Dhaka ০৩:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুনামগঞ্জে চোরাকারবারীরা অধরা: কোটি টাকার মালামাল জব্দ

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও বিশ^ম্ভরপুর উপজেলা সীমান্ত চোরাকারবারীদের দাপট দিনদিন বেড়েই চলেছে। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকার পরও চোরাকারবারীরা সোর্স পরিচয় দিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিন দল বেঁধে কোটিকোটি টাকার মালামাল পাচাঁরের পর বিজিবি, পুলিশ ও সাংবাদিকদের নাম ভাংগিয়ে করছে চাঁদাবাজি। তারপরও সীমান্তের চিহ্নিত চোরাকারবারীদের গ্রেফতারের জন্য জোড়ালো কোন পদক্ষেপ নেওয়ার খবর পাওয়া যায়না। তবে বিজিবি ৪টি যানবাহনসহ কোটি টাকার মালামাল জব্দ করেছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- প্রতিদিনের মতো আজ সোমবার (২০ জানুয়ারী) ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে লাউড়গড় সীমান্তে ১২০৩এর ৩এস পিলার সংলগ্ন সাহিদাবাদ বিজিবি পোষ্টের সামনে দিয়ে ভারতের ৩/৪গজ ভারতের ভিতর থেকে ৪/৫শ লোক দিয়ে কয়লা ও পাথর পাচাঁর শুরু করে স্থানীয় প্রভাবশালী চোরাকারবারীরা। পরে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাচাঁরকৃত কয়লা ১৫/২০টা মোটর সাইকেল ও পাথর ৫০/৬০টা ঠেলাগাড়ি দিয়ে পরিবহণ করে বিজিবি ক্যাম্পের সামনের রাস্তা দিয়ে লাউড়গড় বাজারের চারপাশে মজুত করে ওপেন বিক্রি করা হলেও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে এই সীমান্তের সাহিদাবাদ বর্ডার বাজার, দশঘর ও পুরান লাউড় এলাকা দিয়ে সোর্স বাহিনীর পাচাঁরকৃত প্রায় কোটি টাকার ফুছকা ও চিনিসহ বিভিন্ন মালামাল পৃথক অভিযান চালিয়ে ৩বারে বিজিবি জব্দ করার পর, সোর্স বাহিনীর সিন্ডিকেড ২ ভাগে বিভক্ত হয়ে আবারো মালামাল পাচাঁর শুরু হয়েছে। এই সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান করতে দিয়ে বিএসএফের তাড়া খেয়ে নদীতে ডুবেসহ বিভিন্ন ভাবে এপর্যন্ত শতাধিক লোকের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে চারাগাঁও সীমান্তে জংগলবাড়ি, কলাগাঁও মাইজহাটি, এলসি পয়েন্ট, বাঁশতলা ও লালঘাট এলাকা দিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাচাঁরকৃত শতশত মেঃটন কয়লা শুল্কস্টেশনে ১০/১৫টি ডিপুতে ও সোর্স পরিচয়ধারীদের বাড়িতে মজুত করে বিক্রি করাসহ এই সীমান্তে দিয়ে মদ ও ইয়াবা ওপেন বিক্রি করছে সোর্স পরিচয়ধারী একাধিক মামলার আসামীরা। একই ভাবে কয়লা ও মাদক পাচাঁর হচ্ছে টেকেরঘাট ও  বালিয়াঘাট সীমান্তে দিয়ে। এই দুই সীমান্তে দিয়ে কয়লা ও চুনাপাথর পাচাঁর করতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে ও চোরাই কয়লার গুহায় মাটি চাপা পড়ে এপর্যন্ত অর্ধশতাধিক লোকের মৃত্যু হয়েছে।

অন্যদিকে প্রতিদিনের মতো গতকাল রবিবার (১৯ জানুয়ারী) বিকাল ৪টার পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাশের চাঁনপুর সীমান্তের বারেকটিলার আনন্দপুর, কড়ইগড়া ও রাজাই এলাকা দিয়ে সোর্স পরিচয়ধারী চিহ্নিত চোরাকারবারীরা ভারত থেকে দল বেঁধে ফুছকা, চিনি, জিরা, কম্বল, মদ ও নাসির উদ্দিন বিড়ি পাচাঁর করে মোটর সাইকেল ও অটো রিক্সা বোঝাই করে মাহারাম নদীর রাস্তা দিয়ে শিমুলবাগন হয়ে বাদাঘাট বাজার, বারহাল, কামড়াবন্দ ও শিমুলতলা গ্রামসহ আরো একাধিক স্থানে নিয়ে ওপেন মজুত করে। এরপর রাত সাড়ে ৯টা থেকে একই ভাবে ভারত থেকে মালামাল পাচাঁর শুরু হয় এবং আজ সোমবার (২০ জানুয়ারী) সকাল ৮টা পর্যন্ত এই পাচাঁর বাণিজ্য চলে জমজমাট ভাবে। এই ভাবে গত ৭দিনে প্রায় সাড়ে ৩কোটি টাকার মালামাল পাচাঁর হয়েছে বলে জানাগেছে। এই সীমান্ত দিয়ে কয়লা, অস্ত্র ও মাদক পাচাঁর করতে গিয়ে এপর্যন্ত ১৫জনের মৃত্যু হয়েছে নানান ভাবে।

এদিকে আজ সোমবার (২০ জানুয়ারী) ভোর রাত থেকে জেলার বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার ডলুরা, চিনাকান্দি, মাছিমপুর সীমান্ত দিয়ে সোর্স পরিচয়ধারী চোরাকারবারীরা দল বেঁধে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে বিভিন্ন মালামাল পাচাঁর শুরু করে। এই খবর পেয়ে সীমান্তের ছাতার কোনা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪টি পিকআপ ভর্তি ১০হাজার ৪৯৪ কেজি চিনি, ৯ হাজার ৯২০ প্যাকেট বিড়ি ও ৯২ কেজি জিরা জব্দসহ পিকআপগুলো আটক করা হয়। কিন্তু কোন চোরাকারবারীদের আটক করতে পারেনি বিজিবি। আটককৃত এসব মালামালের সিজার মূল্য প্রায় ১ কোটি ১৭হাজার টাকা বলে জানা গেছে।

এব্যাপারে সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক একেএম জাকারিয়া কাদির সাংবাদিকদের জানান-সীমান্ত এলাকায় কঠোর নজরদারি রয়েছে,আটককৃত পন্য সামগ্রী শুল্ক কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

সুনামগঞ্জে চোরাকারবারীরা অধরা: কোটি টাকার মালামাল জব্দ

Update Time : ১০:০৩:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও বিশ^ম্ভরপুর উপজেলা সীমান্ত চোরাকারবারীদের দাপট দিনদিন বেড়েই চলেছে। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকার পরও চোরাকারবারীরা সোর্স পরিচয় দিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিন দল বেঁধে কোটিকোটি টাকার মালামাল পাচাঁরের পর বিজিবি, পুলিশ ও সাংবাদিকদের নাম ভাংগিয়ে করছে চাঁদাবাজি। তারপরও সীমান্তের চিহ্নিত চোরাকারবারীদের গ্রেফতারের জন্য জোড়ালো কোন পদক্ষেপ নেওয়ার খবর পাওয়া যায়না। তবে বিজিবি ৪টি যানবাহনসহ কোটি টাকার মালামাল জব্দ করেছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- প্রতিদিনের মতো আজ সোমবার (২০ জানুয়ারী) ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে লাউড়গড় সীমান্তে ১২০৩এর ৩এস পিলার সংলগ্ন সাহিদাবাদ বিজিবি পোষ্টের সামনে দিয়ে ভারতের ৩/৪গজ ভারতের ভিতর থেকে ৪/৫শ লোক দিয়ে কয়লা ও পাথর পাচাঁর শুরু করে স্থানীয় প্রভাবশালী চোরাকারবারীরা। পরে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাচাঁরকৃত কয়লা ১৫/২০টা মোটর সাইকেল ও পাথর ৫০/৬০টা ঠেলাগাড়ি দিয়ে পরিবহণ করে বিজিবি ক্যাম্পের সামনের রাস্তা দিয়ে লাউড়গড় বাজারের চারপাশে মজুত করে ওপেন বিক্রি করা হলেও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে এই সীমান্তের সাহিদাবাদ বর্ডার বাজার, দশঘর ও পুরান লাউড় এলাকা দিয়ে সোর্স বাহিনীর পাচাঁরকৃত প্রায় কোটি টাকার ফুছকা ও চিনিসহ বিভিন্ন মালামাল পৃথক অভিযান চালিয়ে ৩বারে বিজিবি জব্দ করার পর, সোর্স বাহিনীর সিন্ডিকেড ২ ভাগে বিভক্ত হয়ে আবারো মালামাল পাচাঁর শুরু হয়েছে। এই সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান করতে দিয়ে বিএসএফের তাড়া খেয়ে নদীতে ডুবেসহ বিভিন্ন ভাবে এপর্যন্ত শতাধিক লোকের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে চারাগাঁও সীমান্তে জংগলবাড়ি, কলাগাঁও মাইজহাটি, এলসি পয়েন্ট, বাঁশতলা ও লালঘাট এলাকা দিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাচাঁরকৃত শতশত মেঃটন কয়লা শুল্কস্টেশনে ১০/১৫টি ডিপুতে ও সোর্স পরিচয়ধারীদের বাড়িতে মজুত করে বিক্রি করাসহ এই সীমান্তে দিয়ে মদ ও ইয়াবা ওপেন বিক্রি করছে সোর্স পরিচয়ধারী একাধিক মামলার আসামীরা। একই ভাবে কয়লা ও মাদক পাচাঁর হচ্ছে টেকেরঘাট ও  বালিয়াঘাট সীমান্তে দিয়ে। এই দুই সীমান্তে দিয়ে কয়লা ও চুনাপাথর পাচাঁর করতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে ও চোরাই কয়লার গুহায় মাটি চাপা পড়ে এপর্যন্ত অর্ধশতাধিক লোকের মৃত্যু হয়েছে।

অন্যদিকে প্রতিদিনের মতো গতকাল রবিবার (১৯ জানুয়ারী) বিকাল ৪টার পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাশের চাঁনপুর সীমান্তের বারেকটিলার আনন্দপুর, কড়ইগড়া ও রাজাই এলাকা দিয়ে সোর্স পরিচয়ধারী চিহ্নিত চোরাকারবারীরা ভারত থেকে দল বেঁধে ফুছকা, চিনি, জিরা, কম্বল, মদ ও নাসির উদ্দিন বিড়ি পাচাঁর করে মোটর সাইকেল ও অটো রিক্সা বোঝাই করে মাহারাম নদীর রাস্তা দিয়ে শিমুলবাগন হয়ে বাদাঘাট বাজার, বারহাল, কামড়াবন্দ ও শিমুলতলা গ্রামসহ আরো একাধিক স্থানে নিয়ে ওপেন মজুত করে। এরপর রাত সাড়ে ৯টা থেকে একই ভাবে ভারত থেকে মালামাল পাচাঁর শুরু হয় এবং আজ সোমবার (২০ জানুয়ারী) সকাল ৮টা পর্যন্ত এই পাচাঁর বাণিজ্য চলে জমজমাট ভাবে। এই ভাবে গত ৭দিনে প্রায় সাড়ে ৩কোটি টাকার মালামাল পাচাঁর হয়েছে বলে জানাগেছে। এই সীমান্ত দিয়ে কয়লা, অস্ত্র ও মাদক পাচাঁর করতে গিয়ে এপর্যন্ত ১৫জনের মৃত্যু হয়েছে নানান ভাবে।

এদিকে আজ সোমবার (২০ জানুয়ারী) ভোর রাত থেকে জেলার বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার ডলুরা, চিনাকান্দি, মাছিমপুর সীমান্ত দিয়ে সোর্স পরিচয়ধারী চোরাকারবারীরা দল বেঁধে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে বিভিন্ন মালামাল পাচাঁর শুরু করে। এই খবর পেয়ে সীমান্তের ছাতার কোনা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪টি পিকআপ ভর্তি ১০হাজার ৪৯৪ কেজি চিনি, ৯ হাজার ৯২০ প্যাকেট বিড়ি ও ৯২ কেজি জিরা জব্দসহ পিকআপগুলো আটক করা হয়। কিন্তু কোন চোরাকারবারীদের আটক করতে পারেনি বিজিবি। আটককৃত এসব মালামালের সিজার মূল্য প্রায় ১ কোটি ১৭হাজার টাকা বলে জানা গেছে।

এব্যাপারে সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক একেএম জাকারিয়া কাদির সাংবাদিকদের জানান-সীমান্ত এলাকায় কঠোর নজরদারি রয়েছে,আটককৃত পন্য সামগ্রী শুল্ক কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।