Dhaka ০২:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ডিম পাড়তে এসে উপকূলে মারা যাচ্ছে মা কাছিম

কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে ডিম পাড়তে এসে একের পর এক মারা যাচ্ছে সামুদ্রিক কাছিম। বালিয়াড়িতে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকা প্রতিটি কাছিমের পেটে রয়েছে ডিম। একই সঙ্গে গায়ে রয়েছে আঘাতের চিহ্ন। কাছিমের ডিম সংরক্ষণকারিদের দাবি, উপকূলে ডিম পাড়তে এসে জেলেদের জালে আটকা পড়ে কিংবা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে যাচ্ছে সামুদ্রিক কাছিম। মাত্র দু’সপ্তাহে মারা গেছে ৫০টির বেশি কাছিম।সরেজমিন উখিয়ার সোনারপাড়া সমুদ্র উপকূলে দেখা যায়, সৈকতের বালিয়াড়িতে পড়ে রয়েছে মৃত সামুদ্রিক কাছিম। তাও আবার একটি-দুটি নয়; এই সৈকতে একদিনেই দেখা যায় ৫টি মৃত কাছিম বালিয়াড়িতে পড়ে রয়েছে। এসব মৃত কাছিমের সব ক’টির পেটে রয়েছে ডিম যা বালিয়াড়িতেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।

আর কাছিমের সামনে ও পিছনের ফ্লিপারগুলো ছিল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। বিশেষ করে, কাছিমের গায়ে রয়েছে আঘাতের চিহ্ন।সোনারপাড়া সৈকতের জেলে ছবুর বলেন, গত কিছু দিন ধরে দেখছি সাগর থেকে ভেসে আসছে কাছিম। কি জন্য মারা যাচ্ছে সেটা জানি না। মৃত ভেসে আসার পর দেখেছি গায়ে ক্ষত রয়েছে।আরেক জেলে রশিদ আহমদ বলেন, প্রতিদিনই দুই-তিনটা করে কাছিম উঠছে। সব কাছিমের মধ্যে ডিম আছে। আর বালিয়াড়িতে মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে, অনেক সময় কুকুরে কামড়ে কামড়ে খাচ্ছে এটাও দেখা যাচ্ছে।কক্সবাজার সমুদ্র উপকূল দিয়ে প্রতিদিনই সাগরে মাছ শিকারে যায় শত শত ট্রলার। কাছিমের ডিম সংরক্ষণকারিদের দাবি, জেলেদের জালে আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে উপকূলে ডিম পাড়তে আসা সামুদ্রিক কাছিম।

প্রতিদিনই বালিয়াড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে ৩টি থেকে ৫টি কাছিম।ইনানী সৈকতের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইয়াছিন বলেন, ইনানি বীচ-এ ব্যবসা করি। এখানে গত দশ দিনের মধ্যে কাছিম ১০ থেকে ১৫ টা মতো মৃত কাছিম দেখেছি বালিয়াড়িতে পড়ে রয়েছে। সে কাছিমগুলোর পেটে ডিম ছিলো।সোনারপাড়ার কাছিমের ডিম সংরক্ষণকারি নবী হোসেন বলেন, এবছর ডিম পারার জন্য যতগুলো কাছিম কিনারায় আসছে এগুলো জালে আটকা পরছে। জালে যখন আটকে যায়, জেলেরা তখন পা ভেঙ্গে দেয় বা কেটে দেয়। কিনারায় যে কাছিমগুলো আমরা দেখছি কুকুরে খাওয়ার সময় সব কাছিমের মধ্যে ডিম আছে। প্রতিটি কাছিমে একশো বা দেড়শো ডিম রয়েছে।নবী হোসেন আরও বলেন, “কথায় আছে, ডাবে আছে মিঠা পানি, আল্লাহ তাআলার মেহেরবানি। এরকম যদি কাছিম মারা যায় আমাদের দেশের সম্পদ কমে যাবে। কারণ কোনো প্রাণী সাগরের জেলিফিশ খেতে পারে না, শুধুমাত্র কাছিমই খেতে পারে। এই পর্যন্ত ২০ টার মতো মৃত কাছিম ভেসে উঠেছে।

সৈকতের উত্তর সোনাপাড়া, মংগারটেক থেকে ইনানি বিচের আগে পর্যন্ত সব এসেছে মৃত কাছিম।কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলের দরিয়ানগর, হিমছড়ি, সোনারপাড়া, প্যাঁচারদ্বীপ, ইনানী, পাতুয়ারটেক ও সোনাদিয়া সৈকতে মৃত কাছিম ভেসে আসছে বেশি। প্রতিটি কাছিমই মা কাছিম এবং যা ডিম পাড়তে উপকূলে বালিয়াড়িতে আসতে গিয়ে মৃত্যু হচ্ছে। তবে কাছিমের ডিম পাড়ার স্থানগুলো নিরাপদ জোন করার দাবি পরিবেশবাদি সংগঠনগুলো।বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন কক্সবাজার জেলার সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ কলিম বলেন, কাছিম প্রতিবছর একটা নির্দিষ্ট স্থানে এসে ডিম পাড়ে। কিন্তু আমরা দেখেছি বিভিন্ন এনজিও এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান কাছিমের ডিম পাড়ার স্থানে বলে, অভয়ারণ্য বলে ফান্ডের টাকা লুটপাট করছে। কিন্তু এতে কাছিমের কোনো উপকার হচ্ছে না। আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে কাছিমের মরদেহ পড়ে রয়েছে। প্রতিটি কাছিমের মধ্যে ডিম রয়েছে। তাদের ডিম পাড়ার স্থান যদি আমরা নিরাপদ করতে না পারি এবং তাদের নির্দিষ্ট জায়গা যেখানে তারা এসে প্রতিবছর ডিম পাড়ে ওই জায়গাটা যদি আমরা কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে বা একটি নিরাপদ জোন ঘোষনা করতে না পারি তাহলে এভাবে প্রতিবছর কাছিম মারা যাবে।করিম উল্লাহ কলিম আরও বলেন, সমুদ্র সৈকতের কিছু এলাকা কাছিমের জন্য অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হোক। যাতে মানুষসহ অন্য কোনো প্রাণী সেখানে প্রবেশ করতে না পারে। সামুদ্রিক কাছিম রক্ষায় সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।কাছিম নিয়ে কাজ করা সংস্থা নেকম জানিয়েছে, গেল একমাসে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে জীবিত ১০টি কাছিম থেকে সংগ্রহ করা হয় ১ হাজার ৭’শো ১০টি ডিম। আর গেল বছর কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে মারা যায় ১১০টিরও বেশি কাছিম।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ডিম পাড়তে এসে উপকূলে মারা যাচ্ছে মা কাছিম

Update Time : ১২:৪০:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫

কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে ডিম পাড়তে এসে একের পর এক মারা যাচ্ছে সামুদ্রিক কাছিম। বালিয়াড়িতে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকা প্রতিটি কাছিমের পেটে রয়েছে ডিম। একই সঙ্গে গায়ে রয়েছে আঘাতের চিহ্ন। কাছিমের ডিম সংরক্ষণকারিদের দাবি, উপকূলে ডিম পাড়তে এসে জেলেদের জালে আটকা পড়ে কিংবা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে যাচ্ছে সামুদ্রিক কাছিম। মাত্র দু’সপ্তাহে মারা গেছে ৫০টির বেশি কাছিম।সরেজমিন উখিয়ার সোনারপাড়া সমুদ্র উপকূলে দেখা যায়, সৈকতের বালিয়াড়িতে পড়ে রয়েছে মৃত সামুদ্রিক কাছিম। তাও আবার একটি-দুটি নয়; এই সৈকতে একদিনেই দেখা যায় ৫টি মৃত কাছিম বালিয়াড়িতে পড়ে রয়েছে। এসব মৃত কাছিমের সব ক’টির পেটে রয়েছে ডিম যা বালিয়াড়িতেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।

আর কাছিমের সামনে ও পিছনের ফ্লিপারগুলো ছিল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। বিশেষ করে, কাছিমের গায়ে রয়েছে আঘাতের চিহ্ন।সোনারপাড়া সৈকতের জেলে ছবুর বলেন, গত কিছু দিন ধরে দেখছি সাগর থেকে ভেসে আসছে কাছিম। কি জন্য মারা যাচ্ছে সেটা জানি না। মৃত ভেসে আসার পর দেখেছি গায়ে ক্ষত রয়েছে।আরেক জেলে রশিদ আহমদ বলেন, প্রতিদিনই দুই-তিনটা করে কাছিম উঠছে। সব কাছিমের মধ্যে ডিম আছে। আর বালিয়াড়িতে মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে, অনেক সময় কুকুরে কামড়ে কামড়ে খাচ্ছে এটাও দেখা যাচ্ছে।কক্সবাজার সমুদ্র উপকূল দিয়ে প্রতিদিনই সাগরে মাছ শিকারে যায় শত শত ট্রলার। কাছিমের ডিম সংরক্ষণকারিদের দাবি, জেলেদের জালে আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে উপকূলে ডিম পাড়তে আসা সামুদ্রিক কাছিম।

প্রতিদিনই বালিয়াড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে ৩টি থেকে ৫টি কাছিম।ইনানী সৈকতের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইয়াছিন বলেন, ইনানি বীচ-এ ব্যবসা করি। এখানে গত দশ দিনের মধ্যে কাছিম ১০ থেকে ১৫ টা মতো মৃত কাছিম দেখেছি বালিয়াড়িতে পড়ে রয়েছে। সে কাছিমগুলোর পেটে ডিম ছিলো।সোনারপাড়ার কাছিমের ডিম সংরক্ষণকারি নবী হোসেন বলেন, এবছর ডিম পারার জন্য যতগুলো কাছিম কিনারায় আসছে এগুলো জালে আটকা পরছে। জালে যখন আটকে যায়, জেলেরা তখন পা ভেঙ্গে দেয় বা কেটে দেয়। কিনারায় যে কাছিমগুলো আমরা দেখছি কুকুরে খাওয়ার সময় সব কাছিমের মধ্যে ডিম আছে। প্রতিটি কাছিমে একশো বা দেড়শো ডিম রয়েছে।নবী হোসেন আরও বলেন, “কথায় আছে, ডাবে আছে মিঠা পানি, আল্লাহ তাআলার মেহেরবানি। এরকম যদি কাছিম মারা যায় আমাদের দেশের সম্পদ কমে যাবে। কারণ কোনো প্রাণী সাগরের জেলিফিশ খেতে পারে না, শুধুমাত্র কাছিমই খেতে পারে। এই পর্যন্ত ২০ টার মতো মৃত কাছিম ভেসে উঠেছে।

সৈকতের উত্তর সোনাপাড়া, মংগারটেক থেকে ইনানি বিচের আগে পর্যন্ত সব এসেছে মৃত কাছিম।কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলের দরিয়ানগর, হিমছড়ি, সোনারপাড়া, প্যাঁচারদ্বীপ, ইনানী, পাতুয়ারটেক ও সোনাদিয়া সৈকতে মৃত কাছিম ভেসে আসছে বেশি। প্রতিটি কাছিমই মা কাছিম এবং যা ডিম পাড়তে উপকূলে বালিয়াড়িতে আসতে গিয়ে মৃত্যু হচ্ছে। তবে কাছিমের ডিম পাড়ার স্থানগুলো নিরাপদ জোন করার দাবি পরিবেশবাদি সংগঠনগুলো।বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন কক্সবাজার জেলার সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ কলিম বলেন, কাছিম প্রতিবছর একটা নির্দিষ্ট স্থানে এসে ডিম পাড়ে। কিন্তু আমরা দেখেছি বিভিন্ন এনজিও এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান কাছিমের ডিম পাড়ার স্থানে বলে, অভয়ারণ্য বলে ফান্ডের টাকা লুটপাট করছে। কিন্তু এতে কাছিমের কোনো উপকার হচ্ছে না। আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে কাছিমের মরদেহ পড়ে রয়েছে। প্রতিটি কাছিমের মধ্যে ডিম রয়েছে। তাদের ডিম পাড়ার স্থান যদি আমরা নিরাপদ করতে না পারি এবং তাদের নির্দিষ্ট জায়গা যেখানে তারা এসে প্রতিবছর ডিম পাড়ে ওই জায়গাটা যদি আমরা কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে বা একটি নিরাপদ জোন ঘোষনা করতে না পারি তাহলে এভাবে প্রতিবছর কাছিম মারা যাবে।করিম উল্লাহ কলিম আরও বলেন, সমুদ্র সৈকতের কিছু এলাকা কাছিমের জন্য অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হোক। যাতে মানুষসহ অন্য কোনো প্রাণী সেখানে প্রবেশ করতে না পারে। সামুদ্রিক কাছিম রক্ষায় সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।কাছিম নিয়ে কাজ করা সংস্থা নেকম জানিয়েছে, গেল একমাসে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে জীবিত ১০টি কাছিম থেকে সংগ্রহ করা হয় ১ হাজার ৭’শো ১০টি ডিম। আর গেল বছর কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে মারা যায় ১১০টিরও বেশি কাছিম।