সৈয়দপুর শহরে স্থাপিত ও প্রতিষ্ঠিত সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ। যার পূর্ব নাম ছিল সৈয়দপুর সরকারি কারিগরী মহাবিদ্যালয়। ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে সরকারী কারিগরী মহাবিদ্যালয় থেকে নাম করন করা হয় সরকারি বিজ্ঞান কলেজ। এই কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিবছরই ভর্তি পরিক্ষায় অংশ নিয়ে নামি-দামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পেয়েছেন। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৪/২০২৫ সেসনে সরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস এ ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন ৫৩ জন শিক্ষার্থী। এই সাফল্য এবারই প্রথম নয়। ২০১৭ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি এমন সাফল্য অব্যাহত রেখেছে।এর আগে ২০২৩ সালে সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন ৪২ জন, আর বুয়েটে চান্স পেয়েছেন, ৮ জন শিক্ষার্থী। ২০২২ সালে ৩৬ জন মেডিকেলে এবং বুয়েটে ১৪ জন, ২০২১ সালে ৪৫ জন মেডিকেলে এবং বুয়েটে ১৪ জন। ২০২০ সালে ৪০ জন মেডিকেলে এবং বুয়েটে ১৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। ২০১৯ সালে ৩৮ জন মেডিকেলে এবং বুয়েটে ৬ জন, ২০১৮ সালে মেডিকেলে ৩৬ জন ও বুয়েটে ১১ জন চান্স পেয়েছেন। ২০১৭ সালে ৩৯ জন শিক্ষার্থী মেডিকেলে ও বুয়েটে চান্স পেয়েছেন ৯ জন শিক্ষার্থী।
সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের দীর্ঘদিনের সাফল্যের কারণ জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমাদের এই প্রতিষ্ঠানে রয়েছে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ, শিক্ষকদের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ, সুদক্ষ মনিটরিং, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা আর অভিভাবকদের সাধনাই প্রতিষ্ঠানের ধারাবাহিক সাফল্যের কারণ। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতির বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়। আমরা প্রতি দুই মাস পরপর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিয়ে থাকি। এই পরীক্ষায় কেউ খারাপ করলে তার বাড়তি কেয়ার নেওয়া হয়। ক্লাস সময়ের বাইরেও ওইসব শিক্ষার্থীদের সময় দেন শিক্ষকরা। এখানে শিক্ষার্থীদের ওপর জোর করে পড়াশোনা চাপিয়ে দেওয়া হয় না; বরং পড়াশোনা যেন শিক্ষার্থীদের কাছে আনন্দদায়ক হয়, সেদিকে বেশি নজর দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, আমরা ক্লাসেই শিক্ষার্থীদের এমন ভাবে বুঝিয়ে দেই যেন তাদের অনত্র প্রাইভেট পড়তে না হয়। এক বিষয়ে আন্তরিকতার সাথে বারবার বুঝানোর ফলেই অপারক শিক্ষার্থীরাও মেধাবী হয়ে উঠে।
অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ আরো বলেন, আমরা প্রতিটি পরীক্ষার আগে অভিভাবকদের সঙ্গে বাধ্যতামূলক একটি বৈঠকের আয়োজন করি। ওই বৈঠকে অভিভাবকদের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার আগে কীভাবে যত্ন নিতে হবে, শিক্ষার্থীদের খাওয়াদাওয়ার বিষয়ে দিকনির্দেশনা, শিক্ষার্থীদের শাসন না করে ভালোবাসা ও বন্ধুত্বমূলক আচরণ করার পরামর্শ দেই। এর ফলে শুধু মেডিকেল বা বুয়েটই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ঢাবি) বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে থাকেন।
কলেজ সূত্র জানায়, ১৯৬৪ সালে দেশের চারটি শিল্পাঞ্চলে টেকনিক্যাল স্কুল গড়ে ওঠে। এগুলোর মধ্যে একটি সৈয়দপুর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল। পরে ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি কলেজে উন্নীত করে নাম দেওয়া হয় সৈয়দপুর সরকারি টেকনিক্যাল কলেজ। ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর নাম পরিবর্তন করে সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ নামকরণ করে। কলেজটিতে কেবল বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে বলে জানা যায়।
এ ব্যাপারে সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব গফুর সরকার বলেন, সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ শুধু সৈয়দপুরে নয়, সারা দেশে সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ভালো ফলাফল পেতে এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য সারা দেশের ছেলেমেয়েরা প্রতিযোগিতা করে। তিনি বলেন, ‘শিক্ষক সংকটসহ অন্য যেসব সমস্যা আছে সেগুলো সমাধানের জন্য এই মুহূর্তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দৃষ্টি প্রয়োজন। কারন ডক্টর ইউনুস সাহেব যথেষ্ট শিক্ষিত ও মেধাবী। আমার জানা মতে তিনি মেধার মুল্যায়ন করেন। তিনি এই প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করলে সকল সমস্যার সমাধান হবে ইনশাআল্লাহ।