Dhaka ০৩:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আলু পরিচর্যা ও বোরো রোপনে সময় পার করছেন তানোরে কৃষকরা

হাড় কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে রাজশাহীর তানোরে পুরোদমে চলছে আলু পরিচর্যা ও বোরো রোপনের কাজে মহা ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। সূর্য উঠার আগ থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিচর্যা ও বোরো রোপন এবং জমি তেরির কাজ চলছে পুরোদমে। বিলকুমারী বিলে আগাম বোরো চাষ হয়ে থাকে যুগের পর যুগ ধরে। দেশকে খাদ্য নির্ভরতা এনে দিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে থাকেন এই উপজেলার জনসাধারণ। হিমেল হওয়ায় যখন ঘরবন্দী হয়ে থাকেন, কোনভাবেই বের হন না ঘর থেকে। অথচ পা ফাটা কৃষকরা সবকিছু অপেক্ষা করে ফসল উৎপাদনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ঘন কুয়াশা প্রচন্ড ঠান্ডা মৃদু বাতাসের মধ্যে বিলের জমিতে শুরু হয়েছে বোরো রোপনের কাজ। ঠান্ডা পানির মধ্যেই জমি তৈরী করছেন অনেকে। কুয়াশা থেকে বীজ তলা রক্ষার জন্য পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হচ্ছে।

অপর দিকে উপজেলার দিগন্ত মাঠ জুড়ে আলুর সবুজ পাতায় ভরে গেছে। ট্রপ ডেসিং প্রায় শেষ করেছেন চাষীরা। কনকনে ঠান্ডায় গরম কাপড় জড়িয়ে প্রজেক্ট দেখভাল করছেন মৌসুমি চাষীরা। জমিতেই গড়ে তুলেছেন অস্থায়ী থাকার ঘর। ফলে উপজেলার সকল শ্রেণী পেশার মানুষেরা মহা ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে অনেক আলু চাষীরা চিন্তিত। কারন দিনের দিন কমছে আলুর দাম। আবার মরার উপর খাড়ার ঘা দেখা দিয়েছে হিমাগারের অতিরিক্ত ভাড়া।

সরেজমিনে উপজেলার প্রায় মাঠ ঘুরে দেখা যায়, আলুর তরতাজা সবুজ পাতার সমারোহ। তানোর থেকে মুন্ডুমালা রাস্তার দুপাশে, সরনজাই থেকে মোহর, চাপড়া থেকে তালন্দ, বাগের মোড় থেকে চৌবাড়িয়া, হাতিশাইল গ্রাম থেকে কচুয়া, বেলপুকুরিয়া থেকে নায়ারনপুর হয়ে ইলামদহী চাদপুর দিয়ে প্রকাশ নগর, পাঠাকাটা থেকে দূবইল হয়ে কয়েল হাট, যোগীশো থেকে বিনোদপুর যশপুর হয়ে গোবিন্দ পুর, তালন্দ থেকে কলমা হয়ে বিল্লি, কাশেম বাজার থেকে সিধাইড় হয়ে মানিক কন্যা, কালীগঞ্জ থেকে সরনজাই হয়ে মন্ডলপাড়া, চাপড়া হয়ে কালনা, আড়াদিঘিসহ মুল সড়ক এবং গ্রামীন রাস্তার দুপাশে শুধুই আলু আর আলুর চাষাবাদ।

দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞ কৃষক ও শ্রমিক মুনসুর জানান ধানতৈর মাঠে আব্দুল হামেদ ৪০ বিঘা, মাহবুর ১০ বিঘা বজলু ১০ বিঘা আলুর আবাদ করেছেন। তারাসহ প্রায় চাষীর আলুর গাছ ভালো হয়ে আছে। কারন আবহাওয়া এখনো অনুকুলে আছে। কোন রোগবালাই নাই বললেই চলে। তবে আলুর আবাদে কোন মড়ক এলে ছয়লাপ হয়ে পড়ে। কিন্তু অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়। রোগ আশার আগে কীটনাশক ব্যবসায়ী ও বিক্রেতাদের পরামর্শে বেপরোয়া কীটনাশক প্রয়োগ করে। অনেকে আলু মোটাতাজা করতে ট্যাবলেট পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়।

তিনিসহ মোস্তফা নামের আরেক শ্রমিক জানান, চাপড়া ব্রীজের নীচে বিলের ১৮ বিঘা জমিতে বোরো রোপন শেষ করেছেন গারস্থ কৃষক সেকান্দার, আবেদ ৮ বিঘা, বাবুল ১০ বিঘা, গোলাম ১৫ বিঘা ও হাবিবুর ১০ বিঘা বিলের জমিতে রোপন কাজ শেষ করেছেন।

জানা গেছে, উপজেলার কামারগাঁ ইউপির মালশিরা, মাদারিপুর, পারিশো, বাতাসপুর, শ্রীখন্ডা, কামারগা, লবাতলা ব্রীজের দুপারে, তালন্দ, গোকুল, ধানতৈড়,  গুবিরপাড়া, হিন্দুপাড়া, কুঠিপাড়া, গোল্লাপাড়া, আমশো, জিওল, বুরুজ, হাবিব নগর ও চান্দুড়িয়া ইউপি এলাকার বিলের জমিতে আগাম বোরো চাষ হয়ে থাকে। এসব জমি রোপনের জন্য বীজ প্রস্তুত হয়ে গেছে। সেচ নির্ভর বোরো রোপনের জন্য কেউ জমি তৈরী করছেন, আবার কেউ বন্যার কারনে জমে থাকা আবর্জনা পুড়িয়ে এক প্রকার জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করছেন। বিলের জমিতে বোরো চাষে সার কীটনাশক খুব একটা ব্যবহার করা লাগে না। কারন বেশির ভাগ বিলের নিচু জমিতে একটাই ফসল হয়।

বোরো চাষিরা জানান, এক বিঘা জমি তৈরী করতে তিন টা চাষ দিতে হয়, এর জন্য ১৫০০ টাকা চাষ বাবদ খরচ হয়। এছাড়াও ১৫ কেজি ডিএপি, পটাশ ১০ কেজি, রোপনের জন্য ১৮০০ থেকে ২০০০ হাজার, আবার ১৫০০ টাকা দিতে হয় শ্রমিক কে । সেচ খরচ রোপন থেকে উত্তোলন পর্যন্ত নিম্মে ১৫০০ টাকা খরচ হয়। সব মিলে এক বিঘা রোপনের জন্য সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা করে প্রকার ভেদে খরচ হবে।

উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারনে আলুর গাছ তরতাজা হয়ে আছে। বিএসরা সার্বিকভাবে তত্বাবধানে কাজ করছেন। আলুর লক্ষমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ১১৫ হেক্টর। কিন্তু বেড় হয়েছে ১৩ হাজার ৩৬৫ হেক্টর। লক্ষমাত্রার  ২৭০ হেক্টর জমিতে বেশি চাষ হয়েছে। বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা ১৪ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ধরা হয়েছে। রোপনের জন্য ১৯০ হেক্টর জমিতে বীজ তলা তৈরি হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ হেক্টর বিলের জমিতে রোপন হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

আলু পরিচর্যা ও বোরো রোপনে সময় পার করছেন তানোরে কৃষকরা

Update Time : ০৫:৪১:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫

হাড় কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে রাজশাহীর তানোরে পুরোদমে চলছে আলু পরিচর্যা ও বোরো রোপনের কাজে মহা ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। সূর্য উঠার আগ থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিচর্যা ও বোরো রোপন এবং জমি তেরির কাজ চলছে পুরোদমে। বিলকুমারী বিলে আগাম বোরো চাষ হয়ে থাকে যুগের পর যুগ ধরে। দেশকে খাদ্য নির্ভরতা এনে দিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে থাকেন এই উপজেলার জনসাধারণ। হিমেল হওয়ায় যখন ঘরবন্দী হয়ে থাকেন, কোনভাবেই বের হন না ঘর থেকে। অথচ পা ফাটা কৃষকরা সবকিছু অপেক্ষা করে ফসল উৎপাদনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ঘন কুয়াশা প্রচন্ড ঠান্ডা মৃদু বাতাসের মধ্যে বিলের জমিতে শুরু হয়েছে বোরো রোপনের কাজ। ঠান্ডা পানির মধ্যেই জমি তৈরী করছেন অনেকে। কুয়াশা থেকে বীজ তলা রক্ষার জন্য পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হচ্ছে।

অপর দিকে উপজেলার দিগন্ত মাঠ জুড়ে আলুর সবুজ পাতায় ভরে গেছে। ট্রপ ডেসিং প্রায় শেষ করেছেন চাষীরা। কনকনে ঠান্ডায় গরম কাপড় জড়িয়ে প্রজেক্ট দেখভাল করছেন মৌসুমি চাষীরা। জমিতেই গড়ে তুলেছেন অস্থায়ী থাকার ঘর। ফলে উপজেলার সকল শ্রেণী পেশার মানুষেরা মহা ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে অনেক আলু চাষীরা চিন্তিত। কারন দিনের দিন কমছে আলুর দাম। আবার মরার উপর খাড়ার ঘা দেখা দিয়েছে হিমাগারের অতিরিক্ত ভাড়া।

সরেজমিনে উপজেলার প্রায় মাঠ ঘুরে দেখা যায়, আলুর তরতাজা সবুজ পাতার সমারোহ। তানোর থেকে মুন্ডুমালা রাস্তার দুপাশে, সরনজাই থেকে মোহর, চাপড়া থেকে তালন্দ, বাগের মোড় থেকে চৌবাড়িয়া, হাতিশাইল গ্রাম থেকে কচুয়া, বেলপুকুরিয়া থেকে নায়ারনপুর হয়ে ইলামদহী চাদপুর দিয়ে প্রকাশ নগর, পাঠাকাটা থেকে দূবইল হয়ে কয়েল হাট, যোগীশো থেকে বিনোদপুর যশপুর হয়ে গোবিন্দ পুর, তালন্দ থেকে কলমা হয়ে বিল্লি, কাশেম বাজার থেকে সিধাইড় হয়ে মানিক কন্যা, কালীগঞ্জ থেকে সরনজাই হয়ে মন্ডলপাড়া, চাপড়া হয়ে কালনা, আড়াদিঘিসহ মুল সড়ক এবং গ্রামীন রাস্তার দুপাশে শুধুই আলু আর আলুর চাষাবাদ।

দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞ কৃষক ও শ্রমিক মুনসুর জানান ধানতৈর মাঠে আব্দুল হামেদ ৪০ বিঘা, মাহবুর ১০ বিঘা বজলু ১০ বিঘা আলুর আবাদ করেছেন। তারাসহ প্রায় চাষীর আলুর গাছ ভালো হয়ে আছে। কারন আবহাওয়া এখনো অনুকুলে আছে। কোন রোগবালাই নাই বললেই চলে। তবে আলুর আবাদে কোন মড়ক এলে ছয়লাপ হয়ে পড়ে। কিন্তু অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়। রোগ আশার আগে কীটনাশক ব্যবসায়ী ও বিক্রেতাদের পরামর্শে বেপরোয়া কীটনাশক প্রয়োগ করে। অনেকে আলু মোটাতাজা করতে ট্যাবলেট পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়।

তিনিসহ মোস্তফা নামের আরেক শ্রমিক জানান, চাপড়া ব্রীজের নীচে বিলের ১৮ বিঘা জমিতে বোরো রোপন শেষ করেছেন গারস্থ কৃষক সেকান্দার, আবেদ ৮ বিঘা, বাবুল ১০ বিঘা, গোলাম ১৫ বিঘা ও হাবিবুর ১০ বিঘা বিলের জমিতে রোপন কাজ শেষ করেছেন।

জানা গেছে, উপজেলার কামারগাঁ ইউপির মালশিরা, মাদারিপুর, পারিশো, বাতাসপুর, শ্রীখন্ডা, কামারগা, লবাতলা ব্রীজের দুপারে, তালন্দ, গোকুল, ধানতৈড়,  গুবিরপাড়া, হিন্দুপাড়া, কুঠিপাড়া, গোল্লাপাড়া, আমশো, জিওল, বুরুজ, হাবিব নগর ও চান্দুড়িয়া ইউপি এলাকার বিলের জমিতে আগাম বোরো চাষ হয়ে থাকে। এসব জমি রোপনের জন্য বীজ প্রস্তুত হয়ে গেছে। সেচ নির্ভর বোরো রোপনের জন্য কেউ জমি তৈরী করছেন, আবার কেউ বন্যার কারনে জমে থাকা আবর্জনা পুড়িয়ে এক প্রকার জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করছেন। বিলের জমিতে বোরো চাষে সার কীটনাশক খুব একটা ব্যবহার করা লাগে না। কারন বেশির ভাগ বিলের নিচু জমিতে একটাই ফসল হয়।

বোরো চাষিরা জানান, এক বিঘা জমি তৈরী করতে তিন টা চাষ দিতে হয়, এর জন্য ১৫০০ টাকা চাষ বাবদ খরচ হয়। এছাড়াও ১৫ কেজি ডিএপি, পটাশ ১০ কেজি, রোপনের জন্য ১৮০০ থেকে ২০০০ হাজার, আবার ১৫০০ টাকা দিতে হয় শ্রমিক কে । সেচ খরচ রোপন থেকে উত্তোলন পর্যন্ত নিম্মে ১৫০০ টাকা খরচ হয়। সব মিলে এক বিঘা রোপনের জন্য সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা করে প্রকার ভেদে খরচ হবে।

উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারনে আলুর গাছ তরতাজা হয়ে আছে। বিএসরা সার্বিকভাবে তত্বাবধানে কাজ করছেন। আলুর লক্ষমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ১১৫ হেক্টর। কিন্তু বেড় হয়েছে ১৩ হাজার ৩৬৫ হেক্টর। লক্ষমাত্রার  ২৭০ হেক্টর জমিতে বেশি চাষ হয়েছে। বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা ১৪ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ধরা হয়েছে। রোপনের জন্য ১৯০ হেক্টর জমিতে বীজ তলা তৈরি হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ হেক্টর বিলের জমিতে রোপন হয়েছে।