এলাকাটির একদিকে মেঘনা, অন্যদিকে সবুজ বন, মাঝখানে রং বে-রংয়ের কুঁড়ে ঘর আর বাহারী কিসিমের ফলফলাদি গাছের দৃশ্য ভ্রমণ পিপাসুদের হাতছানি দিচ্ছে। এখানকার প্রকৃতির নির্মল বাতাস ও অন্যদিকে মেঘনা নদীর কল-কল শব্দে মন জুড়িয়ে যায় পর্যটকদের। স্থানাটি এখন পর্যটকদের মিলনমেলায় রুপ নিয়েছে। এটি গ্যাস সমৃদ্ধ ভোলার পর্যটনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। বলছিলাম ভোলা সদর উপজেলার তুলাতুলি এলাকায় ইলিশ বাড়ির কথা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ৫ একর জমির ওপর সম্পূর্ণ কাঠ ও গাছগাছালী দিয়ে মেঘনার বুকে নির্মাণ করা এ পর্যটন কেন্দ্রটি, যা এখন সবার নজর কেড়েছে। বেশ কয়েকটি কুঁড়ে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে, বাহারি লাভ পয়েন্ট চারপাশের আলোকসজ্জা আর খুব কাছ থেকে প্রকৃতি দেখার সুযোগ রয়েছে এখানে। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য ছাড়াও মেঘনা নদীতে জেলেদের ইলিশ ধরার দৃশ্য, নদীর উত্তাল ঢেউ, নির্মল বাতাস আর অপরূপ প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখা যাচ্ছে এখানে বসেই। ঘুরতে আসা পর্যটকরা জানালেন, এখানে প্রতৃতির মনোরম দৃশ্য দেখার পাশাপাশি তাজা ইলিশের স্বাদ নেওয়া যায়। এছাড়াও পাওয়া যাচ্ছে দেশি-বিদেশি খাবারও।
ভোলার একঝাঁক তরুণ উদ্যোক্তা ইলিশের সঙ্গে ভোলাকে আরও বেশি পরিচিত করতে মেঘনার তীর কোল ঘেঁষে গড়ে তুলেছেন ইলিশ বাড়ি নামের একটি পর্যটন কেন্দ্র। ২০২২ সালের ১০ জুলাই উদ্বোধনের পরে তেমন সাড়া না জাগলেও ধীরেধীরে এখন এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। যা এখন প্রতিদিনই নজর কাড়ছে পর্যটকদের। দূর-দূরান্ত থেকে ইলিশ বাড়িতে ছুটে আসছেন মানুষ। বিশেষ করে শীতের আগমনী বার্তা আসার সঙ্গে সঙ্গে এখানে যেন ঢল নেমেছে পর্যটকদের। সম্ভাবনাময় এ পর্যটন স্পটটি জেলার পর্যটন শিল্পকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে মনে করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
কথা হয় ইলিশ বাড়ীতে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী গৃহবধূ রাবেয়া বেগম, খায়রুন নেছার সাথে। তারা বলেন, ইলিশ বাড়ী পর্যটন স্পটটি স্যোসাল মিডিয়ার মাধ্যমে আগেই দেখেছি, আজ বাস্তবে দেখতে এসে অভিভূত হলাম। একদিকে প্রকৃতি, অন্যদিকে মেঘনা নদীর ঢেউয়ের সাথে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য দর্শনার্থীদের মন আকৃষ্ট করবে। ইলিশ বাড়ীটি আসলেই দেখতে অনেক সুন্দর।
কথা হয় খুলনার পর্যটক আতাউর রহমান ঢালির সঙ্গে। তিনি জানালেন, ভোলার অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মত এটিও অনেক সুন্দর। কিন্তু কিছুটা আলাদা। এক স্থানে বসেই সব কিছুর দেখা মেলে। বরিশাল থেকে এখানে স্ব-পরিবারে ঘুরতে আসা দর্শণার্থী গৃহিনী আয়শা বেগম বলেন, সু-বিশাল মেঘনা নদীর পাড়ে এতো সুন্দর ও মনোরম দৃশ্যময় পর্যটন স্পট দক্ষিণের জনপদে খুবই বিরল।
ইলিশ বাড়ির উদ্যোক্তা এম হেলাল উদ্দিন বলেন, ইলিশ বাড়ি চালু হওয়ার পর থেকে আমরা পর্যটকদের অনেক সাড়া পাচ্ছি। দিন যতই যাচ্ছে দর্শকদের সাড়া পাচ্ছি। তাই ইলিশ বাড়ীকে আরো আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।
ইলিশ বাড়ির উদ্যোক্তারা জানালেন, শুধু সৌন্দর্য উপভোগ নয়, একই সঙ্গে তাজা ইলিশ ফ্রাইসহ দেশি-বিদেশি নানা খাবারের ব্যবস্থাও রয়েছে পর্যটকদের জন্য। জেলার অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রগুলোর পাশাপাশি দর্শণীয় স্থান ইলিশ বাড়ি পর্যটকদের জন্য বাড়তি ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করছেন এ শিল্পে সংশ্লিষ্টরা।
পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় ইলিশ বাড়িসহ জেলার সব পর্যটন কেন্দ্রে পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জেরদার করা হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রয়েছে পুলিশের নজরদারি। ভোলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরীফুল হক বলেন, জেলার গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। দর্শনার্থীরা যাতে নিরাপদে ঘোরাফেরা করতে পারে সেজন্য নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। রয়েছে গোয়েন্দা নজরদারিও।