেছেন জয়পুরহাট জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব।

শীতবস্ত্র পেয়ে আরো কয়েকজন শীতার্ত বলেন, আমরা ছিন্নমুল, অসহায় মানুষ। রাতে স্টেশন এলাকায় পাঁচুর মোড়ে ঘুমিয়ে থাকি। শীতের এই রাতে ঠাণ্ডার কারণে ঘুমাতে কষ্ট হয়। পুলিশ সুপারের এই কম্বল পেয়ে আমাদের অনেক উপকার হলো।

জয়পুরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহেদ আল মামুন বলেন, এই শীতের রাতে জয়পুরহাট স্টেশন এলাকা ও শহরের জিরো পয়েন্ট পাঁচুর মোড় এলাকায় অবস্থান করা অসহায় মানুষদের মাঝে প্রায় সাড়ে তিনশ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরো কম্বল বিতরণ করা হবে।

জয়পুরহাট পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব বলেন, আমরা মানবিক কারণে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। সেজন্য এই শীতের রাতে অসহায়দের কম্বল দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে। যাতে তারা শীতের সময় একটু উষ্ণতা পান।

তিনি বলেন, “পুলিশ সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছে।  আশা করি, দেশের বিত্তবানরা শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি মানবিক কাজে এগিয়ে আসবেন।