সৈয়দপুরে প্রকাশ্য দিবালোকে চলছে তিন ফসলি জমির মাটি কাটার উৎসব। প্রাশসনের চোখের সামনে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করছে একটি মহল। উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়ন জুড়ে চলছে মাটি কাটার উৎসব চললেও প্রশাসন কোন পদক্ষেপই নিচ্ছেন না।
সরেজমিনে দেখা যায়, কামারপুকুর ইউনিয়ন এর বিভিন্ন এলাকায় এস্কেভেটর দিয়ে ৪০-৫০ ফুট গভীর করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালীরা। ভাটা মালিকরা কৃষকদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে একেবারেই কম দামে মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছেন। এতে বর্ষা মৌসুমে লাগাতার ৩/৪ দিন প্রবল বর্ষন হলে শত শত একর ফসলি জমি ও বিভিন্ন স্থাপনা তলিয়ে যেতে পারে।
কৃষিবিদদের মতে, জমির উপরিভাগের চার থেকে ছয় ইঞ্চি (টপ সয়েল) গভীরের মাটিতেই মূল পুষ্টিগুণ থাকে। আর মাটির এই পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ স্তরেই ফসল উৎপাদিত হয়। কিন্তু মাটি খেকোরা মাটির এই স্তর কেটে নেওয়ায় জমির উর্বরশক্তি নষ্ট হচ্ছে। একারনে কৃষকরা জমিতে অতিরিক্ত সার প্রয়োগ করেও কাঙ্খিত ফলন পাচ্ছেন না। তা ছাড়া কৃষিজমির ওপরের এ টপ সয়েল হারিয়ে ফেললে তা স্বাভাবিক হতে প্রায় ১০-১২ বছর লাগবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কৃষক জানান, অন্যায় ভাবে ফসলি জমির মাটি কাটার প্রতিবাদ করতে গেলেই বিভিন্ন ধরনের হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। দেয়া হচ্ছে চাঁদা বাজি মামলার হুমকি। এভাবে চলতে থাকলে বর্ষা মৌসুমে আমাদের ভিটেমাটি তলিয়ে রাস্তায় থাকতে হবে।
স্থানীয়রা জানান, প্রকাশ্য দিবালোকে ও মাঝে মধ্যে রাত ১০টার পর তাদের মাটি কাটা শুরু হয় এবং ভোরে এস্কেভেটর ও ট্রাক ভর্তি করে মাটি নিয়ে চলে যায়। এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-ই আলম সিদ্দিক ও ভুমি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামকে মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে ও কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। মাটি ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনতে আমরা বর্তমানে অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শীত মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের কামারপুকুর ইউনিয়নে সব চেয়ে বেশি আলু চাষাবাদ হয়। এই ইউনিয়নের আবাদকৃত আলু সৈয়দপুরের চাহিদা পুরন করে সারা উত্তরবঙ্গে সরবরাহ করা হয়। গত শীত মৌসুমে এই ইউনিয়নে পর্যাপ্ত আলুর আবাদ হলেও এবারে মাটি খেকোদের কারনে আলুর আবাদ নেমেছে অর্ধেকে। ভাটার মালিকরা দালালদের দারা কৃষকদের লোভ দেখিয়ে জমির উপরের অংশের মাটি নিয়ে যাচ্ছে ইটভাটায়। এ অবস্থা চলতে থাকলে এ এলাকার উৎপাদিত আলু উত্তরবঙ্গ নয়, সৈয়দপুরের আলুর চাহিদাও পুরন হবে না।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ), ২০১৩ অনুযায়ী, কৃষিজমির মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করা নিষিদ্ধ। এসব কাজে জড়িত ব্যক্তিদের দুই লাখ টাকার জরিমানা ও দুই বছরের কারাদন্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। এ আইন প্রয়োগ করবে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু এখন পর্যন্ত নীলফামারী জেলা ও সৈয়দপুরের প্রশাসন কোন প্রকার পদক্ষেপই নেননি তারা।
কামারপুকুর ইউনিয়ন বাসী বলেন, নীলফামারী জেলার সবচেয়ে বেশি ইটভাটা রয়েছে এই ইউনিয়নে। মোট ২৪ টি ইট ভাটা রয়েছে এই ইউনিয়নে। ইটের ভাটা মালিকরা দালালদের দারা কৃষকদের জমির মুল্যবান মাটি কেটে জমির উর্বরতা নষ্ট করলেও দেখার যেন কেউই নেই।
ফসলী জমির মুল্যবান মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়ার অনুমতি আছে কি না জানতে চাইলে কামারপুকুর ইউনিয়ন এর ইটভাটার মালিক আলহাজ্ব নজমুল ইসলাম বলেন, মাটি কাটার অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন মনে করছি না। কারন প্রশাসনের কাছে অনুমতি নেই বা না নেই, তারা যে কোন কৌশলে জড়িমানা করবেই। একারনে অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন মনে করি নাই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-ই আলম সিদ্দিক বলেন, আমরা মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করার প্রস্তুতি নিয়েছি। নীলফামারী জেলা প্রশাসক যখন নির্দেশ দিবেন তখনই অভিযান চালানো হবে বলে জানান তিনি।