গাজীপুরের কালিয়াকৈরে স্কুলে ঢুকে শিক্ষকসহ যুবদল নেতাকে মারধরের ঘটনায় থানা একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই শিক্ষকের স্ত্রী সিফাত-ই মনোয়ার বাদী হয়ে কালিয়াকৈর থানায় এ মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়াও এ ঘটনাসহ নানা অভিযোগে জেলা যুবদলের অভিযুক্ত নেতাকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় যুবদল। তবে একই অপরাধ করেও সোমবার পর্যন্ত এখনো ছাত্রদল নেতা বহালে থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারসহ নানা মহলের লোকজন।
এলাকাবাসী, ভুক্তভোগী পরিবার ও পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় গত রোববার সকালে বঙ্গবন্ধু সরকারি হাই স্কুলের অফিসকক্ষে মোহাম্মদ বসির উদ্দিন ও প্রধান শিক্ষক আনন্দ কুমার সাহা গল্প করছিলেন। এ সময় কালিয়াকৈর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রিপন আহম্মেদ, যুবদল কর্মী রাকিব হাসানসহ কয়েকজন ওই স্কুলে প্রবেশ করে। পরে সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ বসির উদ্দিনকে জোর করে টেনেহেচড়ে স্কুলের প্রধান ফটকে নিয়ে যান।
সেখানে গাজীপুর জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদুল ইসলাম রনির নেতৃত্বে তারা ১০-১২ জন মিলে লাঠিসোটা দিয়ে ওই শিক্ষককে এলোপাতাড়ি মারধর করে। এ সময় স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রিজভী আহাম্মেদ রাজীব দেখতে পেয়ে ওই শিক্ষককে রক্ষা করতে গেলে তাকেও এলোপাতাড়ি পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেন ওই হামলাকারীরা। পরে আশপাশের লোকজন তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। ওই ঘটনায় রাতেই শিক্ষক বশির উদ্দিনের স্ত্রী সিফাত-ই মনোয়ার বাদী হয়ে কালিয়াকৈর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৭-৮ জনকে আসামি করা হয়। এর আগে শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে আটাবহ ইউনিয়ন যুবদল নেতা আল মামুন উপজেলার চন্দ্রা এলাকায় নর্দান ও নর্ভান ফ্যাক্টরীর সামনে পৌছলে ওই যুবদল নেতার নির্দেশে ছাত্রদল নেতা রিপন ও রাকিবসহ ৭-৮ জন লোক তার গতিরোধ করে। এসময় তারা মামুনের কাছে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে।
ওই চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে হামলা চালিয়ে তাকে এলোপাথারি মারধর করে। পরে তাকে খুন জখমের হুমকী দিয়ে চলে যায় হামলাকারীরা। ওই ঘটনায় যুবদল নেতা আল মামুন বাদী হয়ে কালিয়াকৈর থানায় ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের কমিটির কাছে অভিযোগ করেন।
এসব ঘটনায় রোববার রাতেই জেলা যুবদলের যুগ্ন আহ্বায়ক রাশেদুল ইসলাম রনিকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত ও পত্রে লেখা হয়েছে, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগে গাজীপুর জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদুল ইসলাম রনিকে প্রাথমিক সদস্য পদ সহ দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বহিষ্কৃত নেতৃবৃন্দের কোন ধরণের অপকর্মের দায়-দায়িত্ব দল নিবে না। যুবদলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের তাদের সাথে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। অপরদিকে ওই যুবদল নেতা রনিকে বহিষ্কার করা হলেও সোমবার বিকেল পর্যন্ত ছাত্রদল নেতা রিপন ও যুবদল কর্মী রাকিব এখনো বহাল রয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারসহ নানা মহলের লোকজন। তবে তারা অতিদ্রুত শিক্ষকের উপর হামলাকারী মামলার আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবী জানিয়েছেন।
এব্যাপারে গাজীপুর জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আতাউর রহমান জানান, তাৎক্ষণিকভাবে দলের সিদ্ধান্তে রাশেদুল ইসলাম রনিকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে অন্যদের বিরুদ্ধেও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কালিয়াকৈর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জামিল হোসেন জানান, শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে। অপরদিকে এসআই অনুপ কুমার অধিকারী জানান, যুবদল নেতা মামুনের উপর হামলার অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত চলছে। তবে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।