কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কিনারে অজ্ঞাত দূর্বৃত্তদের গুলিতে খুলনার সাবেক কাউন্সিলার ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গোলাম রব্বানী টিপু হত্যার ঘটনা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশায় রয়েছেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশ জানিয়েছেন , বেশ কিছু কারণকে সামনে রেখে র্যাবের সহায়তায় তদন্ত চলছে। হত্যাকান্ডের পুরো ঘটনাটি দেখে অংশ নেয়ারা পেশাদার খুনি হিসেবে ধরা হচ্ছে। ইতিমধ্যে নিহতের ভগ্নিপতি বাদি হয়ে কক্সবাজার সদর থানায় মামলাও হয়েছে। নিহতের সাথে থাকা দুইজনকে র্যাব হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে সঙ্গে থাকা নারীর কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। ওই নারীকে খোঁজা হচ্ছে।গত বৃহস্পতিবার রাত ৯ টার দিকে কক্সবাজার শহরে সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন হোটেল সীগালের সামনে রাস্তার ফুটপাতে অজ্ঞাত দূর্বৃত্তরা গোলাম রব্বানীকে মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত গোলাম রব্বানী টিপু (৫৫) খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলার এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের খুলনা মহানগর কমিটির সহ-সভাপতি। তিনি খুলনা সিটির দৌলতপুর থানার দেয়ানা উত্তরপাড়ার হোসেন শাহ রোডের মোঃ গোলাম আকবরের পুত্র ।এ ঘটনায় শুক্রবার দুপুরে অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জসিম উদ্দিন চৌধুরী।
তিনি জানান, নিহতের ভগ্নিপতি মোঃ ইউসুফ আলী বাদি হয়ে এই মামলাটি দায়ের করা হয়।প্রাপ্ত মামলার এজাহারে বাদি উল্লেখ করেছেন, নিহত গোলাম রব্বানী টিপু দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজারে মাছের ঘেরের ব্যবসা পরিচালনা করেন। গত ৮ জানুয়ারি ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসার বিষয়টি বোন নুরজাহান বেগম হ্যাপীকে (বাদির স্ত্রী) অবহিত করেছিলেন। ৯ জানুয়ারি পুলিশের মাধ্যমে গুলি করে হত্যার বিষয়টি তারা অবহিত হয়।অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃজসিম উদ্দিন চৌধুরী জানান, বৃহস্পতিবার রাতে মোটর সাইকেল আরোহি হঠাৎ এসে এই ব্যক্তিকে গুলি করে৷ মাথার এক পাশে দিয়ে গুলি অন্য পাশে চলে যায়। কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার বিবরণে প্রাথমিকভাবে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যা বলে মনে হচ্ছে। হত্যায় অংশ নেয়ারা পেশাদার খুনি বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরিবারের স্বজনরা বলেছেন রাজনৈতিক এবং নিজ এলাকায় নির্বাচনী প্রতিপক্ষ রয়েছে। এমনকি হত্যার হুমকিও ছিল। ফলে বিভিন্ন কিছু মাথা রেখে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। র্যাব পুলিশের পাশাপাশি তদন্ত করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে বৃহস্পতিবার সকালে কলাতলী এলাকার গোল্ডেন হিল হোটেল নামের একটি আবাসিক প্রতিষ্ঠানে সাবেক কাউন্সিলার গোলাম রব্বানী ও খুলনার সাবেক আরেক কাউন্সিলর শেখ হাসান ইফতেখার টিপুর সাথে রুমি নামের এক নারীসহ হোটেলে উঠেন। পরে হোটেলে আসেন কক্সবাজারের টেকপাড়া এলাকার মেজবাহ হক ভূট্টো নামের আরেক জন। সন্ধ্যার পর ওই নারীকে সঙ্গে নিয়ে গোলাম রব্বানী হোটেল থেকে বের হন। পরে রাত ৯ টার দিকে সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন হোটেল সীগালের সামনে ফুটপাতে অজ্ঞাত দূর্বৃত্তদের গুলিতে মারা যান। ঘটনার পর দুইজন র্যাব হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে সাথে থাকা নারী পলাতক রয়েছেন। তাকে খোঁজা হচ্ছে।
র্যাব ১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, দুইজনকে হেফাজতে নিয়ে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
তিনি বলেন, ঘটনাটি অবহিত হওয়ার পরপরই র্যাবের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পরে রাতে হোটেল গোল্ডেন হিলের কক্ষ থেকে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলার শেখ হাসান ইফতেখারকে এবং নিজবাড়ি থেকে ভূট্টোকে হেফাজতে নেয়া হয়। হত্যার কারণ বের করতে চেষ্টা চলছে।
এদিকে নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের সদস্যদের হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জসিম উদ্দিন চৌধুরী। তিনি জানান, শুক্রবার বিকালে মরদেহ নিয়ে স্বজনরা খুলনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন।